ফুল, অশ্রু, প্রেম – ৩১ নারীর কবিতা (পর্ব -৬) । মুম রহমান
আনা আন্দ্রেয়াভনা গোরেনকো (১৮৮৯-১৯৬৬) কবিতা লিখেছেন আনা আখমাতোভা ছদ্মনামে। মার্কিন কবিতায় যেমন এমিলি ডিকিনসন, ব্রিটিশ কবিতায় ক্রিস্টিয়ানা রোসেটি তেমনি রুশ কবিতায় আনা আখমাতোভা সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা কবি। রাশিয়ান অন্যতম নারী কণ্ঠস্বর আনা জন্মেছিলেন এক সংক্ষুব্ধ সময়ে। যুদ্ধ, বিপ্লব, স্বৈরশাসনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। তার প্রথম স্বামীকে সোভিয়েত রাশিয়ার গুপ্ত পুলিশ বাহিনী হত্যা করে এবং দ্বিতীয় স্বামী ও তাঁর পুত্রকে জেলে থাকতে হয়, তাঁর দ্বিতীয় স্বামীর মৃত্যু হয় জেলখানাতেই। আনা আখমাতোভা একাধিকবার নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন পেয়েছেন, তবে পুরস্কার পাননি।
ক্রুশবিদ্ধ কেঁদো না আমার জন্যে, মা, আমাকে কবরে দেখে কেঁদো না। ১. এই মহত্তম সময়টি পবিত্র আর বড় বিশুদ্ধ দেবদূতেদের মিলিত স্বরে; অগ্নি গলিয়ে দিয়েছিলো আকাশ। তিন প্রশ্ন করলেন পিতাকে: ‘আমাকে কেন পরিত্যক্ত করলেন…?” আর মাকে বললেন: ‘মা, কেঁদো না…’ ২. ম্যাগডালেনা* লড়েছেন, কেঁদেছেন আর গোঙানি শোনা গিয়েছিলো। পিটার* নিমজ্জিত হলেন পাথরের সমাধিতে… কেবল সেখানে, যেখানে মা ছিলেন দাঁড়িয়ে একা, কারো সাহস হয়নি এক নজর সেদিকে তাকিয়ে দেখার।
* অনুবাদকের টীকা : ম্যারি ম্যাগডালেনা এক ইহুদি নারী, গসেপেলের সূত্রে জানা যায়, তিনি যিশুর সহচর ছিলেন। তিনি যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সময়ও সেখানে ছিলেন। সেন্ট পিটার ছিলেন যিশুর বারো জন প্রধাণ শিষ্যের একজন। খ্রিস্টধর্মের সূচনা ও বিকাশে তার ভ‚মিকা অগ্রগণ্য। তাকে খ্রিস্টধর্মের প্রথম পোপ বলা হয়। সম্রাট নিরোর সময় তিনিও ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন।
আরো পড়ুন: ফুল, অশ্রু, প্রেম – ৩১ নারীর কবিতা (পর্ব-১) । মুম রহমান
মৃত্যুর প্রতি তুমি নির্ঘাত আসবে। তাহলে কেন আর বিলম্ব? আমি তো তোমার অপেক্ষায় আছি। যথেষ্ট হয়েছে আমার। আলো নিভে গেছে আমার। আমার দুয়ার খোলা আছে সরল বিস্ময়ের জন্যে যেটা আদতে তুমি। তাহলেই সেই বেশ ধরো যা তোমার রূপকেই আরো খোলতাই করে: বিস্ফোরিত করো তোমার রাসায়নিক অস্ত্র আমার ঘরে, নিরবে আসো গুন্ডার হাতের রাতের লাঠির মতো, আক্রান্ত করো আমার কণ্ঠ জ্বরের আবেশে; অথবা হও ঘুমপাড়ানিয়া গল্প যা আমাদের বলতে একদা (সেই গল্পখানি যার জন্যে প্রতি রাতে কাতর হতাম)। হয়তো আমি দেখবো আইনের নীল টুপি*, শীতল গৃহহর্মীর মুখের ত্রস্ত পান্ডুর মুখ আমি যাকে কম গুরুত্ব দেই। ইয়াসিং নদী ঘুর্নিপাক খায়, উত্তরের নক্ষত্র মাথার উপরে টিমটিম জ্বলে, আর নীল ঝলমলে আলো প্রিয়তমের চোখে চ‚ড়ান্ত আশঙ্কার আগে কালো হয়ে আছে। * অনুবাদকের টীকা: সে সময় গুপ্ত পুলিশেরা নীল টুপি পরতো। আমি জানি না তুমি বেঁচে আছো না মরে গেছো আমি জানি না তুমি বেঁচে আছো না মরে গেছো তুমি কি পৃথিবীতে প্রেতাত্মা হয়ে আছো, নাকি কেবল যখন সূর্যোদয় ম্লান হয়ে আসে প্রশান্ত শোক হয়ে আসো আমার ভাবনায়? সবকিছুই তোমার জন্য: দৈনিক প্রার্থনা, নিদ্রাহীন রাত্রির উত্তাপ। আর আমার পংক্তিালার জন্য, সেই সাদা সমন্বয়, আর আমার চোখেরা, নীল আগুন। এতোটা লালন কাউকে করিনি, এতোটা অত্যাচার আমাকে কেউ করেনি, না এমনকি যে আমার সাথে প্রতারণা করেছে সেও এতো অত্যাচার করেনি, এমনকি সেও নয় যে আমাকে সোহাগ করে ভুলে গেছে।

জন্ম ২৭ মার্চ, ময়মনসিংহ। এমফিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা লেখালেখি।