| 24 এপ্রিল 2024
Categories
দুই বাংলার গল্প সংখ্যা

গোয়ালন্দ

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.comওরে আমার মন গোয়ালা দিন দুবেলা 

দুধ যোগাবি
দুধ রেখো না আলগা করে হিংসা বিড়াল 

সদাই ঘোরে …

টিনের খুপড়ি থেকে দরাজ কণ্ঠ ভেসে আসে। কে গান গায়, কে? আমি জানালার শিক ধরে দাঁড়াই। মাথা উঁচু করে দেখি সামনের দোকানে কাজ করে সদরুদ্দিন ভাই, শিরিষ গাছের নিচে পা ছড়িয়ে চোখ বন্ধ করে গান করছে। সদরুদ্দিন ভাইকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে। কারণ পুরুষ মানুষ রাগ নাই চ্যাতব্যাত নাই। খালি হাসে। একটু সুযোগ পেলেই গান ধরে। হনুফা খালা তার পান খাওয়া কুচকুচ দাঁত বের করে বলে;

: সদরুদ্দিনের লিঙ্গ নাই।

শুনে সব মেয়েদের কী হাসি। আমার বুকটা ধ্বক করে ওঠে।

শেষ রাতে সবাই ঘুমায়, দূরে নিশিপক্ষী ডাকে। আমার ইচ্ছা করে পারিন্দা হয়ে সদরুদ্দিন ভাইকে নিয়ে কামরুপ-কামাক্ষা দেশে চলে যাই। ও গান করবে, আমি ঘুঙুর পরে নাচব।

ও ও ও 

বাচপানই গি তানগেলি

ছোটি ছোটি মিঠে চোরি ঘাটেসে বান্ধে

আমার চোখ ভিজে যায়। সকাল এসে জানালায় কড়া নাড়ে চড়ুইয়ের কোমল ঠোঁটে। পাখির ঠোঁট আমার খুব প্রিয়, পাখির চোখও। দেখে মনে হয় কী সুন্দর কাজল দিয়েছে চোখে। আমি কান্না মুছে চোখে কাজল দেই পাখির আদলে।

গোয়ালন্দ ফেরিঘাটের কাছেই আমাদের পাড়া। লোকজন লুঙ্গিটা তেরসা করে ধরে, সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে মাগী পাড়া।



সন্ধ্যা নামতে লোকজন ভুরভুর মদ খেয়ে জর্দা পান খেতে খেতে আসে..আমরা খুপড়ির সামনে এসে দাঁড়াই। আমার চোখে পাখির কোমল কাজল, ঠোঁটে নি:স্বার্থ ভালোবাসা লিপস্টিক। ভদ্দরনোকরা ইঁদুরের মতো চোখ করে আমাদের দেখে, কখনো মুখের দিকে তাকায় না, বুকের দিকে তাকায়, গতরের দিকে তাকিয়ে মাপজোক করে। কেউ কেউ ওখানে ফস করে হাত দেয়।



আমার সাথের বিলকিস ফিক করে হেসে দেয়। আজ বিলকিস খুব হাসছে।

সদরুদ্দিন ভাই পরশু বিকেলে আমাকে যা বলেছে শুনে তো আমার হার্টফেল হবার দশা। হনুফা খালা নাকি বিলকিসকে গরু মোটা তাজা করার ইনজেকশন দিয়েছে। বিলকিসটা খুব রোগা দুর্বল, কাস্টমাররা ওকে নেয় না।

আমার বিলকিসকে দেখে ভয় লাগে। মেয়েটা এত হাসছে কেন?

এক হুজুর আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
: এই মাগী বসবি?
: মাগী ডাকেন কেন? আমার নাম রুমঝুম।
: চুপ। আমরা ২ জন কত নিবি?

গোয়ালন্দ ঘাটে তিরবির করে ইলিশের চালান চলে যায় দূরদূরান্তের উদ্দেশ্যে। রাত নামে বাবু বাবু করে। ধুলো উড়িয়ে ট্রাক গুলো থামে ফেরীর জন্য। আমাদের কাস্টমার বাড়ে। সদরুদ্দিন ভাই আমার হাতে কতগুলো কনডম গুঁজে দেয়। হাসে শুধু। কী মায়া …


হুজুর ও তার সঙ্গী আমাকে নিয়ে উৎসবে নামে। দাঁত কামড়ে থাকি…। চোখে ভাসতে থাকে…টের পাই আমি পারিন্দা হয়ে উড়তে থাকি, চোখের কাজল ভিজে যাচ্ছে। সদরুদ্দিন ভাই আমার হাত ধরে বলে;

: শুধু আজকের রাত। কাল আমরা নতুন দেশে যাব।


আচানক গগন বিদারী চিৎকার ভেসে আসে নিচ তলা থেকে। পুরো পাড়া হৈচৈ। শোরগোল। মেয়েরা ভয়ে দৌড়াচ্ছে …

সদরুদ্দিন ভাইয়ের হাসি হাসি মুখ কিন্তু সমস্ত শরীরে লাল রক্তের পিচকারি। বাম হাতে কি ছুরি? উপর থেকে আমি বুঝতে পারি না স্পষ্ট… হনুফা খালার গলাটা দুই ভাগ হয়ে পড়ে আছে সদরুদ্দিন ভাইয়ের পাশে।

আহ রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোয়ালন্দ …


রাতের ইলিশ রাতেই চলে যাচ্ছে দূরের বন্দরে। চাঁদের আলোতে ইলিশগুলো কী সুন্দর চকচক করছে গো…।

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত