ঘুম
ঘুমে মরে থাকি
মিথ্যে ভোরের আশ্বাসে ও পাখি
আর ডেকে তোলো না
অতীত জেগে থাকুক ‘মরা নদীর সোঁতায়’
ঢেউ কেবল মাছের চোখের তারায়
মৃতগামী অক্ষের কোলে, ঘুম ঘুম আর
ঘুম স্টেশনে গাড়ি পৌঁছে গিয়েছে কখন …
টের পাইনি, কুয়াশায় ভেসে আসছে কেউ
এড়িয়ে যেতে চাই তাকে, অন্যথায়
ঘুম হারিয়ে যাবে, চিরকাল এইখানে
পড়ে থাকব জেগে, খোলা চোখে
বেঁচে থাকবে ক্লান্তির জ্যা—
আঁচড় কেটে যাবে রোদের গায়
গাঢ় দুঃস্বপ্নের ভেতর,
আমাকে এইভাবে বেঁচে থাকতে বলো না।
ঘুমুতে দাও প্রাণপণ,
অন্তত কয়েক শতক, জেগে ওঠে দেখব
রঙিন পড়ন্ত দিন, শান্ত বেলাভূমি আর অস্তাগত চাঁদ
ততোক্ষণে ফুরিয়ে যাবে নিশ্চয়ই অন্ধকারের গান
জোচ্চুরির সকাল, পাপারাজ্জির ভীড়।
আমাকে অইটুকু সময় ছেড়ে দাও,
মিশে যেতে দাও চিনির মতো জলের প্লাবনে।
আর জাগাবে না প্লিজ
পড়ন্ত বিকেলে ডানার শব্দে ঘুমুতে দাও,
গাঢ় নিঃশ্বাস ওঠা নামায় লীন হতে দাও।
লীন হতে দাও ঘুমের ছোবলে, চুমুতে, গহীনে।
কালো জাদুকর
সীমানা থেকে ফিরে এসে
যেসব পাখির পালক গ্যাছে খসে
যাদের পিতা দূর থেকে দেখা যায়,
ক্রুশে ঝুলে আছে; বিদ্রূপে মাখামাখি।
তাদের আছে বিবশ ক্ষুধার চোখ-
অই চোখে হাসে হায়েনার কালোজাদু
খণ্ডিত চাঁদ গোলাপি আকাশদেশে
তার পিঠে চড়ে কারা?
নমন করে আলোকের ঈশ্বরে
মাদুলি দুলিয়ে গাভীদের নাভি ছুঁয়ে
অবিরাম, পিয়ে যাও গোক্ষুরা ওগো-
মৃত বাছুরের দেহের নধর ঘাম।
রাম নাম জপো- রাম নাম!
স্বর্গ থেকে যদি না নামে জলকর,
মঙ্গায় যদি পিঁপড়ের মতো খিদে,
আট পায়ে আসে ধীরে শরীরের ‘পর-
তোমার রাজ্যে যে ক’টা মরালী ছাপ,
গুনে গুনে রেখো শীত রাতের পাতে।
সীমানা ছাড়িয়ে যারা উড়ে যেতে পারে,
তাদের নামে শমন জারি হয়,
তাদের পালকে তারকাঁটা জড়িবুটি
তাদের গায়ে লোনা বাতাসের হাসি।
কুইরেনহেইম
কুইরেনহেইম,দণ্ডিত প্রতিলিপি
তোমার শহরে স্থির দাঁড়িয়ে আছে,
যেমন দাঁড়িয়ে ম্যাথাউসের ঈশ্বর
গভীরে লুকোয় ইহুদি চাঁদের ঘর।
২০ জুলাই- এর শূন্য ময়দান
বালির ওপর আলো বিছিয়ে আসে।
দূর থেকে কোন শংসিত উপকূলে
ভীড় বাড়ছে, মৃত কাকেদের চোখে
ব্ল্যাকআউট এই শহরের ল্যাম্পপোস্ট
কার কার নামে শমন জারি করে
শোন-
উৎসুক কানে শিশুর আর্ত নিনাদ
ভেতর থেকে রক্তেরচাপ বাড়ে
কর্ষিত হাতে হৃৎপিণ্ডের গান
সিস কেটে আনে বাতাসের বুকে টান।
বুলেটের গতি আস্তিন ভেদ করে
বুকপকেটের একটুকরো ইতিহাস
কাঁদছে ভীষণ, যেমনি কাঁদছো তুমি
ঘরে ফিরবার তাড়া হচ্ছে খুব
ফায়ার! ফায়ার!! ফায়ার!!!
কুইরেনহেইম, তুমি প্রস্তুত আছো?
বৃহস্পতিবারের ছায়া
দীর্ঘ ছায়ার অপর নাম বৃহস্পতিবার
দুপুরবেলার সূর্য এই অকুলান পথ হেঁটে হেঁটে-
ধ্যানী সারসের যুগল পায়ে থামে।
রেড সিগনাল পার হয় ধূমায়িত কফির কাপে।
অসীম শ্বসনীয়ে আরো কিছুকাল
ক্লীবের ধ্বনির মতো যন্ত্রণা,
সূর্যের দক্ষিণায়ন ঘুরে তোমারই ঔরসে
আসে বেষ্টিত অন্ধকার
যোজন যোজন দূর হতে কেউ ডাকে,
আলতো ছুঁয়ে পরাস্ত করে অস্তমিত চাঁদ
তার দিকে চোখ তুলে একবার
শুধু একবার তাকাবে-
দেখবে শূন্যতার গভীরে তার
হাড়-মাংস-হৃদয় সব দলিত; একাকার…
জাদুকর পর্ব- চোখ
প্রিয় চোখদের কাঁটাতারে ঝুলিয়ে
নরম করে সরে এসো
পৃথিবীর জোড়া জোড়া চোখ সুখী হোক!
তালগাছ বামে হেলে পড়লে
ব্যক্তিগত ধনুর্বিদ্যা চুরি হয়-
তুমি জানো,
আরো জেনে রেখো-
পৃথিবীর সবচে’ সুন্দর চোখ হয় জিরাফের।
তাতে বায়োস্কোপ আছে এক!
সীমানার ওপারে,
নিয়মিত দৃশ্যের বাক্সবদল হয়।
জাদুকর, জাদুকর!!!
আমি চিড়িয়াখানায় রোজ দেখতে যাই,
কাঁটাতারে ঝুলিয়ে প্রিয় চোখদের
নরম পায়ে সরে আসি,
পুরনো বাংলা ছবির শিস তুলে
ঠোঁটে।
পৃথিবীর সবচে’ সুন্দর চোখজোড়া
কাঁটাতারের ওপাশে।
আহা!!!
এই দৃশ্যেই স্থির থাকো জাদুকর!
আরেকবার দেখে নিই তাদের…
ব্লু লেডি
উপমৃত্যুর পাড়ে দাঁড়িয়ে ব্লু লেডি তোমাকে মনে পড়ে।
ব্যষ্টিক যোজনায় স্থির যত ছায়াবৃক্ষ
তার নিচে,ভিজে ভিজে গান গায় যারা সমস্বরে,
ব্যঙ্গের তীব্রতায় যাদের মুখভঙ্গি
সৌন্দর্য হারিয়েছে, তারা সাইনবোর্ড হয়।
ফাঁকা লাইন জুড়ে থাকে আড়ষ্ট প্রাণের শপথ।
মধ্যিখানে শরীরিয় ঘ্রাণ, বিবশ করার আগেই
আমি জেনে গিয়েছি সিঁড়ির রেলিং এর মতো
দীর্ঘ সিঁথিকাটা আন্তঃনগর প্রেম-
ক্লান্তি নামায় গাঢ় কুয়াশা,
রিকশায় হুড তোলা দৃশ্যমান চুমুর আবেদন।
ধানমন্ডির ড্রেনেজ বর্ষায় অনন্ত সন্ধ্যা জুড়ে
ব্লু লেডি! ব্লু লেডি!! ব্লু লেডি!!!
প্রিয় প্রিয় গন্ধ বোতলবন্দি খুনেরখুঁটি।
নীলের অবয়বে যে কায়া অসুন্দর
সে কামে দারুণ গন্ধের কারিগর।

কবিতা পড়া শুরু করলেই, পড়তেই ইচ্ছা হয়।
ধন্যবাদ কবিকে।