| 19 এপ্রিল 2024
Categories
ধারাবাহিক

ধারাবাহিক: শ্রাবন্তীদের দিনরাত্রি (পর্ব-৩) । ইকবাল তাজওলী

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

শ্রাবন্তী সর্দি-জ্বর নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। জ্বরের কারণে গতরাতে তার একদম ঘুম হয়নি। সারারাত বিছানায় শুয়ে ছটফট করেছে।

সকালে উঠে অবন্তী মাকে বলল,‘মা, আপার ভীষণ জ্বর। সারারাত ঘুমায়নি। ঘুমের ঘোরে বক বক করেছে। আর ওর বক বকের কারণে আমারও ঘুম হয়নি।

আরজুমান্দ বানু কপালে হাত দিয়ে মেয়ের জ্বর দেখলেন। বললেন,‘শুয়ে থাক। অফিসে যাওয়ার দরকার নাই। রুটি বানিয়ে দিচ্ছি। রুটি খেয়ে ওষুধ খা।’

অবন্তী বলল,‘আপাটা হচ্ছে সইতে মরা( লজ্জাবতী লতা )। সবাই মিলে ভিজলাম। মজা করলাম। আপা তো ভিজলই না, নামল আর উঠল। আর জ্বর বাঁধাল। ভালোই হয়েছে। এখন সপ্তাহ খানেক রেস্ট-টেস্ট নে। অফিসে যাওয়ার দরকার  নাই। দেখবি, খোঁজ করতে আন্দালিব ভাই চলে এসেছেন।’

অবন্তী ঠাস করে  একটা চড় খেল। মায়ের হাতে চড় খেয়ে বিস্ময়ে মায়ের দিকে তাকালো তারপর আপন মনে বকতে বকতে সে বেরিয়ে গেল।

আজিজের মা বলল.‘খালাম্মা, এত বড়ো মাইয়ারে চড় মারন ঠিক না। কী করতে কী কইরা বসবে। আমার কুলসুমারেও  এমন মাইর দিসিলাম, হেয় তো গিয়া গলাত দড়ি দিসে।’

শ্রাবন্তী বলল,‘অবন্তীকে না মারলেও পারতে মা। খামোখা মারতে গেলে কেন।’

‘তুই কথা বলিস না। ওর বড়ো বাড় বেড়েছে। মুখের কোনো লাগাম নাই। বেয়াদব হচ্ছে দিন দিন। সারাদিন খালি সাজগোজ। মাসে তিনটা লাক্স সাবান লাগে! নায়িকা হবে। জুতিয়ে আমি ওর নায়িকাগিরি ছাড়াব।’

শ্রাবন্তীর জ্বর বেড়েছে। জ্বর বাড়ার কারণে মুখের রুচি নষ্ট হয়ে গেছে। সকাল থেকে একটা দানাও মুখে দেয়নি। খালি পেটেই ওষুধ খেয়েছে। বমি বমি ভাব হচ্ছিল, সামান্য একটু পান মুখে দেবার পরে বমির ভাব দূর হয়েছে।

অবন্তীকে ডাক্তার নিয়ে আসতে দেখা গেল। ডাক্তারের নাম মির্জা আজিজুল ইসলাম। গলির মুখে নিরাময় ফার্মেসিতে মাস তিনেক হয় তিনি বসছেন। এমবিবিএস করে সদ্য ইন্টার্নিশিপ শেষ করেছেন। তাঁর সাক্ষাতের সময় সকাল ১০টা থেকে ১২টা, আর বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা।

ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে বললেন, ‘কোনো সমস্যা নেই। অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দিচ্ছি, ভালো হয়ে যাবেন, আপা।’

ডাক্তার চলে গেলেন। যাওয়ার সময় অবন্তীকে বলে গেলেন, দেখা করবেন। অবন্তী কিছু বলল না। মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল।


আরো পড়ুন: শ্রাবন্তীদের দিনরাত্রি (পর্ব-২) । ইকবাল তাজওলী


শিউলিদের বাসা।

শিউলির স্বামী আবিদ আলি সকালে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। তার মন মেজাজ খারাপ। কদিন থেকে বউয়ের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না; ঝগড়াঝাঁটি লেগেই আছে। ঝগড়াঝাঁটির একপর্যায়ে রাগ সামলাতে না পেরে আজ বউকে বলা যায় আলতো করে ছুঁয়েছে। আর তাতেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেছে শিউলি। বউয়ের চিৎকার-চেঁচামেচিতে আবিদ আলি পড়েছে মহালজ্জায়। প্রতিবেশীরা শুনেছে। আবিদ আলির মনে হয়েছে, তখনই মাটি ফুঁড়ে মাটির নিচে ঢুকে যেতে। ঘরে থাকা আর তার সমীচীন মনে হয়নি। রাগে-ক্ষোভে- লজ্জায় কোনো কিছু মুখে না দিয়েই বের হয়ে পড়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত মর্জিনাকে ঘিরে। মর্জিনা তাদের কাজের মেয়ে। মাস দুয়েক হয় কাজে যোগ দিয়েছে। শিউলিই তাকে এনেছে। বলেছে,‘খালা ডাকবি ।’

একদিন শিউলি গেছে শ্রাবন্তীদের বাড়ি। ফিরে এসে দেখে  স্বামী তার মর্জিনার সঙ্গে রসালাপে মত্ত (শিউলির দৃষ্টিতে)। শিউলি দেখেও না দেখার ভান করেছে। স্বামীকে কিছুই বলেনি। ধৈর্য ধরেছে। কিন্তু মর্জিনার অতিরিক্ত হাসাহাসি আর ঘষাঘষি দেখে কোনো কারণ ছাড়াই তাকে বিদায় করে দিয়েছে।

শিউলি এখন গালে হাত দিয়ে বসে আছে। তার মন মেজাজ খারাপ। সকালে সে লঙ্কাকান্ড করেছে। জাউরাটাকে উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে। ঢিল দিতে পাটকেল মারতে হয়। শিউলি পাটকেলই মেরেছে। জাউরাটা যদি ঠিক হয়।

শিউলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ আর সে রান্নাবান্না করবে না। উপোস থাকবে। নিজেও খাবে না, জাউরাটাকেও খেতে দেবে না। জাউরা বুঝুক, শিউলি সহজে ছেড়ে দেয়ার মতো মেয়ে না।

অবন্তীকে এইদিকে আসতে দেখা গেল। অবন্তীকে দেখে শিউলি মুখের ভাব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল। তারপর, ঘর থেকে বের হয়ে অবন্তীকে জড়িয়ে ধরল।

‘অধমের ঘরে কদমের পারা! যা খুশি হয়েছি না। আয়, ভেতরে আয়। দুইবোন মিলে আলাপ করি।’অবন্তীকে আম কেটে দিয়েছে শিউলি। আম খেতে খেতে দুজনের কথা চলছে।

শিউল বলল,‘যা রাঙা হয়েছিস না রাঙাদি! ব্যাপার কী? হাওয়া লাগিয়েছিস? খবরদার হাওয়া লাগাবি না।’ তারপর বলল,‘গল্প একটা শোন। তোর মতন ভরা যৌবন তখন আমার। কোনো কিছুই কেয়ার করি না। বনেবাদারে ঘুরে বেড়াই। পাঁচভাইয়ের একবোন। যা চাই তাই পাই। আহলাদে আটখানা। হাসছিস কেন? হাসবি না। পাঁচ-পাঁচটা মজনু তখন আমার পেছনে ঘুরে। নাকানিচুবানি খাওয়াই। একদিন সুযোগ বুঝে মারলাম একটা ল্যাং। পাঁচটাই কুপোকাত। আবিদ আলির ডাকে সাড়া দিলাম। বিয়ে হয়ে গেল। ফায়ফুর্তি চলছে বছর তিনেক ধরে। নাগর আমার জাউরা। উদানমাদান কিছুই বোঝে না। খালি লাগায় রাখে।

গত সপ্তাহে দিলাম মর্জিনাকে বিদায় করে। বলা তো যায় না, কখন আবার লাগায় রাখে। বুঝলি, স্বামীকে লেই দিতে নেই। লেই দিলে মাথায় উঠে।’

আবিদ আলি ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে ফিরেছে। সঙ্গে শাড়িও এনেছে। স্বামীর হাতে বাজারসদাই আর শাড়ি দেখে শিউলি আনন্দে আত্মহারা।

আবিদ আলি বলল,‘শাড়ি-টাড়ি পরে পরবে গিন্নি। খিদে পেয়েছে। মুখহাত ধুয়ে আসছি। বিরানি আছে। বিরানি লাগাও। সাফিসিয়েন্ট এনেছি। কোনো অসুবিধা নাই।’

অবন্তীকে যেতে দেয়নি শিউলি। বলেছে,‘খেয়ে যাবি। রিচ ফুড।’

টেবিলে খাবার দেয়া হয়েছে। তিনজনই খাচ্ছে। অবন্তী চুপচাপ এককোণে বসে খাচেছ। স্বামীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ শিউলি অনবরত কথা বলে যাচ্ছে।

অবন্তী বিষম খেল।

শিউলি বলল,‘নে, নে, পানি খা। ঠিক হয়ে যাবি।’

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত