| 29 মার্চ 2024
Categories
গল্প পুনঃপাঠ সম্পাদকের পছন্দ সাহিত্য

ইরাবতী পুনর্পাঠ গল্প: শ্বশুরবাড়ির শাল । সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

বড়বাজারের এক ঘূপচিগলির দােকানের দােতলায় শালের আড়ত। সারা ভারতবর্ষের শাল, দােশাল, তুষ, মলিন্দা—এই একেবারে মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত ডাই হয়ে আছে। স্বয়ং মালিক টেরি কটনের ধুতি পরে একটু উরু দোকানের অন্যতম দর্শনীয় বস্তু মনে করে, বের করে বসে আছেন। পেছনে একটি মানানসই দশাসই তাকিয়া। বঙ্কিম এখন ক্রেতা। ফিনানসিয়ার তার সম্বন্ধী । শীতে ভগ্নীপতিকে একটি শাল দেবার কথা ছিল। দিচ্ছি। দেব করে দুটাে শীত পার করে দিয়েছে। এই থার্ড উইন্টারে বঙ্কিমবাবুর কাধে শাল উঠবেই। দােকানটা সম্বন্ধীরই আবিষ্কার। আড়ত থেকে কিনলে দুটা পয়সা সস্তা হবে। মালিক জংঘাদেশ আয়েশ করে চুলকোতে চুলকোতে জিজ্ঞাসা করলেনঃ পকেটের খবর কী? সেই অনুসারে মাল ফিট করবেন। পকেট তাে সম্বন্ধীর । উত্তরটা সেই দেবে। বঙ্কিম উদাস হয়ে মালিকের থাই দেখতে লাগল। ছেলেবেলায় ওয়ার্ডবুকে পড়েছিল—শূকরের শুষ্ক লবণাক্ত জঙ্ঘা, হ্যাম। কেন জানে না তার এই কথাটাই মনে পড়ল। সম্বন্ধী টাকার অঙ্ক বলে দিয়েছে : দেড়শো, ম্যাকসিমাম একশো পঁচাত্তর। ওই দামের শালেরা সব অ্যালুমিনিয়ামের মই বেয়ে বঙ্কিমের সামনে নেমে এল। দেড়শো টাকায় আর কত ভালো জিনিস হবে ? হালকা একরোখা কাজ। জমি তেমন ভালো নয়। মধ্যবিত্তের শাল এর চেয়ে ভালো হলে মানাবেও না। বঙ্কিম দেখেশুনে একটা সাদা শাল পছন্দ করে নিল। সম্বন্ধী ফিসফিস করে বলল, দ্যাখো এইটাই নেবে তো? রাখতে পারবে না। কিন্তু। বঙ্কিমের মনে হল-সম্বন্ধীর এই কথায় নিশ্চয়ই কোনো ইন্টারেস্ট আছে। সাদা থেকে বঙ্কিমকে তুতে রঙেরটায় নামাতে পারলেই, পঁচিশ টাকা সেভিংস। বঙ্কিম কানে কানে বলল, তোমার বোনকে যখন রাখতে পেরেছি, শালটাকেও না-পারার কোনো কারণ নেই। মেইন্টিন্যান্স ইজ এন আর্ট। দােকানের মালিক আর্ট শব্দটা শুনতে পেয়ে বললেন-হ্যা হ্যা ইয়ে আর্টিস্ট লোককো লিয়ে হায়। পরের পয়সামে যো লোক টিংচার আইডিন ভী, পিতা হায় এ সাদা শাল উঃ বঙ্কিম মনে মনে বললে—ধুর ব্যাটা। পরের পয়সা কি রে! হিসেব করে দেখ— সারাজীবন একটা মেয়েকে মেনটেন করার কষ্ট, আর শ্বশুরবাড়ির সারা জীবনের পাওয়া— ইনভার্স রেশিওতে চলে। সবশেষে ওই জামাই ষষ্ঠী। তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। ওয়ান জামাই গােজ, অ্যানাদার জামাই কামস। দাঁত পড়া, চুলে পাক ধরা জামাইরা লিস্ট থেকে বাদ পড়ে যায়। আসল দখল করে থাকে ফুল কি রাঙা জামাই। আদরের ধর্মই হল উজ্জ্বল রঙের মতাে ক্রমশ ফেড় করে আসে। বিবর্ণ দাম্পত্যজীবন এই শাল দিয়ে চাপা দেওয়া যাবে।

সম্বন্ধীর নাম সূর্যকুমার। বিদেশে কাজ করে। সেখানে যে সূরয কুমার।সূরয কুমার, একটাকা দাম কমাবার জন্যে যখন ধস্তাধস্তি করছে বঙ্কিম তখন দূর-ভবিষ্যতে শাল গায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বেনারসের গঙ্গার ঘাটে বৃদ্ধ বঙ্কিম। শালটার রং তখন সাদা নয়। পোকায় ফুটাে-ফুটা করে দিয়েছে। রংটা হয়েছে। শনের মতো। জায়গায় জায়গায় তেলের ছােপ। পাশে একগাল তােবড়ানাে বুড়ি, বঙ্কিমের স্ত্রী। কয়েকটা লম্বা পাকা চুল জড়িয়ে আছে শালের এখানে-ওখানে। অনেক অনেক আগে যখন তাদের যৌবন ছিল, তখন লেগে থাকত কাচা চুল। এই বুড়িটারই যখন যৌবন ছিল, তখন আকাঙ্ক্ষা ছিল, লোভ ছিল, লালসা ছিল, রক্তে আগুন ছিল। তখনও কাঁধে মাথা রাখত, এখনও রাখে। তখন রাখত, কাজ আদায়ের জন্যে, পাওনা বুঝে নেবার জন্যে। এখন রাখে নির্ভরের জন্যে। দিন তো শেষ হয়ে আসছে। কে আগে যায়, কে যায় পরে। শুরুতে এক, যাবার সময় বিচ্ছিন্ন। বঙ্কিম শালের একটা অংশ বুড়ির গায়ে জড়িয়ে দিল। বয়েস হয়েছে, ঠাণ্ড লেগে যাবে। একজনের শীর্ণ হাত অন্যজনের শীর্ণ হাতে ধরা। মৃত্যু হাত বেয়ে উঠে আসছে। বঙ্কিমের ধ্যান চটকে গেল। সূর্য কুমার কানে কানে বললে, কিছুতেই একটাকাও ছাড়তে রাজি হচ্ছে না। দু-কাপ চা আদায় করেছি। আমার নাম সূর্য কুমার। বঙ্কিম এসব উঞ্ছবৃত্তি ভালোবাসে না। সে বললে, তুমি চা খেয়ে এস, আমি নিচে দাড়াই। সূর্য কুমার বললে, না না ও বেটার দু-কাপ চা-ই ধ্বংস করে যেতে হবে, চালাকি নাকি। তাকিয়াবাজি করে লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছে, আর আমরা মরছি গাধার মতো খেটে। বড় এলাচ, ছােট এলাচ, জায়ফল, জৈত্রী দেওয়া চা খেয়ে দুজনে ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে সাবধানে রাস্তায় নেমে এল। শালের মোড়কটা সম্বন্ধীর বগলে । বঙ্কিমের হাতে এখনই দেওয়া যায় না। নানারকম প্রোটােকল আছে। বলা যায় না-সামনে একাধিক বিয়ের লগ্ন, শালের প্রোটােকল হল এক ব্যাকসো ল্যাতা সন্দেশ। চিনির ভাগ বেশি, ছানার ভাগ কম। শালেতে সন্দেশতে শীতের একটা কুঁচাে তত্ত্ব মতো হল। বঙ্কিমের স্ত্রী প্রতিমার তাইতেই কী আনন্দ। কী উচু নজর আমার বাপের বাড়ির। ওহ, পিওর কাশিমরি শাল। আড়ত থেকে কিনেছে তো, তাই একটু সস্তা হয়েছে। বাইরে থেকে কিনলে পাঁচশো টাকার কম নয়। প্রতিমা শালটা হাতে নিয়ে বললে, যাও না একবার তোমার বাবাকে দেখিয়ে এস, সন্দেশের কথাটাও বােল। স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্যে বঙ্কিম দােতলায় উঠেছিল সত্যি, তবে এনেছিল। বলা যায় নাকি—এই যে, দেখুন শ্বশুরবাড়ির শাল, কাশমীর কি কলি! শালটা দিন-সাতেক একজিবিটি নম্বর এক হয়ে বাইরের ঘরে রইল। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই জেনে গেল—বঙ্কিমের একটা শাল হয়েছে, শালা পছন্দ করে কিনে দিয়েছে। শালের গুদাম থেকে। বঙ্কিমের একবার মনে হয়েছিল একটা গ্লাস-কেস তৈরি করে, শালটাকে ভরে রেখে দেবে। সকাল-সন্ধে ধুনাে গঙ্গাজল দেবে। একটা করে ধূপ জ্বেলে দেবে। ওপরে ফুল ছড়িয়ে দেবে গোটকতক। বঙ্কিমের শাল গায়ে দিয়ে কাপ্তোনি করার অবসর কোথায় ? সে তো মেহনতি জনতারই একজন সকালে বাজারে গুঁতোগুঁতি । ন-টার সময় বাসে বাঁদরামি । সাতঘন্টা অফিসে ফাজলামি। ছটায় আবার বাসে বাঁদরামি। এরপর বাড়িতে সংসার নামক শূন্য প্রাঙ্গণে ছেলে মানুষ করার ধাষ্টামি। মহামূল্যবান শাল ন্যাপথলিনের গােললা বগলে নিয়ে কাপড়ের আলমারির ভিআইপি কর্নারে অপেক্ষা করে রইল, কবে আসবে সেদিন যেদিন বাবু বঙ্কিমের কাধে চাপবেন তিনি।


আরো পড়ুন: ছোট গল্প: একটি মেয়ের আত্মকাহিনি । সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়


 

অবশেষে সেই দিন এল। ছোট সম্বন্ধীর বিয়ে। বরযাত্রী বঙ্কিম, বঙ্কিমের স্ত্রী। ধবধবে সাদা ধুতির ওপর লালচে পাঞ্জাবি। ধুতির রঙের সঙ্গে, পাঞ্জাবির রঙের উনিশ-বিশ হবেই। সংসারের ধর্মই তাই। কারুর সঙ্গে কারুর মিল হতেই পারে না। সবসময় কনট্রাস্ট। আগে বঙ্কিমের খুঁতখুঁতানি ছিল। এখন এইসব পার্থক্য সে গ্রাহ্যই করে না। শালটা বগলের তলা দিয়ে আড়াআড়ি করে চিত্ৰতারকাদের মতাে গায়ে চাপিয়ে নিল। একটু সেন্ট লাগাতে যাচ্ছিল, প্রতিমা হৈ হৈ করে উঠল, কর কী, কর কী ? বঙ্কিম যেন খুন করতে যাচ্ছিল। এক্ষুনি দাগ লেগে যাবে। ঘটে কি কোনাে বুদ্ধিই নেই। কানের লতিতে লাগাও। বঙ্কিম তাই লাগাল। শালে দাগ লাগে, মানুষের চামড়া সে দিক থেকে নিরাপদ। সহজে দাগ লাগে না। শালের ধাত একমাত্র তার বৌ-ই বোঝে।

বরযাত্রীরা বাসে যাবেন। একে একে সবাই উঠছে। বঙ্কিমও উঠছিল। পেছনেই প্রতিমা। হঠাৎ প্রতিমা চিৎকার করে উঠল, দেখে দেখে। বঙ্কিম তাড়াতাড়ি যে পা-টা ফুটবাের্ডে রেখেছিল নামিয়ে নিল। কী দেখবে ? কেউ বমিটমি করে রেখেছে নাকি ? না সে সব নয়। প্রতিমা বললে, শাল গায়ে দিয়ে ওভাবে কেউ হুড়মুড় করে ওঠে নাকি। বাসের চারদিকে পেরেক খোচ হয়ে থাকে, এক্ষুনি লাগবে। আর ফাঁস করে ছিড়ে যাবে। চলতি বাসের জানালা দিয়ে হু-হু করে হাওয়া আসছে। ভেতরে একটা সোয়েটার পরলে ভালো করত। শালটার কোনো দাম নেই। শালটা গায়ে দেবার আগে ওভার এস্টিমেট করে ফেলেছে। একে সর্দির ধাত। ভুগতে হবে। প্রতিমাকে বললে, শালটার তেমন গরম নেই। প্রতিমা বললে, সে কী গাে! আমি পাশে বসে গরম পাচ্ছি। মনে হচ্ছে, তোলা উনুনের পাসে বসে আছি, তুমি পাচ্ছ না ? বঙ্কিমের পিঠে হাত বুলিয়ে বললে, ও তুমি তাে ভুল গায়ে দিয়েছ। ঠাণ্ডার দিকটা ভেতরে দিয়েছ, গরমের দিকটা ওপরে। বঙ্কিম কিছুক্ষণ হা করে বৌ-এর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, সে কী রে বাবা! শালের আবার গরম পিঠ, ঠাণ্ডা পিঠ আছে নাকি? শোনে নি তাে কখন। নিজে একবার হাত বুলিয়ে দেখল। দুটাে পিঠই তাে একরকম। বঙ্কিম বললে, এ-রকম হয় নাকি? প্রতিমা বিশেষজ্ঞের মতাে বললে, হয় না? শালের তুমি জানাে কি ? সারা জীবন তাে দােনলা আর ফতুয়া পরে কাটালে। আমার দাদুর একটা শাল ছিল। সে যুগেই তার দাম ছিল হাজার টাকা, বিলিতি শাল, এয়ারকন্ডিশনড। একটা দিক গরমকালে গায়ে দিতেন, আর একটা দিক শীতে। বঙ্কিম ব্যাপারটা হজম করার জন্যে একটু সময় নিল। সংশয়টা তার এখনও কাটে নি। বিলোতে আবার শাল হয় নাকি। বঙ্কিম বললে, উল্টে গায়ে দিলে গরম লাগবে ? নিশ্চয় লাগবে। তাহলে এই কাজটাও তো উল্টে যাবে। তা তাে যাবেই। ওরা তাে ভুল করেছে। আর তুমিও তাে তেমনি মূর্খ । দেখে দেখে উল্টোটাই ঠিক কিনে নিয়ে এলে। একটা কাজ যদি তোমাকে দিয়ে ঠিকমতো হয় ! সমস্ত দােষ বঙ্কিমের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে প্রতিমা খোপার ফুল ঠিক করতে লািগল। আর বঙ্কিম নিজের দোষে ঠান্ডা শাল গাঁয়ে দিয়ে শীতে হি হি করতে করতে সম্বন্ধীর বিয়ের বরযাত্রী হয়ে নৈহাটি চলল।

বিয়েবাড়ির মেয়েদের ভিড়ে মিশে যাবার আগে প্রতিমা সাবধান করে দিয়ে গেল, কাপে যদি চা খাও, বা হাতটা কাপের তলায় ধরে মুখে তুলবে, তা না হলে শালে চায়ের ফোঁটা পড়বে।

ভাড়ে খেলে দেখে নেবে, ছ্যাদা আছে কি না! বরং আর একটা ভাঁড়ের ওপর বসিয়ে নেবে। পান খাবে না। পিক ফেলতে গেলেই ফোটা পড়বে। ফোল্ডিং চেয়ারে বসার সময় পেরেক উঠে আছে কিনা দেখবে। চেয়ারে আলুর দামের ঝোল লেগে থাকে। হলুদ আর লঙ্কার দাগ লাগলে হয়ে গেল, জীবনের মতাে দাগরাজি। তুমি তাে আবার চােখে কম দেখ। যে-কোনাে লোককে দিয়ে চেক করিয়ে নিও। প্যান্ডেলের বাঁশে ও হেলান দিও না। তুমি তো আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পার না, সবসময় ত্রিভঙ্গমুরারি। যদি গােলাপের বােকে দিতে আসে নেবে না। কাটা আর লাল রং দুইই আছে। তােমার মতাে খুঁসো লোককে আর কত সাবধান করব বল। সবসময় নজর রাখবে, পেছন থেকে কেউ এসে হাত না-মুছে দিয়ে যায়। হা করে মেয়েছেলে দেখো না | তোমার যা স্বভাব |

প্রতিমা ভুজ আর ডেন্টস বলে দিয়ে হুল্লোড়ে মিশে গেল। বঙ্কিমের ইচ্ছে করছিল, শালটাকে পাট করে বগলে নিয়ে বসে থাকে। নেহাত শীত করবে। তাই। দরকার নেই শাল। খুব শিক্ষা হয়েছে।


একসময় খাবার ডাক পড়ল। আবার ফিরতে হবে তো এতটা রাস্তা।বঙ্কিমের ঠিক উল্টোদিকে বসেছে প্রতিমা। প্রতিমার পাশে বসেছেন তার সম্পর্কের মাসি। বঙ্কিমের গায়ের শালটা দেখিয়ে প্রতিমা মাসিকে কী যেন বললে। মাসির মুখে হাসি আর ধরে না। ইতিমধ্যে পাতে পড়েছে ফ্রায়েড রাইস আর মাংস। বঙ্কিম খাওয়ায় একেবারে তন্ময়। হঠাৎ সাবধানবাণী। প্রতিমার গলা : সামলে, সামলে। বা কাধ থেকে শালটা নেমে আসছে পাতের দিকে। বঙ্কিম হেলপলেস। ডানহাত জোড়া। প্রতিমা বঙ্কিমের পাশের অপরিচিত ভদ্রলোককে অনুরোধ করল, আপনার বা হাত দিয়ে বেশ করে ওপরে তুলে দিন তো। এক্ষুনি ঝোলেবালে মাখামাখি করে বসে থাকবে।


ভদ্রলোক হাসতে হাসতে শালটাকে উঠিয়ে দিতে দিতে বললেনঃ থাকবে না আবার এক্ষুনি ঝুলে যাবে, কাঁধে একটা সেফটিপিন লাগিয়ে দিলে ভালো হয়।


প্রতিমাও জানে, থাকবে না। ভদ্রলোকের উপদেশ কার্যকরী করার জন্যে সে পাশের মাসিমার কাছে সেফটিপিন চেয়ে বসল। প্ৰবীণা মহিলাদের ব্লাউজে বোতাম থাকে না। ঠিক তাই। প্রতিমা মাসিমার ভূড়ির কাছে হাত চালিয়ে কাম্য জিনিসটি খুলে নিয়ে এল। ওদিক থেকে এদিকে আসতে গিয়ে গোটাকতক গ্লাস উল্টাল।


যারা দেখতে পাচ্ছেন তারা সকলেই এখন বঙ্কিমকে দেখছেন। প্রতিমা টানটান করে। সেফটিপিন আটকে দিয়ে গেছে। ডানহাতটা মুখের কাছে পুরোপুরি তুলতে গেলে টান পড়ছে। মুখটাকে নামিয়ে আনতে হচ্ছে পাতের কাছে হাতের সীমানায়। অনেকটা কুকুরের টেকনিকে খেতে হচ্ছে। প্রতিজ্ঞা, আর যদি সে কখনো শাল গায়ে দিয়েছে। চাটনির সময় প্রতিমার চিৎকার—না না, ওখানে নয়। বঙ্কিমের বরাতে প্ল্যাস্টিক চাটনি জুটল না।


ফেরার সময় প্রতিমার সঙ্গে বাক্যালাপ হল না। মেরুদণ্ড সোজা করে, লগবগ করতে করতে বঙ্কিম ফিরে এল। শীত করছে। শালটা মুড়ি দেবারও উপায় নেই। মাথার তেল লেগে যাবে। বঙ্কিম ঘরে ঢুকেই টান মেরে শালটা খুলে ফেলল। তারপর শ্ৰীীরামকৃষ্ণের মতাে শালটাকে মাটিতে ফেলে দুপায়ে ঠাসতে লাগল আর বলতে লািগল— শালা, শালার শালের নিকুচি করেছে। দরজার মুখে দাঁড়িয়ে প্রতিমা বলছে—একি একি ! পাগল হয়ে গেলে নাকি ! বঙ্কিম জানে—পাগল নয়, সে এতক্ষণে সুস্থ হতে চলেছে।

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত