| 19 এপ্রিল 2024
Categories
এই দিনে কবিতা সাহিত্য

ইরাবতী এইদিনে: আলতাফ শাহনেওয়াজের একগুচ্ছ কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

 

 

কুহক

কোনো কোনো ঘুম
পাশ ফিরে শোয়
চোখের ভেতর
জমে কাঁটাতার
পথগুলো দূরে
আমায় পেরোয়
গেল কোথা একা
ফিরল না আর।

কেউ আসবে না
বসে থাকা কেন?
গোধূলির দেশে
ছিল আলোলতা
দিন শেষে গ্রহে
মুছে গেলে কথা
আমার কালিমা
লোকালয়ে জাগে…

ওড়ো উন্মাদ
নিদ্রাযন্ত্রে

 

 

 

শরণার্থী

আর লিখব না। পুরাতন লেখাজোকা ঘুমিয়ে গেলে
এবার হাঁটা দিতে হবে সীমান্তে, বাঁশঝাড়ের দিকে, খোলা রামদা হাতে।
আমার অতীত থেকে আমিই বের হয়ে আসি,
বর্তমান আমার চোখের ভেতর আমাকে
রাখে না! ভাঙা দুপুরের সাজে
বিচূর্ণ নিজেকে বাঁচাতে আমাকেই করব খুন—
গভীর মসৃণ কোনো আয়না তেড়ে আসছে বাস্তুভূমিতে;

স্তব্ধ। বাকরুদ্ধ নিদ্রায় চোখ মেলে
তাই না-লেখাও লিখব না—গল্পের মতো অনিশ্চয়তা ঘুমিয়ে আছে লেখার লাইনের ভেতর…

 

 

 

প্রচ্ছন্ন

অসীম গানে লেখা হচ্ছো তুমি
দূরে পৃথিবী স্মৃতির মাঝে একা
ক্ষতের মতো লিখে যাচ্ছে রাত;
সেসব কিছু গভীর হলে আমি
সিলিংফ্যানে ঝুলিয়ে রাখি ছায়া—
কাঁপন দিয়ে কমার পরে দাঁড়ি।

জানিয়েছিলে বিভূতি নেই দেশে
উড়ে এসেছি পয়সাখেকো ভাই,
পথে ভগ্নি পানি-তেষ্টা পেলে
পরের দেয়া কিছু খাসনে যেন।

এই বাক্যে হাতখরচ শেষে
ভুলেও গেছ হলকা-আঁকা দিন!
গরম বালি রুমালে ফোঁড় তোলে,
বেঁচে ছিলাম একটু পর পর।

গল্পে আছে দৈত্যমাখা ভয়
বজ্র-জাগা দুয়োরানীর মেয়ে
তার জন্য বাতাসটুকু থাক;
এবার পাশে বসো সিলিংফ্যান
কুয়াশা হয়ে লেখো কেবল ‘আমি
ঝুলন্তকে উড়িয়ে দেবো কাল!’

 

 

 

কানা ছেলের চোখ

পরাজয় রাক্ষসের মতো।
ছুটে যায়। নক্ষত্রপতন
আর রুদ্ধ বেদনা পাশের বাড়ির
উঠোনে রঙ্গন গাছ, অথবা সে
ক্লান্ত লাঠিয়াল!
‘সবই কপালের ফের’—উড়াও এ কথার পতাকা;
হাওয়া, সাথে এলো কাঁপন; সেই সঙ্গে
একাকী পানের ট্রাক গল্পের ভেতর
কী মর্মান্তিক রহস্য নিয়ে আসে, চেনো তাকে?
অথচ পঁচিশ টাকা রাত থেকে রাতের গভীরে
আমাকে চালান করে দেয়
আলোর গতির মাঝে;
পঁচিশ টাকা এবং পানের ট্রাক। অলস। তবু এরপর
আমায় উড়িয়ে নেবে
কণ্টক শহরে;
বহু ক্ষুধার্ত দিন আমার বিপরীতে
নৃশংস সূর্যের আভায় কোমল,
সেখানে বসন্ত আসে, ফুলে ফুলে ফোটে রঙিন ভাত!
আঙরা খাই। তাপ
গুম
হয়ে
যায়
দেহে…
হা হা এ কী মজা, ভাই! চমৎকার ট্রাকে চেপে রক্তাক্ত, ঘুরছি—
ওস্তাদের মার ওই পঁচিশ টাকায়!
টোল ওঠাও, বসাও রাস্তানাগ,
আমাদের সঙ্গে কপালে কপাল ঘষে
পরাজয়;
টস করে—হেড নাকি টেল?
বাঘ না শাপলা?
ব্যাঘ্র আসুক না-আসুক
ভাসুক কি ডুবুক,
আমরা ঘুমিয়ে পড়ব সুন্দর সুখে—
রাখাল যা বলে যায়, যাক…
শুরু হলো সেই তো সমর—কারেন্ট শকের দিন,
মাথা হেঁট, মাথা হেঁট;
পরের মুখে মরিচ খাওয়ার এই হাটবাজারে
গোপনে আজড় কর ঝাল!
ফুল মার্কস কি জিরো?
কপালের গহীনে ডাকুয়া মসজিদ এঁকে
দাঁড়িয়েছো বুঝি, কাউকেই দেখা যাচ্ছে না!
আলোর গতির মাঝে জিরো কোনো সংখ্যা নয়? জানা গেল—
পৃথিবীজুড়ে বিপদগামী পানের ট্রাক
একে একে
আমাকে নামিয়ে যাচ্ছে
নীরবতায়—
দুর্ধর্ষ কানা ছেলের চোখে…

 

 

 

ডাইনির খাতা

 

ফাটলজাগা রাতে

ঘুটঘুটে চাঁদ বোনা টালমাটাল আকাশে

বৈদ্যুতিক তারা গোনা শেষে

রাত্রির গভীরে ঢুকতে ক্লান্ত লাগে;

যেমন জন্মের পর

পাশে থাকা রজনীগন্ধা

এবং এবং অবিরত পুষ্পগুচ্ছ পাশে রেখে,

আর গুটি গুটি চোখ ফোটা থেকে

কাফন সংগ্রহের

আগ-পর্যন্ত

ক্লান্তিকর ভারী সৌরজগৎ

কিছু নয়—

এক মূর্ছিত গাছের পরে নুয়ে পড়ে,

কাঁপে অনেকবার;

তেমন শেষবার ‘সরি’ বলার আগে

ডাক্তারের চোখের নিচে

জড় হওয়া অভ্যস্ততার ক্লান্তি

পাপড়ি খুলে

একটু আলগা হয়—

সেসব থেকে দূরে

হাসপাতালের সুঘাতিনী করিডোরে

মৃতপ্রায় সন্ধ্যার সাথে রক্তক্ষয়ী পায়চারি করে টুকু…

প্রগলভ আকাশের নিচে

 

উড়ন্ত প্রগলভতা জেগে আছে ঘন আকাশের নিচে,

মানুষের ঘোর বিস্ময়, রক্তাক্ত দিব্যজ্ঞান

শুয়ে থাকা মানুষের ঢলে পড়ার মুহূর্ত—

এই সব আকাশ ফোলানো মেঘ, গলে

টিনের মসজিদে অবলীলায় দুচোখ ভাসিয়ে দিয়েছ

বুঝি আজ! সন্ধ্যার ওজুর পানি গড়িয়ে পড়লে

ভেসে যাচ্ছে কি আজান?

এখনো পশ্চিম দিক মার সেজদার মধ্যে

ভেসে ভেসে ওঠে—

কথা না-বলা হারিকেনের হীনজ্যোতি আলো, দপ করে

আমাকে নিভিয়ে, সুনীল দর্জির দোকানে রাত্তিরে কাটাকাটি করে;

মড়ার ফাটানো মাথা ছুটে যায় আমার দিকেই,

রাত পোহালে অজস্র ফোনকল

আমায় জড়িয়ে, ধান কাটা মাঠের ধুলোয়

গড়াগড়ি খায়… হ্যালো হ্যালো… এই সব

আকাশ ফোলানো মেঘ, গলে পড়তে

তাকেই দেখেছিলাম তোমার চোখের নিচে,

খুব আক্রোশে বিলাপ সে চোখের পাশ থেকে

বারবার মুছিয়ে দিচ্ছিল উন্মুখ আমাকে!

তখনো মৃতের মুখে উড়ন্ত প্রগলভতা

আকাশের নীলের ওপর থেকে—

দালাল-মদ্যপ আরও আকাশের নিচে…

সিভিলাইজেশন

 

‘যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা’

জীবনানন্দ দাশ

 

স্তব্ধতা ঘুম হয়ে আছে। চারপাশে সন্দেহ, কে কাকে অনুসরণ করছে! দিনশেষে অফিস থেকে তাই ভিন্ন ভিন্ন পন্থে ঘরে ফিরি, যেন কেউ চিনিতে নাহি পারে। এমনকি বাড়ির আব্রুঘেরা অভ্যন্তরেও কেহ যেন জানিয়া না যায়, প্রকৃতই লোকটা আমি কেমন, কতটা গোপাল! তাই রোদের দিকে মুখ রেখে চেহারায় কালো ভাবটা গাঢ় করে তুলি রোজ। আর চোরছেচড় গোছের এই ফোরটোয়েন্টি ছদ্মবেশ—বাটারঅয়েলমাখা নিতান্ত মুখটি সর্বদা বাঁচিয়ে চলা—এটা একটা খাঁটি গোরুর দেশি দুগ্ধের মতন, উচ্চতর ডিসকো ডান্সের ঘটনাও বটে, এবং প্রভাবান্বেষী। সেহেতু চম্বুকের খান খান টান যেইদিকে, অ্যানিমেটেড রোবট হওয়ার প্রত্যাশে চোখ বুজে সেই ধামেই সালাম জানাই—হুররে… সঙ্গে সাধিত হয়ে মনোদহে বাঁধিত হই সদা সন্দেহে, বান্ধবীর ঘরটি হুবহু বান্ধবীর মতো সানস্ক্রিন মেখে থাকে কি না, জিএফদিগের লৌহবাসরে কি আমাদের সম্ভাব্য পত্নীগণ থাকেন?

এ পর্যন্ত পড়ে আমার দিকে ইয়ারদোস্তের সংশয় নিয়ে তাকাল মার্ক জাকারবাগ। আর সেই সন্দেহের অগোচরে আমিও মম চেহারাটি একটা খুনে লালগোলাপের টকটকে হাসির ভেতরে পাচার করে দিলাম। সর্বচোখা জাকারবাগের নীলভূমের গভীরে থাকা কাঁটা আমাকে যদি দুধেআলতা পানির আকারে জলবৎ তরলং বুঝে ফেলে—এই ধন্দে অনেককাল থেকে স্থির—ঠায় বসে আছি মিশেল ফুকোর পাশে, সিভিলেইজেশনের ধবল ম্যাডনেসময় সুধাতপোবনে।

হালার কানার বাচ্চা, আমাকেও আমি আমার চেহারা দেখাব না!

 

 

 

 

সন্তান

মা কে? কোথায় ফেলেছি তার স্তন?
শাখে শাখে, গাছের বিস্তারে বর্ধিষ্ণু সময়
বাড়তে বাড়তে
সেই ভাঙা ক্ষণ—
কাগজের মানিপ্লান্ট আর কানি পয়সা
গুলিয়ে
হাটে এসেছে সন্ধার ডাকাত তিমির!
আরও কিছু ভিড়
ফাঁকা হয়ে এলে মৃত মায়ের দুধের কিনারে, এধারে
বারেবারে
বলক তুলেছি আমি, পানি মিশিয়েছি
এ দুধ কিনবে কে, শাওনের ঘর ভেঙে
চরাচরের স্তব্ধতা নেই হয়ে গেলে!
যেথা যেখানে আমিও ভাড়া খাটি, শিমুলের মান্যতায় ফাটি
সেখানে শৈশবে
নিজাম মিয়ার পাটের গুদাম ছিল—ভুলে গিয়েছিলাম,
রাহু-কেতু কেড়ে নিয়ে সামান্য লুটেরা
মাথা কুঁটে পাটের ফেসোর মতো উড়ে উড়ে
দেখেছি
নিরালা পেরোবার সেতু
আছে কিনা ঠিকঠাক;
স্বচ্ছ জলের উজ্জ্বল ময়লায় ডুবে গিয়ে
আমাদের পাড়া
মাকে ফেলে গিয়েছিল চলে, তার স্তন থেকে
মুখ ফিরিয়ে রাক্ষস—সেই থেকে
আমি,
আপন রাত্রির গর্ভ ছিড়ে
মাতৃ-মাংসে কমড় বসাই,
কাঁদলে চোখ ফেটে রক্ত বেরোয়—ডালিম,
তোমার অভুক্ত লাল দানা
আমি, কে কিনবে আমায়?

 

আকাশে নোংরা লেগে আছে

স্নেহলতা ফেলে গেছে মরিবার তরে, ঘা-পাঁচড়ামাখা
শরীরের তলে ধবল শ্বাসকষ্টের এক ঝাঁক
পতঙ্গ-বিমারি, এবং হলদি পাড়ার মধ্যে
আমাদের বেদখল জমিতে ছাপড়া তুলে
ফেলে গেছে সাতটি নারকেল গাছ
সাক্ষী রেখে; স্নেহলতা। বিকলাঙ্গ সেই গাছ তার
সরু পাতার আড়ালে রাতের আকাশ নোংরা করা
করুণ চাঁদের গোলাকার আকৃতি খেয়ে
নক্ষত্রপ্রান্তে আমার দিকে হা বাড়ায়,
আর আমাদের জমি উদ্ধারে প্রায়ই আব্বা
কোর্টে যায়…

মড়কের আগে বিষণ্ন জলের সঙ্গে তরল মিশিয়ে
স্নেহলতাকে এসব কিছু
নিঃশব্দে বলেছি, শেষ শব্দে
সে ‘কে ওখানে, কে?’
বলে
চলে গেছে কোথায়? আকাশে
অসম্ভব নোংরা লেগে আছে।

 

ফ্রি স্কুল স্ট্রিট রাতে

ক্ষত, সে আজ  সরিয়ে দেখে মুখ
মায়ের উদর
মতো—যা কিছু কাঁপিছে তির তির,
পুঁজের ঢিবির চূড়ায় ত্রি-চক্ষু স্থির
গুঁজে
খুঁজে আর কিছুই দেখিব না,
অনেকেরই ছিল জানা
অজানা কাহিনি, হাঁচি-কাশি
জ্বরভোগ
ভয়—
রোগে মরতেই হয়, প্রেমেও বিছানা নাকি হাতড়ে
চোখ বোজে বেশুমার!
শরীরের মধ্যে সালিশ-বিচার, জটলা চলে অহরহ
আজ্ঞাবহ চামারেরা গরম শাবল ছুড়ে
আম্মার চোখকে
নিশানা করেছে; মহারোখে বুজিয়ে দেবেই
শানঘেরা আমাদের বাড়ির পুকুর,
ঘুরপথে সেখানে দিলেও আমি ডুব,
হাভাতে বেকুব
খুঁজে বের করবে ঠিকই আমারে—
আমাকেও
কেউ দেখে নি ফিরেও, মাঠের সীমায় কাতরে
এবং পানিপুঁজ সাঁতরে
যে মুড়ির টিনে ওঠা গেল, গাড়ি কি মা চলে?
অপনার জলে
তাকিয়ে বিবর
দেখি দেহের ভেতর
নিজের মুখটি নেই একদম!
ভূতসন্ধ্যার জ্যেস্নায়
কোনো লাশ ঠেলা যম
সে নাকি ডোমের বেশে বাটাম খুলিয়া নেয়
আর ভুলভুলাইয়া গানবাগানে, শরীরের ভেতর বাজায়
কটকটি সরকার?
খুলে নিয়ে দ্বার
মেয়েমানুষেরা আমার মুখটি মায়ের উদর থেকে ছিড়ে নিয়ে যায়…

 

দৈবকঙ্কালের লেখা

ভেসে উঠছি
গুপ্ত বসবাস নড়েচড়ে নাটবল্টু
খুলে যাচ্ছে কাকে খাচ্ছি কে-বা খাচ্ছে?
বুঝছি না কিছুই ভোরের আগে-পরে
বহমান রাত জটাধারী
জ্যান্ত এক আচারের
বোয়ামে চুবিয়ে রেখেছিল
বড় বেদনা আমার এ ছাড়া আমাকে
হাট খোলা জগতের বারান্দায়
দৈবকঙ্কালের মতো নিঃসঙ্গ ঝুলিয়ে রেখে
পাশেই সিলিং ফ্যানে ঝুলে যাওয়া
বোনের ঘুর-ঘুরন্তি…আত্মহত্যার সংবাদ
পৌঁছে দিলি?
দোজখে মুখরা লুবসন্ত ফুটিয়ে গরম ভাটফুলে
ক্লান্তচোখে ঘুমিয়ে পড়ল আব্বা নাকি
আগুনবমির কৃপায় বৈদ্যুতিক শকে
সমস্ত সাতসকাল দাঁত মাজলাম আমি?
এবং আমিও সেখানে পেরিয়ে গেলাম
কাঁটাঝোপ হরিতকী আর গ্রামসালিশের
বিকট আড়াল টুটে সিলিং ফ্যানের আত্মার মধ্যে…
ঝুলেছিল কে আমার
বোনরক্ত না তার
জংলিকালের বাতাসেরা?
দীর্ঘ ফ্যানে ঝুলে ঝুলে
ঝুলতে ঝুলতে
অফুরন্ত গভীর কর্কট রশি কেটে চলা—
ফাঁকে ফাঁকে
কতবার কতবার দেখেছি সে
শ্বাস নেয় কি না
হা হৃৎসহোদরা ভেসে ওঠা ঘুরে ওঠা
আমার মথার
ঘিলু
নড়েচড়ে ওঠা
লাইনের পর লাইন কবিখ্যাতির
ইলেকট্রিকাল উপমায় জ্বলে যাওয়া
এই বুড়ো
নাটবল্টু জাগ্রত দুপুর
অনায়াসে এভাবে তুই-ই খুলে নিলি?

 

 

কানা ছেলের চোখ

পরাজয় রাক্ষসের মতো।

ছুটে যায়। নক্ষত্র পতন

আর রুদ্ধ বেদনা পাশের বাড়ির

উঠোনে রঙ্গন গাছ, অথবা সে

ক্লান্ত লাঠিয়াল!

‘সবই কপালের ফের’—উড়াও এ কথার পতাকা;

হাওয়া, সাথে এল কাঁপন; সেই সঙ্গে

একাকী পানের ট্রাক গল্পের ভেতর

কী মর্মান্তিক রহস্য নিয়ে আসে, চেনো তাকে?

অথচ পঁচিশ টাকা রাত থেকে রাতের গভীরে

আমাকে চালান করে দেয়

আলোর গতির মাঝে;

পঁচিশ টাকা এবং পানের ট্রাক। অলস। তবু এরপর

আমায় উড়িয়ে নেবে

কণ্টক শহরে;

বহু ক্ষুধার্ত দিন আমার বিপরীতে

নৃশংস সূর্যের আভায় কোমল,

সেখানে বসন্ত আসে, ফুলে ফুলে ফোটে রঙিন ভাত!

আঙরা খাই। তাপ

গুম

হয়ে

যায়

দেহে…

হা হা এ কী মজা, ভাই! চমৎকার ট্রাকে চেপে রক্তাক্ত, ঘুরছি—

ওস্তাদের মার ওই পঁচিশ টাকায়!

টোল ওঠাও, বসাও রাস্তানাগ,

আমাদের সঙ্গে কপালে কপাল ঘষে

পরাজয়;

টস করে—হেড নাকি টেল?

বাঘ না শাপলা?

ব্যাঘ্র আসুক না-আসুক

ভাসুক কি ডুবুক,

আমরা ঘুমিয়ে পড়ব সুন্দর সুখে—

রাখাল যা বলে যায়, যাক…

 

শুরু হলো সেই তো সমর—কারেন্ট শকের দিন,

মাথা হেঁট, মাথা হেঁট;

পরের মুখে মরিচ খাওয়ার এই হাটবাজারে

গোপনে আজড় কর ঝাল!

ফুল মার্কস কি জিরো?

কপালের গহিনে ডাকুয়া মসজিদ এঁকে

দাঁড়িয়েছ বুঝি, কাউকেই দেখা যাচ্ছে না!

আলোর গতির মাঝে জিরো কোনো সংখ্যা নয়? জানা গেল—

পৃথিবীজুড়ে বিপদগামী পানের ট্রাক

একে একে

আমাকে নামিয়ে যাচ্ছে

নীরবতায়—

দুর্ধর্ষ কানা ছেলের চোখে…

 

 

 

রাজার ঘুম ভালো হোক

 

রাঙা রাক্ষস নাচল চোখেমুখে

এই জীবনের ভূমিকা ছিল এই—

বনেবাদাড়ে পালিয়ে বেড়ালাম,

আগ্নেয়াস্ত্র তাকাল চোখ মেলে;

 

ঘুমের ভেতর মরে গিয়ে খুন—

একাধিকবার ট্রিগারে চাপ পড়ে,

আমি মরে যাই সূর্য খেতে খেতে

ক্ষুধামন্দা মাথা দোলায় তবু!

 

‘শিল্প কি বলো মাথা ঠান্ডা তেল?

নিদ্রাকুসুম?’ জীবন থেকে নেমে

রাঙা রাক্ষস ফিসফিসিয়ে বলে—

হাসতে হাসতে ট্রিগারে চাপ দেয়

 

আমি মরে যাই

তেমার চেনা লোক,

অচেনা তেলে–জলে

মিশে নাচো, রাজার

ঘুম ভালো হোক!

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত