আনুমানিক পঠনকাল: < 1 মিনিট
বেশ কিছুদিন থেকেই দীপা দেখছে ঘরের দেয়ালে একটা ফাটল ধরেছে।ঠিক মাঝ বরাবর।রোজই যেন ফাটলটা একটু একটু করে বাড়ছে। প্রথমে একগাছি চুলের মতো মনে হতো।তেমন চোখে পড়ত না।যতই দিন গড়াচ্ছে ফাটলটা বেড়েই যাচ্ছে ফাটলটা এমনভাবে ধরেছে ওটাকে সারতে গেলে পুরো ঘরটাই ভাঙতে হবে। দীপা ভেবে ঠিক করতে পারছে না কী করবে ? নিজের অসহায়তা দীপাকে বিবশ করে ফেলে মাঝে মাঝে।মনে পড়ে কী ভাবে একটু একটু করে এই ঘর সে আর অর্ণব গড়ে তুলেছে।একেবারে শূন্য থেকে শুরু। বলা যায় শুধু ভালোবাসা সম্বল করেই তাদের যাত্রা শুরু। যদিও সে সময় দীপা ভালোবাসা’র যে মানে বুঝত আজ সে মানেটা একেবারেই বদলে গেছে। সে সময়ের প্রতিদিনকার জীবন সংগ্রাম, আর্থিক টানাপোড়েন সংসারের নানা জটিলতার মাঝেও ওরা দুজন কেমন করে যেন সব উপেক্ষা করে সংসারটাকে সাজিয়ে তুলেছিল। গড়ে তুলেছিল এই সুন্দর ঘরখানা।যেখানে আলো হাওয়ার আসা যাওয়া ছিল অবাধ,তাই ছোট্ট এই ঘরখানায় কি যেন এক আকর্ষণ ছিল।যার টানে দীপার কখনো মনে হয়নি সে কষ্ট করছে এই ঘরখানাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে।
সময়ের ব্যবধানে সেই ঘরখানার দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়তে লাগলো।একসময় শুরু হলো ঘরের মাঝের দেয়ালে এই ফাটল ধরা।
দীপা এখন প্রতিদিন এই ফাটল একটু একটু করে বেড়ে যাওয়া দেখে। খাটে শুয়ে শুয়ে এটাই যেন তার একমাত্র কাজ হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছর ধরে দীপা শয্যাশায়ী। হঠাৎ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে দীপা চলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। মাঝে মাঝে কিছু একটা ধরে বিছানায় উঠে বসতে পারে। কাউকে ধরে সামান্য হাঁটাচলাও করতে পারে।কিন্তু ঘরের কোনো কাজ সে করতে পারে না যেমন, তেমনই অর্ণবের সাথেও তার সেই আগের সম্পর্কটা একটু একটু করে হারিয়ে যেতে থাকে। চিড় ধরে সম্পর্কের সেই অঙ্গীকারনামায় যা দুজনে লিখেছিল একসাথে।
কখন যেন অঙ্গীকার পত্রখানা দুভাগ হয়ে দুদিকে উড়ে যায় ঘরের জানলা গলিয়ে আসা এক দমকা হাওয়ায়।তাই দীপার খুব ভয় হয় আজকাল,কখন যেন ঘরের মাঝের দেয়ালের ফাটলটাও বেড়ে গিয়ে ঘরখানাই ভেঙে পড়ে।