বারান্দার গ্রিলে অনেকক্ষণ একটা কাঠশালিক ধ্যানমগ্ন হয়ে আছে। কিন্তু তার ছায়াটা দুলে দুলে উঠছে। অরণী ছায়াটার দিকে একমনে চেয়েছিলো। ঘরের বাইরে দুপুর। তা তীক্ষ্ণ হয়ে উঠছে খুব দ্রুত। একটি কাক কোথা থেকে উড়ে এসে বসলো। কাকটি তীব্রভাবে চিৎকার করে উঠতেই কাঠশালিকের ছায়াটা জোরেশোরে নড়ে উঠলো। দীর্ঘসময়ের আশ্রয় ছেড়ে উড়ে চলে গেলো পাখিটি।
পাখির ছায়াটা হারিয়ে ফেলতেই অরণীর পুরানো যন্ত্রণা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। চোখের সামনে সময়গুলো টুকরো টুকরো হয়ে যেতে শুরু করলো। টুকরো সে সময় ছত্রে ছত্রে শুধুই গুমরে ওঠা হাহাকার তখন।
এই সময়গুলোতে অরণী বারবার ফিরে যায় তার অতীতে। পুরানো সে সময়ের স্রোতে ভেসে যেতে যেতে ডাক আসে লাল ভেলভেট বাক্সটার। অদম্য সেই ডাক এই সময়ে কিছুতেই পাশ কাটাতে পারেনা অরণী।
বাড়ির ছাদের উপর ঝুলে থাকা আকাশ, কাঠশালিকের ডাক সবকিছু অগ্রাহ্য করে অরণীর মন চলে যেতে চায় লাল ভেলভেটের বাক্সটার কাছে। ইচ্ছেটা জাগতেই কোথা থেকে কয়েক পশলা বিরক্তি এসে অরণীকে ক্লান্ত করে দেয়। এই বিরক্তি না দুঃখের না যন্ত্রণার। এই বিরক্তি শুধুই ইচ্ছেটা জাগার জন্য।
কিঙ্করের কাছ থেকে অরণী লুকাতে পারেনা এই বিরক্তি বা ক্লান্তি। প্রথম প্রথম অরণীর পাশে বসে, হাতটা মুঠোয় নিয়ে কিঙ্কর বোঝাতো তাকে,
‘ ভুলে যাও সেসব। সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই ফিঁকে হয়ে যায়।’
না সূচক মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে প্রতিবার অরণী এই একই কথার পুনরাবৃত্তি করে,
‘ কিছুই ফিঁকে হয় না। সে সবকিছু মনে হলেই অন্ধকার হয়ে যায় চারপাশ’।
একবার দু’বার এমন মানা যায়। কিন্তু দিনের পর দিন যখন অরণী একইরকম আচরণ করতে থাকে তখন স্বভাবতই বিরক্তী আসতে শুরু করে কিঙ্করের। অরণীর এই বিপর্যস্ত সময়গুলোকে এড়িয়ে চলে সে এখন।
অরণী এই অসহায় সময়ের ভাগীদার কিঙ্করকে হারিয়ে দিনে দিনে আরোও বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে।
লাল ভেলভেটের বাক্সটা কিঙ্কর অনেকবার সরিয়ে ফেলতে চেয়েছে। সে জায়গাতে মেরুন রঙের রেশমের শাড়ি রেখে ভোলাতে চেয়েছে অরণীকে। কথায় কথায় ভুলিয়ে শাড়িটা জড়িয়েও দিতো অরণীর নিটোল শরীরে। চোখের কোণে পৃথিবীর সব প্রেম জড়ো করে অরণীকে উত্তাল করে দিতে চাইতো সে। কিঙ্করের চোখের লোভ জরিপ করে অরণীও চাইতো ভেসে যেতে। ঠিক তখনি খেয়াল হতো লাল ভেলভেটের বাক্সটা নেই সেই জায়গাতে। অস্থির হয়ে উঠতো অরণী। অন্য কেউ দেখে ফেলবে সেই বাক্স! অদ্ভুত আড়ষ্টতা গিলে ফেলতো অরণীকে তখন।
অরণীর এই অস্থিরতা, বিপর্যস্ত অবস্থা কিঙ্করের কাছে এক নতুন নাম পেল। আর তা হলো ‘ম্যানিয়া’।
‘ তুমি বড্ড ম্যানিয়াক হয়ে যাচ্ছো দিনকে দিন।’
খুব জোর দিয়ে কিঙ্কর যেদিন এই কথাটা প্রথম বললো সেদিন থেকেই নিজেকে অপরাধী মনে করতে শুরু করলো অরণী।
অরণী অপরাধী কিঙ্করের কাছে, সংসারের কাছে বা এই সমাজের কাছে।
অস্থির, বিপর্যস্ত অরণীকে কিঙ্করের গ্রহন করার কোন উপায়ই থাকে না। আর এই সংসার অথবা সমাজ সকল অস্থিরতা আর বিপর্যস্ততাকে চিরকাল অচ্ছুত করেই রেখেছে। এ সবেতে সবচেয়ে নিরুপায় কিঙ্কর। অরণীর অবহেলায় নিজের ভব্যতা আর শিক্ষা পর্যন্ত বিস্মৃত হয়েছে তার। যে অরণীর ছায়ায় নিজের সবকিছু বাজি রাখতো কিঙ্কর সেই অরণীকেই এখন এড়িয়ে চলে সে।
ছাদের উপর বিকেল নেমে আসলে নিভৃতে নিরিবিলিটা নিজেদের করে নেবার শপথ ছিল ওদের। শহরের সবচেয়ে দামী শো-রুম থেকে কেনা আসবাবে সংসার সাজিয়ে অদম্য ভালবাসার কাছে নিজেদের সারাজীবন বন্ধক রাখার আয়োজনও পরিপাটি ছিলো। কিন্তু সেই লাল ভেলভেটের বাক্সটা সব আয়োজন ভেস্তে দিলো। যেদিন এ বাড়িতে বাক্সটা এলো তার কয়েকদিন পর থেকে ক্লান্তিকর এক অস্থিরতা জায়গা করে নিলো অরণীর জীবনে। ঘুণপোকার মতো কুরে কুরে গর্ত করে চলেছে অরণীর ভিতরে সেই অস্থিরতা সবার অলক্ষ্যে, গভীরে আর নিভৃতে।
সারা বিকেলের নিরিবিলি মেপে, সারা সন্ধ্যায় অন্ধকার মেপে সময় কাটে এখন অরণীর। অন্ধকার যত গাঢ় হয় ঘুণপোকার কুটুর কুটুর তত বাড়ে। সবকিছু থেকে বিছিন্ন হয়ে যায় অরণী। মাথার মধ্যে তীব্রভাবে ঘুণপোকার হেঁটে বেড়ানো অনুভব করে অরণী। প্রিয় গানের সুর গুনগুন করে, প্রিয় কবিতা আওরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে সে। পারে না। পাশের বাড়ির ঝাড়লন্ঠনের তীব্র আলো সে সময় যন্ত্রণা আরোও বাড়িয়ে দেয় তার। জানালায় মোটা পর্দা ফেলে নিজেকে অন্ধকারের অন্তর্গত করে ফেলে সে।
মাত্র নয় মাসের বিবাহিত জীবন ওদের। তার সাথে আগের দুই বছরের পরিচয়। প্রগাঢ় ভালবাসা আর অদম্য আবেগকে পুঁজি করে কিঙ্করের সাথে এক ফাগুনের সন্ধ্যায় সারাজীবন ভালবেসে যাবার অলিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলো অরণী। সেদিন থেকে প্রতি বিকেল, প্রতি সন্ধ্যা অরণী লিখে দিয়েছিলো কিঙ্করকে। কিন্তু মাত্র চারমাসের মাথায় সেই চুক্তিভঙ্গ করেছিলো অরণী নিজেই। কিঙ্করের আলিঙ্গন তার কাছে নোংরা কীটের স্পর্শ মনে হল একদিন আচমকা। সেদিন থেকেই সকল বিকেল একা হয়ে গেলো অরণী।
তবে লাল ভেলভেটের বাক্সটার আগমন তারও বেশ আগে। আষাঢ়ের পঞ্চম সন্ধ্যা ছিল সেদিন। বৃষ্টির কয়েক বিন্দু মা’র চুলে গাঁথা ছিল সেদিন। অরণী খুব একটা পাত্তা দেয়নি সেই জলের বিন্দুকে। একটি তোয়ালে বা হাতির দাঁতের টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে মায়ের চুলে বুলিয়ে দেয়নি সেদিন ও। শুধু মা’র চোখের গভীরে যে শূন্যতা ছিল তাতে একবার করুণার তীর ছুড়েছিলো।
‘ এই বয়সে গ্রামে ফিরতে চাইছো কেন? তোমার সংসার ছুটি দিবে তোমায়?’
বৃষ্টির সে জল হাত দিয়ে নিংড়ে নিয়ে মা বলেছিলো,
‘ সংসার এখন আমাকে ফেয়ারওয়েল দিতে প্রস্তুত।’
মা আর কথা এগোয়নি। নিজের শান্তিনিকেতনি ব্যাগ থেকে লাল ভেলভেটের বাক্সটা এগিয়ে দিয়ে বলেছিলো,
‘ এটা রাখো। এগুলো তোমার জন্যই গুছিয়ে রেখেছিলাম এতদিন।’
মায়ের কোনকিছুকে নিজের ভাবতে শেখেনি অরণী কোনদিন। দিনের আলোর মতো মায়ের সুখ কিংবা গাঢ় সন্ধ্যার মতো মায়ের বিষাদ কোন কিছুরই ভাগীদার হতে পারেনি সে কোনদিন। শুধুমাত্র ভাগীদার ছিলো মা’র কবিতার। তাও মায়ের অজান্তে, মায়ের অলক্ষ্যে। মায়ের লেখা কবিতার গলি ঘুপচি সেচে সেচে মাকে বের করে আনতো অরণী। সে মা একান্তই অরণীর।
তাই ভেলভেটের সে বাক্সটার প্রতি প্রথমে অনাগ্রহীই ছিলো সে। দামী সে বাক্সটা খুব সস্তা হয়ে ঘরের এক কোণে পড়ে রইলো দিনকয়েক।
এরপর সেই বিধ্বংস বিকেল এলো। সবরকম বাহুল্য বর্জিত একটি সাধারণ বিকেল ছিল সেটা শুরুতে। রোদের তেজ মিইয়ে এলে অরণী সেদিন বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিলো। প্রায় শাদাটে নীল আকাশে কয়েকটি পায়রা উড়ছিলো। বিকেল অরণীর চিবুক ছুঁইয়ে আলগোছে পড়ে ছিলো সেদিন।
পৃথিবীর বুকে দাঁড়ানো সেই সুখী মেয়েটির জন্য পাশেই অপেক্ষা করছিলো দুঃখের গহ্বর। আর সে গহ্বরে ডুবে যাবার জন্যই সেদিন স্বাভাবিক বিকেলটাকে বারান্দায় রেখে অরণী পা বাড়িয়েছিলো ঘরের দিকে।
মায়ের দেওয়া লাল ভেলভেটের বাক্সটা অগাহ্যের আস্তর জড়িয়ে পড়েছিলো এককোণে। সুখঘোর লাগা অরণীর অমনোযোগী এক ধাক্কায় বাক্সটা অতীতকে উগরে দিলো। একটি সবুজ চোখের গিরগিটির শীতল চাহনী অরণীকে নিস্পন্দ করে দিলো। মাথার মধ্যে এমন যন্ত্রণা উঠলো যে সাবলীল বিকাল আড়ষ্ট হয়ে গেলো। ঘরের পৈঠায় বিকালটা থমকে রইলো অরণীকে আঁধারে ঠেলে দিয়ে।
বাবা ছিল অরণীর সবচেয়ে কাছের মানুষ। সারাদিন কবিতা নিয়ে ব্যস্ত থাকা মা ভালবাসার মেদুরতা নিয়ে কাছে না এলেও বাবা সবসময় উষ্ণ সুখে ডুবিয়ে রাখতো তাকে। সেই বাবা একদিন সব এলোমেলো করে দিয়ে চলে গিয়েছিল। গভীর সুখে তলিয়ে থাকা অরণীর সুখঘোর এক মুহূর্তে উবে গিয়েছিলো সেদিন। এরপর মা কখনই আঁচলে বেঁধে সে সুখ ফিরিয়ে আনেনি বা আনার চেষ্টা করেনি অরণীর জন্য। তবে বাবা পৃথিবী থেকে চলে যাবার কিছুদিন পরেই মা নিয়ে এসেছিলো এক দুঃস্বপ্ন। বা বলা যায় দুঃস্বপ্নের অনন্তকাল।
মানুষটি খুব ভাল কবিতা লিখতো আর পড়তো। আর মা’র লেখা কবিতা যেন সব তার কন্ঠের জন্যই জন্ম নিতো। মা ব্যস্ত হয়ে যেতে লাগলো তাকে নিয়ে, তার কন্ঠে নিজের কবিতা নিয়ে। একাকী অরণীর এলোমেলো জীবন গুছিয়ে দিতে বা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম শান্তি নিয়ে তার পাশে দাঁড়াতে মা’র অপারগতা ছিল সার্বক্ষণিক। তবুও বেড়ে উঠছিলো অরণী। ফ্রক ছেড়ে কৈশোরের সিঁড়ি ভাঙছিলো বাবুই পাখির মতো। নিজেকে পাখির ডানায় বসিয়ে উড়ে বেরানোর সুখ খুঁজে নিতো অরণী। কিন্তু স্বল্পকায় সে সুখের খবর জেনে গিয়েছিলো মানুষটি।
এই বাড়িতে তার ছিল অবাধ আসা-যাওয়া। মা’র কবিতাগুলো নিজের কন্ঠে নিতে নিত্য সে করতো প্রভূত কসরত। সেই কসরতে মায়ের ঘরের বন্ধ দরজায় এপাশে কত দুপুর, কত বিকাল গড়িয়ে যেত তার ইয়ত্তা নেই!
তবে সেসব বিকেল আর সন্ধ্যে মূর্ত হয়ে থাকতো অরণীর করতলে। ওটুকুই তো ছিল সুখ তার!
সেদিন দুপুরে মানুষটি এলো। মা তখন নিজের ঘরে ঘুমিয়েছিলো। পৃথিবীর বুক থেকে এক টুকরো সুর নিয়ে অরণী গুনগুন করছিলো। পায়ে পায়ে কখন সে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিলো অরণী জানে না।
‘ খুব সুন্দর। তুমি কিন্তু সুর খুব ভাল লাগাও। গান শিখতে পারো।’
পছন্দ আর অপছন্দের বাইরেও কিছু অনুভূতি থাকে। তার প্রতি অরণীরও সেরকম কিছু ছিলো। ‘মাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
অরণীর এ’কথায় এক পা এগিয়ে এলো সে।
‘ তোমার মা আসবে একটুপর। তুমি বসো। আজ একটি উপহার এনেছি তোমার জন্য।’
মানুষটি একটি কালো মুক্তোর মালা নিয়ে এগিয়ে এলো অরণীর কাছে। মালাটি পড়িয়ে দেবার অবকাশে ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে অরণীকে স্পর্শ করলো সে। অসংখ্য পা-অলা কীট আচমকা অরণীর শরীর বেয়ে উঠে এলো। সারা শরীরে ঘিনঘিনে পা নিয়ে ঘোরা শুরু করলো কীটগুলো। অরণীর ঘাড় থেকে পিঠ, চিবুক থেকে বুক সব জায়গায় কদর্য হিল্লোল তুলে কীটগুলো ঘুরতে লাগলো। কদর্য করে দিলো অরণীর সে বিকেল ও স্বল্পকায় সুখকে। চিৎকার করতে চেয়েছিলো অরণী। ঠোটের উপর চিলের থাবায় সে চিৎকার গুমরে গুমরে বিকেলের বাতাসে হারিয়ে গিয়েছিলো। কদর্য সেই কীট আর বিপর্যস্ত বিকেলটি অরণীর মস্তিস্কের এককোণে ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো আজীবনের জন্য।
মাকে সে কীট বা বিকেলের কথা কোনোদিন জানাতে পারেনি অরণী। কিভাবে জানাবে? কালো মুক্তোর যে মালা অরণী ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলো পরের বিকেলে মা’র গলায় সেই কালো মুক্তোগুলোকে হাসতে দেখেছিল সে। তবে এই কালো মুক্তো কাউকে সুখ দেয় না।
নিজের প্রতিটি কবিতার মতো মা’র জীবনেও সেই মানুষটি হয়ে উঠেছিলো অংশীদার। নতুন সংসার হয়েছিলো মা’র। নতুন সে সংসারে অরণী হয়ে পড়েছিল বিছিন্ন এক দ্বীপ। মূলত কদর্য লোকটির ছায়া যখন মায়ের ছায়ায় মিশে যেতো অরণীর পেটের ভিতর গুলিয়ে উঠতো। ঘৃণার উদগিরণে চারপাশ নীল হয়ে যেতো অরণীর।
এই অস্বস্তি থেকে বাঁচতে এক বিমর্ষ দুপুরে বাড়ি আর মায়ের নতুন সংসার ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলো অরণী। কলেজ হোষ্টেলের একটি স্যাঁতসেঁতে রুম বেছে নিয়েছিলো নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে।
কালো কুয়াশার সেসব দিন অবশ্য কিঙ্কর এসে ভুলিয়ে দিয়েছিলো। ক্লান্তিতে আছন্ন অরণীকে নিজের সুখের ভাগ দিয়ে আশ্বস্ত করেছিলো। সাবলীল জীবন শুরু হয়েছিলো কিঙ্করের সাথে। তখনই মা লাল ভেলভেটের বাক্সে কিছু গহনা নামক সুখের সাথে সেই কালো মুক্তোর অন্ধকার ফিরিয়ে দিলো অরণীকে। আলোহীন সেই অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে, তলিয়ে যেতে যেতে অরণী চিৎকার করে, গুমরে ওঠে। বলতে চায়,
‘ আমিও…’
গল্প ভাবনা
গল্পটা যখন লেখা হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে মি টু এর ঝড়। সেখান থেকেই গল্পের প্লটটা মাথায় আসে। মেয়েরা সাধারণত তার ঘরের মানুষগুলোর কাছেই বেশি যৌন হেনস্থার মত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। আর তাই সেই নারী তার বেদনা কাউকে বলতে না পেরে বয়ে বেড়ায় গোটা জীবন। এই ভাবনাটাকেই শব্দের মায়ায় সাজাতে চেয়েছি। শিল্প সাহিত্যের সৃষ্টিশীল মানুষগুলো বরাবর সমাজ ও মানুষের মুখপাত্র তাদের প্রগতিশীল ও অন্যায়ের বলিষ্ঠ কন্ঠের আলাদা মানুষ ভাবতেই ভাল লাগে আমাদের। সেই ফেলাসি ও ঘোরটা ভাঙতে চেয়েছি। একজন পুরুষ আদতে একজন পুরুষই এবং একজন নারী কেবলই শরীর ও লালসার ভোগ পণ্য তা সে মা হোক কিংবা মেয়ে। এই আত্ম উপলব্ধি থেকেই গল্পের চরিত্রগুলো তৈরি করেছিলাম। কাল মুক্তোর মালায় সম্পর্কের অস্থিরতাকে ধরতে চেয়েছি কিংবা সমগ্র পুরুষকেই। জ্যোতিষশাস্ত্র বলে সাদা মুক্তা চন্দ্রের রত্ন স্থিরতার জন্য ব্যবহৃত হয়। মা মেয়ে ও কবি(যিনি মেয়েটির মায়ের দ্বিতীয় বৈবাহিক সূত্রে মেয়েটির পিতাও বটে) সম্পর্কের মোড়কে ভোগবাদ। নিজের ভাবনার কোলাজে কতটা কি হলো তা বলার শেষ কথা পাঠক। আপনারাই…