যখন এই গ্রহে আর কেউ চিঠি লিখেনা
…………………………………………………………………
ভাবিনি কখনো, আলো ঝলমল
রৌদ্র পিঠেও উঁকি দেবে
বিষণ্নতার ছায়া,
বিষ–খাওয়া বউটির মত
বিপন্ন পৃথিবী, মুখ কালো করে রবে–
ডাকঘরহীন দিনে!
তবুও বাসা বাঁধে
সেই অমোঘ নিয়তিরা, মনের
অতল তলে, যেন
রাতপরীর ভাগ্য আমাদের–
মিলিয়েই যাবার কথা ছিল
এক অন্ধকার থেকে
আর কোন আঁধারে ।
অথচ, আমরাই কি বুনিনি
আলোর ফসল,
সংকুচিত বুক–
স্ফীত হয়নি কি
কাগজের আবিষ্কারে ?
হায় ডাকহরকরা!
মাথার চুলের সমান–
পেলেনা পরমায়ু ।
প্রতীক্ষার প্রহর
পৌঁছুলনা বুঝি আর
নীল খামে–
স্বপ্নের শেষ দুয়ার।
হেমায়েতপুরে মরে যাওয়া লাশ, তোমাকে
…………………………..
তারপর…
তারপর একদিন কবরের জোনাকিরা এসে
পথ চিনিয়ে নিয়ে গেল তোমায়,
অথচ তোমার জন্য প্রতিক্ষীত ছিলো
জোছনা শোভিত মহুয়ার ফুল!
আর জনমের প্রেমিকারা
পূণর্বার তোমাতেই মাথা ঠুকে মরবে বলে
মেতেছিলো বাহা‘র নৃত্য–গীতে।
তুমি হয়তো তখনও তৈরি ছিলেনা,
মনস্থির করতে পারছিলে না–
রক্তপিশাচের কারখানায় মুটেগিরি,
নাকি অনাগত আত্মজার মুখে নুন ঢেলে দেওয়া,
কোনটি ছিল অনিবার্য, পবিত্র!!
তুমি হয়তো মেলাতেই পারোনি
প্রতিমাসে অন্ধ মাকে
পৃথিবী দেখানোর মিথ্যে প্রলোভনের পাপ,
ঝুপড়ি ভাড়া মেরে দেয়ার চেয়েও ভারী ছিলো কিনা!
অথচ,
উন্নয়ন খচিত সামান্য বুলেটও
তোমার চাইতে অনেক বেশি অংকপটু ছিলো
হে দ্বিধান্নিত মানুষ।
মানুষ! অথবা হেজিমোনাইজড বোকা, সরল প্রাণী
তুমি পারনি,
পারনি মেলাতে জীবনের হিসেব,
কিন্তু একটুকরো সোনালি ধাতব
কত সহজেই, নির্দ্বিধায় তোমাকে মিলিয়ে দিলো
রাষ্ট্র নির্মিত কবরের পথ,
ফিরিয়ে দিলো বাবার গোরের ঘাসে লুকিয়ে রেখে আসা
শৈশবের জোনাকিদের!
‘সকাল‘কে মনে পড়ে
………………………………………
তোমাকে ভুলিনি সকাল!
জানি, ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ নিভে এলে পরে
তোমারও পড়ে মনে–
বিষণ্ন বিকেলের কথা!!
কবেকার উড়ে যাওয়া আশ্বিনের মেঘেদের মত
জানি তুমিও বারংবার চাও পিছু ফিরে;
কিছু নীড়ে যদিও বা ফিরে আসে
পথভোলা পাখি,
তবুও সজল আঁখি–পল্লবে
তুমি খুঁজে ফেরো সেই গোধূলি–বিকেল স্মৃতি!
তোমাকে ভুলিনি সকাল!
এই যে ভীরু রাত্রিকে আরও মৌনতা শেখায়
তব বসতি ছুঁয়ে আসা হিমেল বাতাস,
এই যে লেকের জল ডেকে বলে–
“পথিক, তুমি তাঁকে হারাইয়াছো,
এইবার ওঠো!”
তবু জেনো, ক্ষয়িষ্ণু আলো জ্বেলে
কিছু কিছু সপ্তষি‘মালা
আগাম কুয়াশামেখে– তোমাতেই প্রতিক্ষমাণ!
তোমাকে ভুলিনি সকাল!
ভোলনি তুমিও,
অভিমানের পাহাড় ধ্বসে গেলে পরে
একদিন এসে খুঁজে নিও!!
কবি