একদম শেষে

Reading Time: 2 minutes
রকে বসে পা দোলাতে থাকে পলা। উল্টো দিকের হলুদ বাড়ির জানালা দিয়ে মাঝেমাঝে দুটো চোখ ঘুরে যায়, মাঝেমাঝে একগোছা চুল ওড়ে।কখনও বা এক চিলতে কপাল ঠেকে থকে জানালার গ্রিলে। পলা ওই টুকরো মুহুর্ত গুছিয়ে নিয়ে দুপুরে একবার বাড়ি গিয়ে স্নান করে ভাত খায়, আবার রাতে দুটো খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ২৬ বছরের পলা যখন দুপুরে ভাত খায় তখন বাবা রণদেব সান্যাল দোকান থেকে বাড়ি ফেরেন, আগুনের মতন রাগ ঝরে পরে পলার ভাতের থালায়। সে আগুনে কি না থাকে!! পলার অকর্মন্যতার লিস্ট, নগ্ন নির্লজ্জতা আরো কতো কি! বেকার ছেলের ভাতের থালায় বাপ আর ছেলের অসহায়তা লুটোপুটি খায়। কিন্তু ওই টুকুই।কোনো রকমের খেয়েদেয়ে আবার ক্লাবের রকে পলা, ওখানেই পলার যাবতীয় অস্পষ্ট ভালোলাগা।গুনগুন করে ভেসে আসা গানে পলা রোজ মনে মনে গলা মেলায় সেই আংশিক দৃশ্য চোখ চুল কপালের সাথে।
উল্টো দিকের হলুদ বাড়িতে লোকের যাতায়াত কম। পাড়ার পূজোতে তারা চাঁদা দেয় না, অঞ্জলিও দেয় না। সদর দরজায় তালা সব সময়। শুধু মধ্যবয়স্ক প্রভাত সরকার বাজারে যান, ব্যাগ কাঁধে নিয়ে সম্ভবত অফিসে যান।রমলা ও বাড়ির কাজের লোক।তবে অন্দরে তার প্রবেশ নিষেধ।কল পাড়ে এঁটো বাসন মেজে ওখানেই উপুড় করে, উঠান ঝাঁট দিয়ে সে বেরিয়ে আসে। সেই বলে, “ও বাড়ির গিন্নি বড়ো নাক উঁচু মানুষ।” কিন্তু প্রভাত বাবু আর তার নাক উঁচু গিন্নি ছাড়া ও বাড়ির তৃতীয় সদস্যা কে পাড়ার কেউ দেখেনি গত আড়াই বছরে  । শুধু পলা, ছুঁয়ে থাকে তাকে মননে।
সেও কি!!!!! জানা নেই।
ইতিমধ্যে পলার নিঃসন্তান পিসি পিসেমশায় পলাকে বসিয়ে দিলেন তাদের ফার্নিচারের গোডাউনে।পলার ক্লাবের রকে নেমে এলো শূন্যতা।চোখ দুটো খুঁজতো কি না পলাকে তা জানা নেই কিন্তু পলার মন আনচান করতো। তবে আজকাল ভাতের থালায় বাবার সমীহ জমা পড়তো। আর পলার বুকে হলুদ বাড়ির কার্নিশ।
এমনই এক দুপুরে পাড়ায় হল্লা। হলুদ বাড়ির চারপাশে ভীড়। বাড়ির নীচে রাস্তায় পড়ে আছে পলার প্রাণহীন দেহ।কানের পাশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আর তিন তলার জানালা দিয়ে দুটো চোখ গলে পড়ছে পলার শরীরের ওপর। ইন্দু, প্রভাত বাবুর একমাত্র ছেলের বিধবা। ঘরবন্দী ২৫এর ইন্দু কতোদিন আকাশ দেখেনি, কতোদিন সোহাগ পায় নি সর্বপরি কতোদিন মাছ খায় নি।শুধু চোখ দিয়ে পান করেছে পলাকে। তারপর একদিন হাতছানি দিয়ে ডেকেছিলো পলাকে। ইশারায় পাগল হয়েছিলো পলা, রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আতিপাতি করে ইন্দুর কাছে পৌঁছে যাবার রাস্তা খুঁজছিলো। উল্টোদিক থেকে আসা লোহার পাইপ ভর্তী ট্রাক পলাকে ফেলে দিয়ে গেলো মৃত্যুর অন্ধকার গুহায়।
কেউ জানলো না কেনো আর কিভাবে পলা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়েছিলো।কেউ জানলো না ইন্দু আর পলার প্রণয়ের প্রথম দৃশ্যের প্রস্তুতি চলছিলো তখন। শুধু জানলো ইন্দু, জানলো তার বৈধব্যের দ্বিতীয় দশা শুরু হলো। ইন্দু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো পলার দিকে। সে যেনো শুনতে পাচ্ছে পলার উদ্দাত্ত উন্মাদনা। পলা তাকে ডাকছে আর ডাকছে, ডেকেই যাচ্ছে…..
“ইন্দুবালা গো,
ডুবিয়া মরিলাম মরিয়া ডুবিলাম তোমারই প্রেমে পড়িয়া….”

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>