| 24 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

ইরাবতী গল্প: দুটি অণুগল্প । অমিতা মজুমদার

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
অকালবোধন
উমাশংকরের আজকাল  কী যে হয়েছে নিজেই বুঝতে পারে না। সেই বয়ঃসন্ধিকালে একজনের সাথে খুব ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। না অন্য কোনোরকম অনুভব ছিল না। দুজনের মাঝে এক অব্যক্ত বন্ধন ছিল যেটাকে আজ তার মনে হয় ভালোবাসা। আর এটাই তাকে সমস্যায় ফেলেছে। প্রতিটা মুহূর্তে তার চোখের ভাষা, তার যত্নশীল মন, তার প্রতি অধিক পক্ষপাতিত্ব এসব কিছুই মনে হয় অপার্থিব ভালোবাসা ছিল। কিছুতেই তার নীরব চোখের ভাষা ভুলতে পারে না। সে ভাষা আজ বাঙ্ময় হয়ে তাকে বলে ভালোবাসি ভালোবাসি। সে নিজে আজ আদ্যোপান্ত গৃহী মানুষ। কারো স্বামী, কারো পিতা, কারো শ্বশুর, কারো দাদু। এখন এরকম ভাবনা তার অস্বস্তির কারণ। নিজেকে নৈতিক ভাবে পর্যুদস্ত মনে করে। তাই আজকাল কেমন যেন সংসারে থেকেও সে সংসারে থাকে না। সবকিছুতে একটা গাছাড়া ভাব। বাজার করতে হয় তাই করে, নাতনীর সাথে খেলতে হয় তাই খেলে। সকলের সাথে একান্ত এড়িয়ে না যেতে পারলে কথা বলে। কেমন এক শূন্যতার মাঝে যেন সে ভেসে বেড়ায়। অথচ যে মানুষটির জন্য তার এই দুর্দশা সে কোথায় আছে কেমন আছে তা সে জানে না। উচ্চ মাধ্যমিকের পর আর তাদের দেখাই হয়নি। 
এতকাল তো সে  ভালোই ছিল তার এই সাধারণ মধ্যবিত্ত গৃহস্থ জীবনে। স্ত্রী কমলা ছেলে মেয়ে চাকুরি সব মিলিয়ে নির্ঝঞ্ঝাট জীবন। কোথাও কোন ছন্দপতন ঘটেনি তার  প্রাত্যহিক নিয়মানুবর্তিতায়। আজকাল তার ইচ্ছে হয় এক ছুটে তার কাছে  যায় গিয়ে তার মুখখানি দুই হাতে ধরে বলে চলো নতুন করে আবার শুরু করি। হোক না তা অকাল বোধন!
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

আরো পড়ুন: অমিতা মজুমদারের তিনটি অণুগল্প


বিসর্জনের পরে
আজকাল মাঝে মাঝেই হিমানীর বুকের মাঝে একটা ঝড় ওঠে। ঝড়ের তাণ্ডবে বুকের মঝে যে ভাঙচুর হয় তা যেন জলোচ্ছ্বাস হয়ে বেরিয়ে আসতে চায় চোখের জল হয়ে। কিন্তু জলের ধারা আর ঝরনা হয়ে বাইরে আসে না। ফলে বুকের মাঝে ঝড়টা থেমে গেলেও একটা গুমোট হাওয়ার মতো চেপে বসে। হিমানী এই চাপটা সইতে পারে না কিছুতেই। ইচ্ছে করে মল্লারের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে আর জমানো কান্নার বরফটা মল্লারের বুকের উষ্ণতায় গলে যাক। কিন্তু কোথায় পাবে মল্লারকে? সে-তো সেই কবে চলে গেছে তাকে ছেড়ে। না কথাটা ভুল, সেই মল্লারের ভালোবাসা পায়ে ঠেলে চলে এসেছিল আশীষের সাথে। ভুল ভেবে ভুল মানুষকে কী বেছে নিয়েছিল সে! না কী সময় তাকে বাধ্য করেছিল মল্লারকে ছেড়ে আসতে। যে প্রশ্নের হয়তো জবাব নেই আজ আর। শুধু রয়ে গেছে তার বুকের মাঝে প্রবল ঝড়ের তাণ্ডব,যা আমৃত্যু তাকে করবে ক্ষত বিক্ষত। রক্তাক্ত এ হৃদয়ের কান্না কোনোদিন পৌঁছাবে না মল্লারের কাছে। মল্লার যে আজ তার হৃদয় বাঁধা রেখেছে কোনো এক বাসন্তীকার কাছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত