| 19 মার্চ 2024
Categories
ধারাবাহিক

ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-৫) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট

অষ্টম শ্রেণির দুই বন্ধু রাজ আর নির্ঝর। রাজ আর অনাথ নির্ঝরের সাথে এইগল্প এগিয়েছে ফুটবলকে কেন্দ্র করে। রাজের স্নেহময়ী মা ক্রীড়াবিদ ইরার অদম্য চেষ্টার পরও অনাদরে বড় হতে থাকা নির্ঝর বারবার ফুটবল থেকে ছিটকে যায় আবার ফিরে আসে কিন্তু নির্ঝরের সেই ফুটবল থেকে ছিটকে যাবার পেছনে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নির্ঝরের জেঠু বঙ্কু। কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বঙ্কু ও তার ফুটবলার বন্ধু তীর্থঙ্করের বন্ধুবিচ্ছেদ। কিন্তু কেন? সবশেষে নির্ঝর কি ফুটবলে ফিরতে পারবে? রাজ আর নির্ঝর কি একসাথে খেলতে পারবে স্কুল টিমে? এমন অনেক প্রশ্ন ও কিশোর জীবনে বড়দের উদাসীনতা ও মান অভিমানের এক অন্য রকম গল্প নিয়ে বীজমন্ত্রের জনপ্রিয়তার পরে দেবাশিস_গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন কিশোর উপন্যাস ফুটবল আজ থাকছে পর্ব-৫।


 

 

কয়েকদিন চলে যাবার পর রাজ আজ  স্কুলে গিয়ে  গেমটিচার মৈনাকবাবুকে দেখতে পেল। সে স্বস্তি পেল। কদিন স্যার স্কুলে আসেন নি। স্কুলের কোথায় নাকি ফুটবল ম্যাচ ছিল, সেখানে গেছিলেন। খেলার রেজাল্ট অবশ্য সে জানে না । রাজ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজেছে। ঘন্টা পড়ার আগে সে স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকছিল প্রত্যেকদিন।তার মনের অবস্থা এমন যে যদি স্যারের বাড়ি চিনত সে নিশ্চিত বাড়ি চলে যেত।

আসলে নির্ঝর খেলার ব্যাপারে না বলে নি। সে ওকে জিজ্ঞেস করেছিল,“তুই প্র্যাকটিশ করবি তো বল? স্যার যা বলবেন শুনবি তো?”

নির্ঝর রাজের চাপাচাপিতে রাজি হয়ে গেছিল। ও রাজি হবার পর রাজের খুব আনন্দ হয়েছিল। তারপর থেকেই সে স্যারকে খুঁজছে। খেলার দিন স্যার  নির্ঝরকে বলেছিলেন,“শোন, তুই যদি দৌড়োতে চাস। আমাকে বলিস আমি তোকে একটা ক্লাবে ভর্তি করে দেব।“

স্যার আজ আসায় সে খুব খুশী। ঘন্টা বাজার আগেই সে নির্ঝরকে বলল,“স্যার এসেছেন। আমি দেখলাম। দুপুরে কিন্তু যাব।“

নির্ঝরের মুখে কোনো ভাবান্তর ঘটল না। তা নজর এড়াল নারাজের। সে বলল,“আবার কি হল তোর?”

“কই কিছু না তো?”

“টিফিনে কিন্তু কেটে পড়িস না বলে দিলাম। খুব খারাপ হয়ে যাবে।“

“আচ্ছা।“

রাজ একবার ওর দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল। নির্ঝরকে এখনো সে ঠিক চিনতে পারল না। এত কম কথা বলে না ও! মাঝে মাঝে তার মনে হয় ও দেয়ালের সাথে কথা বলছে।

তিন পিরিয়ড শেষ হতে না হতে  ক্লাসে একটা বাজে ঘটনা ঘটে গেল। রাজরা বসে দুই নম্বর বেঞ্চে। তাদের পেছনের বেঞ্চে বসে  কল্লোল, ইমন, শিলাদিত্য।এরা তিনজনে সবসময় একসঙ্গে থাকে, কারুর কথা শোনে না। স্যারদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করে। ক্লাসের সবাই এদের আচরনে অস্থির।মনিটররাও এদের এড়িয়ে যায়।

সবেমাত্র তখন  অমিত স্যারের অঙ্ক পিরিয়ড  শেষ হয়েছে। স্যার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। রাজরা ব্যাগের মধ্যে বই-খাতা রাখছিল। পরের পিরিয়ড হবার পরেই সে নির্ঝরকে নিয়ে মৈনাকবাবুর কাছে যাবে। সে এটাই ভাবছিল । ঠিক তখুনি হঠাৎ  নির্ঝর“আঁক” করে চিৎকার করে উঠল। রাজ প্রথমে বুঝতে পারে নি। ওর চিৎকার শুনে তাকিয়ে দেখল নির্ঝরের  মুখ যন্ত্রনায় বিকৃত।সে সোজা দাঁড়াতে পারছে না। পিঠে যেন কি হয়েছে ওর। রাজ জিজ্ঞেস করল,“কি হয়েছে রে?”


আরো পড়ুন: ফুটবল (পর্ব-৪) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়


নির্ঝর পেছনে হাত দেখাল।যা বোঝার বুঝে গেল রাজ।ওর পিঠে  সে চোখ মেলে দেখল পেনের  খোঁচা দিয়েছে আর জামা ভর্তি কালির দাগ। রাজের মাথা গরম হয়ে উঠল। তিনজন এখন অন্যদিকে চেয়ে আছে। এমন ভাব করছে ওরা কেউ কিছু করবে না।সে জিজ্ঞেস করল,“কে করল রে?”

ওরা বলল ,“ কি রে?”

ওরা ভাব করছে যেন কিছু জানে না। সে বলল,“ওর পিঠে কে খোঁচা দিল?”

“জানি না।“

“তোরা ছাড়া আর কে দিবি?”

ইমন ত্যারছা চোখে তাকিয়ে বলল,“তোর কি?তোকে দিয়েছি? ও তো কিছু বলছে না। তোর কি অসুবিধে?”

“ও বলুক না বলুক। তোরা খুব খারাপ কাজ করছিস।“

“বেশ করছি। তুই কি করবি? অ্যাঁ?”

তিনজনই কড়া মেজাজে  ওর দিকে তাকিয়ে আছে।রাজের একটু যেন অস্বস্তিই হল।নির্ঝর ওকে বারবার অনুনয় করছে থেমে যেতে। ভয়ে ওর চোখমুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।রাজ তবু ঘাবড়াল না। সে ইমনদের চেয়ে বলল,“ ঠিক আছে। স্যার আসুক। বলব।“

“বলিস।“

“বলবই তো। সরোজ স্যার আসুক।“

সরোজ স্যারের নাম শুনতেই তিনজন একটু থমকে গেল। রাজ জানে ইমনরা  সরোজ স্যার ছাড়া অন্য কোনও  স্যারকে  ভয় পায় না। কিছুদিন আগেই ইমনরা সরোজ স্যারের কাছে শাস্তি পেয়েছে। সরোজ স্যার  মারেন না বকেন না, তবু তাকে  স্কুলের ছাত্ররা  সমীহ করে। ইমনদের মুখ দেখে ওর এখন হাসি পেল।সে বলবে কি বলবে না পরের ব্যাপার।আপাতত ইমনদের সে  ঘাবড়ে দিতে পেরেছে।

  চার পিরিয়ড হয়ে গেল টুক করে। ইমনদের সঙ্গে কথাকাটাকাটির পর তার মনটা অন্যমনস্ক হয়ে গেছিল।অনেকক্ষন পর  তার হঠাৎ যখন মনে পড়ল মৈনাকবাবুর কাছে যাবার কথা। সে নির্ঝরকে ডাকতে গিয়ে দেখল নির্ঝর নেই। ও  কখন তার পাশ থেকে উঠে চলে গেছে! তাকে বলেও যায় নি। রাজ তৎক্ষনাৎ  উঠে দাঁড়াল। সত্যি নির্ঝর  অদ্ভুত! কেন যে ওর খেলাতে উৎসাহ নেই কে জানে?  তাদের স্কুলের মিড ডে মিল রুমটা বেশ বড়। তারমধ্যে ওকে খুঁজে পাওয়া মুসকিল।  ওর মধ্যে সে একবার পাক মারল। খাবার ইচ্ছে হলেও সে এখন খেল না। কিন্তু মিড ডে মিল রুমের ধারে-কাছে ওকে দেখতে পেল না। রাজের মনে হল নির্ঝর আগে এসেছিল ওর খাওয়া হয়ে গেছে।সুতরাং  ও বোধহয় লাইব্রেরী রুমে গেছে।তৎক্ষনাৎ রাজ দোতলার দিকে ছুটতে শুরু করল।তাদের লাইব্রেরী রুম  উপরে। সেখানেও সে গিয়ে নিরাশ হল।না পেয়ে সিঁড়ি ধরে আবার নামতে শুরু করল। নির্ঝর যে মৈনাকস্যারের সঙ্গে দেখা করতে চাইছে না সে নিশ্চিত। ও সত্যিই খেলতে চায় না! রাজের আর কি করার আছে?

 ভাবতে ভাবতে সে সিঁড়ি দিয়ে নেমে সামনে তাকিয়ে  অবাক হয়ে গেল।মাঠের মধ্যে সে এখন নির্ঝরকে দেখতে পেল। ওকে দেখেই সে একছুটে ওর কাছে গেল।তারপর সে হাঁপাতে হাঁপাতে ওর কাছে পৌঁছে জিজ্ঞেস করল,“কি রে? কোথায় গেছিলিস?”

“ওই তো। এখানেই ছিলাম।“

রাজ মাথা ঘামাল না। সে বলল,“ ঠিক আছে। স্যারের কাছে যাবি তো।“

নির্ঝর শান্তগলায় বলল,“চল।“

রাজের উৎকন্ঠা দূর হল।যাক! নির্ঝর আর টালবাহানা করছে না। সে ওর কাঁধে হাত রেখে বলল,“চ।“

“শোন!”

“আবার কি!’

“বলছি।পঞ্চম পিরিয়ডে সরোজ স্যারের ক্লাস আছে তুই কিন্তু ওদের নামে কিছু বলিস না।“

রাজের চোখ গোলগোল হয়ে গেল। সে একবার মাঠের দিকে তাকাল। টিফিনে মাঠভর্তি ছেলে। এরমধ্যে ইমনরা নিশ্চয় কোথাও আছে।এতক্ষন কি নির্ঝর ওদের কাছে ছিল? ইমনরা কি ওকে আবার ভয় দেখিয়েছে। সে বলল,- “কেন? একথা বলছিস?”

“এমনি। তুই বল বলবি না?“

“ওরা আবার তোকে কিছু বলেছে নাকি? লুকোবি না বল।“

“না। না। তুই বলিস না প্লিজ।“

“আচ্ছা। বলব না।কিন্তু তুই আমাকে বল ওরা দোষ করল ছেড়ে দিবি।“

“ছাড় না। ও আমার অভ্যেস আছে।“

রাজ বুঝল নির্ঝর বলবে না। ওকে বেশী বলে লাভ নেই। ও চুপ করে থাকবে। নির্ঝর বরাবরই একটু ভীতু প্রকৃতির। ঝামেলায় যেতে চায় না।এ স্বভাবটা তার মোটেই ভাল লাগে না।সে আবার অন্য কথা ভাবল। ইমনরা হয়ত ওর সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে নিয়েছে। সুতরাং পায়ে পা বাড়িয়ে ঝগড়ার কারণ নেই। তাছাড়া এখন এ ব্যাপারে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই আর।এরচেয়ে বড় একটা ব্যাপার তার মাথায় ঘুরছে।মৈনাকস্যারের সঙ্গে দেখা করতে হবে। স্যারের সাথে কথা বলে জানতে হবে নির্ঝরকে কোথায় নিয়ে যেতে হবে। রাজ এখন ছটফট করে উঠল।টিফিন শেষ হলে স্যারের সঙ্গে দেখা করা যাবে না।সে বলল,“ আচ্ছা। ঠিক আছে। এখন চ। স্যারের সাথে কথা বলে আসি।“

2 thoughts on “ইরাবতী ধারাবাহিক:ফুটবল (পর্ব-৫) । দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত