আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিটবারবার সেই জলের কাছে, আমার সব মনে আছে
বিকেলের শান্তনীল চোখ জলে ফেলে বসে আছে আকাশ
কেউ একজন হেঁটে আসবে বলে তুমি দৌড়ে গিয়েছিলে
রেললাইন ধরে। আকুল ওলটপালট হয়তো একেই বলে
সে বসন্তে লালজামা গায়ে সবুজ গাছেদের দিকে তাকিয়ে
আন্দামানে উড়ে যাওয়া নির্বাসিত পাখিগুলো বলেছিল-
সব ফাঁকি! জলের ছায়া হাসে, হাসতে হাসতে মায়া বাড়ে
মায়া থেকে উঠে দাঁড়ায় অজানা নৈঃশব্দ্য, ভেসে আসে হুইসিল
প্রতিবিম্বের অনুবাদ বারবার বলে, দেখে নাও আরো একবার
নির্জন ওয়েটিং রুমে কিছু ফেলে গেলে কিনা
সেই পরিচয়ের প্রথম শব্দটি আজও বহন করি
মোহন লাগে কিনা জানি না। হয়তো তারও চেয়ে বেশি
রডোডেনড্রন জঙ্গলে হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম
আমাদের আর কেউ ছিল না, শুধুই ছিলাম পরস্পর
এমন প্রেম চোখেই পড়ে না, এসব ভেবেছি প্রাণভরে
এখনো হয়তো তাই ভাবে কেউ অথবা অনেকে
শুধু বলতে ভালোলাগে বলেই কি বলা,তাই কি ভাবা
আলাভোলা রোদ্দুরে গড়পরতা অহংকারে
যে জানালায় ফুল হয়ে দাঁড়াত কেউ, তার নাম
মনে আছে কী নেই এসব পুরানো ধাঁধার অভিমান
নতুন কাঁথায় মুড়ে ঠিক এসে সামনে দাঁড়ায়
ভোরের মোরগটা ডেকে উঠলেই চমক ভাঙে
দিনের শুরুতে মন কি বলে যায়- মনে রেখো
রডোডেনড্রন জঙ্গলের কাছাকাছি কিংবা দূরে
ঝরাপাতা ফিরে আসে পাতা কুড়াবার ছলে
এজন্মে নয় আরেক জন্মে, যখন আপনি ছিলেন উড়ন্ত ঈগল আর
আমি ছিলাম জন্মান্ধ খরস্রোতা নদী
আপনাকে সঙ্গী করে উড়ে যেতে চেয়েছিলাম বিষুবরেখার আকাশে
এসব স্বপ্ন এখন আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত, গতজন্মের স্মৃতি বলেই কি
বিজন রোদ্দুর ভেঙে একা একা হেঁটে চলি অজানা পথে
গ্রামের মতো দেখতে, ঠিক গ্রাম নয়, বাড়ির সামনে পুকুরের ছায়া
মাঝরাতের ছায়া, মায়া মায়া। ভুলে গেছি কবে যেন দেখেছি এসব
জন্মান্ধ নদী হয়ে আর জনমে জন্মেছিলাম, পাশে ছিল সাদাছড়ি
জলের উপরে ছড়ি ফেলে যেতে যেতে ঈগলের পাখা ধরে ফেলি
তখন আকাশে ছিল ঘুড়িদের প্রবল ওড়াউড়ি, সব ছিল, কিছু ছিল না
অন্ধত্ব দূরে বসে দেখেছিল চোখের বিষণ্ণ কারসাজি
কয়েকশো বছরের পুরানো ডিকস্টা
কবিতাগুলো ভেঙে যাচ্ছে, যা কিছু দিতে চাই তাই ভেঙে যায়
টানা গদ্যের আলখেল্লা গায়ে কবিতারা সটান হেঁটে চলছে
আমার বয়স যখন বৃষ্টিদিন, সাইকেল চালিয়ে যাব বলে
প্যাডেলে চাপ দিয়েছি, সে যাওয়া এখনো থামেনি
ঝরা পাতার সাথে উড়ে উড়ে বৃষ্টি গায়ে মেখে
আমার সাইকেল যায় দূর কোনো পর্তুগিজ শহরে
যেখানে গিটার বাজিয়ে গান গায় কয়েকশো বছরের পুরানো ডিকস্টা
নদীদের নামের আগে মহান শব্দটি যিনি ব্যবহার করেন
তাঁর সন্ধানে কত দিনরাত্রি। এখন কবিতারা ভেঙে যাচ্ছে
গদ্য এসে হাপরে বাতাস নিচ্ছে, আমাদের জানালা ধুয়ে মরুবৃষ্টি
আমি জানতাম এভাবেই পুবের বৃষ্টিরা পথ ভুলে কারো কাছে নয়
কবিতার কাছেই যাবে আর তার হাড় ভেঙে ডুগডুগি বাজাবে
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে মনে হয় আমি কপিলাবস্তুর গৌতম
ফেলে এসেছি রাজ্যপাঠ, সংসার, পিতা শুদ্ধোদনের স্বপ্ন-অভিষেক
মরমি আয়ুর পাখি আমাকে ডেকে নিয়ে চলে গেছে দূর বহুদূর
আমার পৃথিবী জুড়ে আশোকস্তম্ভের মেলা, হাজার বছরের অস্ত্রোপচার
জরুরি বিভাগ আর তার অনর্গল চিৎকার
গৌতম গৌতম বলে ডাকছে অচেনা রাত, শনশন বইছে উত্তুরে বাতাস
কোনো ডাক লাগে না কানে। সারারাত কুড়িয়েছি বিজন আধোঘুম
মেলা শেষে ফেলে যাওয়া অসংখ্য পণ্যের বিচ্ছিন্ন টুকরো রাশি
মনে পড়ে সন্ধ্যার মুখ, ভোরের অসুখ, নরম আলোয় গড়া সূর্যের ছবি


জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে।
নেশা, দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানো ও বইপড়া। পথের নেশা তাকে করেছে ঘরছাড়া, ঘুরতে ঘুরতে এখন আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে, কানাডায়। সেখানে জীবন যাপনের পাশাপাশি জীবন উৎযাপন করেন কবিতা এবং লেখালিখির খরস্রোতা নদীতে বৈঠা বেয়ে।
ফেরদৌস নাহার বাংলা ভাষার একজন শক্তিমান কবি, প্রাবন্ধিক ও সংগীত রচয়িতা। এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে ১৫টি কবিতা ও ৩টি প্রবন্ধের বই। এছাড়া তাঁর কবিতার ইংরেজি অনুবাদে অচিরেই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে একটি ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে অসংখ্য যৌথ কবিতা সংকলন। বাংলাদেশের প্রখ্যাত ব্যান্ড সংগীতের দল ‘মাইলস’-এর অনেকগুলো জনপ্রিয় গানের রচয়িতা তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও কানাডা থেকে কম্পিউটার ট্রেনিং প্রোগ্রাম কোর্স। কবিতার পাশাপাশি ছবি আঁকেন, গান লেখেন, ব্লগিং করেন, কফিশপে ধোঁয়া আর ঘ্রাণে আড্ডার ঝড় তোলেন। নিজেকে পদ্য-গদ্যের শ্রমিক বলেন। কিন্তু সবকিছুর উপরে এক বিশ্ব বোহেময়ান কবি আর চির তারুণ্যের নাম ফেরদৌস নাহার। মন চাইলে বেরিয়ে যান। ঘুরে বেড়ান খেয়াল-খুশি মতো, যাকে তিনি ‘ঘুরণ’ বলেন। জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বুনে চলছেন মুক্ত চিন্তা ও উন্মুক্ত বোধের নকশা। ভালোবাসেন প্রকৃতি ও মানুষ।
আকাশের ঠিকানা : [email protected]
Related