| 24 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত গল্প ধারাবাহিক

অসমিয়া অনুবাদ: রক্তের অন্ধকার (পর্ব-১৪) । ধ্রুবজ্যোতি বরা

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

ডক্টর ধ্রুবজ্যোতি বরা পেশায়  চিকিৎসক,অসমিয়া সাহিত্যের একজন স্বনামধন্য লেখক ২৭ নভেম্বর ১৯৫৫ সনে শিলংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীবরা ছাত্র জীবনে অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ‘কালান্তরর গদ্য’ ,’তেজর এন্ধার’ আরু ‘অর্থ’ এই ত্রয়ী উপন্যাসের লেখক হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। ২০০৯ সনে ‘ কথা রত্নাকর’ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাকি উপন্যাসগুলি ‘ভোক’,’লোহা’,’যাত্রিক আরু অন্যান্য’ ইত্যাদি। ইতিহাস বিষয়ক মূল‍্যবান বই ‘রুশমহাবিপ্লব’দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ’,’ফরাসি বিপ্লব’,’মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ’। শ্রীবরার গল্প উপন্যাস হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা, মালয়ালাম এবং বড়ো ভাষায় অনূদিত হয়েছে।আকাডেমিক রিসার্চ জার্নাল’যাত্রা’র সম্পাদনার সঙ্গে জড়িতরয়েছেন।’ কালান্তরর গদ্য’ উপন্যাসের জন্য ২০০১ সনে অসম সাহিত্য সভার ‘ আম্বিকা গিরি রায়চৌধুরি’ পুরস্কার লাভ করেন।শ্রীবরা অসম সাহিত্য সভার প্রাক্তন সভাপতি। 


অনুবাদকের কথা

আলোচ‍্য উপন্যাস ‘রক্তের অন্ধকার'(তেজরএন্ধার) একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ উপন্যাস। এটি লেখার সময় কাল ২০০০-২০০১ ছিল অসময়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দুর্যোগের সময়। সেই অশান্ত সময়ে, আমাদের সমাজে, আমাদের জীবনে এক দ্রুত অবক্ষয়ের স্পষ্ট ছাপ পড়তে শুরু করেছিল। প্রতিটি অসমিয়াইমর্মেমর্মে   একথা উপলব্ধি করে ভেতরে ভেতরে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। রাজ্যের চারপাশে দেখা দেওয়ানৈরাজ্যবাদী হিংসা কোনো ধরনের মহৎ রূপান্তরের সম্ভাবনাকে বহন করে তো আনেই নি, বরঞ্চ জাতীয় জীবনের অবক্ষয়কে আরও দ্রুত প্রকট করে তুলেছিল। আশাহীনতা এবং অনিশ্চিয়তায় সমগ্র রাজ্য ক্রমশ ডুবে যাচ্ছিল। এই ধরনের পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই যেন থমকে যেতে চায় কবির  কবিতা , শিল্পীর তুলি, লেখকদের কলম। তবে একথাও সত্যি যে শিল্পী-সাহিত্যিকরা সচেতন ছিলেন যে সমাজ জীবনের ভগ্নদশা’ খণ্ডহর’এর মধ্যে একমাত্র ‘সৃষ্টি’ই হল জীবন এবং উত্তরণের পথ। এই বিশ্বাস হারানোর অর্থ হল মৃত্যু । আর এই বিশ্বাস থেকেই সেই সময় লেখক লিখেছিলেন কালান্তর ত্রয়ী উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব – রক্তের অন্ধকার ।

এবার উপন্যাসটির বাংলা অনুবাদ নিয়ে এলাম। আশা করি ইরাবতীর পাঠকেরা এই ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত অসাধারণ উপন্যাসটিকে সাদরে বরণ করে নেবেন ।নমস্কার।

বাসুদেব দাস,কলকাতা


সবকিছু স্থির হয়ে আছে। ঠান্ডা পড়তে শুরু করার সময়ও দুপুরের রোদ বেশ কড়া থাকে। অর্জুন গাছের ঘন সবুজ পাতাগুলি নড়ছে না। টাকা দেবে বলে ঘোষণা করার কতদিন পার হয়ে গেছে?কত মাস?নয় মাস হয়ে গেল বোধ হয়। নয় মাস নয়,দশ  মাসই হয়ে গেছে । এখন পর্যন্ত টাকার কোনো খবরই নেই!

টাকার জন্য অপেক্ষা করে করে তার বাবা পাগলের মতো হয়ে পড়েছে।

আজকাল বুড়ো আগের মতো গালিগালাজ করে না। মানুষটা ধীরে ধীরে প্রায় নীরব হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো দিন সে একেবারেই কথা-বার্তা বলে না। মনে মনে গুমোট হয়ে বসে থাকে। কাউকে ডাকে না। তার সঙ্গে তো কথাবার্তা বন্ধ করে দিয়েছে, সেই দিনগুলিতে তিনি মা ভোগেকেও ডাকে না। উদাস ভাবে তিনি দূরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ছানি পড়তে চলা চোখ দুটির সামনে একটু দূরের পৃথিবীটা ধূসর, অস্পষ্ট হয়ে পড়ে ।

কাশি কফের বিকারটার লক্ষণও আজকাল পরিবর্তিত হয়ে গেছে। হাঁপানির লক্ষণটা বদলে গেছে। আগে হাঁপানির টান উঠলে খুব শব্দ হত। শিসধ্বনির মতো বেজে ওঠা শব্দ অনেক দূর থেকে শুনতে পাওয়া যেত। এখন শব্দ হওয়াটা কমে এসেছে। মাঝেমধ্যে কখনও শিসধ্বনি  বাজতে শুরু করে। আজকাল ফোঁপানিটা  বেশি হচ্ছে। হাঁপানির টান উঠলে প্রায় নিঃশব্দে তিনি ফোঁপাতে শুরু করেন। মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়,নাক,ঠোঁট, হাতের নখ এসব নীল হয়ে যায় আর চোখ দুটি কোটর থেকে বেরিয়ে আসছে বলে মনে হয়।

  মানুষটা দেখতে ভয়ঙ্কর হয়ে পড়ে। হাত, বুক, গলার শিরা গুলি মোটা ইদুরের মতো নীল বেগুনি হয়ে ফুলে উঠে।

আজকাল তো বাবা তার সঙ্গে কথাই বলে না। তাকে দেখলেও না দেখার ভান করে। কিছুই বলে না, হয় দীর্ঘশ্বাস  ফেলে আর না হলে ভাইয়ের কথা বলে কান্নাকাটি করে। মানুষটার এই অবস্থা দেখে প্রেমের কখনও কখনও সত্যি ভয় হয়। কিন্তু সেও কোন উপায় খুঁজে পায় না।কী করতে পারে সে?

তার বুক থেকেও একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।

দোকানির দেওয়া চারমিনার সিগারেটটা পকেট থেকে বের করে সে মুখে দিল। প্যান্টের পকেটে হাতড়ে হাতড়ে দিয়াশলাইটা বের করে সে সিগারেটটা জ্বালাল। একটা দীর্ঘ টান দিয়ে সে চোখ বুজে নাক-মুখ দিয়ে ধোয়া বের করে দিল।  

বাবার চিকিৎসার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে বুড়ো আর বেশি দিন বাঁচবে না। হ্যাঁ, দিন দিন মানুষটার অবস্থার অবনতি ঘটছে। টাকাটা হাতে এলেই দ্রুত একটা কিছু করতে হবে। টাকা পেলেই বাবাকে একবার শহরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।


আরো পড়ুন:  রক্তের অন্ধকার (পর্ব-১৩) । ধ্রুবজ্যোতি বরা


হ্যাঁ ,দ্রুত একটা কিছু করতে হবে। তার বুক থেকে পুনরায় একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।

‘ কী হল প্রেম? চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ফেলছ দেখছি। কী হয়েছে?’

প্রেম ধড়মড়  করে চোখ খুলল। মহিলা কন্ঠস্বর! তার স্বপ্ন দেখছে বলে মনে হল।

সামনে বিধবা মালতী দাঁড়িয়ে রয়েছে। একহাতে সে কোমরের কাছে একটা  টুকড়ি ধরে বাঁকা ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। টুকড়িটাতে নানা ধরনের জিনিস, চালের পুঁটলি থেকে কুড়িয়ে আনা জ্বালানি কাঠ পর্যন্ত।

প্রেম চোখ ছোটো করে এদিক ওদিকে তাকাতে লাগল। হ্যাঁ ,সে সামাজিকভাবে দেখে নি। এই মহিলা বিধবা মালতীই- কোথাও কাজ করে ফিরে আসছে। ঐ যে ফুল। অর্জুন গাছের আড়াল নিয়ে সে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।ইস ফুল! প্রেম তাকে কয়েকদিন দেখেনি! কয়েকদিন!

‘ তোমাদের টাকা পয়সা এসেছে নাকি? মালতী ফিসফিস  করে গোপন কথা জিজ্ঞেস করার মতো বলল।

‘ তোমাকে কে বলল দিদি?’ প্রেম অবাক হল।

‘ দোকানে কেউ এইমাত্র শুনে গেছে।’– মালতী উত্তর দিল।

প্রেম কী বলবে বুঝতে না পেরে চুপ করে রইল। অসহায় ভাবে একবার মায়ের দিকে, একবার মেয়ের দিকে তাকাল। ফুল গাছের আড়াল নিয়ে উৎসুকভাবে কথাটা শুনে চলেছে।

মালতী তার আরও কাছে চলে এল। সে আবার ফিসফিস করে বলল‘ কথাটা শোনার পরে আমি ভাবলাম ‘ঈশ্বর অবশেষে চোখ মেলে তাকিয়েছে। তোমার সঙ্গে দেখা হল ভালোই হল। বলি প্রেম, দেরি কর না। টাকাটা এলেই এবার সংসার পেতে নাও। বুড়ো মা বাবাকে দেখাশোনা করার জন্য ঘরে একজন দরকার।’– মালতী শেষের কথাটা একটু লেজ লাগিয়ে বলল,’ যেন তার আরও কথা বলা বাকি আছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সে প্রেমের মুখের দিকে তাকাতে লাগল। তার চোখে-মুখে সে যেন কিছু একটা খুঁজছে। তার মনের ভাব সে যেন তার মুখে পড়তে চাইছে।

প্রেমের কান মাথা গরম হয়ে উঠল। তার মুখ থেকে কোনো কথা বের হল না। আড়চোখে সে একবার ফুলের দিকে তাকাল। তাকে তাকাতে  দেখে ফুল লজ্জা পেয়ে অর্জুন গাছের আড়ালে চলে গেল।

‘ রাতে বের হলে আমাদের এদিকে একবার এসো তো।’– বেশ আবদার করে মালতী বলল। তারপর সে তাড়া  লাগাল।–’ এখন যাই। দুনিয়ার কাজ পড়ে আছে । তোমার সঙ্গে দেখা হতে মনের কথাটা বলে রাখলাম । রতিকা অসুখটায় বড় কষ্ট পাচ্ছে। সেবা- শুশ্রূষা করার জন্য মানুষ চাই । মা একা আর কতদিক দেখবে আর… ‘

প্রেমকে সেখানে রেখে মা-মেয়ে দ্রুত চলে গেল।

প্রেম আলকাতরার ড্রামটার ওপরে পুনরায় বসে পড়ল। হাতে নিভে যাওয়া সিগারেটটা সে পুনরায় একটি কাঠির সাহায্যে জ্বালিয়ে নিল। মা-মেয়ে ওই যে অনেক দূর চলে গেছে। চোখের আড়াল হয় হয়। বাজারের থলেটা মাটি থেকে তুলে কাধে ফেলে সে বাড়ির দিকে লেংচে লেংচে যেতে লাগল।

বাজারের থলেটা নিয়ে মায়ের কাছে রেখে সে রান্না ঘরে বসে পড়ল। মা বিকেল বেলা কচু আর বন্য শাক কুড়িয়ে এনে একটা ডালায় নিয়ে বাছছিল।

‘ মা এক কাপ চা করতো, থলির মধ্যে চা পাতা, গুড় আছে। বাবাকেও এক কাপ দে।’

মা মাথা তুলে নীরবে তার দিকে তাকাল। তার চোখে অলেখ  প্রশ্ন।

‘ জিনিসগুলি দোকান থেকে এনেছি।’ প্রেম বলল– ‘একেবারে কিছুই ছাড়া, নুন ছাড়া কীভাবে চলবি?’

‘ আগের অনেক ধার আছে। আর জিনিস দেব না বলেছিল দোকানি।’– মাকে বলল।

‘ দিয়েছে দিয়েছে। তুই সেসব কেন চিন্তা করছিস?আমি রয়েছি না’– প্রেম বেশ জোর দিয়ে বলে উঠল।

‘আরও কিছু ঋণের দায়ে জড়িয়ে পড়লি। কীভাবে শোধ করবি?’

‘ হবে, হবে তোকে চিন্তা করতে হবে না। ৩০০ টাকাও ধার হয়নি। টাকাটা এই কিছুদিনের মধ্যেই আসবে। আমি আজ সঠিক খবর নিয়ে এসেছি।’

মা আর কিছু বলল না। মা নীরবে বস্তার বেগ থেকে জিনিসগুলি বের করতে লাগল। ইতিমধ্যে ভোগেই উনুনটা খুঁচিয়ে শুকনো ডালপালা দুটো জ্বালিয়ে চায়ের জল বসিয়ে দিয়েছ।

হঠাৎ বাইরের কাঁঠালপিড়িতে বসে থাকা বাবা গলা খাকারি  দিয়ে উঠল।

মা- ছেলে দুজনেই বুঝতে পারল যে বাবা বাইরে থেকে ভেতরে মা- ছেলে কী কথা বলছে কান খাড়া করে শুনছিল। দুই- এক দিনেই টাকা আসার সঠিক খবর ছেলে পেয়েছে বলে শোনায় তিনি পুরো খবরটা জানতে চাইছেন। এই সঠিক খবরের জন্যই বুড়ো অপেক্ষা করছে এতদিন, এই সঠিক খবরটার জন্যই।

ভোগেই প্রেমের মুখের দিকে তাকাল।

‘ দোকানে আজ কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা হল।’– প্রেম বাবাকে শোনানোর জন্য জোরে জোরে বলল–’তাঁরা শহর থেকে এসেছে। শহরের, ডিসি অফিসেরও খবরা-খবর তাঁরা পায়। টাকার খবরটাও তাঁরা জানে। টাকাটা রাজধানী থেকে এসে ইতিমধ্যে ডিসির কাছে নাকি পৌঁছেছে। দুই-চার দিনের ভেতরে দেবার ব্যবস্থা করা হবে।’– প্রেম অবলীলাক্রমে ফাঁকি মেরে গেল। 

মা-বাবার সামনে এভাবে ফাঁকি মারতে তার খারাপ লাগল না।

সে জানে যে মা না হলেও বাবা টাকার কথাটা শুনে বড়ো খুশি হবে। টাকাটা ডিসির কাছে এসে গেছে শুনলে আরও  কিছুদিন বেঁচে থাকার জোর পাবে। মা দেওয়া লাল চায়ের বাটিতে গুড় চেটে চুমুক দিয়ে সে বলল‘ আর বেশিদিন নেই। এবার একটা মীমাংসা হয়ে যাবে। তোর জন্য চা ঢেলেছিস কিনা মা? আছে? যা বাবাকে চায়ের বাটিটা দিয়ে আয়।’

চায়ের বাটি নিয়ে বাইরে গিয়ে ভোগেই দেখে যে রতিকান্ত বুড়ো কাঁঠাল পিঁড়িটার ওপরে সোজা হয়ে বসে আছে। টাকা আসার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে কাঁঠাল পিঁড়িতে শুয়ে থাকা মানুষটা উঠে বসল। ভোগেই স্বামীর দিকে তাকাল। এই কয়েকটা দিনের মধ্যে মানুষটা একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখন এভাবে বসে থাকলেও মানুষটার নিঃশ্বাস ছোটো হয়ে আসছে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে হয়।

ভোগেই চায়ের বাটিটা স্বামীর দিকে এগিয়ে দিল। বাটিটা নিয়ে আসা পানের বাটার এককোণে একটু গুড়।

বুড়ো  বাটিটা হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিল, তারপর আরও এক চুমুক মেরে রতিকান্ত  হাঁপাতে হাঁপাতে বলল‘ প্রেমকে বলবি কারও একজনকে সঙ্গে নিয়ে সে নিজে এবার শহরে যাক। ডিসি অফিসে গিয়ে নিজে টাকার খবরটা নিয়ে আসুক নিজে গিয়ে  খবর না করলে কিছুই হবে না।’

রতিকান্ত স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাল। ভোগের মুখে কোনো ধরনের ভাবান্তর দেখা গেল না । স্ত্রীর এই ধরনের নিরুদ্বেগ  মুখ দেখে বুড়োর আরও রাগ হল।

‘ কি বলছি শুনতে পাচ্ছিস কিনা ল্যাংড়ার মা? ছেলেকে গিয়ে বল লোকের কথা শুনে বাড়িতে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না।নিজেকেও একটু দৌড়াদৌড়ি করে খবরা-খবর আনতে হবে। সঠিক খবর এনেছে,গরু কোথাকার নিজে না গিয়ে বাতাস থেকে সঠিক খবর কুড়িয়ে এনেছে সে।’ বুড়ো বিড়বিড় করতে লাগল।

ভোগেই কিছু বলল না । স্বামীর চা খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে নীরবে পাশেই বসে রইল। দূরের গেটের দিকে সে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল । তার হঠাৎ এরকম মনে হল যেন এইমাত্র গেটের ওপর দিয়ে লাফ মেরে হেম উঠোনে চলে আসবে। এসেছে এসেছে,ঐ তো হেম চলে এসেছে। সে নতুন কাপড় পরে এসেছে। দুষ্ট ছেলেটি হাতে বই খাতা নিয়ে স্কুল থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বন্ধ করে রাখা গেটের ওপর দিয়ে বাঁকা করে একটা লাফ দিয়ে ভেতরে চলে এসেছে। সে এখনই চিৎকার করবে, চিৎকার করে উঠবে মা ভাত দে, ভাত দে – তাড়াতাড়ি ।

ভোগেই চোখ দুটি কচলে মিটমিট করে তাকাতে লাগল। দুই ফোঁটা চোখের জল তার দৃষ্টিকে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন করে ফেলেছে।

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত