| 29 মার্চ 2024
Categories
শারদ সংখ্যা’২২

শারদ সংখ্যা গল্প: পালাবার পথে । অনিতা অগ্নিহোত্রী

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

ক্যাবটা যখন বাড়ীর কাছে এসে পৌঁছল, তখন বিকেল ঘনিয়ে এসেছে। চারিদিকে আকাশ ছোঁওয়া পাহাড়ের উঁচু আরও উঁচু ঢেউ যেন ঝুঁকে পড়ে ওদের দেখছে।ড্রাইভার সারা পথ কোন কথা বলেনি। গুগল ম্যাপ মিউট করে গাড়ি চালিয়েছে। দেশে, মানে কলকাতায় হবে এরকম? এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ডান দিকের এক্সিট ধরার পর থেকে পথটা চওড়া কালো ফিতের মত ওঠা নামা করতে করতে পাহাড় শ্রেণীর দিকে ছুটে যাচ্ছিল।উৎরাই পথের মাঝখানে, একটু খোলা জায়গায়, বড় বড় গাছের আড়ালে বাড়ীটা।নামতেই কনকনে হাওয়া আর সঙ্গে টিপটিপে বৃষ্টির ফোঁটা যেন জড়িয়ে ধরল বিতান কে। খিদে আর তেষ্টা দুইই জবরদস্ত কিন্তু তার চেয়েও বেশি দরকার একটা টয়লেট। ওমিক্রণের ভয়ে পাবলিক টয়লেট এড়াতে এড়াতে বিতানের অবস্থা লুজ।ট্রেন থেকে নেবে ক্যাবে ওঠার আগে যাপন কে ফোন করেছিল। বাড়ি ঢুকবে কি ভাবে জানার জন্য।চাবি লাগেনা। কোডটা নোট করে নে। কোডের নম্বর প্রেস করে হাতল চাপবি।

তুই আসছিসনা ?

নিউজ দেখিস না? নর্দার্ন ক্যালিফোরনিয়াতে এখন স্নো স্টর্ম চলছে, ব্লিজার্ড, রাস্তা ঘাট বরফে ঢাকা। বরফ না কাটলে আমরা কেউ বেরোতে পারবোনা, গাড়োল!

যাপন নিজেই বলেছিল, পালো অল্টো থেকে এয়ারপোর্ট যেতে সুবিধে হবে। তুই আগে চলে যা।আমিও রওনা দিচ্ছি। আমারও একটা কাজ আছে ইউনিভার্সিটি তে। তোকে সীঅফ করে দেব। না হলে উটকো অচেনা এক টা লোক অন্যের বাড়িতে গিয়ে একা থাকবে? তাই কখনো হয়। পরশু রাতে ফ্লাইট। আগামী কাল সকালে টেস্ট বুক করা হয়েছে। বাড়ি থেকে কালেকশন হবে। যাপন ই এজেন্সির নাম্বার দিয়েছে। কিন্তু এখন ও আসছেনা। একদিনের মধ্যে এলোমেলো হয়ে গেছে আবহাওয়া। এখানে, দক্ষিণে, রোদ ঝলমল দিনের জায়গায় ছুটে এসেছে মেঘ বৃষ্টি।কোনোমতে লক খুলে আধো অন্ধকারে বাড়ীতে ঢুকল বিতান। দরজার কাছেই লিভিং রুম আর টয়লেট। হাতের আর পিঠের ব্যাগ দুটো রাখতেই মনে হল সোনালী সাদা কিছু একটা ছুটে পালিয়ে গেল। বেরিয়ে চোখে মুখে জল দিতেই ওর খিদে আর তেষ্টা ফিরে এল আর সেই সঙ্গে হাড় হিম করা একটা ভয়।ফুজি।বাড়িটা যাপনের নয়। ওর গার্লফ্রেণ্ড ক্যারলের। ক্যারল এখন নেই। হাওয়াই আইল্যাণ্ডে বেড়াতে গেছে। প্যান্ডেমিকের মধ্যেও সারা দেশের লোক বেড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অদ্ভুত।

যাপন ফোনে বলেছিল, বাড়িটা আসলে ক্যারলের ও নয়। ফুজির। দেখবি , সোনালী সাদা বেড়াল একটা।অ্যান আউটডোর শী ক্যাট।ওকে কেউ আনেনি, শী জাস্ট টার্নড আপ ওয়ান ডে। সেই সময় ক্যারলের মায়ের খুব মন খারাপ। ব্যাক করতে গিয়ে নিজের পোষা বেড়ালের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছিলেন কদিন আগে। অন্যমনস্ক ছিলেন।তাকে সবে বাগানে সমাধি দিয়েছেন, ফুজি এসে হাজির। দেয়ার ইজ সামথিং স্পিরিচুয়াল অ্যাবাউট হার। তোকে কিছু করতে হবেনা, ওর যথেষ্ট খাবার, ওয়াটার ফাউন্টেন সব ঠিক করা আছে। কেবল দেখিস যেন বেরিয়ে না যায়।তাহলে আমাদের ব্রেক আপ হয়ে যাবে ভাই।

অন্ধকার হয়ে আসা বাড়ীর সুইচ অন করে দিল বিতান। যাপনের দেওয়া নির্দেশ ফলো করে হীটিং অন করল। ফুজি! ফুজি! বিতানের গলা কাঠ হয়ে গেল। পুরো বাড়ীটা ঘুরে দেখে এল। লিভিং, ডাইনিং স্পেস, তিনটে ঘর, একটা ক্যারলের অফিস, ওয়র্ক ফ্রম হোমে র জন্য, করিডর। ফুজি নেই। কিন্তু মেন দরজাটা তো বন্ধ। যাপন কে আবার ফোন করল। এবার যাপন তেড়ে গালাগাল দিল ওকে। একটা ই তো কাজ দিয়েছি পারলিনা সেটাই। ডাইনিং স্পেসের কাঁচের দরজাটা ঠিক বন্ধ আছে? ওখানে একটা তারের জালি ছেঁড়া, পাশের দিকে — ভয়ে ভয়ে ফোন হাতে দরজার কাছে গেল বিতান। হ্যাঁ, একটু গ্যাপ আছে জালিতে। দরজাটাও ঠিক করে বন্ধ হয়নি। কিন্তু ঐ টুকু গ্যাপ দিয়ে একটা বেড়াল — ওরা খুব ফ্লেক্সিবল হয়, তোর কোন আইডিয়া নেই, ইডিয়ট, যা খোঁজ এখন।

ঘনায়মান অন্ধকার, চার দিক থেকে ঘিরে আসা পাহাড়ের দল, টিপ টিপ বৃষ্টি, ক্ষিদে তেষ্টায় মাথা ফাঁকা, সদর দরজা খুলে বেরোলো বিতান। নিজের ওপর ঘেন্নায় ওর মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। শালা , দুশো ডলার বাঁচানোর জন্য কি হেনস্থা। বিড়াল কোনোদিন ই পছন্দ করেনা বিতান। ছোটবেলায় একবার বাড়ীর বেড়াল ওর পাত থেকে মাছ নিয়ে গিয়েছিল বলে এমন চেঁচিয়ে ছিল,যে থালা বদলে ওর হাত টাত ধুইয়ে দিলেও শান্ত হয়নি। সেই থেকে ওর ঘেন্না। দেশে বিড়াল দের খেতে দিলে খায়, না হলে চুরি করে। যত্ন করে বেড়াল পোষেও অনেকে। কিন্তু বেড়ালের জন্য ব্রেক আপ? নিশ্চয়ই অন্য কারণ আছে বনিবনা না হওয়ার। এখন দোষ চাপবে বিতানের উপর।

সদর দরজা খুলে ফোন হাতে নিয়ে বাইরে বেরোলো বিতান। বাড়ীর পিছনে চার ধারে ঘুরে ডাকল, ফুজি! ফুজি। ওর গলা কাঁপছিল। গাছেরা যেন ক্ষুব্ধ, স্থির। উপরে তাকাল। এ আকাশ অচেনা। যেখানে মেঘ নেই ,সেখানে তারার ফুল ফুটে আছে। ফুজি নাকি ইনডোর ক্যাট নয়। বাইরে বেরোনো ওর স্বভাব। কিন্তু খুব সাবধানে ছাড়তে হয়। দিনের আলোয়। বাইরে এত গাছগাছালি, ঝোপ জঙ্গল।কোয়োতে বলে হিংস্র প্রাণী আছে, নেকড়ে আর শেয়ালের মাঝামাঝি। তারা বিড়াল, ছোট কুকুর টেনে নিয়ে শিকার করে। যাপন হাসতে হাসতে বলেছিল, দিনের বেলা ছাড়লেও ফুজি শিকার করতে পারেনা কিছুই। বাড়িতে থেকে ওর অভ্যেস টাই চলে গেছে। আর রাতে— হা: হা:, ও নিজেই শিকার হয়ে যেতে পারে। ভিজে ঘাসের উপর ফোনের আলো ফেলে সাবধানে হাঁটছিল বিতান। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল ফুজির রক্তমাখা ছেঁড়াখোঁড়া শরীর টা ওর পায়ের কাছে দেখবে। দিনে শিকার ধরতে পারেনা আর রাতে শিকার হয়ে যায়।

ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত শীতার্ত বিতান ফিরে এল। এবার যা হয় হবে। আর দেরী হলে বিতান নিজেই মরে যাবে না খেয়ে। ফ্রিজ থেকে পাঁউরুটি চীজ বার করে নিল। কফি মেশিনে পাউডার দিয়ে জল গরম করতে দিল। প্লেট সাজিয়ে বসে কফিতে চুমুক দিয়ে মনে হল প্রাণ ফিরে আসছে শরীরে। টিভি টা খবর বলে যাচ্ছে আপন মনে। ওমিক্রণের ঢেউ বইছে সারা দেশে, যেন শুকনো বনের ভিতর দাবানল। তিরিশ পারসেন্ট লোক এখানে ভ্যাকসিন নেয়নি। আই সিইউ ভরে যাচ্ছে ক্রিটিকাল রোগীতে। কানাডা আমেরিকা সীমান্তে বরফ। ঠাণ্ডায় জমে মারা গেছে এক ভারতীয় পরিবার, এক শিশুও ছিল সঙ্গে।বরফ পড়ে সাদা হয়ে গেছে উত্তর উপকূলের পথঘাট। ক্যাম্পে উদ্বাস্তুদের কষ্ট হচ্ছে। তাদের জন্য কিছুই করেনি সরকার। গুয়াটেমালা থেকে প্লেনের ল্যান্ডিং গীয়ারে চড়ে একজন স্টোঅ্যাওয়ে মায়ামিতে চলে এসেছে। কিন্তু বেঁচে আছে, মরেনি! শালা, কী চার্ম এই দেশের। ইন্ডিয়াতে কী নেই? বিতান বিদেশে থাকতে চায়না।ফিরে গিয়ে একটা চাকরি জুটিয়ে নেবে, ব্যাস। দলিত আর সংখ্যালঘু না হলে, মেয়ে না হলে, ইন্ডিয়ার মত আরামের জায়গা কোথায়।

বিতানের হঠাৎ মনে হল, কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে। ছোট টেবিল টার ওপাশে দেওয়াল জোড়া বইয়ের তাক, তা সামনে বসে —- আরে এই তো ফুজি! উফ আনন্দে চোখে জল এসে গেল বিতানের। কোন বিড়াল কে দেখে এত আনন্দ হয়নি কোনদিন।মাইরি। কি মায়া ভরা চোখ দুটো, কি সুন্দর সাদা সোনালী শরীর। নরম হীটিঙের ঘরে পাত্র উপচে পড়ছে খাবারে, দু দুটো বিছানা, চড়ার জন্য খেলনা গাছ, লিভিং রুমের মেঝেতে কত কত সফট টয়। শোবার আগে যাপন কে মেসেজ করে দিল বিতান: ফুজি কে পাওয়া গেছে। যাপন একটা চুমু পাঠিয়ে লিখেছে : ক্যারল কে কিছু বলতে যাসনা, গাধা।
ফুজি এখন নিজের বিছানায় ঘুমিয়েছে। কাল সকালে স্পেসিমেন নিতে লোক আসবে ল্যাব থেকে। তাড়াতাড়ি শুতে হবে বলে সসেজ ব্রেড এই সব খেয়ে নিয়েছে বিতান। এখন মাথা টিপটিপ করছে, গায়ে হাতে পায়ে ব্যথা। বৃষ্টিতে বেরিয়ে ফুজিকে খোঁজার শাস্তি।অথচ ফুজি কোথাও যায়নি। বাড়ির ভিতরেই ছিল। অচেনা লোক দেখে পালিয়েছিল।ডাইনিং হলের দরজাটা জম্পেশ করে বন্ধ করে দিয়েছে বিতান, তার জালিতে সেলোটেপ লাগিয়েছে। পাছে সকালে উঠেই শিকার করতে বেরিয়ে যায় ফুজি।

দিদি তো আসলে মাকেই চেয়েছিল। মা আসতে সাহস করলনা। ইউ এস এ খুলে গেছে। ডিসেম্বরের গোড়ায় দিদির বেবি ডিউ। মায়ের ডায়াবিটিস। হাইপারটেনশন।বিতানের চাকরি সবে গেছে। কাজ নেই। লং ভিসার মেয়াদ আছে। বিতান চলে এসেছে। কিন্তু মায়ের কাজ কি বিতান পারে? বাচ্চাটা এত ছোট যে বিতান ভয়ে ওকে ধরতেই যায়নি। হাত ফস্কে পড়ে টড়ে গেলে?জামাই বাবুর ওয়ার্ক ফ্রম হোম। ড্রাইভ করে এখানে সেখানে যেতে হয়, সপ্তাহে দু তিন দিন গ্রসারি। বিতান ড্রাইভ করতে পারে না। তার জন্য লন্ড্রি, ক্লীনিং, ডিশেস। এক মাস বিতান জান লড়িয়ে দিয়েছে। স্যাকরামেন্টোর এই সফটওয়্যার হাব এও জীবন এক অন্তহীন লড়াই। মাঝে মাঝে নিজেকে মনে হত সপ্তাহে একদিন ঘর সাফ করতে আসা কৃষ্ণাঙ্গী প্রৌঢ়ার মত। সে যেমন পালাতে পারেনা, বিতান ও পারেনা। টান। দিদির ছোট মেয়েটার ছোট ছোট আঙুল, রঙীন মোজা, রাতে কান্নার শব্দ, জামাইবাবুর ঘুম যাতে না ভাঙে তাই দিদির উঠে বিতানের কাছে চলে আসা।পরিবারের মাথা, একমাত্র আর্নিং মেম্বার, তার ঘুম কি শিশুর কান্নায় ভাঙলে চলে? তবু ফেরার আগে বেকার বিতানের দুদিন একটু নিজের মত থাকার স্বপ্ন। যাপনের নেমতন্ন পেয়ে মন ভাল হয়ে গিয়েছিল বিতানের। তিনশো ডলার দিদি ওর হাতে দিয়েছিল ফেরার সময়। রেখে দে ভাই, ক্যাবের ভাড়া আছে, টেস্টের খরচ। টেস্ট না করে, রেজাল্ট আপলোড না করে তো ফেরা যাবেনা।

কিন্তু এখন বিতান পালাচ্ছে।বেশি রাতে ফ্লাইট । তা আর ধরা হবেনা। এখন পালাতে হবে। ঠাণ্ডা অথচ রোদ ঝলমলে সকালে অপরূপ হয়ে উঠেছে সিয়েরা নেভাদা পর্বত শ্রেণীর ঢেউ এর ছড়ানো ডানা। বাতাসে নানা জলে ভেজা পাতা, শীতকালীন ফুলের সুবাস।যারা স্যাম্পল নিয়েছিল সকালে ফোন করেছিল তাদের একজন। বিতান পজিটিভ। এত কষ্টে কাঁপতে কাঁপতে ওদের লাইভ ভিডিও দেখে নিজের সোয়াব নিয়ে সীলড কন্টেনারে রেখেছিল কাল সকালে। সাদা পোশাক পরা এক জন নিয়েও গিয়েছিল। আজ কী রিপোর্ট আসবে ভেবে অর্ধেক রাত ঘুমোয়নি। তারপর এই। ক্যারল ফেরার আগেই ওকে পালাতে হবে। নাহলে যদি ব্রেক আপ হয়ে যায় যাপনের সংগে? কোথায় যাবে বিতান? এয়ারলাইনস টা আমেরিকার।দেশে ফিরতে গেলে জামাইবাবুকে বলতে হবে, নিজের মাইলেজ ক্রেডিট থেকে টিকিট কেটে দিয়েছে, পিছোতে গেলে আবার জামাই বাবু—। আরে, ওর আগে আগে দৌড়চ্ছে মোটা সোটা ফুজি। পিছনে বিতান। কিন্তু ফুজি বেরোল কখন? ফুজি কে নিয়ে রেখে আসতে হবে তো বাড়িতে।

হঠাৎই একটা গাড়ি থামল ওর সামনে। এই যে আমাদের বিড়াল কে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ? ফুজি ভিতরে এসো। ফুজি এমন ভাবে লাফ দিয়ে ড্রাইভারের সীটে উঠে বসল, যেন এটা ওর রোজকার খেলা। আমি ক্যারল। সোনালী কোঁকড়া চুলের রাশ ঝাঁকিয়ে সুন্দরী বলল। তুমি ইয়াপের বন্ধু বিটান! বিতান পিছু হটছে। গাড়িতে ওঠো। লেটস গো হোম।আমি যেতে পারবোনা। আমি পজিটিভ। কোনও মতে মাস্কের ভিতর থেকে বলল বিতান।খিলখিল করে মাথা পিছনে হেলিয়ে হাসল ক্যারল। আরে আমিও পজিটিভ। এই মাত্র এয়ারপোর্টে দেখলাম। এসো এসো।

সন্ধে বেলা সব কটা আলো জ্বলে উঠেছে বসার ঘরে। ক্যারল ফিরে এসেছে বলে বাড়িটা যেন খুশি।রান্না ঘরে মাখনে ভাজা হচ্ছে পপকর্ণ। তার গন্ধ, কফির সুবাস যেন জীবনে ফিরিয়ে আনছে বিতান কে। ছিপছিপে ক্যারল কাজ করছে ছুটে ছুটে। কখনও ফোনে কথা বলছে হেসে হেসে, কখনও ল্যাপটপ নিয়ে বসছে।ইয়াপ মানে যাপন আসবে পরশু।ওকে একটা ঘরে বন্ধ করে রাখবো, কেমন? এখন তো আমরা পজিটিভ রাই মেজরিটি।বিতানের টিকিট রি শিডিউল করে দিচ্ছে ক্যারল। ওর ও অনেক মাইলেজ, এই এয়ারলাইনসের।এক সপ্তাহ এই বাড়িতে থাকতে পারবে বিতান। সুখের গন্ধ পেয়ে ফুজি ওর পাশে সোফায় এসে বসেছে। পিঠে আলতো করে হাত রাখল বিতান। তুলতুলে নরম গা। তবে কি ওদের ভাব হয়ে গেল? সটেড ভেজিস আর নুডলস দিয়ে ডিনার করে কিচেনে হেল্প করতে চাইল বিতান। কিছু না। হাত তুলল ক্যারল। সব ডিশ ওয়াশারে যাবে। তুমি এখন ঘুমোতে যাও বিটান। ইউ হ্যাড আ হার্ড ডে। তবে দরজাটা লক কোরোনা। সামবডি মে কাম।ফুজির দিকে তাকিয়ে চোখ মটকালো ক্যারল। ফুজি তো আমাকে পছন্দই করেনা, বলে বিতান ও হাসল। ক্যারল ফিরে এসে ওর জীবনটাই বদলে দিয়েছে। বিতান একটা সুন্দর বিছানা পেয়েছে।ভালো খাবার। সব চেয়ে বড় কথা ওকে আর পালাতে হবেনা।ও উদ্বাস্তু নয়, গুয়াটেমালার সেই স্টোঅ্যাওয়ে কিংবা বর্ডারে তুষারে চাপা পড়া লোকেদের মত।

অনেক রাতে ঘুম ভেঙে গেল বিতানের। লেপের মধ্যে একটা তুলতুলে নরম গা। শরীর টা উঠছে নামছে নি:শ্বাসের সঙ্গে।হয়তো স্বপ্ন দেখছে।লেজ টা বাঁকা হয়ে বিতানের কনুই ছুঁল।পাছে পাশ ফিরলে ও ব্যথা পায় তাই একটু সরে ফুজির দিকে ফিরে শুল বিতান।

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত