| 29 মার্চ 2024
Categories
গদ্য সাহিত্য

ইরাবতী স্মৃতিকথা: দীপশিখা | সুরাইয়া পারভীন

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

 

 

সালটা ছিল ২০০৯। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্রে আগ্রহী হলাম। সব কার্যবিধি সম্পন্ন করার পর আসলো সেই কাঙ্খিত দিন। স্যারের (অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ) সাথে ইন্টারভিউ। আমি ধবধবে একটা সাদা জামা পড়েছিলাম। আমি মনে করেছিলাম স্যার সাদা মনের মানুষ,তাই ইন্টারভিউ এ সাদাই ভালো হবে।

স্যারের মুখোমুখি বসে আছি, স্যার জিজ্ঞেসা করলেন, “কী কী বই পড়েছি?” অন্য কোন বইয়ের নাম বলেছিলাম কিনা মনে নেই,তবে “শেষের কবিতা” উপন্যাসটির কথা বলেছিলাম। স্যার অমিত-লাবণ্য আর কেটির প্রেম বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। আমি বোধহয় আশানুরূপ একটা উত্তর দিতে পেরেছিলাম। তারপর” ২০১০ পাঠচক্র “হিসাবে কেন্দ্রে পথচলা শুরু করলাম। একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করে তখন বসে আছি। চাকরীর জন্য ট্রাই করছি, জীবনে একধরনের গুণগত সমস্যা ফেস করছিলাম, মনে হচ্ছিল হতাশ হয়ে যাচ্ছি। কেউ একজন এমন বা এমন কিছু থাকুক আমার সাথে যাতে জীবনের বোধের জায়গাটা ধরতে পারি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র হলো আমার সেই প্রাণ। একগুচ্ছ নতুন বন্ধুর সাথে ক্লাসে স্যারের কথোপকথন যেনো অন্য জগতে ডুবে যেতে লাগলাম। ইতিহাস সমগ্র থেকে শুরু করে যেকোন জীবন উদ্দীপনাপূর্ণ বই সাথে সিনেমা দেখা, ভ্রমণ করা সব যেনো ঘোর লাগা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। যেকোন বিশেষ দিনে কেন্দ্রের ছাঁদে আড্ডা জমে যেতো, পূর্ণিমা রাতের গানের আসর, স্যারের কথা মন্রমুগ্ধের মতো শুনতাম। মনে হতো স্যার নিজেই যেনো একটা বাচ্চা হয়ে গেছে। এত সহজ করে সবকিছু ভাবতে পারতেন, এত সরল করে কথা বলতেন…!

স্যার বলতেন, “মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়”। স্যারের “ওড়াউড়ির দিনগুলো”বইটি পড়লে কেমন জানি এক স্বপ্নের ঘোরে ঢুকে যাই। স্মৃতিবিজড়িত জীবন, তবু কোথায় যেনো স্বপ্নের আলো হাতে এসে পড়ে। তিনি আরো বলতেন, “প্রত্যেকটা মানুষকে থামতে শিখতে হয়” নতুবা এই চাহিদার যুগে মানুষ একদিন থমকে যায়। স্যার এত মিষ্টি করে জীবনের সমাধান দিতেন! স্যার বলতেন,যতটুকু শ্রম দিবে ততটুকুই তোমার কাছে ফিরে আসবে। আসলে জীবন বলতেই শর্টকাট কোন পথ খোলা নেই। তিনি মুলতঃ একটা জাতির মেরুদন্ড নিয়ে ভেবেছেন, একটা শক্তিশালী মানবিক জাতির স্বপ্ন দেখেছেন। আর তাঁর এই বইপড়া কর্মসূচি তারই একটা অংশ। স্যার মনে করেন সব মহামানবদের সৃষ্টি এই বইয়ে মলাটবদ্ধ হয়ে আছে। ফলে বই আর তার জ্ঞান এবং প্রতিফলনই জাতির মুক্তির উপায়।

স্যারের এরকম অনেক অনেক কথা যখন নিজের সাথে থাকি তখনই মনে পড়ে। ভেতর থেকে শক্তি পাই। জেগে উঠি একটা নতুন দিনের মতো। তিনি যেন একজন একজন সক্রেটিস, একজন প্লেটো, একজন এরিস্টটলের মতো। স্যারকে নিয়ে বলতে গেলে বলা শেষ হবে না আমার। নিজের কথা যদি বলি কালের কালাবর্তে ভূগর্ভ থেকে আবার ভূত্বকে এসে পড়লাম। সব হারালাম। যেতে পারি না আর আগের মতো নিয়মকরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে। ভেতরটা কষ্টে মুড়িয়ে যায়।

স্যারের হাসি দিয়ে কথা বলার অঙ্গভঙ্গি খুব মিস করি। স্যার আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছেন। যে জীবনবোধের আলো তিনি জ্বালিয়ে দিয়েছেন বোধকরি বেঁচে থাকার মর্ম আমার উপলব্ধিতে গেঁথে গেছে। তিনি আমার পাশে সবসময় ছায়ার মতো ছিলেন, থাকেন। শুধু পরোক্ষভাবেই নয়, প্রত্যক্ষভাবেও তিনি ছিলেন আমার জীবন রক্ষকারী। আমার রক্তের ধারা যতদিন বহমান থাকবে স্যার অস্তিত্বে মিশে থাকবে। এখন খুব কষ্ট হয়, পড়ার কাজটা আর আগের মতো হয় না। আলাদিনের দৈত্যটা ফুঁটো হয়ে বেরিয়ে আবার শামুকে ঢুকে গেছে। মনটা আনচান করে,পড়তে পারি না, ক্লাসে যেতে পারি না, স্যারের কথা শুনি না। একদিন ঠিক বেরিয়ে পড়ব, আলো হাতে ফিরে আসব। স্যার অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্মদিনে। আপনি ভালো থাকবেন, সবসময় ভালো থাকবেন।

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত