| 28 মার্চ 2024
Categories
ধারাবাহিক

ধারাবাহিক: চিন্তামণির দরবার (পর্ব-১১) । জয়তী রায় মুনিয়া

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

মণিযুক্ত সর্প এবং ছদ্মবেশী বন্ধু , ট্রমা সৃষ্টির কারণ

কেউ অথবা ফেউ … নিবন্ধে অনেকেই সমাধান জানতে চেয়েছেন অনেকে ইনবক্স করে জানিয়েছেন ফেউদের আক্রমণে জীবন কতখানি দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। তাদের জানাই, এমন ছোট পরিসরে সমাধান জানানো মুশকিল। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও , সমস্যার শিকড় ছড়িয়ে থাকে অনেক ভিতরে। সবচেয়ে আগে জানা প্রয়োজন সমস্যা ঠিক কোথায় তারপর সমাধানের কথা আসতে পারে।

ফেউ প্রসঙ্গে যেটা প্রথমে মনে হয় কাছের মানুষ পিছনে লাগছে। রোজ রোজ হামলা করছে। কথা দিয়ে, চ্যাট দিয়ে, টেলিফোন করে … শেষ করে দিচ্ছে জীবন। নষ্ট করছে মন। মাঝে মাঝে শারীরিক হামলা যে হচ্ছে না তাও নয়। এককথায় একসময় যে ছিল সঙ্গী আজ তার আক্রমণে প্রাণ ওষ্ঠাগত।

এমন কেন হয়? রক্তের সম্পর্ক অথবা বৈবাহিক সম্পর্ক নিজের হাতে না থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু, বন্ধু? আর এখন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে বন্ধু অনায়াস। বাইরের চাকচিক্য সুন্দর প্রোফাইল দেখে বন্ধু করে ফেলি চট করে। দ্রুত কাছের মানুষ হয়ে যায় তারা। তারপর দেখা যায়, যাহাই চকচক করে তাহাই সোনা নয়। শুধু স্যোসাল মিডিয়া কেন, বন্ধু বৃত্তের যে কেউ হঠাৎ বদল করতে পারে রঙ। যে হৃদয় টলমল করে উঠত ভালোবাসার গঙ্গাজলে, সেখানে ছড়িয়ে পড়বে ঈর্ষার সবুজরঙ।

বন্ধু , শব্দ শুনতে সহজ চট জলদি বানিয়ে ফেলা সহজ কিন্তু শব্দের ভার খুব কঠিন। দুটো ফোন করলাম একসঙ্গে কফি খেলাম তুমুল আড্ডা দিলাম, সেলফি তুললাম, নাহ্। এটাকে বলে টাইম পাস। দরকার আছে বইকি। সুন্দর আড্ডা। কারণ, বিশেষ একটা বয়সে বন্ধুর প্রভাব মুক্ত থাকা খুব মুশকিল। কারণ, বন্ধুহীন জীবন মরুভূমির মত। জন্মগত ভাবেই মানুষ সঙ্গপ্রিয়। সঙ্গীর কামনা মানুষের চিরন্তন প্রবৃত্তি। বন্ধুর সঙ্গে নিছক আড্ডা, প্রাণ খুলে আনন্দ হই হই … অনেকখানি সময় মন করে তোলে নির্ভার। এমনও হয়, বাড়ি ছেড়ে বন্ধুর বাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়, বন্ধুর একটি কথা তখন বেদবাক্য হয়ে ওঠে। পরিবার একদিকে বন্ধু অন্যদিকে। এগুলো স্বাভাবিক সত্য। বন্ধু সঙ্গে না থাকলে সৃষ্টি হয় না, লেখাপড়া হয় না অ্যাডভেঞ্চার হয় না। স্বয়ং ঈশ্বরকে ও বন্ধু নামে সম্বোধন করা হয়।


আরো পড়ুন: চিন্তামণির দরবার (পর্ব-১০) । জয়তী রায় মুনিয়া


বন্ধুত্ব গভীর হ’ল। আদান প্রদান হ’ল গোপন কথার। সমস্ত দুর্বলতা সমস্ত আকাঙ্খা জেনে গেল সে। কারণ, হল বিশ্বাস। অলিখিত এক চুক্তিপত্র থাকেই বন্ধুত্বে সেটা হল বিশ্বাস। ওটাই বলা যায় ভিত। তারপর একদিন বিশ্বাসের দেওয়াল ভেঙ্গে বেরিয়ে পড়ে আসল মুখ। নিজের সমস্ত গোপন কথা বাজারে বিক্রি হয়ে যায়। স্ক্রিন শট/ ছবি ঘুরতে থাকে এদিক ওদিক। যা ছিল নিজের তা আজ বাজারের। শুধু তাই নয়, এমন হয়, নেট দুনিয়ার চট জলদি বন্ধুত্বের পরে জানা যায় ভিতরের চরিত্র কতখানি নোংরা। ততক্ষণ জড়িয়ে গেছেন অনেকটাই। লোকে ভাবতে শুরু করেছে, এমন মানুষের এত ঘনিষ্ঠ বন্ধু যখন তখন সে আর কত ভালো হবে? এইধরণের সঙ্গ, ব্যক্তিত্ব প্রতিভা সুনাম এমনকি সাফল্যকে ধ্বংস করে। A man known by the company he keeps. নেট দুনিয়ার বন্ধু প্রভাব বিস্তার করে জীবনে। অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে কথা বলা। হঠাৎ একদিন ফোন বন্ধ। কারণ ছাড়া। ব্যাস! দুনিয়া বিস্বাদ। খাওয়ায় অরুচি। সংসারে অরুচি। আবার, কোনো বন্ধু কিছুদিন পরে বিরক্তি উৎপাদন করছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে, আলাপ হওয়ার পরে। আলাপ হওয়ার পরে বোঝা যাচ্ছে, এর কাছ থেকে পাওয়ার কিছু নেই। মোটা দাগের স্থূল বুদ্ধির মানুষ। কিন্তু, সে তখন ছাড়বে না। ক্রমাগত ন্যাগিং আর ঘণ্টাভ’র অবান্তর কথা … ফোনে নাম দেখলেই ভয় করে। মন জর্জরিত। ক্লান্ত। আতঙ্কিত। অবসাদ গ্রাস করতে থাকে। ভালো লাগে না কিছুই আর ভালো লাগে না।

এবার কেউ প্রশ্ন করবে, তাহলে তো ঠগ বাছতে গ্রাম উজাড়। এত বেছে জীবন চলে না কি! প্রশ্ন কিন্তু জীবন নিয়ে। তখন সতর্ক হতে হবে বইকি। কতগুলি নিয়ম মানতেই হবে সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে। টাইম পাস বা নিছক আড্ডার কথা বলছি না, সেটা চলতেই পারে। বলছি, যদি কেউ বিশেষ স্থান নিতে চলে তবে কি হয়? বন্ধু কি করে? এনার্জির সঞ্চার করে। আনন্দ ফুর্তি সঞ্চার করে এনার্জির, সেই এনার্জির অপর নাম জীবন। কারণ, এনার্জি হ’ল জ্বালানী। আমাদের সমস্ত কাজ, সৌন্দর্য , শরীরের যাবতীয় গোপন অসুখ, সম্পর্কের ওঠা পড়া এমনকি কঠিন সময়কেও আমরা সহজে অতিক্রম করে যাব যদি মনের ভিতর এনার্জি থাকে। এই এনার্জির একটি উৎস অথবা বলা যায় নব্বই ভাগ উৎস হল বন্ধু। সময় কাটাও কিন্তু নিজেকে বাঁচিয়ে। নিজের মনের গভীরে যে সুন্দর আমি র অবস্থান… সে যেন কখনো ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। নিজেই বোঝা যায়, কার সঙ্গ আমায় উন্নত করছে আমার চেতনা প্রসারিত করছে। কার ফোন রেখে দেবার পরে মনে হয়, পাহাড়ে ঘুরে এলাম। ফ্রেশ লাগে নিজেকে। মিথ্যা প্রবঞ্চকের চাটুকারিতা ক্লান্ত করে তোলে। এনার্জি নষ্ট করে। কাজেই সাবধান হতে হবে বইকি।

ট্রমা বা অবসাদ, সারা পৃথিবীতে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ট্রমার করাল থাবার আক্রমণে মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। কাজেই, তুচ্ছ করলে চলবে না। অবসাদ সৃষ্টি করে এমন বন্ধু থেকে দূরে থাকতেই হবে। যদি কিছু ভুল হয়ে গিয়েও থাকে, ভয় পাওয়ার কারণ নেই। নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন এনার্জি নিয়ে বেঁচে উঠতে হবে। অনেকেই বলে, বন্ধু ভাগ্য খারাপ। তাই কি? তাৎক্ষণিক মোহে বন্ধু নির্বাচন কিন্তু আমরাই করে থাকি। তারপর হাহাকার আর নিরন্তর দোষারোপ। লাভ কী! পরশমণি দুর্লভ হলেও থাকে বইকি। ভালো বন্ধুর স্পর্শে জীবন সোনা হয় বইকি। এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি পায়, এমন সঙ্গী থাকুক। বাঁচতে হবে সুন্দর করে। অবসাদহীন ঝকঝক জীবনের অধিকারী হয়ে।

তাই, বন্ধু আসুক। তুফান হয়ে তছনছ করতে নয় … বসন্তের বাতাস হয়ে নতুন করে বাঁচিয়ে তুলতে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত