Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Amiya Bhushan Majumdar Indian novelist

পুনর্পাঠ গল্প : প্রমীলার বিয়ে । অমিয়ভূষণ মজুমদার

Reading Time: 11 minutes

 

অমিয়ভূষণ মজুমদার (মার্চ ২২, ১৯১৮ – জুলাই ৮, ২০০১)। ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক এবং নাট্যকার। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তার সাহিত্যকর্ম ব্যাপ্ত ছিল। তার সাহিত্য সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল। তিনি ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তার ‘রাজনগর’ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছেন।

 
 
প্রমীলার বিয়ে হয়েছে গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে, সেদিন বৈশাখী নির্মেঘ আকাশে ত্রয়োদশীর চাঁদ ছিল। 
 
প্রমীলা ধনীর মেয়ে, কলেজে পড়েছে; গায়ের রঙ দুধে-আলতা নয়, নাক বা চোখ নয় বলবার মতো বিশিষ্ট কিছু, তবু তাকে অরূপা বললে মিথ্যা বলা হয়। এ সত্ত্বেও তার বন্ধুদের চোখে বিয়েটা নেহাত ডাল-ভাতের মতো হয়েছে। দু-পক্ষ থেকে আলাপ-আলোচনা হয়েছে অন্তত দু-পাঁচ মাস, তবে সে আলাপের মধ্যে প্রমীলা কিম্বা তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া গো-বেচারা ভদ্রলোকটির কোনো অংশ ছিল না।
 
কয়েকদিন আগে এক রাত্রিতে সে ঘুমোতে পারেনি, সেদিন ফুলের বাসর ছিল। সব মেয়ের মতো তার স্নায়ুগুলি উঁচু পর্দায় চড়ানো সেতারের মতো ছেঁড়া-ছেঁড়া হয়েছিল। তার উপরে ছিল ফুলের গন্ধ আর বৈশাখী গরম । মাখন নামে এ-বাড়ির যে ছেলেটির সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে নিমন্ত্রিতরা বিদায় নিলে অনেক রাত্রিতে সে ঘরের দরজায় এসে প্রমীলাকে দেখে থেমে দাঁড়াল। এতক্ষণ এই উৎসব-আয়োজনের অন্যতম যোগানদার হিসাবে তার অংশ মতো সে কাজ করে যাচ্ছিল, এবার সে ব্যাপারটির নিগুঢ় অর্থ বুঝতে পারল বোধহয়। এতক্ষণ সে চিন্তা করেনি, বস্তুত ও জিনিসটা তার চিরদিনই কম। এ বাড়ির অলিখিত প্রথা অনুসারে যে কোনো কাজে যেমন সকলের সম্মিলিত প্রয়াস থাকে এ ব্যাপারটিতে তার টোপর পরে বসাকেও তেমনি সহজ করে সে নিয়েছিল। ঘরের দরজায় এসে সজ্জিত পালঙ্ক ও লজ্জিতা বধূকে দেখে লজ্জায় সে বোকা বনে গেল। 
 
যেন কিছু দরকার এটা অনুভব করে সে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘এই বউদি, শোনো, শোনো, তোয়ালেটা কোথায়? হাত পুঁছতে হবে।’ 
 
উঠানের ছত্রাকারে ছড়ানো এঁটো পাতার পাশ দিয়ে, বারান্দায় ঝুলানো লাল হয়ে আসা ডেলাইটের তলা ঘেষে হলুদ-মশলা-মাখা শাড়ি পরা মেয়েটি দুদ্দাড় করে পালিয়ে গেল রান্নাঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে। 
 
মাখন পুনরপি বললে, ‘ও বউদি, শোনো, শোনো, এক গ্লাস জল।’ 
 
প্রত্যুত্তরে ঝনাৎ করে কোণের ঘরটির দরজা বন্ধ হয়ে গেল এবং বন্ধ দরজার পিছন থেকে খিল্‌ খিল্‌ করে অজস্র হাসি উপচে পড়ল। 
 
উৎসবের রাত্রিতে এত তাড়াতাড়ি (মাখন নতুন পাওয়া-ঘড়িতে দেখলে) রাত একটা বাজে। এমন আরামপ্রদ নিস্তব্ধতা আনতে তার পিছনে পরিকল্পনা থাকা দরকার; এ রকম একটা বোধ হল মাখনের– ষড়যন্ত্রটা বউদির। কিছু করবার ছিল না। আত্মীয়-স্বজনে ঠাসা ঘরগলির সব কটির দরজা বন্ধ। রান্নাঘরে মস্ত একটা তালা ঝুলছে। উঠানের মাটির গ্লাসগুলি মেজে তো জল খওয়া যায় না যেন সেই জন্যেই মাখন কলতলার দিকে রওনা দিল। 
 
মাখন যখন ফিরে এল তখন তার সারা গা ভিজে, চুল দিয়ে ফোঁটা-ফোঁটা জল ঝরছে। ঘরে এসে আবার সে ফিরে যাচ্ছিল, ‘ঐ যা, জল খেয়ে এলাম না ।’ 
 
তখন প্রমীলা উঠল। অন্য কেউ এবং আর কোনো সময় হলে সে বলত, কি বোকা, কি নার্ভাস; কিন্তু সে নিজেও তখন কি করা উচিত, কি বলা উচিত এ বুঝতে পারছিল না, কাজেই মাখনের কাজ ও কথার সমালোচনা করতে পারল না মনে মনেও ; বললে, ‘জল ঘরে আছে, তোয়ালেও আছে , দেব?’ 
 
‘তাহলে তো ভালোই হয়।’ 
 
প্রমীলা তোয়ালে দিয়েছিল, জল গড়িয়ে দিয়েছিল। 
 
কিছুক্ষণ পরে মাখন ঘুমিয়ে পড়েছিল, আর প্রমীলা জেগেছিল। রজনী গন্ধার প্রথম ফলন এত কোথা থেকে সংগ্রহ হল এই ভাবতে-ভাবতে ভোরের দিকে যখন তার চোখ বুজে এসেছে খিল-খিল হাসির শব্দে ধড়মড় করে উঠে দরজা খুলে প্রমীলা বেরিয়ে এসেছিল। 
 
কালও প্রমীলার ভালো ঘুম হয়নি। কলেজে-পড়া মেয়ে হলেও প্রমীলা রাত জেগে কোনোদিন পড়া করেনি। কাজেই কোনো রাত্রিতে ঘুম না হলে তার কাছে সে রাত্রিটা বিশিষ্ট হয়ে থাকে অনেকদিন মনে রাখবার মতো। ফুলের গন্ধ নয়, মাখনের সান্নিধ্যের জন্যও নয়, ভাবতে ভাবতে ঘুম হল না। ফুলশয্যার পরের দিন সকালের ব্যাপারগুলিতে এই ঘুম না হওয়ার অঙ্কুর ছিল। প্রমীলার মনে আছে সব। সেই কথাই বলছি। 
 
যার খিল-খিল করে উপচে পড়া হাসিতে তার ঘুম ভেঙেছিল তাকে অবলম্বন করেই দিনের আলোয় সে এ বাড়ির প্রাঙ্গণে পা বাড়াল। গত রাত্রিতে হলুদ ও মশলামাখা যে শাড়িখানা পরে এ বউটি সব কাজে হাত মিশিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল আজ সেখানা পরনে নেই বটে, মুখের একপাশে নাকের কোলে হলদের দাগ এখনও লেগে আছে। তার পিছন পিছন কলতলায় যেতে যেতে প্রমীলার আগ্রহ হল বাড়িটার সঙ্গে পরিচয় করতে। কলতলার লাগোয়া ঘরখানি সে আন্দাজেই ঠিক করে নিল সেটা রান্নাঘর। কয়েকটি শিশুর হাসিকান্না ও খাওয়ার কথা শুনতে-শুনতে তার মনে হল: উনুনের পাশে বর্ষীয়সী একজন দুধ জাল দিতে বসেছেন, শিশু কটি তাঁকে ঘিরে ছোট ছোট পিড়িতে ছোট-ছোট বাটি হাতে কোলাহল করছে। প্রমীলা শিশুদের ভালোবাসে, এ বাড়িতে সে যেন দ্বিতীয় অবলম্বন খুঁজে পেল। 
 
গায়ে জল ঢালতে-ঢালতে প্রমীলা বুঝল–রান্নাঘরে কিশোর বয়স্ক কারা এসে ঢুকল দু-তিনজন। কিশোরদের সে শিশুদের চাইতেও ভালোবাসে। এরা যদি তার দেওর হয় তবে খুব ভালো হবে। প্রমীলার ভালো লাগতে লাগল সকালবেলাটা। ওরা কি নিয়ে খুব হৈ রৈ করে আলাপ করছে। প্রমীলা উৎকর্ণ হয়ে শুনতে লাগল। 
 
একজন বললে, ‘আসবে না কে বলেছে ?’ 
 
ছোট একজন উত্তর করলে, ‘চিঠি লিখেছে।’ 
 
‘তা লিখুক। অমন কড়া কথা ও লেখে, শেষ পর্যন্ত কড়া হয়ে থাকতে পারে না কোনোদিন। আসবে দেখে নিস।’ 
 
‘আমার বিশ্বাস হয় না।’ 
 
“তবে তুই থাক, যাসনে। আমি স্টেশনে চললাম। কই চা হয়েছে নাকি দাও।’ 
 
ভারি মিষ্টি এদের গলা। প্রমীলার নিজের ছোট ভাইদের মতো তরল খুশিতে ভরা। কাপড় পালটাতে-পালটাতে প্রমীলা ওদের কথার দিকে কান পেতে রইল। 
 
ওরা বোধহয় চা পেয়েছে । কে একজন বর্ষীয়সী বললেন, ‘অত তাড়াতাডি খাচ্ছিস কেন?’ 
 
প্রথম কিশোর বললে, ‘বাহ, সতরো মিনিট বাকি আছে ট্রেন আসতে, যেতে অন্তত পনরো মিনিট তো লাগবে।’ 
 
দ্বিতীয় কিশোরটি বললে, ‘রোজ বলি দুধটা আগে জাল দিতে তা নয় আগে চা করবে।’ 
 
বর্ষীয়সী বললেন, ‘দুধ তো দিয়েছি তোকে।’ 
 
‘দিয়েছ তো। এত গরম খাওয়া যায় ?’ 
 
প্রথম কিশোর বললে, ‘তাড়াতাড়ি করছিস কেন? তুই তো স্টেশনে যাবি।’ 
 
‘যাব না কেন, শুনি ?’ 
 
‘তুই তো বললি আসবে না।’ 
 
প্রমীলা হেসে ফেলল ওদের কথা শুনে। হাসি মুখে চোখ তুলে সে দেখল ঝরোকার ওপাশে দাঁড়িয়ে সেই বউটি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখের ভাব বোঝা গেল না, মনে হল সেও শুনছে ওদের কথা, দৃষ্টিতে যেন দুঃখ মিশানো আছে, তবে ওটা তার স্বাভাবিকও হতে পারে। 
 
আর একটি কণ্ঠস্বর শোনা গেল রান্নাঘরে, প্রমীলার বুকের গোড়াটা টলমল করে উঠল। মাখন বললে, ‘পিরিচখানা দাও।’ 
 
‘তোরও তাড়াতাড়ি নাকি?’ 
 
‘তাড়াতাড়ি আবার কোথায় দেখলে?’ 
 
‘তবে ভালো হয়ে বস, হালুয়াটা নামাই। কাল রাত্রিতে খাসনি কিছু।’ 
 
‘ঘুরে এসে খাব।’ 
 
‘তোদের সবই অদ্ভুত। স্টেশনে যাবি বুঝি?’ 
 
নিস্পৃহ হবার ভান করে মাখন বললে, ‘যাই একবার। আসেই যদি ভাববে বিয়ে করে মাখনটা বোকা হয়েছে।’ 
 
ধুপ-ধুপ করে দুটো শব্দ হল। প্রমীলা বুঝল কিশোর দুটি তপ্ত চা ও দুধে কোনো রকমে গিলে চৌকাঠ থেকে ঝাঁপ দিয়ে উঠানে পড়ে স্টেশনের দিকে ছুটল। পিরিচে করে চা জুড়িয়ে খেয়ে মাখনও বেরিয়ে গেল। কোনো এক বিলেতি গল্পে প্রমীলা পড়েছিল খুশি হওয়াটা বাইরের জিনিসের উপর নির্ভর করে না, খুশি হওয়া মনের একটা ক্ষমতা। প্রমীলার মনে হল এরা সকলেই খুশি হতে পারে সামান্যকে অবলম্বন করে। ভালো লাগল প্রমীলার। 
 
নতুন জায়গায় গেলে, নতুন কাজ হাতে নিলে মানুষ নতুন অভিজ্ঞতাকে প্রত্যাশা করে। বিয়েটার চাইতে নতুন কিছু নেই–বিয়ের আগের জীবন থেকে মেয়েরা শিকড়সদ্ধ উঠে আসে যেন নতুন জমিতে, কাজেই নতুন আবহাওয়ায় তার বাধোবাধো ঠেকলেও নতুনত্বটুকুকে সে প্রতীক্ষা করে। অভিনবত্বগুলি প্রথম শীতের আমেজের মতো শিরশিরে সোহাগে ভরে ওঠে। 
 
স্নান সেরে শ্বশুর-শাশুড়ীকে প্রণাম করে প্রমীলা ঘরে ফিরে এল তার গাইডস্বরূপ বউটির সঙ্গে। কিছুক্ষণ পরে বউটি এল, হাতে একবাটি তপ্ত দুধ। প্রমীলাকে বললে, ‘খাও।’ 
 
চায়ের জন্য প্রমীলার মন টলছিল, কিন্তু আজ সে কথাটা বলতে তার সঙ্কোচ হল, বললে, ‘দুধ আমি খাইনে।’ 
 
‘চা খাও বুঝি ? আচ্ছা নিয়ে আসি। দুধটুকু খেয়ে নাও।‘ 
 
প্রমীলা জীবনে যা করেনি, হাসিমুখে তা করলে ; মুখে দুধের স্বাদ পাচ্ছিল কিনা বোঝা গেল না, তার মুখ দেখে বোঝা গেল কৌতুক ও কৌতূহলের স্বাদ পাচ্ছে। 
 
দুধের বাটি নামিয়ে রেখে প্রমীলা মুখ তুলে দেখলে বউটি হাসছে । খুশি হয়ে প্রমীলা বললে, ‘তোমরাও সবাই খাও, অনিচ্ছাতেও খাও?’ 
 
বইটি বললে, ‘ঠিক ধরতে পেরেছ, এখন অভ্যাস হয়ে এসেছে।’ 
 
প্রমীলা বিয়ের আগের দিনও কল্পনা করতে পারেনি আহার বিষয়টিতে তার মতো মেয়ের রুচির উপরে আর কারো ছায়া পড়তে পারে, কিন্তু আজ ছায়া পড়ল। বিয়ের আগে প্রমীলা হয়তো কঠিন নিঃশব্দ হাসির আড়ালে সরে যেত, আজ এই চাপিয়ে দেওয়া অন্যের রুচি সে যেন উপভোগ করল। সে এ বাড়ির একজন হয়ে গেছে নতুবা হকুমটি তার উপরে চলবে কেন? প্রমীলার ভাল লাগল, একটু শ্রদ্ধা হল যেন হুকুম দেবার মতো লোকটির উপর। বললে, ‘থাকগে, চা আর খাব না।’ 
 
একটু পরে প্রমীলা বললে, ‘কে আসবে আজ?’ 
 
কথাটা বলতে সে কুণ্ঠা বোধ করল, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সে বুঝতে পেরেছে, গ্রামের মেয়ের মতো সরল ও সঙ্কুচিতা এ বউটিকে প্রশ্ন না করলে কিছুর সঙ্গেই সে পরিচয় করিয়ে দেবে না। সব বলাও যায় একে। 
 
‘ওরা অমনি করে। কে আসবে কে জানে!’ 
 
প্রমীলার মনে হল শুনে বউটি যেন উদাসীন প্রকৃতির। তার বলতে ইচ্ছা হল : শুধু ছেলে-মানুষরাই তো নয়, মাখনও যখন এতটা উৎসাহ নিয়ে স্টেশনে গেল তখন যে আসবে সে অন্তত প্রিয়জন তো বটে।’ 
 
প্রমীলার কৌতূহল বেড়ে রইল আগন্তুকটির সম্বন্ধে। 
 
শ্বশুর খেতে বসেছেন, প্রমীলা তার গাইডের পিছনে রান্নাঘরে গিয়ে বসল। ঘোমটার আড়াল থেকে প্রমীলা এবার শ্বশুরকে দেখতে পেল। গম্ভীর প্রকাণ্ড চেহারা, যেমন মর্যাদাবান লোকের হয়ে থাকে, সম্ভ্রম আকৃষ্ট করার মতো দৃষ্টি। প্রমীলার প্রগলভতাটুকু সম্ভ্রমে গুটিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পরে তাঁর কথার সুরে প্রমীলার মনে হল বাবাকে যেমন আব্দার করে কথা বলা যায়, তেমনি বলা যাবে একে। প্রমীলার বোধ হল সার্থক বিয়ে হয়েছে তার। 
 
শ্বশুর বললেন, ‘এমন দিনেও পরিস্কার শাড়ি পাওনি, মা?’ 
 
প্রমীলার গাইড তার আধ-ময়লা মোটা শাড়িটা নিয়ে বিব্রত হয়ে পড়ল। 
 
শ্বশুর আবার বললেন, ‘তুমি যদি এমন করে থাক তোমার ছোটজায়েরা ভাববে বউদের বড় কষ্ট এ বাড়িতে।’ 
 
গাইড খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলল, ‘তা যদি হয় বাবা, আমি এখনই শাড়ি পাল্টে আসছি।’ 
 
শ্বশুর বললেন, “তা তুমি পর যা ইচ্ছা হয়। শাশুড়ীর কাছে থেকে হলুদ মাখার একটিনি করছ বড়গিন্নী একদিন হবে বলে, তাই বলে কিন্তু ছোট জায়েদের শিখিও না।’ 
 
প্রমীলার দিকে ফিরে বললেন, ‘এটি আমার বড় মা। ওর বাপ-মা ওকে পুতুলের জ্বর হলে মাথায় জলপটি দিতে শিখিয়েছে আর খিল খিল করে হাসতে। সংসারী হতে ও পারবে না। এখনো ঝোলের কড়ায় আঁচল পড়ে যায় খুলে, রাঁধতে বসলে কড়ার কালি কপাল অবধি লেগে যায়।’ 
 
গাইড হাসি মুখে বললে, ‘কপালে লাগেনি, বাবা।’ 
 
প্রমীলা মনে-মনে বললে–নাকে যে লাগে তা আমি নিজেও দেখছি। 
 
শ্বশুরের খাওয়া প্রায় হয়ে এসেছে, পায়ের শব্দ করতে-করতে কিশোর দুটি ফিরে এল। রোদে মুখ শুকিয়ে উঠেছে। 
 
‘এতক্ষণ কোথায় ছিলি তোরা?’ শাশুড়ী বললেন, “গাড়ি তো কোন সকালে চলে গেছে।’ 
 
‘দেখ না, গাড়ি চলে গেল, আমি বললাম আসবে না। ছোড়দা বললে,পরের গাড়িটা দেখে যাই, যদি কিছু কেনাকাটা করতে গিয়ে এটা ধরতে না পেরে থাকে।’ 
 
ছোড়দা বললে, ‘তোকে তো আমি থাকতে বলিনি, চলে এলেই পারতিস।’ 
 
‘রোদ মাথায় করে কারোই বসে থাকবার দরকার ছিল না। সে তো লিখেছেই আসবে না’, শাশুড়ী বললেন। 
 
‘বাহ,। বাবা যে বললেন আসতে পারে’—একজন কিশোর প্রতিবাদ করল। 
 
‘সত্যি আসবে না কে ভাবতে পেরেছিল’, শ্বশুর বললেন, ‘আসা উচিত ছিল।’ 
 
‘হয়তো ছুটি পায়নি।’ 
 
শ্বশুর উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘ছুটি সে পেত, আমাকে কষ্ট দেবার জন্যই আসেনি।’ 
 
ব্যাপারটিতে সকলে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল, শ্বশুর আহার সম্পূর্ণ না করেই উঠে গেলেন। পাতের দিকে চোখ পড়তে প্রমীলার মন বিষণ্ন হয়ে গেল। কে এই লোকটি যার আসবার কথা নিয়ে এরা সমারোহ করছে, জানবার জন্য তার কৌতূহল হল। ভাবতে গিয়ে তার মনে হল– কথা বলতে গিয়ে শ্বশুরের ঠোঁটের প্রান্ত দুটি বার কয়েক কেঁপে উঠেছিল। 
 
সকলের আহারাদি শেষ হলে বাড়ি যখন দুপরের জন্য নিঃশব্দ হল তখন প্রমীলা ভাবল এবার তার বড়জা আসবে, কিন্তু সে যখন এল না তখন প্রমীলা আশা করেছিল মাখন হয়তো আসবে। তার ছোট ছোট দেওরাও কেউ এল না। সে ভাবল যে লোকটির আসবার জন্য এরা উদগ্রীব হয়েছিল সে না-আসাতেই এরা মুষড়ে পড়েছে। নতুবা যার ফুলশয্যা হয়েছে কাল এমন একটি বউকে একা এমন সময় কাটাতে হয় না। 
 
অনেকক্ষণ পরে কণ্ঠস্বর লক্ষ্য করে প্রমীলা দেখলে তার ঘরটির ছায়ায় দাঁড়িয়ে মাখন তার বড়জার সঙ্গে আলাপ করছে। 
 
মাখন বললে, ‘তুমি যাও বরং, মাকে থামতে বল।’ 
 
‘আমার কথা কি শুনবেন ? বরং প্রমীলাকে পাঠিয়ে দিলে তাঁরা অন্যমনস্ক হতে পারতেন।’ 
 
‘ওসবের মধ্যে বাইরের লোককে নিয়ে কি হবে?’ মাখন মুখ কাচুমাচু করে বলল। 
 
মাখনের বলবার ধরনে প্রমীলার হাসি পেল কিন্তু বড়জার সঙ্গে শ্বশুর শাশুড়ীর কাছে যেতেও তার ইচ্ছা হল। বুদ্ধিমতী প্রমীলা ধারণা করতে পেরেছে বিষয়টিতে নাটকীয় কিছু না-থাকলেও তার শ্বশুর-শাশুড়ীর দুঃখ বা অভিমানটুকু সাধারণ ঘটনার চাইতে গভীর। তার নিজের বাড়িতে এমন কিছু হলে সে-ই অনেকদিন গুমোট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। 
 
প্রমীলার মনে হতে লাগল, ভালো গানের মাঝখানে কে কথা কয়ে উঠেছে। 
 

আরো পড়ুন: গণনায়ক । সতীনাথ ভাদুড়ী

 
নিভৃত রাতের অন্তরে দুজনের কাছে নতুন-পাওয়া দুজন ছাড়া আর কিছু থাকে না, তবু অন্য কথাই মনে হতে লাগল প্রমীলার। মাখনকে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা হল—কোথায় কি গোলমাল হয়েছে, কেন সুর কেটে গেল। একটু উসখুস করে সে নিজে থেকে মাখনের দিকে ফিরল। মাখন মশারির ছাদের দিকে অন্ধকারে চেয়ে আছে, হয়তো ভাবছে। প্রমীলা বললে, “আজ কার আসবার কথা ছিল, দাদার ?’ 
 
‘হ্যাঁ। তুমি ঘুমাওনি? ছুটি পায়নি তাই আসতে পারেনি মনে হচ্ছে।’ 
 
প্রমীলার আর সাহস হল না, একটা সঙ্কোচ বোধ হতে লাগল ; এদের পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে এখনই তার কথা বলাটা সমীচীন কিনা বুঝে উঠতে পারল না। 
 
মাখনও চুপ করে রইল। গত রাত্রিতে মাখন একবার প্রশ্ন করেছিল, ‘তোমার নাম পূর্ণিমা না হয়ে প্রমীলা হল কেন?’ আজ সারাদিন অন্য কথার মাঝে-মাঝে প্রমীলা একটা ছোট মিষ্টি উত্তর ভেবে রেখেছিল। কেউ প্রশ্ন করল না, কেউ উত্তর দিল না। 
 
কিন্তু জানতে প্রমীলা পারল। ছোট দেওরের কাছ থেকে নানা কথার ছলে পরের দিন দুপরে সে আদায় করল খবরটা। সে বিস্মিত হয়ে শুনল ঘটনাটা তাকে ও তার বিয়ে নিয়ে। তার সঙ্গে মাখনের বিয়ে হয়েছে বলেই এ বাড়িতে আসেনি তাদের বড়দা। 
 
প্রমীলার বাবা কনট্রাক্টর। টাকা তাঁর যথেষ্ট, বহুদিন থেকে, যুদ্ধের বাজারে অনেক বেড়েছে তা। পাকা ব্যবসাদার তিনি। সব কনট্রাক্টরদের মতোই তিনি যুদ্ধের বাজারে কিছু-কিছু ভেজাল চালিয়েছেন বৈকি, কিন্তু ব্যবসায় ওতো আছেই। আর ব্যবসায় মিথ্যাও থাকে। দোকানদার যদি বলে—চার-পয়সায় কিনেছি ছ-পয়সায় ছেড়ে দু-পয়সা লাভ করব, তাতে সত্যভাষণ হয়, দোকানও উঠে যায়। এ বাড়ির বড় ছেলেটি ব্যবসাদারদের, না ঘৃণা করে না, পৃথক স্তরের মানুষ মনে করে। তাদের বর্জন করতে হবে এমন কথা নেই, মানুষের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে হবে এমন কথাও নেই। রাজবংশীয় অভিজাত পুরুষ জনসাধারণের একজনকে অসম্মান করে না, তার আভিজাত্যই তাকে বাধা দেয়। কিন্তু যত পরিচয়ই হোক ঐ সাধারণ লোকটির সঙ্গে সখ্য হতে পারে না বা আত্মীয়তা, রুচি এবং অনুশীলনের দুস্তর ব্যবধান থাকবেই। এ বাড়ির সঙ্গে কোনো ব্যবসাদার স্ববর্ণ হতে পারে না। প্রমীলার যেন অসবর্ণ বিয়ে হয়েছে। এ বাড়ির বধূ হয়ে এসে সে যেন এদের সাংস্কৃতিক আভিজাত্য ক্ষুণ্ন করেছে। ব্যবসাদারের ছল-প্রবণ মন যেন বা এ বাড়ির বিশুদ্ধতায় কালিমাখা হাত রেখেছে। প্রমীলার বাবা শুনলে বলতেন—ছেলেমানুষি, আর একটু বয়েস হোক। 
 
অন্য কোনো উপলক্ষে এ সব শুনলে প্রমীলা ব্যাপাটার ভুল খুঁজে দেখবার এবং তা নিযে আলোচনা করার মতো সহিষ্ণু হওয়ার চেষ্টা করত। 
 
বিংশ শতাব্দীর পঞ্চম পালা এটা, করুণাহীন জীবন যুদ্ধে মানুষ দিশেহারা হয়ে ছুটছে অর্থ ও ক্ষমতার লক্ষ্যে। এরা কি অশরীরী, গতযুগের স্বপ্নমাত্র ? স্বপ্নের মানুষের অকলঙ্ক মন যেন এদের, শুনে রেখেছে পবিত্রতা ভালো, সত্য ভালো, জীবনে সেই শুভ্র অকলঙ্কতা ফুটিয়ে রাখতে চায়। 
 
যে অস্পৃশ্য নয় তাকে অস্পৃশ্য বললে সে অভিমান করে না, অপমানও বোধ করে না যদি তার স্বাভাবিক বুদ্ধি থাকে। প্রমীলা জানে তার পিতৃবংশের সবাই ব্যবসা করেন কিন্তু তাই বলে তারা মানুষ হিসাবে অশ্রদ্ধেয় নয়। 
 
কিন্তু বিষয়টিকে লঘু করে দেখবার জোরও সে পেল না। লোকটি বুদ্ধিহীন নয়, ক্ষেপাও নয়, নতুবা এ বাড়ির এতগুলি লোক তার মতামত নিয়ে এমনতর মাথা ঘামাত না। মাখন অন্তত হেসে উড়িয়ে দিতে পারত। কিছুক্ষণের জন্য প্রমীলার যেন সাধ হল এদের পক্ষ থেকে ব্যাপারটিকে দেখতে। সত্যি যদি হয় এদের এই বস্তুনিরপেক্ষ মানবিক পবিত্রতা তাহলেও তার শক্তি কতটুকু ? বিশ্ব-জগতের জনারণ্যের কোথায় মিশে যাবে এরা ? কিন্তু প্রমীলা ভেবে কিনারা করতে পারল না। একবার হয়তো একটা মুহূর্তের জন্য তার মনে হয়েছিল– কিন্তু সে তো একটা কল্পনা– পৃথিবীর  কঠিন কালো অবিনশ্বর মাটির বুকে চুলের মতো একটা ফাটল থেকে একটা অতিক্ষীণ, অতিমৃদু নীল শিখা দেখা যাচ্ছে, হয়তো ওই শিখা একদিন প্রবল আগ্নেয়গিরির রুদ্ররূপ নিয়ে ধরিত্রীকে ভেঙে গড়বে, সেইদিনের প্রতীক্ষায় এ শিখা বাতাসের মুখে নিভতে-নিভতে জ্বলতে থাকবে। 
 
কিন্তু এ যেন ছায়াবাজী দেখে মোহগ্রস্ত হয়ে থাকা, অপ্রাকৃত একটা কল্পনাকে কেন্দ্র করে নিজের ভিতরটাকে শুকিয়ে তোলা। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রমীলার হাসি পেল। দুঃস্বপ্নের কুণ্ঠায় গলা শুকিয়ে উঠলে মানুষ যতই আর্ত হোক দিনের আলোয় সে কুণ্ঠার কথা ভেবে বিচিত্র কাহিনীর মতো সেটাকে উপভোগ করে। প্রমীলা হেসে ফেলে ভাবলে, ছুটি না-পেয়ে ভদ্রলোক আসতে পারেননি। ছেলেমানুষ কি শুনতে কি শুনেছে। হারিয়ে যাওয়া মধুর পরিবেশটিকে ফিরে পেয়ে সে দুহাতে সেটাকে আঁকড়ে ধরল। বড়জাকে কলতলায় ধরে সে প্রশ্ন করল, ‘আমার ভাসুর কবে আসছেন, ঠিক করে বল তো, দিদি।’ 
 
তার ধারণাই সত্য হতে চলল। সেদিন বেলা অনেকদূর গড়িয়ে যাবার আগেই এ বাড়ির বড় ছেলে এল। যাকে কোনোদিন দেখেনি, যার কথা কেউ তাকে বলেনি এমন লোককে কল্পনা করা যায় না। কাল রাত্রিতে ঘুমের সঙ্গে জড়িয়ে প্রমীলা তাকে কল্পনায় আনবার চেষ্টা করেছিল। বার বার তার মনে হয়েছি—ফরসা দৃঢ়কায় একটি পুরষের কথা, যার গলায় শাদা ওড়না, শাদা পৈতে, কোমল অথচ দৃঢ় কণ্ঠে সে যা বলছে এ বাড়ির সবাই প্রাণপণে তাই করছে। 
 
সাড়া পেয়ে উঠানে সবাই যখন কোলাহল করে উঠল তখন প্রমীলাও জানলার পাশে সরে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখল তাকে। ধরা পড়লে গর্হিত কিছু করার অখ্যাতি রটবে এ বুঝেও সে কৌতূহল চাপতে পারল না। কিন্তু তার কল্পনায় সঙ্গে কিছুমাত্র যদি মেলে। মাখনের মতোই চেহারা, গাল দুটো শুকিয়ে যাওয়ায় চোখ দুটি একটু বড় হয়েছে এই যা। মাখনের চাইতে বরং একটু রোগা, বরং যেন সামনের দিকে নুয়ে পড়া, আধময়লা খাদির ধুতিপাঞ্জাবি পরা, ছেলে-মানুষদের সঙ্গে হড় হড় করে কথা বলছে। 
 
বাড়ির গুমোট কোথায় কেটে গেল। আজ মাখনের গলা শোনা যাচ্ছে। তার বিরাট বুকের জোরাল ফুসফুসের ভরাট শব্দ বাড়িখানাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে : ‘শোনো দাদা, শোনো বউদি…’ 
 
 
আজ সন্ধ্যায় প্রমীলা রান্না করতে বসেছে। হলুদের ছোপ লাগা শাড়িপরা বউটিকে নিয়ে শাশুড়ী উঠে পড়ে লেগেছেন। তার রুক্ষ চুলগলি হয়তো বেণীতে গোছানো যাচ্ছে না, তার আঙুলের ডগায় জমে থাকা হলুদ আর মশলার দাগ হয়তো বা সাবান দিয়েও উঠছে না। প্রমীলা উননের আগুনের দিকে চেয়ে চেয়ে হাসতে লাগল। 
 
এমন কি মাখন একবার রান্নাঘরের দরজায় এসে লুকিয়ে-লুকিয়ে প্রমীলার সঙ্গে কথা কয়ে গেল। ওপাশের ঘরখানা থেকে কিশোরদের গলা শোনা যাচ্ছে। তারা বিয়ের গল্প থেকে আনন্দের টুকরোগুলো উদ্ধ্বার করছে। প্রমীলার মনে হল আজ সে মাখনকে বলবে—একজনের নাম পূর্ণিমা না হয়ে প্রমীলা কেন হয়েছে। 
 
রান্নাবান্না খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে প্রমীলা ঘরে এসে বসেছে। আকাশের একফালি চাঁদ উঠানের ডানদিকের আমগাছটার পিছন থেকে খানিকটা আলো দিচ্ছে। ঝিরঝির একটা বাতাস উঠছে, মুকুলের গন্ধ ছড়াচ্ছে গাছটা থেকে। বড়জা প্রমীলার ঘরে পান রেখে চলে গেল। আলোটা কমিয়ে দিয়ে প্রমীলা বিছানায় গিয়ে বসেছে। উঠানে পায়চারি করতে করতে মাখন আর তার দাদা কথা বলছে। 
 
একটু শুনে প্রমীলার মনে হল ওরা যেন বিয়ের কথাই বলছে। মাখন বলছে আর তার দাদা চুপ করে শুনছে। 
 
প্রমীলা শুনতে পেল মাখন বলছে, ‘আমি ওকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি।’ 
 
কথাটাকে জোরালো করার চেষ্টায় একটা ঢোক গিলে মাখন আবার বলল, ‘তোমার হয়তো মনে হবে কিছু একটা আড়াল করার জন্যে আমি বলছি, কিন্তু তা নয়, সত্যি আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি। ওকে না পেলে আমার চলত না।’ 
 
পৃথিবীতে সব চাইতে মধুর মিথ্যা হলেও যা মধুর, সে কথাটি এমন আচমকা আঘাত দিতে পারে এ কে জানত? প্রমীলা বিস্মিত হল। মাখন যদি অস্পষ্ট কণ্ঠে অসংলগ্নভাবে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলত কথাগুলি অবিশ্বাস্য হলেও প্রমীলার কাছে সব চাইতে বড় সত্য হত সেটা। আর মাখন এখন স্পষ্ট অকুণ্ঠ হয়ে বলছে তবু তার মন মিথ্যা গ্লানিতে সংকীর্ণ হয়ে গেল। 
 
প্রমীলার মনে পড়ল এ বাড়ির গুমোটের কথা; মনে হল তাকে এরা সবটুকু মন দিয়ে গ্রহণ করতে পারছে না। তারপরে দৃষ্টি আবিল হয়ে প্রমীলার দু’চোখ বেয়ে ধারা নেমে এল। 
 
সে রাত্রিতেও প্রমীলার ভালো ঘুম হয়নি।
 
 
 
 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>