ফুল, অশ্রু, প্রেম-৩১ নারীর কবিতা (পর্ব-২৪) । মুম রহমান
কবিতাকে ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তি কিংবা খেদোক্তির জায়গায় নিয়ে গেছেন এ্যান স্যাক্সটন [Anne Sexton] (১৯২৮-১৯৭৪)। বিংশ শতকের এই ১৯৬৭ সালে তার ‘লিভ অর ডাই’ কবিতার বইয়ের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুটাকেই বেছে নেন তিনি। দীর্ঘদিনের অবসাদ, বিষাদ আর আত্মহত্যার পরিসমাপ্তি ঘটান নিজেকে কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ায়। ১৯৭৪-এর ৪ অক্টোবর তাঁর নতুন বই ‘রোয়িং টাওয়ার্ড গড’(ঈশ্বরের দিকে তরী বাওয়া) এর প্রকাশনা চুক্তি করে বাড়ি ফেরেন। তারপর মায়ের পুরনো পশমী কোটটা গায়ে চাপান, সব আংটি খুলে ফেলেন, একগ্লাস ভদকা পান করেন এবং সবশেষে গ্যারেজে গিয়ে তালা মারেন, তারপর গাড়ির ইঞ্জিন চালু করেন। ধীরে ধীরে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড ধোঁয়ার ঈশ্বরের দিকে রওনা হন তিনি। সমাপ্ত হয় তার দীর্ঘদিনের শারীরিক আর মানসিক লাঞ্ছনার। মানসিক চিকিৎসা চলাকালে ড. মার্টিন ওরেন তাকে থেরাপির অংশ হিসাবেই কবিতা লিখতে উৎসাহ দিতেন।
এক নারীর জন্য গান
ছোট্ট নিতম্ব আর স্তনের দিনে
জানালা বিক্ষত বাজে বৃষ্টিতে,
বৃষ্টি আসতে থাকে পুরোহিতের মতো,
আমরা মিলিত হই, স্বাভাবিক এবং পাগলের মতো।
আমরা শুয়ে থাকি চামুচের মতো যখন অশুভ
বৃষ্টি ঝরতে থাকে আমাদের ঠোঁটে মাছির মতো
আর আমাদের উল্লসিত চোখে আর আমাদের ছোট্ট নিতম্বে।
‘ঘরটা বৃষ্টিতে কী ঠান্ডা,’ তুমি বলেছিলে
আর তুমি, মেয়েলী তুমি, তোমার ফুলসহ
প্রার্থনা করেছিলে নয়দিন হাত মুড়ে আমার গোড়ালি ও কনুইতে।
তুমি জাতীয় পণ্য আর ক্ষমতা।
ও আমার রাজহাঁস, আমার ক্রীতদাসী, আমার প্রিয় পশমী গোলাপ,
এমনকি নোটারিও আমাদের বিছানাকে দালীলিক স্বীকৃতি দেবে
যখন তুমি আমাকে পিষে ফেলবে আর আমি জাগবো রুটির মতো।
আরো পড়ুন: ফুল, অশ্রু, প্রেম-৩১ নারীর কবিতা (পর্ব-২৩)
আবার এবং আবার এবং আবার
তুমি বলেছিলাম ক্রোধ ফিরে আসবে
ঠিক যেমন ফিরে এসেছিলো ভালোবাসা।
আমার একটা কালো চেহারা আছে যেটা আমি পছন্দ
করি না। এটা একটা মুখোশ আমি পরার চেষ্টা করি।
আমি এর ভেতরে অভিবাসী হই আর এর ব্যাঙ
আমার ঠোঁটে বসে এবং মলত্যাগ করে।
এটা পুরনো। এটা কাঙালও বটে।
আমি একে অল্পহারে রাখার চেষ্টা করেছি।
আমি একে কোন খাতির করিনি।
একটা ভালো চেহারাও আছে যেটা আমি পরি
দলাবাঁধা রক্তের মতো। আমি
ওকে সেলাই করে রেখেছি আমার বাম বক্ষে।
আমি একে একটা সাধনার মতো রেখেছি।
কামনা এর মধ্যে বীজ বপন করেছে
আর আমি তোমাকে এবং তোমার
সন্তানকে এর স্তন্যবৃন্তে রেখেছি।
আহ সেই কৃষ্ণতা হন্তারক
আর স্তন্যবৃন্ত উপচে পড়ে
আর প্রত্যেক যন্ত্রই কার্যকর
আর আমি তোমাকে চুমু খাবো যখন
আমি এক ডজন নতুন পুরুষকে কেটে ফেলবো
আর তুমি কিছুটা মারা যাবে,
আবার এবং আবার।
গৃহবধূ
কিছু নারী বাড়িকেই বিয়ে করে।
এটা আরেক জাতের চামড়া, এর রয়েছে হৃদপিন্ড,
একটা মুখ, একটা যকৃৎ আর অন্ত্রের নড়াচড়া।
দেয়াগুলো স্থায়ী আর গোলাপী।
দেখো সে কেমন সারাদিন বসে থাকে হাঁটু গেড়ে,
বিশ্বস্তভাবে নিজেকে ধুঁয়ে মুছে রাখে।
পুরুষেরা জোর করেই ঢুকে যায়, জোনা’র মতো ফিরে আসে
তাদের মাংস মায়েদের কাছে।
একজন নারী হলো তার মা।
সেটাই মোদ্দা কথা।

জন্ম ২৭ মার্চ, ময়মনসিংহ। এমফিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা লেখালেখি।