| 28 মার্চ 2024
Categories
ধারাবাহিক

ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-১৩) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

অষ্টম শ্রেণির দুই বন্ধু রাজ আর নির্ঝর। রাজ আর অনাথ নির্ঝরের সাথে এইগল্প এগিয়েছে ফুটবলকে কেন্দ্র করে। রাজের স্নেহময়ী মা ক্রীড়াবিদ ইরার অদম্য চেষ্টার পরও অনাদরে বড় হতে থাকা নির্ঝর বারবার ফুটবল থেকে ছিটকে যায় আবার ফিরে আসে কিন্তু নির্ঝরের সেই ফুটবল থেকে ছিটকে যাবার পেছনে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নির্ঝরের জেঠু বঙ্কু। কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বঙ্কু ও তার ফুটবলার বন্ধু তীর্থঙ্করের বন্ধুবিচ্ছেদ। কিন্তু কেন? সবশেষে নির্ঝর কি ফুটবলে ফিরতে পারবে? রাজ আর নির্ঝর কি একসাথে খেলতে পারবে স্কুল টিমে? এমন অনেক প্রশ্ন ও কিশোর জীবনে বড়দের উদাসীনতা ও মান অভিমানের এক অন্য রকম গল্প নিয়ে বীজমন্ত্রের জনপ্রিয়তার পরে দেবাশিস_গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন কিশোর উপন্যাস ফুটবল আজ থাকছে পর্ব-১৩।


 

 

ছোটমামা বললেন,”ওরা  শুনেছি খুব ভাল টীম। তাই না?”

রাজ মাথা নাড়াল।গতবছর এই টিমটার সাথেই  তাদের  সেমি-ফাইনাল হয়েছিল। ওরা নাকি একদম তুর্কীনাচন নাচিয়েছিল তাদের।তবে আরো অনেক গোলে হারত। ইন্দ্রদা গোলে অনেক সেভ করেছিল। ইন্দ্রদার মুখে সে শুনেছে  ওদের নবারুন আর বিকাশ  বলে দুজন  নাকি দুরন্ত খেলে। ওদের সঙ্গে খেলা চাপের।  ওরা চারধারে রীতিমতো খেপও খেলে বেড়ায়।খেপ খেলা মানে ভাড়াটে খেলোয়াড় হিসেবে টাকা নিয়ে খেলতে যাওয়া।ইন্দ্রদার কথা শুনে সে অবাক হয়ে গেছিল। ইন্দ্রদা চাপা স্বরে বলেছিল,“ স্যারকে বলিস না। শুনলে রাগ করবেন। আমি, সন্তোষ,  অনীক মাঝেমাঝে খেপ  খেলতে যাই“

 রাজ জিজ্ঞেস করেছিল,  “স্যার রাগ করবেন কেন?”

“ওই সব খেললে খেলা খারাপ হয়ে যায়।“

“খেল কেন?”

“টাকার জন্য।কে টাকা দেবে বল? তোদের মত পড়াশুনায় ভালও নই। এদিকে বাবাও বলে কিছু দেবে না। খেললে মোটামুটি হাতখরচ উঠে যায়।“

“কিন্তু!”

ইন্দ্রদা বলেছিল,“ নারে! আমাদের তেমন কিছু আর কিছু হবে না।দ্যাখ! তোরা চেষ্টা করে। নির্ঝর কিন্তু বেশ ভাল প্লেয়ার।“

রাজ বলতে গেছিল, ওর অবস্থা তোমার চেয়েও খারাপ ইন্দ্রদা! কিন্তু সে আর  বলে নি।

ছোটমামার কথা শুনে  এখন সে বলল,“ হু। রামলাল স্কুলটা খুব ভাল খ্যালে। সে বাদ দাও।আমার  এখন চিন্তা হচ্ছে নির্ঝরকে নিয়ে । সে স্কুলে আসছে না , খেলতেও আসছে না।“

“তাই নাকি!”

“হ্যাঁ। স্যার রেগে ফায়ার।এবার না বাদ দিয়ে দেন!”

রাজ দেখেছে ছোটমামাও  নির্ঝরের খেলার ব্যাপারে মায়ের মত নন, বাবার দিকেই বেশী সাপোর্ট করেন। তাঁরও মনে হয়  দিদি  ওকে নিয়ে বেশী মাথা ঘামাচ্ছেন। এখন অবশ্য তিনি  বিরূপ মন্তব্য করলেন না। তিনি বললেন,“দ্যাখ আবার! শরীর খারাপ হল কি না?”

রাজ মাথা নাড়ল।

ছোটমামা আর একটা কি যেন বলতে যাচ্ছিলেন। মায়ের গলা পেতেই ছোটমামা ধপ করে উঠে পড়লেন। ছোটমামা বললেন,“এই রে! দিদি কখন  একবার দোকানে যেতে বলেছিল না আনলে দিদির রান্না কমপ্লিট হবে না। যাই।দোকানটা সেরে আসি। আজ তো দারুন মেনু রে।“

“কি!”

“ক্রিপসি চিকেন না কি যেন। দিদি যা করে তাই ভাল লাগে।“

  মায়ের রান্নার বিরাট খ্যাতি। রিলেটিভরা আসার আগেই মাকে বলে দেন কি খাবে তারা। মাকে তো সে দেখেছে তিনি বসেনই না। বাড়িতে লোক আনাগোনা লেগেই আছে। মা হাসিমুখে সব সামলাচ্ছেন।


আরো পড়ুন: ফুটবল (পর্ব-১২) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়


রাজ বলল, “তাই! দাঁড়াও। আমি একবার  মায়ের কাছে ঘুরে আসি।“

‘উহু।এখন নয়।আধঘন্টা পরে যাস।রান্নাটা জমুক।“

আধঘন্টার একটু আগেই রাজ নীচে নেমে এল। সে আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়।মা আর ঝুমাপিসি দুজন এখন রান্নায় ব্যস্ত। তাকে দেখেই মায়ের মুখে একটা হাসি ফুটল।রাজ ঢাকা বাসনগুলো একটু-আধটু উলটে দেখতে শুরু করতেই মা হাঁ- হাঁ করে উঠলেন, বললেন,“একদম হাত দিবি না কিছুতে।“

রাজ  বলল, “উফ! কি সুন্দর গন্ধ বেরিয়েছে মা। একটু টেষ্ট করতে দাও মা।“

মা বললেন,“একদম। বাবার স্বভাব পেয়েছে। তাই না ঝুমা! কিছু করলেই এসে আগে টেষ্ট করবে।“

ঝুমা পিসি সায় দিয়ে মাথা নাড়ল।

বাবা এখন নেই। তবে রবিবার এমনই হয়। তার মতোই রান্নাঘরে বাবা আসেন।একটু-আধটু  টেষ্ট করেন।বাবার সাথে পাল্লা দিয়ে রাজও  পেছন পেছন আসে।

 মা একটা বাটিতে একদুটুকরো ক্রিপসি  চিকেন  দিলেন। এসব মেনু মা বাড়িতেই বানান। দেওয়ার পর বললেন,“প্রজেক্টের কাজ কদ্দুর?“

রাজ  আরাম করে চিবোতে চিবোতে বলল,“তিনপাতা হয়ে গেছে।“

মা গম্ভীর হয়ে বললেন,“এতক্ষন ধরে মোটে তিনপাতা! কি করছিলিস এতক্ষন?”

“করছিলাম তো!”

“উহু। আবার ফাঁকি দিচ্ছিস।এমন করলে কিন্তু আমি খেলতে যেতে দেব না। যা। আর কোন কথা নয়, কাজগুলো মেটা।“

রাজ তাড়াতাড়ি খেয়ে নিল। তার কাজগুলো শেষ করা দরকার। লেখা তার হয়ে যাবে।কিন্তু প্রতিটা সাবজেক্টের কিছু ছবি নেট থেকে সে বার করবে। প্রজেক্টএর কভারটাও কমপিউটারে করলে দেখতে ভাল লাগবে। কিন্তু বাবার কম্পিউটার থাকলেও প্রিন্টার নেই। ছবিগুলো সে  করে পেনড্রাইভে তুলে রেখেছে। সে তাই বলল,-“আমি একটু বেরোব।“

“এত রাতে!”

“প্রিন্ট আউট করতে হবে।“

মা বলে,“এতকিছু করার কি দরকার? হাতে লিখলে কি অসুবিধে?”

“তা হয়। কিন্তু ওটা দেখতে সুন্দর হবে।“

মা বললেন,“রাতে একা বেরোবে না। টুবলু ফিরুক। ওর সাথে যাস।“

“আচ্ছা।“

সে আবার নিজের ঘরে ফিরে আসছিল। সেসময় মা জিজ্ঞেস করলেন ,“ নির্ঝরদের বাড়ি কোথায় রে?”

“কেন?”

“তুই তো বললি  ও স্কুলে,আসছে না, খেলতে আসছে না। তা ও  কি প্রজেক্ট পরীক্ষা দেবে না? একবার ফোন করে খোঁজ নিতে পারতিস।“

রাজের এটা মনে হয়েছিল।প্রজেক্ট করার আগেই ও স্কুল আসা বন্ধ করেছে।প্রজেক্ট না করলে ফাইনাল পরীক্ষার সময় নাম্বার কমে যাওয়া অবধারিত। কিন্তু নানারকম চক্করে সে ভুলে গ্যাছে। প্রাইভেটে পড়তে যাওয়া,ইত্যাদি কাজ তো আর কম নেই।রাজ বলল,“নির্ঝরের তো  ফোন নেই।ওর জেঠুর ফোন। সে নাম্বার জেঠু দিতে বারন করে দিয়েছে নির্ঝরকে।বোঝো!

মা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,“হুম।ওর বাড়িটা বল, ভাবছি কাল একবার ওর বাড়ি ঘুরে আসব। জানি না বেচারা ছেলেটার কি হল।“

রাজ বলল, “ তুমি যাবে? আমিও যাব ভাবছিলাম।“

 মা বললেন,“সে না হয় দুজন মিলেই যাব।“

রাজের খুব উৎসাহ, কিন্তু সাথে সাথে বাবার কথা মনে পড়ল তার। সে বলল,- “বাবা কিছু মনে করবেন না তো?”

মা বললেন, “ বলার দরকার কি! “                           

রাজ বুঝল। সে হাসল।তারপর একটু চাপা স্বরে বলল,“ছোটমামাকেও জানিও না। বাবাকে বলে দেবে।“

মা মাথা নেড়ে বললেন,“ আচ্ছা!”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত