টালমাটাল অপদার্থ হৃদয়ে কি আর উৎসব বসত করে! আনন্দ উৎসব থেকে সরে সে একা সন্ন্যাসী বিকেলের মত চুপ করে বসে থাকে, দুপুরের হেমন্তের রিক্ত ক্ষেতের মত রিলিফের কুড়ো মেখে ভাত খায়। নরম শিউলি ভোর, গ্রামাফোন চোঙের মত চকচকে সোচ্চার সকাল, রথ টানা ঘোড়ার মত তরতাজা হৃদয় সব ছেড়ে দিয়ে মন ভোকাট্টা ঘুড়ির মত ত্রিফলার মাথায় পাক খায়। উঠছে নামছে জড়াচ্ছে আর তত বার ছিন্ন হয়। সন্ধ্যায় মাল্টিপ্লেক্সের ফ্লেক্সে জ্বল জ্বল করে স্বামী স্ত্রীর উজ্জ্বল মুখের ছবি। মাঝখানের হাইফেন তখন সরে যায়, সরে যায় স্ত্রীর চোখের নিচে কালির হালকা পোচ। আর স্বামীর গ্লানি মাখা মুখে আসে ফিকে হাসি। অপদার্থ হৃদয়ের চোখ এই সব ডিজিটাল আলোর নিচে শুধু যে কেন অন্ধকারকে দেখতে পায় কে জানে! পুজোর শপিং এর থৈ থৈ ভিড়ে সে বন্যার থৈ থৈ জলে কন্যাশ্রীর সার্টিফিকেট গুলোকে ভেসে যেতে দেখে! ভেসে যায় খেলার নৌকোর মত ভবিষ্যৎ। ভাদরের মেঘের সাথেও কি শ্রাবণের মেঘ ষাট করেছিল কিছু! ডিটেনশন ক্যাম্পের কুঠুরি ঘরগুলো এখন আর এন আর সি র নামে ভয় খায় না। জানে মাঠে ভালো পিচ করা না থাকলে ম্যাচ ফিক্সিং এর ও দরকার পড়ে না।
শুধু অপদার্থ হৃদয় খুঁজে পায় দু:খ, কুড়ো মাখা ভাত। ফুডমলের ধোঁয়ায় সে ভাগাড়ের গন্ধ পায়, মাছ ধোয়া বাটিতে আঁশটে গন্ধ। উৎসবের গন্ধে সে খুঁজে পায় শ্মশানের মড়া পোড়ানোর আঁচ। অসুস্থ লাগে অপদার্থ হৃদয়ের। মিথ্যে জালের মাঝে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে মাকড়শার লালা। এ হৃদয় এত উৎসব বর্জিত কেন? এত উজ্জ্বল তবু সাজে না কেন মন! প্রত্যেক ঋতুচক্রেই তো উৎসব ফেরে কিন্তু অন্ধকার ঘোচে কই!
ওই, ওই! বোধনের ঘটে কলাচারা বসালেন ঠাকুর মশাই। সিঁদুরের স্বস্তিক চিহ্ন দিলেন এঁকে, জোরে জোরে মন্ত্র পড়ছেন। অপদার্থ হৃদয় বলে উঠল, আলো! আলো কই! আলো আসবে তো এবার! মা মাগো! অপদার্থ হৃদয় আবার ভার হয়ে আসে, সে একা উড়তে থাকে ভোকাট্টা ঘুড়ির মত! নামে আর উঠে। সম্পূর্ণ একা হয়ে…