| 28 মার্চ 2024
Categories
ধারাবাহিক

অসমিয়া অনুবাদ: রক্তের অন্ধকার (পর্ব-৯) । ধ্রুবজ্যোতি বরা

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

ডক্টর ধ্রুবজ্যোতি বরা পেশায়  চিকিৎসক,অসমিয়া সাহিত্যের একজন স্বনামধন্য লেখক ২৭ নভেম্বর ১৯৫৫ সনে শিলংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীবরা ছাত্র জীবনে অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ‘কালান্তরর গদ্য’ ,’তেজর এন্ধার’ আরু ‘অর্থ’ এই ত্রয়ী উপন্যাসের লেখক হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। ২০০৯ সনে ‘ কথা রত্নাকর’ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাকি উপন্যাসগুলি ‘ভোক’,’লোহা’,’যাত্রিক আরু অন্যান্য’ ইত্যাদি। ইতিহাস বিষয়ক মূল‍্যবান বই ‘রুশমহাবিপ্লব’দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ’,’ফরাসি বিপ্লব’,’মোয়ামরীয়া বিদ্রোহ’। শ্রীবরার গল্প উপন্যাস হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা, মালয়ালাম এবং বড়ো ভাষায় অনূদিত হয়েছে।আকাডেমিক রিসার্চ জার্নাল’যাত্রা’র সম্পাদনার সঙ্গে জড়িতরয়েছেন।’ কালান্তরর গদ্য’ উপন্যাসের জন্য ২০০১ সনে অসম সাহিত্য সভার ‘ আম্বিকা গিরি রায়চৌধুরি’ পুরস্কার লাভ করেন।শ্রীবরা অসম সাহিত্য সভার প্রাক্তন সভাপতি।


অনুবাদকের কথা

আলোচ‍্য উপন্যাস ‘রক্তের অন্ধকার'(তেজরএন্ধার) একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ উপন্যাস। এটি লেখার সময় কাল ২০০০-২০০১ ছিল অসময়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দুর্যোগের সময়। সেই অশান্ত সময়ে, আমাদের সমাজে, আমাদের জীবনে এক দ্রুত অবক্ষয়ের স্পষ্ট ছাপ পড়তে শুরু করেছিল। প্রতিটি অসমিয়াইমর্মেমর্মে   একথা উপলব্ধি করে ভেতরে ভেতরে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। রাজ্যের চারপাশে দেখা দেওয়ানৈরাজ্যবাদী হিংসা কোনো ধরনের মহৎ রূপান্তরের সম্ভাবনাকে বহন করে তো আনেই নি, বরঞ্চ জাতীয় জীবনের অবক্ষয়কে আরও দ্রুত প্রকট করে তুলেছিল। আশাহীনতা এবং অনিশ্চিয়তায় সমগ্র রাজ্য ক্রমশ ডুবে যাচ্ছিল। এই ধরনের পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই যেন থমকে যেতে চায় কবির  কবিতা , শিল্পীর তুলি, লেখকদের কলম। তবে একথাও সত্যি যে শিল্পী-সাহিত্যিকরা সচেতন ছিলেন যে সমাজ জীবনের ভগ্নদশা’ খণ্ডহর’এর মধ্যে একমাত্র ‘সৃষ্টি’ই হল জীবন এবং উত্তরণের পথ। এই বিশ্বাস হারানোর অর্থ হল মৃত্যু । আর এই বিশ্বাস থেকেই সেই সময় লেখক লিখেছিলেন কালান্তর ত্রয়ী উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব – রক্তের অন্ধকার ।

এবার উপন্যাসটির বাংলা অনুবাদ নিয়ে এলাম। আশা করি ইরাবতীর পাঠকেরা এই ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত অসাধারণ উপন্যাসটিকে সাদরে বরণ করে নেবেন ।নমস্কার।

বাসুদেব দাস,কলকাতা


তরা আবার দ্রুত ভেতরে গিয়ে তার ব্যাগটা থেকে এক বোতল ঔষধ বের করে আনল।বাড়ির কাছে ফার্মেসিতে বসা একজন পরিচিত ডাক্তারের কাছ থেকে হাঁপানির ঔষধের এই বোতলটা কিছুদিন আগেই এনে রেখে দিয়েছিল।ভালো কাজ করবে বলে ডাক্তার বলেছিল। সে ঔষধের বোতলটা এনে বাবার হাতে দিল।

‘ দুই চামচ করে দিনে তিনবার খাবি। ঔষধটা নাকি ভালো কাজ করে।’

রতিকান্ত মাথা নাড়ল।

চা বিস্কুট খেয়ে থাকার মধ্যে চোখ দুটি পিটপিট করে ঔষধের বোতলটা একবার ভালো করে দেখে নিল।

‘ এই প্রেম কোথায় গেল?’– তরা জিজ্ঞেস করল–’ তার দর্শনইপাওয়াযায় না যে।’

‘ কী জানি কোথায় গেল!’– বিস্কুট খেতে খেতে  রতিকান্ত উত্তর দিল।–’ কোথায় আর বলে যায়? সারাদিন তো বাড়িতেই থাকে না।কোথায় যে লেংচে  লেংচে  ঘুরে বেড়ায় ওই জানে।’

কিছুক্ষণ কাছেই অপেক্ষা করে তরা আরম্ভ করে–’ টাকার খবরটা নাকি পাননি বাবা? কথাটা শুনে আমার চিন্তা হচ্ছে।আপনাদের জামাই আমাকে বলেছে আমিই না হয় একবার রাজধানীতে গিয়েখবরা খবর নিয়ে আসি? আমার কিছু চেনাপরিচয় আছে। এদের সম্পর্কীয়…’

তরা কথাটা শেষ করতে পারল না, রতিকান্ত চায়ের বাটিটায় শেষ চুমুক দিয়ে বাটিটা নামিয়ে রেখেই হঠাৎ হাহাকার করে উঠল।

‘ও হো, আমার ছেলেটাই মরে গেল।এখন টাকাগুলি দিয়ে আমি কী করব? কী প্রয়োজন আমার সেই সমস্ত রক্তমাখাটাকার।টাকা আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেবে কি?’

বিলাপ করার সুরে চিৎকার করে রতিকান্তহঠাৎ জোরে জোরে শ্বাস নিয়েকাশতে  শুরু করল। বাবার এই আকস্মিক পরিবর্তনে তরা খুব ভয় পেয়ে গেল। সে তখনই নতুন কিনে আনা ঔষধের বোতলটা খুলে বাবাকে ঔষধ দিতে গেল; কিন্তু বারবার রতিকান্ত বোতলটা হাত দিয়ে দূরে ঠেলে দিল। বাইরে হুলস্থূলের কথা শুনেও রান্নাঘরে বসে থাকা ভোগেই নাড়াচাড়া করল না।সেধীরেসুস্থে ভাতের জন্য উনুনে ভাতবসানোর জোগাড় যন্তর করতে লাগল।

মাথায় গুলি লাগার আগের মুহূর্তে হেম হঠাৎ যতীনের দিকে ঝাঁপ মেরেছিল।

কেন? কেন সে ঝাঁপ মেরেছিল? এই কথাটা প্রেম প্রায়ই ভাবে।ইস, সে যদি লাফটা না মারতো তাহলে তার গায়ে হয়তো   গুলি লাগত না। ওরা তো ওকে মারতেআসেনি। নিশ্চয়আসেনি। ওকে তারা কেন মারবে। ওদের লক্ষ্য ছিল যতীন। যতীনেরগায়ে গুলি চালাতেই হঠাৎ ঝাঁপ মেরে দেওয়ার জন্য তার গায়ে গুলি লাগল।

ভাগ্য, একেই বলে ভাগ্য ।

দিদি জামাইবাবু এসেছে শুনে প্রেম সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল।বাবা তাকে বারবার টাকার কোনো কথাই দিদি জামাইবাবুর  সামনে বলতে মানা করেছিল । কিন্তু সে জানে যে দিদি তার সামনে কোনো না কোনো প্রকারে কথাটা বের করে নেবেই। আর জামাইবাবু থাকতে থাকতেই কথাটা উত্থাপন করবে। ওদের জেরার সামনে দাঁড়াতে পারবে না। তাই যতটা সম্ভব দূরে সরে থাকার জন্য সে সঙ্গে সঙ্গেবাড়ি থেকে বেরিয়েপড়েছে।

লেংচেলেংচে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তার পুনরায় হেমর কথাটা মনে পড়ল।

সেই শেষ মুহূর্তে যতীনের দিকে লাফিয়ে পড়াটা।

কেন সে লাফিয়ে পড়েছিল? কেন পড়েছিল? 

ঘটনাটা ঘটার দিন বিকেল বেলা উঠোনের বকুল গাছের গোড়াতে একটা বেতের চেয়ারে যতীন বসেছিল।পাশে একটা মোড়ায় বসেছিল হেম।নানা ধরনের লোক দেখা করতে এসেছিল।গত নির্বাচনের সময় থেকে যতীন একজন বড় নেতা হয়ে উঠেছিল। নির্বাচনের সময় সে অনেক বাধা বিঘ্ন, সতর্কীকরণকে গুরুত্ব না দিয়ে দলের জন্য মনেপ্রাণে কাজ করেছিল। নির্বাচনের পরে তার দল সরকার গঠন করার পরে সে আরও বড়ো নেতা হয়ে উঠেছিল। কিছু একটা পদও পেয়েছিল। নতুন গাড়ি এসেছিল। সব সময় তার সঙ্গে একজন বন্দুকধারীদেহরক্ষী থাকত। মানুষ তাকে খাতির করতে শুরু করেছিল। তার নাম হয়েছিল। কারও জন্য কিছু একটা করার ক্ষমতা অর্জন করেছিল। সঙ্গে সঙ্গে তার বিপদও  বেড়েছিল।


আরো পড়ুন: রক্তের অন্ধকার (পর্ব-৮) । ধ্রুবজ্যোতি বরা


সেদিনও যতীন বিকেল বেলা তার সঙ্গে দেখা করতে আসা বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে দেখা করেছিল। উঠনের বকুল গাছটারগোড়ায় সে বসেছিল। চারপাশে মোড়া, চেয়ার, বেঞ্চ ইত্যাদি পেতে দেওয়াহয়েছিল এবং দেখা করতে আসা লোকগুলি সেখানে বসেছিল।মানুষগুলি এসেছিল, চলে যাচ্ছিল– একের পরে এক। হেম তাদের ভাগে ভাগে  চা এবং পান এনে  দিচ্ছিল।

সিকিউরিটিগার্ডটাও অন্যান্য দিনের মতো বারান্দার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। সে ইউনিফর্মপাল্টে সাধারণ পোশাক পরছিল। তার কার্বাইনটাঅলসভাবে হাতে নিয়ে  থাকতে থাকতেক্লান্তিবোধ করায়,বারান্দার ওপরে রেখে দিয়েছিল।

সন্ধ্যা নেমে আসছিল।মানুষের আসা যাওয়া কমে আসছিল। শেষের দু তিনটি মানুষকে যতীনবিদায় দিচ্ছিল।

হঠাৎ সাইকেলে করে তিনটি  ছেলে এসেছিল। সাধারণ ছেলে। সহজ ভাবে তারা সাইকেল থেকে নেমে সাইকেল দুটি গাছের গায়ে হেলান দিয়েযতীনের দিকে এগিয়ে এসেছিল। দুজনের গায়েই চাদর ছিল। একজন পরে এসেছিল একটি সাধারণ সোয়েটার। সোয়েটার পরা ছেলেটিএগিয়ে এসে যতীনকে কিছুটা দূর থেকে নমস্কার করেছিল। যতীন ভেতরে যাবার জন্য সেই সময়  বেতের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছিল। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে সে আগন্তুক কয়েকজনের দিকে তাকিয়ে ছিল।

হেম সেই সময়েযতীনের কাছে একটা মোড়ায় বসেছিল।

সামনের টুলের ওপরে থাকা বাটাটা থেকে সে মুখে দেবার জন্য একটা তামোল তুলে নিয়েছিল।তখনই  হঠাৎ ঘটনাটা ঘটে গেল।

চাদর পরে থাকা ছেলে দুটি হঠাৎ চাদরের নিচ থেকে দুটো বন্দুক বের করল আর কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই যতীনকে লক্ষ্য করে এবং অন্য ছেলেটি ঘুরে গিয়েসিকিউরিটিপুলিশের দিকে গুলি করতে লাগল। সোয়েটার পরে  থাকা ছেলেটি একটা পিস্তল বের করে যতীনকে গুলি করল।

সিকিউরিটির মানুষটি নিজের কারবাইন বারান্দার ওপরে ফেলে রেখে লাফ মেরে নেমে ভাঁড়ারের  পাশ দিয়েপেছনের বাগানের উদ্দেশ্যে দৌড়ে গেল। ছেলেটি তার পেছন পেছনএমনিতেই দুই রাউন্ড গুলি চালাল। ঠিক সেই সময়ই, গুলি লেগে ছিটকে পড়ে যেতেই হেম নাকি মোড়ায় বসে থাকা অবস্থা থেকে প্রকাণ্ড একটা লাফ দেয়। লাফটা সে যতীনের দিকে মেরেছিল না গুলি করা ছেলেটির দিকে মেরেছিল দূর থেকে ঘটনাটা দেখতে থাকা মানুষগুলি পরে  প্রেমকে ঠিকমতো বলতে পারেনি। সে লাফটা মারার সময় একটা গুলি এসে তার মাথায় লেগেছিল। গুলি খেয়ে সে হুমড়ি খেয়ে উঠোনেই পড়ে গিয়েছিল।সেই যে  পড়ল তো পড়লই, সে আর উঠল না। বুকে পেটে কয়েকটি গুলি লাগা যতীনের দেহটা  কিন্তু উঠোনে অনেকক্ষণ ধড়ফড় করছিল।

কিসের জন্য সে লাফ মারতে গেল, প্রেম ভেবেই চলল, কেন সে লাফ মেরেছিল।

‘সে যতীন কে বাঁচানোর জন্য লাফ মেরেছিল।’ যতীন-এর মায়ের দৃঢ় বিশ্বাস যে হেম তার ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল এবং চেষ্টা করতে গিয়েই তার মাথায় গুলি লেগে মারা গেল।

বুড়ি বারান্দার মূল দরজা থেকে ভেতরের ঘটনাটা দেখেছিল।

ঠিক তখনই তিনি কোনো কারণে দরজা দিয়ে বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে এসেছিলেন। গুলি খেয়ে ঢলে পড়ার পরেও বুড়ি বুঝতে পারেনি আসলে কী ঘটেছে। বন্দুকের শব্দ শুনেও বুড়ি কিছুই বুঝতে পারেনি। বুড়ির চোখের সামনে ছেলেগুলি তার দিকে একবার তাকিয়ে সাইকেল চালিয়ে চলে গিয়েছিল।

তখন অন্ধকার হতে শুরু হয়েছিল।

বাঁশ এবং উঁচু গাছের পাতাগুলির পেছনে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার ধীরে ধীরে পাতার নিচ থেকে বেরিয়ে এসে বাতাসে ছড়িয়েপড়তে শুরু করেছিল।

‘ আসলে সে বোধ হয় গুলি ছোঁড়া ছেলেটিকে ধরতে চেয়েছিল।’ বাগানে একজন কাজ করছিল। সেও ঘটনাটা দূর থেকে দেখেছিল।পরে সে প্রেমের কাছে সেদিনের ঘটনাটা বর্ণনা করেছিল।’ না হলে সোয়েটার পড়া ছেলেটাকে ধরতে চেয়েছিল মনে হয়।’

‘ ওকে কিসেপেয়েছিল লাফ মারার জন্য? না হলে হয়তো ওর গায়ে গুলি লাগত না।’– প্রেম আক্ষেপের সঙ্গে বলেছিল।

‘ আমার মনে হয় কথাটা।’– কাজের লোকটি বলেছিল–’ আমি স্পষ্ট দেখেছি মনে আছে– আমি বাগানের  কলাগাছেরআড়ালে  যেখানে কাজ করছিলাম, সেখান থেকে গোটা ব্যাপারটা ভালোভাবে দেখা যায়– যতীন দাদাকে গুলি করার সময়সোয়েটার পরা ছেলেটিহেমর  দিকে তাকিয়েহেসে কিছু একটা জিজ্ঞেস করেছিল।’

‘কী, কী বলছ তুমি দাদা?’ –প্রেম জিজ্ঞেস করেছিল—’হেমর দিকে তাকিয়ে হেসে কিছু একটা বলেছিল…’

‘ শপথ খেয়ে  বলছি প্রেম, আমার নিজের চোখে দেখা। আমার ভুল হয়নি। সে কিছু একটা সত্যিই হেমকে বলেছিল। কিন্তু হেম হঠাৎ লাফ দেওয়ায় তার মাথায় গুলি লেগে গেল। ওদের হেমকে গুলি করার কোন উদ্দেশ্য ছিল না।তার দিকে কেউ বন্দুকের নিশানাও করেনি। সেটা ঠিক।’

কাজের লোকের সঙ্গে বলা কথাবার্তাটুকু চট করে প্রেমের মনে পড়ে গেল ।

এই কথাগুলি নিয়ে সে যে আগেও ভাবেনি তা নয়। কিন্তু এখন কথাটা মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মনে হঠাৎ একটা নতুন দুশ্চিন্তা প্রবেশ করল। কাজ করা লোকটি এই কথাটা অন্য কাউকে বলেছে নাকি?

সোয়েটার পরা ছেলেটি হেমকে কী বলেছিল? ওরা ওকে গুলি করেনি? তার দিকে তাকিয়ে হেসেছিল। তার মানে সোয়েটার পরা  ছেলেটির সঙ্গে হেমর পরিচয় ছিল নাকি? সর্বনাশ। এ কথা যদি কোনোভাবে প্রকাশ হয়ে যায় টাকা পেতে ঝামেলা হতে পারে?

সে ইতিমধ্যে বাড়ি থেকে এসে দোকানের কাছে ক্যারাম খেলা দেখতে পেয়েছিল। গ্রামের কয়েকটি ছেলে আলকাতরার একটি খালি ড্রামের ওপরে বোর্ড পেতে খেলা আরম্ভ করে দিয়েছিল । প্রেম কে দেখে ওরা ডাক দিল–’ এসোএসোপ্রেমদাএসো। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি।’

কিন্তু প্রেমের তখন আর সময় নেই। সে ছেলেগুলি কে বলল–’ তোমরা খেল। আমাকে একটা জরুরী কাজে এখনই এক জায়গায় যেতে হবে।’ 

প্রেম তখনই কাজ করা মানুষটির ঘরের দিকে লেংচেলেংচেএগিয়ে যেতে লাগল। মাঝপথে সে ভাবল, এখন গিয়ে তো মানুষটাকে আমি বাড়িতে পাব না। সে কামলার কাজ করে।নিশ্চয় কাজে বেরিয়ে গেছে। সাধারণত সে যতীনদেরবাড়িতে কাজ করে। নিশ্চয় সেখানে থাকে সে।নিশ্চয় আছে । প্রেম পুনরায় পথ পরিবর্তন করে যতীনদের বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে আরম্ভ করল।

তার অনুমান ঠিক। মানুষটাকে সে যতীনদের বাগানে কাজ করা দেখতে পেল। রাস্তা থেকেই সে সজোরে আওয়াজ দিল।– ‘এই যে দাদা ,এদিকে শুনুন।’ 

মানুষটা বাগানে মাটি কোপাচ্ছিল। প্রেমের কণ্ঠস্বর শুনে কোদাল ফেলে সে দ্রুত এগিয়ে এল।

‘ কেন ডাকলে?’

‘ দাদা একটা জরুরি কথার জন্য এলাম।শোন’, প্রেম ফিসফিস করে বলতে লাগল– একটা কথা বড় বিশ্বাসের সঙ্গে তোমার কাছে বলতে চাইছি। তুমি যে আমাকে বলেছিলে গুলি খাওয়ার আগে যতীন দাদাকে গুলি করা ছেলেদের মধ্যে সোয়েটার পরা ছেলেটি হেমর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলেছিল? আর ওরাহেমর দিকে বন্দুকের নিশানা করেনি বলেছিলে। হেম লাফ দিয়ে উঠেছিল বলে তার গায়ে গুলি লেগেছিল বলেছিলে। তাইতো?’

মানুষটা সজোরে মাথা নাড়াল। 

   

.

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত