| 19 এপ্রিল 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

ফকির ইলিয়াস’র একগুচ্ছ কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

উন্মোচনের দ্বাদশ দরজা

তালাগুলো অনেক পুরনো।জং ধরা।প্রাচীন বাষ্পের ছায়া
ধারণ করে সাজিয়ে রেখেছে নিজেদের অতীত।চাবিগুলো
কেউ ফেলে দিয়েছে মধুগঙ্গায়।নদীর ঢেউ ওদের কই
নিয়ে গেছে- তা এখন আর খোঁজ করে না কেউ।

তবু দরজাগুলো খুলে দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে
একটি আকাশ।কিছু মেঘ খুব অভিমান নিয়ে ঘুরোঘুরি
করছে তার চারপাশে। কোনো সাঁঝ নেই।শয্যা নেই।
ঘাসতলায় একা দাঁড়িয়ে বেদনার গান গাইছে যে পথিক
সে’ও জানে আগামী কাল তার মৃত্যু হবে।এবং মরণের
পরেই খুলে যাবে পৃথিবীর দ্বাদশতম দরজা।যে দরজার
উত্তরে বসে নিজের ছবি এঁকে গিয়েছিল একটি টিয়েপাখি।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

আউটসোর্সিং

দেশে দেশে এখন বিক্রি হচ্ছে উপদ্রুত উপকূল।
অর্থমূল্য কিছুই নেই জেনেও,শিশুরা সঞ্চয় করে
রাখছে কয়েকটি কালো পাথর! এই পাথরগুলো
একদিন শাদা ছিল।মাহামারীকালীন বিষাদ শুষে
নিতে নিতে বদলে গিয়েছে ওদের বর্ণ,পাল্টে গিয়েছে
ওদের গড়ন এবং প্রস্থসীমা।

ঘরে ঘরে বিজলী এখন মানুষদের শেখাচ্ছে,
আউটসোর্সিং এর নবম পাঠ। কিছু উপরি আয়
হতে পারে ভেবে- যে ধীবর পদ্মায় জাল ফেলতে
গিয়েছিল, সে’ও ফিরে এসেছে ভাঙনের তাণ্ডব দেখে!

অনেক কিছু ভেঙে যাওয়ার পর,চরে যে নুড়িপাথর
পড়ে থাকে,তা দিয়েও কারো কারো ইমারত তৈরি হয়!
কারো কারো সমাধিতে পড়ে থাকে,
বসন্তে ভেসে আসা কয়েকটি শুকনো হলুদ পাতা।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 গ্রন্থকন্যা
 
জলের সুবাস নিয়ে কার জন্য দাঁড়িয়ে থাকো তুমি
ঘুমপুরে আমি করি জোতভূমি
বেচাকেনা। তা আমার পেশা নয় তবু ভুল
করে সাজিয়েছি এই বানিজ্যের পসরা। সমূল
বৃষ্টিডেরায় বাস করি শ্রাবণের পথচেয়ে
কেউ আমার পাড়ায় লঘু সঙ্গীত গেলে গেয়ে
তাকেই বিশ্বাস করি। প্রাজ্ঞ শিল্পী বলে
জলার্ঘ্য তুলে দিয়ে তার করতলে
স্বীকৃতি দিতেও করিনা কসুর ,
জানি সবাই লিখে যেতেই জন্ম নেয় এবং ভোর
ছুঁয়ে তোমার মতোই করে যায় গ্রন্থপাঠ
গ্রন্থকন্যা তুমি, তোমাকে উৎসর্গ করে সাজাই মলাট।

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

 

প্রবর পৃথিবীর কোণে

আবার বর্ষা এলে আমিও দাঁড়াবো এসে প্রবর পৃথিবীর কোণে
দেখে যাবো বিভাজন,একদা ছুটে চলা নক্ষত্রের গতি
কীভাবে লুটিয়ে পড়ে জলের ছায়ায়। আর তুমি ভাসো সেই
জলঝাপটার আলোতে, নিতে নিতে নির্মিতি সৌরভ।
 
আবার শরত এলে আমি কাশফুলের উড়ন্ত আভায়
রেখে যাবো পরিচিত প্রিয়তির মুখ,
নদীর নির্যাসে এঁকে লালফিতার অষ্টম বেনুনি
কিশোরী ভোরের মুখে ফোটে থাকা শালুকের ঘুম।
 
আবার বসন্ত এলে এভাবেই পলাশ-শিমুলে ঘেরা
আমাদের প্রতিশ্রুত ঘরে, কিছু কিছু বিশ্বাসী মেঘ
জমা হবে। আর বৃষ্টির বৈধ তালুকে কেটে যাবো
অজস্র সাঁতার। ছুঁবো হালকা হাওয়া , দক্ষিণের দীর্ঘ বিরহ।  

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

ধীমান ধাতুতন্ত্র

বেদেনৃত্য শেষে নুপুর ফেলে গেছে ধাবমান রাত,
আমি কুড়িয়ে রেখেছি। ফিরিয়ে দেবো বলে কোনও
এক অসমাপ্ত সন্ধ্যায় । অথবা পরিয়ে দেবো ধীমান
ভোরের পায়ে, যে ভোর নদীকেও শিখাবে নাচনের
নবম কলা। পাতার পৃষ্ঠমহাদেশে, অক্ষরের বজ্রবিনয়।
 
ফিরিয়ে দেবো আরও কিছু পাঠের প্রণয়, যে পঠন
ভূমির বর্ণায়নে রেখে যায় সুরক্ষিত জ্যোতিষ্কের মালা,
কক্ষপথে দাঁড়িয়ে থাকা আশ্চর্য রোদ – আমাদের লেখার
তালিকায় বিন্যস্ত বেদনা , হংসের পালকলাগা ঘাটজন্ম।
 

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

আঁধারের প্রকারচক্র

অন্ধকারের ইতিহাস জানার জন্য আমি যে চিঠি লিখেছিলাম,
তার উত্তর এসেছে গতকাল। তুমি লিখেছো, জন্মের আগে
আমরা অন্ধকারেই ছিলাম। রাতের পাপড়ি হয়ে ছিলাম বৃক্ষের
পরিপূরক প্রবাহ। ছিলাম ছায়া, চন্দ্রের। কোথাও দিনের বেলা
চাঁদ যখন থেকে যায় মানুষের অদেখা। প্রতিউত্তরে তুমি জানতে
চেয়েছো আরো অনেক কথা। আচ্ছা,সূর্য কী ডুবে কোথাও! নাকি
সুর্যেরও দৃশ্যান্তর হয় ! যে তুমি জ্যোতির্ময়ী, প্রশ্ন করেছো আরো
অনেক। যা দিয়ে আমি খুব সহজেই লিখে নিতে পারবো, একটি
পরিশুদ্ধ কাব্যবিজ্ঞান। সৌরনৃত্যের তালে,লয়ে কোনো কবিতার
পায়ে পরিয়ে দিতে পারবো ঘুমঘুঙুর। যে ঘুম আঁধারের অভিকর্ষ
হয়।যে ঘুঙুর অন্ধকারের অনুষঙ্গ হয়ে বাজায় সুরের প্রকার।তোমার
পাঠানো চিঠি পড়ে আমি জেনে গেছি, প্রাণ মূলত আলোকে ভ্রমণ
করে। অন্ধকার থেকে আসে। আবার আঁধারের মধ্যাকর্ষণেই হয়ে
যায় ক্রমশ বিলীন ।

 

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত