ভিনগ্রহ থেকে উড়ন্ত চাকতির মতো মহাকাশযানে চড়ে পৃথিবীর নির্জন প্রান্তরে নেমে আসে এরা। এদের শরীর মানুষের মতো।
প্রকাণ্ড মাথার নিচে ছোট ধড়, সরু লিক লিকে হাত পা, বড় বড় টানা টানা কালো চোখ। এরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও প্রযুক্তির দিক থেকে আমাদের চেয়ে কয়েক আলোকবর্ষ এগিয়ে এরা পৃথিবী থেকে অনেক দূরে থাকা গ্রহের বাসিন্দা। এদের নাম ‘এলিয়েন‘। বর্তমান পৃথিবীর প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজন এই এলিয়েনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন।
এলিয়েন আছে
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং আগেই বলেছিলেন, ‘এলিয়েন আছে, অবশ্যই আছে। ‘ নাসার গবেষকেরা কেপলার টেলিস্কোপের সাহায্যে এমন ২০টি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন, যাদের মধ্যে সম্ভবত প্রাণ আছে। নাসার প্রথম সারির বিজ্ঞানী অ্যালেন স্টেফান, বিজ্ঞানী সিলভানো পি কলম্বানো, বিজ্ঞানী থমাস জুরবিউকেন বিভিন্ন সময় বলেছেন আমরা এলিয়েনের খুব কাছাকাছি আছি।
কিন্তু সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর বিতর্ক উপস্থিত হয়েছে এলিয়েন নিয়ে। একদল বিজ্ঞানী রীতিমতো যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন জীবের সৃষ্টি মহাকাশে এবং মানুষই এলিয়েন।
এই মতবাদ পালে হাওয়া পেয়েছে, কারণ পৃথিবীতে জীবন ও মানবজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত এখনও মেলেনি।
পৃথিবীতে জীবনের সৃষ্টি কীভাবে হয়েছিল!
জীবের উৎপত্তি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন মতবাদ থাকলেও। বেশিরভাগ বিজ্ঞানীরা এত দিন বলে এসেছেন সমুদ্রের পানিতে আনুমানিক ৩০০ কোটি বছর আগে জীবনের আবির্ভাব ঘটেছিল। কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন মিলে বিভিন্ন ধাপে তৈরি করেছিল প্রথম প্রাণ নিউক্লিওপ্রোটিন।
সেখান থেকে প্রোটোভাইরাস-ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া-প্রোটোজোয়া প্রভৃতি ধাপ ঘুরে সৃষ্টি হয়েছিল এককোশী ক্লোরোফিল যুক্ত জীব ও বহুকোশী প্রাণীর। এককোশী ক্লোরোফিল যুক্ত জীব থেকে সৃষ্টি হয়েছিল উদ্ভিদের।
সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী বলেছেন জীবের উৎপত্তি সমুদ্রের জলে নয় মহাকাশে!
শেফিল্ড ইউনিভারসিটির একদল বিজ্ঞানী ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২৭ কিমি ওপরে থাকা বায়ুমণ্ডলীয় স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে কতগুলি বেলুন পাঠান। বেলুনগুলি ফিরে আসার পর স্তম্ভিত হয়ে যান তাঁরা। বেলুনের গায়ে লেগে ছিল কিছু আণুবীক্ষণিক জীব। পৃথিবীতে যাদের অস্তিত্ব নেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন এই জীবগুলির উৎপত্তি মহাকাশে।
পরীক্ষাটির শেষে শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ওয়েনরাইট বলেছেন, কোনো পদ্ধতিতেই পৃথিবী থেকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চতায় এই জীবগুলির যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি এগুলি মহাকাশের জীব এবং মহাকাশেই জীবের সৃষ্টি হয়েছিল। মহাকাশ থেকে এখনও প্রতিনিয়ত পৃথিবীতে জীব আসছে। আমাদের চারপাশে অনেক জীবই আছে যারা এসেছে মহাকাশ থেকে।
আর একদল বিজ্ঞানীও পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন, মহাকাশ থেকে অ্যামাইনো অ্যাসিড পৃথিবীতে আসতে পারে ধূমকেতুর আঘাতের সঙ্গে। এই মতবাদে বিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা বলছেন জীবন সৌরজগতে ছড়িয়ে আছে।
বলেন কী, আমরাই এলিয়েন!
জীবের উৎপত্তি তাহলে সমুদ্রে হয়নি! এই প্রশ্নে যখন পৃথিবী তোলপাড় এর মধ্যেই বোমা ফাটিয়েছেন আমেরিকার ইকোলজিস্ট ড. এলিস সিলভার। তিনি তাঁর ‘Humans are not from Earth: a scientific evaluation of the evidence’ বইটিতে রীতিমতো যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে মানুষ পৃথিবীর জীব নয়।
অন্য জীবদের মতো মানুষের সৃষ্টি পৃথিবীতে হয়নি। কয়েক লক্ষ বছর আগে অন্য গ্রহ থেকে মানুষকে পৃথিবীতে ছেড়ে যাওয়া হয়েছিল। সিলভার বলেন, মানুষের শরীরে থাকা অনেক ত্রুটি বুঝিয়ে দেয়, পৃথিবী আমাদের নিজের গ্রহ নয়। কিন্তু জীববিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন নিম্নশ্রেণীর প্রাণী থেকে বিবর্তিত হতে হতে পৃথিবীর সেরা প্রাণী মানুষের সৃষ্টি হয়েছিল।
ড. সিলভারের থিওরির কিছু ঝলক
তাঁর থিওরি দাঁড়িয়ে আছে মানুষের শারীরতত্বর ও পৃথিবীর অন্য জীব ও মানুষের পার্থক্যের ওপরে।
● ড. সিলিভারের মতে, অন্য প্রজাতির জীবের প্রায় সব প্রয়োজন মিটিয়ে দেয় আমাদের এই মিষ্টি পৃথিবী। তাই, যারা মানুষকে ভিনগ্রহ থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিল তারা ভেবেছিল, পৃথিবীর অন্য প্রাণীদের মতো মানুষের জীবনযাত্রার সব প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে পৃথিবী। কিন্তু অদ্ভূতভাবেই তা হয় না।
● মানবজাতিকে গ্রহের সবচেয়ে উন্নত প্রাণী বলে মনে করা হয়। আশ্চর্যের কথা, মানুষই হচ্ছে গ্রহের সবচেয়ে খাপছাড়া ও পৃথিবীর জলবায়ুতে টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে অনুপযুক্ত প্রাণী।
● বেশিরভাগ প্রাণী সারাদিন, যতক্ষণ খুশি, দিনের পর দিন রৌদ্রস্নান করতে পারে। কিন্তু আমরা কয়েক ঘণ্টার বেশি রোদে থাকতে পারি না কেন!
● সূর্যের আলোয় আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে যায়। অন্য প্রাণীদের ধাঁধায় না কেন?
● প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে পাওয়া বা গজিয়ে ওঠা খাবার মানুষ খেতে অপছন্দ করে কেন!
● অদ্ভুতভাবে মানুষের মধ্যেই প্রচুর ক্রনিক রোগ দেখা দেয় কেন!
● ঘাড়ে, পিঠে,কোমরে ব্যাথা কি অন্য প্রাণীর হয়! ড. সিলভারের মতে ব্যাক পেন হলো অন্যতম দীর্ঘকালস্থায়ী রোগ যাতে বেশিরভাগ মানুষ ভোগে। কারণ তারা পৃথিবীর অনান্য প্রাণীর মতো, হাঁটা চলা ও বিভিন্ন কাজে মাধ্যাকর্ষণের সাহায্য পায় না। এই রোগটিই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ, যেটা আমাদের বুঝিয়ে দেয় আমাদের দেহ অন্য কোনো গ্রহে বসবাসের উপযুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল যেখানে মাধ্যাকর্ষণ কম।
● মানুষেরা বাচ্চার মাথা বড় হওয়ার জন্য নারীদের স্বাভাবিক উপায়ে প্রসব করতে অসুবিধা হয়। অনেক মা ও শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হয়। কিন্তু পৃথিবীর অন্য কোনও জীব প্রজাতির এরকম সমস্যাই নেই। মানুষের ইউটেরাসের ভেতর থাকা জায়গার তুলনায় শিশুর আয়তন অনেক বড় হয়। কারণ উঁচু পর্যায়ের পুষ্টি পায় বলে।
● মানুষের দেহে ২২৩টি অতিরিক্ত জিন থাকাও স্বাভাবিক নয়। কারণ পৃথিবীর অন্য প্রজাতির দেহে অতিরিক্ত জিন নেই।
● পৃথিবীর কোনো মানুষই ১০০% সুস্থ নয়। প্রত্যেকেই এক বা একাধিক রোগে ভোগে।
● মানুষের ঘুম নিয়ে গবেষণা করে গবেষকরা বলছেন পৃথিবীতে দিন ২৪ ঘণ্টার, কিন্তু আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়ির মতে, আমাদের দিন হওয়া উচিত ছিল ২৫ ঘন্টার। এবং এটা কিন্তু আধুনিক যুগে সভ্যতার বিকাশ ও উল্কাগতির জন্য হয়নি। মানবজাতির সূত্রপাত থেকেই দেহঘড়িতে একটি দিনের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ২৫ ঘণ্টা।
● আমাদের ত্বকে ট্যান পড়া বা সূর্যরশ্মির প্রভাবে চামড়া কালো হওয়া সেটাই প্রমাণ করে সূর্য রশ্মি মানুষের পক্ষে উপযুক্ত নয়!
বিভিন্ন বিজ্ঞানী সিলভারের থিওরিটির সমালোচনা করেছেন ও তির্যক চোখে দেখেছেন। কিন্তু অনেকে তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাই তুমুল বিতর্ক চলছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত মানবজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে অবিতর্কিত উত্তর পাওয়া যাচ্ছে।
বিভিন্ন বিজ্ঞনী বলেছেন, ড. সিলভার যে যুক্তিগুলো হাজির করেছেন, সেগুলি কিন্তু বাস্তব। সেটাও ফেলে দেওয়ার নয়। সত্যিই তো পৃথিবীর অনান্য প্রজাতির জীবের চেয়ে আমরাই কেন আলাদা হলাম। দেখা যাক বিজ্ঞান আগামী দিনে তাঁর প্রশ্নের কী উত্তর দেয়।
সত্যিই কি আমরা পৃথিবীর প্রাণী! নাকি আমরা ভিনগ্রহের প্রাণী হয়ে পৃথিবীকে শাসন করছি! রহস্যটির উত্তর লুকিয়ে আছে কালের গর্ভে। মানুষের সৃষ্টি যদি পৃথিবীতে না হয়ে থাকে বা আমরাই যদি ভিনগ্রহ থেকে পৃথিবীতে এসে থাকি, তাহলে কাদের খুঁজতে নাসা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করছে! প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই গেল।
রূপাঞ্জন গোস্বামীর প্রতিবেদন, দ্য ওয়াল