আলোচিত ভিডিওটি পুরনো ক্ষমা চাইলেন অরুন্ধতী রায়

Reading Time: 2 minutes

সামাজিক গণমাধ্যমে ঝড় তোলা মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিজয়ী লেখক ও মানবাধিকার কর্মী অরুন্ধতী রায়।

বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি নিজের ওই বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে বিষয়টি বড় ধরনের অস্বস্তি তৈরি করেছে এবং আমি ক্ষমা চাইছি ওই ভিডিওর কারণে যদি কোনো বিভ্রান্তি তৈরি হয় সে জন্য।   

২০১১ সালের এক আলোচনায় অরুন্ধতী রায় বলেছিলেন, ‘ভারত তার দেশের দক্ষিণ পূর্ব, তেলেঙ্গানা, গোয়া এবং কাশ্মীরে যেভাবে সেনাবাহিনী নামিয়েছে পাকিস্তান তার সেনাবাহিনীকে এভাবে জনগণের বিরুদ্ধে নামায়নি…’।

এ বিষয়ে বুধবার দ্য প্রিন্ট-এ প্রকাশিত বিবৃতিতে অরুন্ধতী বলেন, তিনি বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে তার লেখায় তুলে ধরেছেন।

সম্প্রতি কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধা তুলে নেয়া ও সেখানে সেনা মোতায়েনসহ অন্যান্য অধিকার বঞ্চিতের ঘটনায় আবার আলোচনায় আসে অরুন্ধতী রায়ের সেই ভিডিও। 

এরপর তিনি তীব্র সমালোচনার মুখেও পড়েন। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার ঘটনাটি উল্লেখ করেন অনেকে।

এর জবাবে বিবৃতিতে অরুন্ধতী রায় লেখেন, কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে এখন ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধ তুঙ্গে, আর এ সময়ে আমার নয় বছরের পুরোনো একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক গণমাধ্যমে, যেখানে কথা বলার সময় ভারতের সরকার তার জনগণের বিরুদ্ধে যে অনন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে বলতে গিয়ে, আমাকে বলতে হয়েছে যে, পাকিস্তান তার নিজের জনগণের বিরুদ্ধে কখনো এভাবে সেনা মোতায়েন করেনি, যা ভরত করেছে।

তিনি বলেন, এই ছোট ভিডিও আমার সম্পূর্ণ চিন্তাকে ধারণ করে না।

বিবৃতিতে আটমোস্ট হ্যাপিনেস’র লেখিকা বলেন, বাংলাদেশ এবং বেলুচিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যা করেছে তা সব সময় আমার লেখার অংশ ছিল।

তিনি এরপর দুটি  উদাহরণ হিসেবে ২০১৭ সালে প্রকাশিত তার উপন্যাস আটমোস্ট হ্যাপিনেস থেকে উদ্ধৃতি দেন। যেখানে অন্যতম চরিত্র বিপ্লব দাসগুপ্ত ওরফে গ্যারিসন হোবার্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছে তা উল্লেখ করে। 

এ ছাড়া ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘ওয়াক উইথ দ্য কমরেড’ শিরোনামে লেখায়ও ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সেনাশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তানে যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার উল্লেখ রয়েছে বলে অরুন্ধতী বিবৃতিতে জানান।

তবে বিবৃতির শেষে মানবাধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায় লেখেন, আমি বিশ্বাস করি না রাষ্ট্র হিসেবে ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশ নৈতিকভাবে কেউ এগিয়ে আছে।

সম্প্রতি ম্যান বুকার জয়ী অরুন্ধতীর এই মন্তব্য টুইটারে হ্যাশট্যাগ দিয়ে শেয়ার করছে ভারতীয়রা। তাদের বড় অংশ অরুন্ধতীর নিন্দা করছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কঠোর সমালোচক কানাডিয়ান সাংবাদিক তারেক ফাতাহ অরুন্ধতীর এই ভিডিওটি টুইট করে লিখেছেন, ‘তিনি (অরুন্ধতী) বলেছেন, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কখনো তাদের নিজেদের নাগরিকের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়নি। তিনি কি অন্ধ ও বধির ছিলেন যখন ১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যায় বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল? তিনি কী বেলুচিস্তানের ব্যাপারে অজ্ঞাত? তিনি আক্ষরিক অর্থে পাকিস্তানের গোয়েন্দাদের রিপোর্ট পড়ছেন।’

আবার অনেকেই তাকে ‘ছদ্মবেশী বুদ্ধজীবী’ বলেও আক্রমণ করতে ছাড়েনি।

নিম্নবর্গের মানুষের অধিকারের পক্ষে কথা বলে আসছেন অরুন্ধতী রায়। এজন্য উপমহাদেশজুড়ে তার যেমন অনেক ভক্ত রয়েছে তেমনি সমালোচকও কম নয়। এর মধ্যে পুরনো মন্তব্যকে ঘিরে নতুন করে সমালোচনায় পড়লেন এই সাহসী লেখক।

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>