Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

স্বপ্ন

Reading Time: 2 minutes

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.comঅলি সেদিন বলছিলো,
জানিস সোমা, আমাদের এখানে না, সারা বছর বসন্ত। সারা বছর ফুল ফোটে পাখি গান করে।
চারপাশে কেবল সুখ সুখ গন্ধ।
আমি বললাম তাহলে তো তোর খুবই আনন্দ! যা চাস তাই পাস।

অলি অদ্ভুত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে, কী যেন একটা গোপন করে বললো নারে না!আমার এখানে একটুও ভালো লাগে না।আমি তো সেই গায়ে ফিরে যেতে চাই যেখানে আমার মায়ের, আমার প্রিয়জনদের গন্ধ লেগে আছে। যে গায়ে আমার বাড়ির পিছনে বাঁশ ঝাড়ের পাশে পুকুর আর অন্য পাশে কৃষ্ণচূড়ার বিশাল গাছটা থোকায় থোকায় লাল লাল ফুল নিয়ে দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে। যার নিচে বাঁশের বেঞ্চি পাতা। বেঞ্চিতে বসলেই চোখটা বাঁশ ঝাড় পুকুর পাড় পেরিয়ে ছুটে যায় সবুজ সবুজ ধানক্ষেতে। দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেতের সীমানা পেরিয়ে ছুঁয়ে আসে আবছা কুয়াশার মতো দেখতে গ্রামটাকে। দেখলে মনে হয় গ্রামটা যেনো মেঘে ছাওয়া আকাশে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে।

দেখতে দেখতে চোখদুটো ক্লান্তিতে যেই নুয়ে আসে… অমনি চলে আসে পাশের বাড়ির প্যাচালী বুড়ি! আদুরে বকায় চিৎকার করে বলে…ওরে,

তোগোর কাজকর্ম নাই? সারাদিন কেবল আড্ডা আর আড্ডা! তারপর সে নিজেই বসে যায় আড্ডায়। আর খুলে বসে তার পুরোনো দিনের স্মৃতির ঝাঁপি। আরে, তোরা তো দেখিস নাই ভরা বর্ষায় এই জায়গা জমি সব পানিতে তলাইয়া যাইতো। তখন সবুজ হইয়া যাইতো সাদা! চারদিকে কেবল সাদা রংয়ের পানি আর পানি।

এই বাড়িটা তখন দ্বীপের মতো মনে হইতো।এইখান দিয়া নৌকা যাইতো। জাইল্লারা মাছ ধরতে আইতো। আমাগো ডাইকা ডাইকা কথা কইতো! দীর্ঘশ্বাসের সাথে হারিয়ে যায় প্যাচালী বুড়ির পুরোনো কথন।

আচমকাই অলি তার কথা থামিয়ে আমার হাত দুটো চেপে ধরে। জানতে চায়, সোমা সামনে কি বর্ষার দিন? আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলি। অলি উৎফুল্ল হয়। খানিকটা চিৎকার করেই বলে, সোমা তাহলে নিশ্চই কৃষ্ণচূড়াও ফুটে গিয়েছে!

আমি বলি হ্যাঁ তো। জানিস অলি আমার ইউনিভার্সিটি আসা যাওয়ার পথে পথে কৃষ্ণচূড়ার আগুন লেগেছে। যখন ফিরি তখন মাথার ওপর রোদ ঝা-ঝা করতে থাকে তবুও রিক্সায় হুড তুলি না।
অলি বলে কেন?
আমি অবাক স্বরে বলি, আরে বুঝলি না! রোদের সাথে কৃষ্ণচূড়ার আদ্যিখেতা দেখবো বলে। দুজনেরই যা বাহার! মুগ্ধ অলি হেসে ওঠে। আমি বলতেই থাকি। জানিস, মাঝে মাঝে রোদ আর কৃষ্ণচূড়াকে আমার নিষ্ঠুর মনে হয়। অলি আমাকে থামিয়ে দেয়। বলে ওরা নিষ্ঠুরই! ওর চোখ ছলছল করে ওঠে। চোখে মুখে কেমন দুঃখ খেলা করে। আমরা চুপ হয়ে যাই। মগ্নতা বিষন্ন হয় এই দুপুরে।

আমার সামনে ভেসে ওঠে সাদা জমিনে সবুজ গোলাপির ফুলেল নকশার শাড়ি পরা, ছোট চুলের, হাতে ডায়েরী ধরা আমার প্রথম দেখা অলি। ও আর বড় হলো না!

অলিই আমার মগ্নতায় ছেদ ঘটায়। বলে সোমা তুই আর আমি কৃষ্ণচূড়া বোন। না না বন্ধু। কৃষ্ণচূড়ার ডালে সাদা সাদা ফোটায় লাল লাল পাপড়ি। এক বর্ষায় বৃষ্টি শেষে পাপড়িতে জমে থাকা বৃষ্টিকনা ঝরি ঝরি করেও ঝরবে না, তখন তুই আর আমি হেসে কুটি কুটি হবো। খুব দুষ্টুমি করবো। ছেলেরা যেমন করে একা একটা মেয়েকে দেখলে!আমি অলির কথায় হেসে কুটি কুটিই হই…।

ঘুমের কুয়াশা কাটতে থাকে। অলির উদ্বেল কথাগুলো ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর হয়। আমি আকুল হয়ে শুনতে চেষ্টা করি। অস্পষ্ট শুনতে পাই, “আমি আসবো… সোমা, আমি আসবো তোর কাছে। আমার হাতটা ধর।”

আমি হাত বাড়াই। হাতটা শূন্যতা গায়ে লেগে ঠক্ করে ওঠে।

সাদা জমিনে, সবুজ গোলাপীর ফুলেল নকশার শাড়ি পরে, ডায়েরি হাতে অলি হারিয়ে যায় এক আকাশ দূরত্বে।

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>