| 20 এপ্রিল 2024
Categories
শারদ সংখ্যা’২২

শারদ সংখ্যা গল্প: রাজনীতি ফাজনীতি । পার্থসারথি গুহ

আনুমানিক পঠনকাল: 11 মিনিট

১.

জীবনে নানা বিষয়ে উঁকিঝুঁকি মারলেও কাজের কাজ কিছুই হয় নি রজতের। মধ্য চল্লিশে পৌঁছে রাজনীতিতে একটা শেষ ট্রাই নিচ্ছে সে।

রজতের ছোটবেলার বন্ধু বিদ্যুত বলেছে, ” কোনও কিছুতেই তো লেগে থাকতে পারলি না। দ্যাখ এবার পলিটিক্সের ট্রিকসটা মাথায় ঢোকাতে পারিস কিনা?”

রজতকে রাজনীতির বুদ্ধিটা অবশ্য গছিয়েছে নিবারণ সেনাপতি।

নিবারণের পাড়ার মোড়ে জমজমাট মিষ্টির দোকান। সেই দোকানে কিছুদিন ম্যানেজারি করেছে রজত। কিন্তু হিসেবটিসেব ঠিকমতো রাখতে না পারায় চাকরিটা থাকে নি।

প্রায়ই নিবারণ দেখত যে পরিমাণ টাকা ক্যাশে থাকার কথা তার চেয়ে কম থাকছে। এটা তো ঠিক নয়। ব্যবসা চৌপাট হয়ে যাবে।

নিবারণ ভালই জানত রজত আর যাই করুক পরের টাকা ছুঁয়েও দেখবে না। তাও ব্যবসার ব্যাপার বলে কথা। ছাড়া তো যায় না।

ছানবিন করে দেখা গেল কাস্টমারদের থেকে ঠিকমতো টাকাপয়সা বুঝে নিতেই ভুলে যাচ্ছে রজত পাল। সবাই তো আর ধোঁয়া তুলসিপাতা নয়।

তবে ভাল মানুষও কম নেই। তাঁদের মধ্যে একজন এ পাড়ার ষষ্ঠী পাকড়াশি। বয়োবৃদ্ধ মানুষটি এই বয়সেও যথেষ্ট সবল এবং সচল।

বাড়িতে নাতজামাইদের আসার খুশিতে নিজেই চলে এসেছিলেন নিবারণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে। নাতনিদের কথা দিয়েছিলেন, “নাতজামাইদের এমন চিত্রকূট আর নলেন গুড়ের সন্দেশ খাওয়াব যে ওরা তোদের কাছ ছাড়বে না মোটে। “

পাঁচশো টাকার মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরে দেখলেন ওমা এতো অনেক মিষ্টি দিয়ে দিয়েছে। আনন্দের আতিশয্যে তখন অতো বুঝতে পারেন নি। ষষ্ঠী পাকড়াশি বেজায় ধর্মপ্রাণ,নীতিনিষ্ঠ মানুষ। বাড়ির সবাই হা হা করে উঠলেও তক্ষুণি তিনি ছুটেছিলেন দোকানে।

সেসময় নিবারণও দোকানে চলে এসেছিল। তার সামনেই রজতকে আচ্ছা করে ধুনলেন ষষ্ঠী।

“কী বেআক্কেলে মানুষ তুমি? আমি বললাম পাঁচশো টাকার মিষ্টি দিতে। আর তুমি কিনা সাতশো টাকার মিষ্টি দিয়ে বসে আছো। “

এতো গেল বেশি দেওয়ার গল্প। পঞ্চাশ,একশো,দুশো টাকার মিষ্টি খেয়ে অল্প টাকা ধরানোর কেসও হত এন্তার। ফলে রজতের প্রতি নিবারণ সহানুভূতিশীল হলেও ওকে দোকানের কাজে রাখতে পারে নি আর।

রজতও তার এই গোলগাপ্পা বুদ্ধি নিয়ে কিছুই করে উঠতে পারে নি। বেশ কয়েক জায়গায় চাকরি করতে গিয়ে দুদিনের মধ্যেই মালিকের ঘাড়ধাক্কা খেতে হয়েছে। সবাই তো নিবারণের মতো নয়।

একবার ব্যবসা করার চেষ্টাও করেছে। দোকানে দোকানে স্টেশনারি জিনিস ডেলিভারি করার কারবার। কিন্তু এত টাকা ধারদেনা দিয়ে দিয়েছে যে টাকা ওসুল করতে পুঁজিপাটা গড়িয়াহাটা হয়ে গিয়েছে।

সেই রজতই নানা ঘাটের জল খেয়ে এখন রাজনীতিতে পা গলাতে চলেছে।

রাজনীতি তো আর আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ নয়। যে ঘষাঘষি করামাত্র ইচ্ছেপূরণের দৈত্য এসে গেল। আর মনোমত কোনও পোর্টফোলিও দিয়ে দিল।

এখানেও অনেক দড়ি টানাটানি, লেগ পুলিং আছে। তাছাড়া যারা এতদিন আদাজল খেয়ে রাজনীতির মূলস্রোতে ভিড়ে আছে তারা কী এতো সহজে জায়গা ছেড়ে দেবে?

তারওপর রাজনীতি তো আর মঙ্গলগ্রহে করা যাবে না। একটা না একটা দল বাছাই করতে হবে। পুরো রাজ্য দাপিয়ে বেড়ানো দুটো পার্টির একটাতেই নাড়া বাঁধতে হবে রজতকে। এমনিতে রুলিং পার্টির দিকে টান থাকে সকলেরই। কিন্তু এখন যে আবহ তাতে আবার যুযুধান বিরোধী দলও বেশ পাদপ্রদীপে চলে এসেছে।

এ পাড়ায় শাসক দল “গণতান্ত্রিক দল”-এর অফিস মোড়ের মাথায়। কাউন্সিলর গদাই রক্ষিত তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে দুবেলা আসর জমায়। পাড়ার লোকেও যাবতীয় সমস্যায় নিয়ে তার কাছেই ছুটে যায়। তাছাড়া কতরকম সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতেও অঞ্চলবাসী আসে।

প্রথমে সেদিকেই পা বাড়িয়েছিল রজত। পার্টি অফিসের সামনে লম্বা ভিড় দেখে আর এগোতে সাহস করল না।

শাসক দলের মাতব্বর বিশু দত্ত ওকে দেখে জিজ্ঞেস করল, ” অ্যাই রজতদা তুমি পার্টি অফিসের সামনে ঘুরঘুর করছ যে বড়? কী ব্যাপার বলো তো? “

” না সেরকম কিছু নয়। এদিকটা দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম গদাইবাবু কত ব্যস্ত থাকেন। যদি একবার দর্শন মেলে আর কি? ” চটজলদি একটা সাফাই দিতে গেল রজত।

বিশুর অবশ্য সেই ছেদো যুক্তি আদৌ পছন্দ হয় নি।

” কেন গদাইদা কি রাধামাধব মন্দিরের বিগ্রহ নাকি? যে অমন দর্শনের প্রয়োজন পড়েছে? ” বিশু এবার রীতিমতো দাবড়ানি দিয়ে উঠল।

কোনওরকমে বিশুর চমকানি কাটিয়ে বেরতে পেরেছে। তারপর মোড়ের মাথাটা ছাড়িয়ে একটু হেঁটে আনমনে কখন বিরোধী পার্টি “স্বদেশ পার্টি”র অফিসঘরের সামনে এসে পড়েছে খেয়ালও করেনি রজত।

ঘোর কাটল ওকে ঘিরে একটা ছোটখাটো ভিড় দেখে। ভিড়টা আসলে স্বদেশ পার্টির ছেলেপুলেদেরই। তাদের মধ্যে পল্টু মণ্ডল বলে ছেলেটাকে বেশ চিনতে পারল রজত।

অবশ্য তার আগেই পল্টু কপচে উঠল, ” কী ব্যাপার বলো তো রজতদা, তলে তলে আজকাল স্পাইগিরি শুরু করেছো নাকি? “

” স্পাইগিরি মানে? ” গোবেচারা রজতও পাল্টা কেমন একটা ফুঁসে উঠল।

” আরে তোমাকে তো দেখলাম একটু আগেই গণতান্ত্রিক দলের অফিসের সামনে ওই বিশু মস্তানের সঙ্গে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছ। তা ওই ব্যাটাই কী পাঠিয়েছে আমাদের হাঁড়ির খবর আনতে?”

রাজনীতির জল মাপতে গিয়েই এই অবস্থা! না জানি এর ভিতরে জবরদস্তি এন্ট্রি নেওয়ার চেষ্টা করলে কী হবে?

২.

যদিও দুটো পার্টি থেকে এমনতর ” অভ্যর্থনা ” পাওয়ার দুদিন পর সেই রাজনৈতিক দলেই চাকরি লেগে গেল রজতের। খানিকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই স্বদেশ পার্টির মুখপত্র ” স্বদেশিয়ানা”র প্রুফ রিডারের কাজে বহাল হল রজত। আপাতত মান্থলি আকারে বেরচ্ছে।

এইপ্রসঙ্গে একটা কথা বলা ভাল রজত কিন্তু চাকরির জগতে অষ্টরম্ভা হলেও বাংলায় এমএ পাশ। বাংলা ভাষায় ওর দখলও যথেষ্টই।

এই গুণের কথাটা কোনওভাবে স্বদেশ পার্টির বড় নেতাদের কানে গিয়েছিল। যদিও রজতের ধারনা নিবারণ সেনাপতিই এই যোগাযোগের মূল স্থপতি। ওর দোকানে রজতকে কাজে রাখতে না পারলেও ছেলেটার একটা গতি হোক সেটা মনেপ্রাণেই চাইছিল নিবারণ।

তারওপর স্বদেশ পার্টির এক রাজ্যনেতা ওর দোকান থেকে প্রায়ই অর্ডার করে মিষ্টি টিষ্টি আনাত। তাকে বলেকলেই হয়তো।

নিবারণ সেটা মোটেই স্বীকার করল না।

জিজ্ঞেস করায় খানিক বিরক্তি সহকারে বলল, ” ধুস। তোমার চাকরির ব্যবস্থা করতে ভারি বয়েই গেছে। সন্দীপবাবু আমার দোকানের মিষ্টি পছন্দ করে। কড়কড়ে ক্যাশ দিয়ে তা কেনেন। এর বাইরে ওঁর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। “

স্বদেশ পার্টির মুখপত্র “স্বদেশিয়ানা” র অফিসটা বেশ বড়সড়। হালফিলের কর্পোরেট সংস্কৃতির একটা হাল্কা ছোঁয়াচ আছে। তবে কারণে, অকারণে পার্টির বড়,মেজো, ছোট কর্তাদের ভারী আনাগোনা।

ওরা আবার জিজ্ঞেস করেন কাগজ নিয়ে।

” ওই খবরটা গেল না কেন? কিংবা আমাদের ওই রক্তদানের নিউজটা এত ছোট করে ছাপা হয়েছে কেন? “

মান্থলি কাগজ আর ডেইলি কাগজের ফারাকটুকুও যারা বোঝে না, তাদের থেকে এর চেয়ে বেশি কিইবা আশা করা যায়। মুখবুঝে নেতাদের হম্বিতম্বি সহ্য করত রজত।

মাঝেমধ্যে বলত, ” কোন খবরটা যাবে বা কোনটা বড় করে ছাপবে সেটা তো সম্পাদক মশাই দেখেন। আমি তো ওই একটু বানান টানানগুলো ঠিকঠাক করে দি। “

মুখে এটা বললেও কার্যত খবরগুলো কাটছাট করা থেকে কোন খবরটা গুরুত্ব পাবে এই ব্যাপারে রজতের মতামতকে ভারী গুরুত্ব দিচ্ছিলেন স্বদেশিয়ানার সম্পাদক চিত্ত নন্দী। “

চিত্তবাবু পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ ঠিক নন। এককালে চুটিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন। ফলে বিষয়টা বোঝেন। রজতের ওপর কাগজের বেশ কিছু দায়িত্ব তাই অক্লেশে চাপিয়ে দিয়েছিলেন।

রজতের কাছে যেসব লেখাগুলো কাঁটাছেড়া করতে পাঠানো হত তার মধ্যে ” উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে ” কেস এন্তার। যেসব নেতাদের টিভি চ্যানেলে বসে রীতিমতো ঝড় তুলতে দেখে তাঁদের বাংলা বানানের দশা থেকে হতভম্বও হতে হচ্ছিল। আর বাক্য গঠনে তো এরা একেকজন ওস্তাদ।

আরও একটা সমস্যাও প্রবল হয়ে উঠতে থাকল। বাংলা ভাষার ঘাড়ের ওপর এতো অন্য ভাষা চেপে যাচ্ছিল যে মাতৃভাষার প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছে।

চিত্তদাকে বলেওছিল সেকথা, ” চিত্তটা দেখুন এই শব্দগুলো তো ঠিক বাংলা নয়। এর চেয়ে সরল বাংলাতে লিখলে ক্ষতি কিসের?”

চিত্তটা সমস্যাটা বুঝলেও কেমন যেন পাশ কাটিয়ে যেতেন।

বলতেন, ” আরে একটু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো। তাছাড়া বাংলা তো সকলকে বুকে টেনে নিয়েছে। বৃহত্তর স্বার্থে অন্য ভাষাকেও না হয়…”

রজত তাও বলে যেত, ” কিন্তু রাজ্যের মানুষের কথা ওভাবে বলা কী ঠিক হচ্ছে? আফটার অল স্বদেশিয়ানা তো নিখাদ বাংলা মুখপত্র।”

” তুমি দেখছি বেশি বুঝে গেছো। আর বেশি এগিও না। এবার থামো। ” চিত্তটা বুঝিয়ে দিতেন, আর নয়। এবার থামার সময় এসে গিয়েছে।

দোষ হয়তো রজতেরই। যেখানেই কাজ করে সেই প্রতিষ্ঠানটাকে নিজের করে ভেবে বসে। ভুলত্রুটিগুলো শুধরে ঝকঝকে তকতকে করতে চায়। ভুলে যায় মালিক নিজেই হয়তো এভাবে মান্ধাতার কালচার ধরে রাখতে চাইছে।

তাও সেই স্বদেশ পার্টিতে কাজ করতে গিয়ে ওকে আবার পার্টি মেম্বারও করা হল।

চিত্তদা একদিন হাতে একটা ফর্ম দিয়ে বললেন, ” এটা ভর্তি করো দিকিনি। “

” এটা কি চিত্তদা? “

” ভয় নেই তোমার সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছি না। এটা পার্টি মেম্বারশিপ ফর্ম। বোঝোই তো এটা রেজিমেন্টেড দল। এখানে অনেক নিয়মকানুন রয়েছে। “

” এই তো বেশ আছি চিত্তদা। আবার পার্টির মধ্যে জড়ানো কেন? ” শঙ্কিত শোনাচ্ছিল রজতের গলা।

” সেইজন্যই তো। খাতায় কলমে তোমাকে পুরোদস্তুর পার্টি মেম্বার বানিয়ে নিচ্ছি। দলের মধ্যে কথা তোলার লোকের তো অভাব নেই। আর তুমি বাবা যেমন বোকাসোকা মানুষ। তাতে পত্রিকার কোনও গুরুত্বপূর্ণ খবর আগাম যদি বাজারে ছড়িয়ে পড়ে তখন? “

এভাবেই শেষপর্যন্ত রাজনীতির পৈতে চড়েছে রজতের গায়ে। এতে ও যতই নারাজ হোক না কেন বিদ্যুত আর নিবারণ দেখা গেল বেশ খুশি।

নিবারণ তো বলেই দিল, ” তুমি লম্বা রেসের ঘোড়া। “

পার্টির একটা নিয়ম আছে। সেই নিয়ম মেনে বাধ্য হয়ে ওকে “স্বদেশ পার্টি”র মেম্বার হতে হয়েছে। তাবলে এরমধ্যে ঘোড়া টোড়া আবার আসছে কী করে?

ভাগ্যের কী অদ্ভূত পরিহাস! সেই রাজনীতির ঘোড়াই বনতে হল রজতকে।

“স্বদেশ পার্টি”র প্রুফ রিডারের কাজ করতে করতেই
টুকটাক এক আধটা প্রবন্ধ লিখত রজত। অনেকসময় ফিলারের কাজে এসে যেত।

চিত্তদা বলতেন, ” ভাই রজত একটা পাঁচশো শব্দের আর্টিকেল লিখে দাও তো ঝটাপট। সামনের ইস্যুতে ধরাতে হবে। “

সত্যি বলতে যেখানে যে কাজই করেছে কোনওদিনই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের ওপর টু শব্দ করে নি।

এখানেও তাই পুরনো অভ্যেস ঝালিয়ে প্রবন্ধ লিখতে শুরু করেছে দেদার। বলাবাহুল্য, চিত্তদা পইপই করে বলে দিয়েছেন, ” এটা কিন্তু পার্টির কাগজ। আমাদের লাইন মাথায় রেখে লিখবে। “

সেদিক থেকে কোনও ফাঁকফোকর রাখে নি রজত। প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর স্বদেশ পার্টির হয়ে ওর কলম ক্রমশ ক্ষুরধার হয়ে উঠেছে। তাবড় নেতারা পর্যন্ত স্বীকার করেছে সেকথা।

” গত জুলাই মাসের স্বদেশিয়ানায় আপনার লেখাটা আমি সযত্নে রেখে দিয়েছে। টিভির ডিবেটে দারুণ কাজে আসছে। ” রাজ্য কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতা অনির্বাণ চৌধুরী বাহবা দিয়ে গিয়েছেন কিছুদিন আগেই।

খোদ রাজ্য সভাপতি প্রকাশ বারুই একদিন টেলিফোন করেছিলেন। সাধারণত স্বদেশিয়ানার অফিসে ওই সময় ফোনটা এলে রজতই ধরে।

গলাটা শুনেই কেমন চেনা চেনা লাগছিল। মস্তিষ্কের কোষগুলো তোলপাড় আরম্ভ করেছিল বক্তার নাম খুঁজে বের করতে।

অবশ্য মস্তিষ্কের চাপ কিছুক্ষণের মধ্যে কাটিয়ে দিলেন প্রকাশবাবুই।

” একটু রজতবাবুকে ডেকে দেওয়া যাবে? আই মিন রজত পাল।আমি স্বদেশ পার্টির রাজ্য সভাপতি প্রকাশ বারুই বলছি। “

” হ্যাঁ স্যার বলুন। আমি রজত বলছি। ” কাঁপা কাঁপা গলায় কোনওমতে উত্তর দিয়েছিল।

মনে মনে শঙ্কা হচ্ছিল, ” কী জানি। সুখ আর সহ্য হল না। এই চাকরিটাও বোধহয় গেল। “

” আরে আপনি তো পুরো কামাল করে দিয়েছেন। কী সব শিহরণ ধরানো আর্টিকেল লিখছেন। চারিদিকে ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছে। “

ওর লেখার প্রশংসায় তখন আরও কত কী বলে চলেছেন রাজ্য সভাপতি মহাশয়।

সত্যি বলতে ওর এতো প্রশংসা ঠিকভাবে নিতে পারছিলেন না আরেকজন। তিনি স্বদেশিয়ানা’র সম্পাদক চিত্ত নন্দী। দুদিন এসে তাঁর অধঃস্তন এতটা প্রচার পাচ্ছে এটা কাঁহাতক কার ভাল লাগে।

চিত্তদার বিরোধিতায় অবশ্য কিছু এসে যায় নি। হঠাৎ করেই জীবনের স্লগ ওভারে এসে সৌভাগ্যের দরজাটা যেন চিচিং ফাঁক মন্ত্রে খুলতে আরম্ভ করেছে ।

এরপর যেটা হয়েছে সেটা শুধু রজতের কাছেই নয়, ওকে যারা চেনে জানে তাদের কাছেও বিস্তর বিস্ময় জাগিয়েছে।

আপৎকালীন নোটিসে রজত পালকে স্বদেশ পার্টির স্পোকসপারসন করে দেওয়া হল।

টিভি চ্যানেলে বসতে হবে শুনে আকাশ থেকে নয়, মহাকাশ থেকে পড়ার দশা হয়েছিল। কিন্তু ওই যে কর্তৃপক্ষের কথা অমান্য করার ধাত নেই।

শুরু হয়ে গেল নতুন ইনিংস।

যে রজত পালকে এতদিন একটা ক্যাবলা গোছের লোক বলে জানত, বাকবিতণ্ডায় তার তুখোড় উপস্থিতি দেখে সবাই অবাক।

পয়েন্ট ধরে ধরে যেভাবে ” গণতান্ত্রিক দল”, “সংগ্রামী ফ্রন্ট ” এর মতো হার্ডকোর রাজনৈতিক দলের তুর্কী নেতাদের বক্তব্য খণ্ডন করতে থাকল তাতে আলোড়ন পড়ে গেল বললে হয়তো কমই বলা হবে। চ্যানেলগুলির অভ্যন্তরীন সমীক্ষাতেও ধরা পড়ল এই মুহূর্তে পলিটিক্যাল স্পোকসপারসনদের মধ্যে শিখরে আছে রজত পালের টিআরপি।

পালটে যাওয়া আবহে রজতের চেনাজানা বৃত্তেও যথারীতি অনেক নতুন মুখ জুড়ে গেল। কিন্তু পুরনোদের মধ্যে ন্যাংটো বয়সের বন্ধু বিদ্যুত আর মিষ্টির দোকানের মালিক নিবারণ সেনাপতি পুরো স্টিকার হয়ে উঠল। ইতিমধ্যে নিবারণ অবশ্য প্রোমোটিংয়ে কারবারও চালাচ্ছে চুটিয়ে। মিষ্টির দোকানটাও ততোদিনে ফুল এয়ার কন্ডিশনড হয়ে উঠেছে।

রজত পালের বাড়িওয়ালা নৃপেন পুরকাইত পর্যন্ত এখন আর বাড়িভাড়া চেয়ে পাড়া মাথায় করে না।

রজত নিচের তলার একটা কোনের ঘরে থাকে। তাও দু-তিনবছর অন্তর ভাড়া বেড়ে বেড়ে সেটা নেহাত ফ্যালনা অ্যামাউন্ট নয়। খুব বেশি হলে হয়তো মাস তিনেক চারেকের ভাড়া বাকি পড়ে। আবার একসঙ্গে দিয়েও দেয় রজত। তাও খ্যাঁক খ্যাঁক করত লোকটা।

এখন সেই নৃপেনই রজতকে বলেছে, ” কোনও তাড়া নেই। সময়-সুযোগ মতো দেবেন। এতো আপনার নিজেরই ঘর। “

ঘর অবশ্য সেই অর্থে নেই রজতের।

ছোট বয়সেই বাবাকে হারিয়ে তার জীবনে সংগ্রামের শুরু। কলেজে পড়াকালীন মাও চলে যান। আত্মীয়স্বজনরা কোনওদিনই রজতের পাশে দাঁড়ায়নি। সে অবশ্য একদিকে ভালই। রজতও চিরকাল একাচোরা স্বভাবেরই।

পার্টির রঙ ওর ক্যানভাসে ইচ্ছেমতো তুলি বুলোতে শুরু করার পর থেকে নিরিবিলি থাকার সুখ ঘুঁচল রজতের। পাড়াতে সেভাবে এখন থাকা হয় কোথায়। সেই সাড়ে দশটা, এগারোটা নাগাদ বেরিয়ে রাত প্রায় বারোটা হয় ঘরে ঢুকতে। খাওয়া দাওয়া অধিকাংশ দিন পার্টি অফিস বা নেতাদের বদান্যতাতেই হয়। এমনকি থেকেও যায় মাঝেমধ্যে ওই পার্টি অফিসে। সকালে প্রায়ই পার্টির গাড়ি এসে নিয়ে যায়। আর অতো রাতে এমনি আসার তো প্রশ্নই নেই। টিভি চ্যানেলের গাড়িই অধিকাংশ দিন নামিয়ে দেয়।

রাজনীতির পাকচক্রে যত জড়িয়ে যেতে থাকল ততই নিজেকে কেমন খাঁচাবন্দি মনে হতে থাকল রজতের। স্বদেশ পার্টির বেঁধে দেওয়া নিয়মে জাগলারি দেখাতে হচ্ছে। কিন্তু এটা তো তার স্বভাব নয়। এভাবে কোনওকিছুতে বাঁধা পড়া তার ধাতে নেই।

রজত যতই যাই ভাবুক, হাঁপিয়ে উঠুক না কেন, পার্টি কিন্তু তার আরও জড়িয়ে যাওয়ার আয়োজন ততদিনে করে ফেলেছে।

এই জড়িয়ে যাওয়ার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল রজতকে আসন্ন বিধানসভা ভোটে দলের প্রার্থী করার চিন্তায়। এক্ষেত্রেও তার কোনও আপত্তি ধোপে টিকল না।

রজতকে অবশ্য প্রার্থী করা হচ্ছে শহর থেকে অনেকটা দূরের এক মফস্বল অঞ্চলে। ওর মতামত কোনদিনই বা কে চেয়েছে।

কিন্তু ভোটে দাঁড়াতে হলে তার তো নানা প্রস্তুতি আছে। পার্টি থেকে বলে দেওয়া হলো, ” কিচ্ছু চিন্তা করবেন না। ওই এলাকাটা আমাদের গ্রিপে আছে। খালি একজন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ক্যান্ডিডেট দরকার ছিল। “

” কিন্তু আমি তো এই ভোট ফোটের কিছুই বুঝি না। ” আলতো একটা প্রতিবাদ করতে গিয়েছিল রজত।

” ধুর মশাই। নিজের জোরে জেতা যায় নাকি? ওসব পার্টি বুঝে নেবে। আপনি এখন নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমোন দিকিনি। “

ভোট ঘোষণার আগেই রজতের এই প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারটা ঠিক করেছিল দল। সেইমতো ওই কেন্দ্র মানে নিরাপদপুরে নাকি যাবতীয় অ্যারেঞ্জমেন্ট করা হচ্ছে। এসব কথা কানাঘুষোয় কানে এল। মনে মনে বুঝে গেল নিরাপদপুরের নিরাপদে থাকার দিন এবার শেষ। পার্টির মাসলম্যানদের দাপাদাপিতে আর কদিন পর থেকেই সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হতে চলেছে।

রজতের মধ্যেকার সদাজাগ্রত বিবেককে টুঁটি টিপে মারার জন্য আসরে অবতীর্ণ হত বিদ্যুত,নিবারণরা।

কান ঝালাপালা করে বিদ্যুত বোঝাত, ” হারাকিরি করিস না এখন। আগে এমএলএ টা হয়ে যা। তারপর দেখা যাবে। “

নিবারণ আর এক কাঠি ওপরে। বলত, ” আরে রজতবাবু ভগবান যেটা দুহাত ভরে দিচ্ছে সেটা একটু নিতে শেখো। আর বেশি হয়ে গেলে চিন্তা কিসের। আমরা তো আছিই। “

গণতান্ত্রিক দল এর বিশুও এদিককার পল্টুকে ম্যানেজ করে স্বদেশ পার্টিতে ঢুকতে চাইছে। আসলে ওদিকের ব্যবসাটা যে ঠিক জমছে না সেটা বিলক্ষণ বুঝে গিয়েছে।

একদিন রাতে বাড়িতে ঢোকার সময় হাজির বিশু।

” দাদা এই অবোধের দিকেও একটু তাকাও প্লিজ। ” হাত কচলে টচলে কোনওরকমে কথাটা বলেই ফেলল বিশু।

” আমি তোমায় দেখব? কী বলছো গো বিশুদা? “

” এই দাদা টাদা প্লিজ বলো না। তুমি কতো মান্যিগণ্যি মানুষ।” জিভটিভ কামড়ে বলে উঠল বিশু।

বিশু বিদায় নিলে কী হবে পল্টু পিছনে পড়ে গেল। ওকে নাকি রজতের ভোট মেশিনারির দায়িত্ব দিতে হবে।

” কী বলছো তুমি আমার মাথায় ঢুকছে না। ভোট মেশিনারি ফারির আমি কী বুঝি? এতবড় পার্টি। নেতাদের ধরো তুমি। “

পল্টু অবশ্য নাছোড়। ” তুমি বললে ঠিক একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

অগত্যা, ” ঠিক আছে দেখছি। ” বলে আপাতত পল্টুকে ঠেকিয়েছে রজত।

অফিসিয়ালি ওর নাম ঘোষণা হওয়ার পর অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা ঘটল। মনোনয়নপত্র দাখিল করার ঠিক দুদিন আগে বেশ রাত নাগাদ একটা ফোন এল রজতের কাছে। সবে শোওয়ার আয়োজন করছে তখন।।

” কী ব্যাপার দাদা? সব ঠিকঠাক তো? না মানে এত রাতে ফোন করেছেন?” রজতের গলায় উদ্বেগের সুর।

” আমার সব ঠিকই আছে। বললাম তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। মানে স্টেট প্রেসিডেন্ট আমায় দায়িত্ব দিয়েছে আর কী। “

” কী হয়েছে দাদা। ” রজতের গলা বোধহয় একটু কেঁপে উঠেছে।

” তোমার তো মনে হয় আগামীকাল সকালে নিরাপদপুর যাওয়ার কথা? “

” হ্যাঁ দাদা। পার্টি তো সেকথাই বলেছে। কাল পৌঁছে ওখানকার ভাড়া বাড়িতে উঠব। তার পরের দিন তো লোকাল ডিএম অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়া। “

” হ্যাঁ। সেজন্যই বলছি। তোমাকে আর নিরাপদপুর যেতে হবে না। ওখানে পার্টি অভিনেত্রী রোজিকে প্রার্থী করছে। ওই যে মাস খানেক আগে আমাদের পার্টি জয়েন করল না। কাল সাংবাদিক সম্মেলন করা হবে রাজ্য দফতরে। “

” কিন্তু দাদা। তাহলে আমি? ” রজতের গলায় ভেঙে পড়ার সুর স্পষ্ট।

এতদিন কী তাহলে রাজনীতির প্রতি ওর অনাসক্তিটা সবই ওপর ওপর। ভিতরে ভিতরে কাল্পনিক একটা সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। সেই বেলুনটাই দুম ফটাস করে দিল ফোনটা।

পরেরদিন সকাল থেকে আর খোঁজ মিলল না রজতের। কী ব্যাপার? বাড়িওয়ালা নৃপেনই প্রথম দেখল ওর ঘরে তালা ঝোলানো।

কিন্তু এত সকালে তো ওর বেরনোর কথাই নয়। বেলা দশটার পর স্বদেশ পার্টির গাড়িতে চেপে সটান নিরাপদপুর যাওয়ার কথা। নৃপেন এই ঘটনার সাক্ষী থাকতে নিবারণের গাড়িতে নিজের একটা ব্যবস্থা পাকা করে নিয়েছে। সেই গাড়ির আরেক সম্ভাব্য সওয়ারী হল বিদ্যুত।

শেষপর্যন্ত শুধু নিবারণ, বিদ্যুতই নয় বিশু এবং পল্টুও এসে গিয়েছে আসরে। আর বিশু এবং পল্টু আসা মানে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার পিছু পিছু এক দঙ্গল লোকও হাজির।

হাজারো খোঁজ করেও রজতের কোনও ঠিকানা মিলল না।

বিদ্যুতকে এদিকে সমানে দাবড়ে চলেছে নিবারণ।

“আপনার বন্ধুর কাল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কথা। আর আজই তিনি গায়েব। কিছুক্ষণ পরেই তো পার্টির গাড়ি আসবে ওকে নিয়ে যেতে। কী বলব এখন? ” যত ঝামেলা যেন তার ঘাড়ে এমনই মনোভাব নিবারণ সেনাপতির।

ঘটনার আকস্মিকতায় বিদ্যুতও কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েছে। মনে মনে কত স্বপ্নই সযতনে লালিত পালিত করছিল। রজত ওর ছোটবেলাকার বন্ধু। ব্যাটা একবার ভোটে জিতে এমএলএ হলে সবার আগে বউয়ের সরকারি চাকরিটা পার্মানেন্ট করবে। বহুদিন করে কনট্র‍্যাকচুয়াল জাঁতাকলে পড়ে আছে। আর হ্যাঁ, সরকারি স্কিমের সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজের জন্য প্রায় মাগনায় একটা ফ্ল্যাট বাগিয়ে নেবে। বিদ্যুতের নিরেট মস্তিষ্কে এই বুদ্ধি থোরি খেলত। ওর বই শিখাই তো পইপই করে পড়িয়েছে।

নিবারণ সেনাপতিও শহরের বুকে তার মিষ্টির দোকানের ফ্র‍্যাঙ্কাইজি ছড়িয়ে দিতে চায়। একবার খালি রজত ভোটে জিতে যাক। তারওপর যদি একটা ছোটখাটো মন্ত্রী পদ বরাতে জোটে তাহলে শুধু এই শহর নয় পুরো রাজ্যে নিবারণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ছড়িয়ে পড়বে। চেইন বিজনেসের ছড়ি ঘোরাবে সে।

বিশু আর পল্টুও কত সান্টিং করে আসছে। একবার রজত ভোটে জিতলে পুরো এলাকার দখল নেবে ওরা। এমনকি নিরাপদপুরেও ওদের একটা ব্রাঞ্চ খুলে বসবে। ওখানকার কতগুলো টাপোরির সঙ্গে হাল্কা ফুল্কা কথাও এগিয়ে আছে।

এদিকে ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে গিয়েছে। রজতের সন্ধান নেই। এসব খবর তো আর চাপা থাকে না। রাজ্যের টিভি চ্যানেল, খবরের কাগজওয়ালারা সমবেত হয়েছে। তারা স্পট থেকে লাইভ করছে। এমন গরম খবর ছেড়ে দেওয়া যায় নাকি?

লাইভে দেখাচ্ছে, ” নিরাপদপুরে স্বদেশ পার্টির প্রার্থী রজত পাল আচমকা গায়েব হয়ে গিয়েছেন। সকাল থেকেই তার কোনও পাত্তা নেই। ” বাড়িওয়ালা নৃপেন, নিবারণ, বিদ্যুত মায় বিশু আর পল্টুর বাইটও দেখানো হচ্ছে বারংবার। ওদের চোখের দুকূল বেয়ে যেন গঙ্গা-যমুনা উপচে পড়ছে।

এদিকে শাসক দল গণতান্ত্রিক দল আশঙ্কার গন্ধ পাচ্ছে রজত অন্তর্ধানের এই ঘটনায়। তাদের অভিযোগ রজত পালকে কায়েমি স্বার্থ চরিতার্থ করতে হয়তো বলির বকরা বানানো হয়েছে। বলাবাহুল্য, এক্ষেত্রে তাদের অভিযোগের আঙুল স্বদেশ পার্টির দিকে।

অন্যদিকে স্বদেশ পার্টি আবার গণতান্ত্রিক দলের কারসাজি দেখছে এই ঘটনার পিছনে। ওদের নেতারা জানালেন পার্টি এই অন্তর্ধানের তদন্ত নিজের মতো করে চালাবে। তবে গণতান্ত্রিক দলের রাজত্বে পুলিশ প্রশাসন কতটা সাহায্য করবে সেই ব্যাপারে তাদের সন্দেহের কথা জানাতে ভোলে নি।

এই ঘটনার পর প্রায় মাস দুয়েক পর একদিন আচমকাই ফিরে এল রজত পাল। নৃপেন পাল তো তাকে ঘরে ঢুকতেই দিচ্ছিল না।

” দুম করে চলে গেলাম। আবার হুটহাট করে ফিরে এলাম। এসব এখানে চলবে না। আমার বাড়ির একটা নিয়মকানুন আছে। “
নৃপেনের ক্ষোভের জায়গাটা খুব বোঝে রজত।

এদিকে রজতের এভাবে ফিরে আসার খবরে একটা মৃদু চাঞ্চল্য জেগেছে এলাকায়। একটা, দুটো টিভি চ্যানেলও হাজির হয়েছে গুটি গুটি। ওদের পিছু পিছু আবার নিবারণ, বিদ্যুত,বিশু,পল্টুদেরও দেখা যাচ্ছে।

চ্যানেলের বুমের সামনে নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে রজত তখন বলে চলেছে, ” গিয়েছিলাম একটু কেদারনাথ, বদ্রীনাথে। সঙ্গে হরিদ্বার,ঋষিকেশ, নৈনিতাল, মুসৌরি আর বেনারসটাও ঘুরে এলাম। “

” কিন্তু আপনি হঠাৎ করে কাউকে না জানিয়ে.. যেখানে আপনার জন্য নিরাপদপুরের সিট নিশ্চিত করেছিল স্বদেশ পার্টি। “

চ্যানেলের এই প্রশ্নবানে স্মিত হেসে রজত বলেছে, ” ভোটে দাঁড়ানোর চেয়েও তীর্থ করাটা জরুরি মনে হয়েছিল। তাই…”

এরপর কথা খুব একটা এগোয়নি।

রজত মনে মনে আরও একটা ব্যাপারে বেজায় শান্তি পেয়েছে। যে নিরাপদপুরে তার দাঁড়ানোর কথা ছিল ওই সিট থেকে পার্টি শেষ মুহূর্তে প্রার্থী করেছিল প্রায় বাতিলের তালিকায় চলে যাওয়া চিত্ত নন্দীকে। রজত হঠাৎ গায়েব হওয়ার পর চিত্ত নন্দী ছাড়া পার্টির হাতে কোনও তাস ছিলওনা।

চিত্তদা সেখানে শুধু গো-হারান হারেইনি, একেবারে জামানত খুইয়েছে। আর ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে ষোলোআনা নিশ্চিত স্বদেশ পার্টি ভয়ঙ্করভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মাত্র সাতটা আসনে জিততে পেরেছে। গণতান্ত্রিক দল এর সরকার নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়ে ফের ক্ষমতায় ফিরেছে। সবাইকে অবাক করে সংগ্রামী ফ্রন্ট হয়েছে প্রধান বিরোধী দল।

মনে মনে রজত ভেবেছে ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যই বটে। সেদিন রাতে চিত্তদার ফোনটা পেয়ে সত্যিই খুব হতাশ লেগেছিল। তাই তো ভোরের আলো ফোটার আগেই বেরিয়ে পড়ে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত