| 29 মার্চ 2024
Categories
সাক্ষাৎকার সাহিত্য

অরুন্ধতী রায়ের সাক্ষাৎকারঃ উপন্যাসের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট


২০১০ সালের নভেম্বরে কাশ্মীরের মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখায় অরুন্ধতী রায়ের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা দায়েরের হুমকি দেওয়া হয়। ভারতের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তি অরুন্ধতী রায়ের পক্ষে দাঁড়ালেও উদারবাদীদের এই গোষ্ঠীটির বেশ উল্লেখযোগ্য অংশ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রায়ের পক্ষে তাঁদের সমর্থন আসলে বাক্স্বাধীনতার পক্ষাবলম্বন। রায়ের কোন জিনিসটা ভারতীয় মধ্যবিত্ত ও অভিজাত গোষ্ঠীর বিরক্তি উদ্রেক করে? সেটা কি স্থিতাবস্থার রক্ষক মধ্যপন্থী, ভদ্র, পণ্ডিতসুলভ ব্রাহ্মণ্যবাদী ডিসকোর্সের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কহীনতা? তাঁর সমালোচকদের যুক্তি, অনেক সময়ই ফাঁকা ঠেকে। কারণ, তাঁরা কখনো অজনপ্রিয়তাকে প্রত্যক্ষ করেননি। তাঁদের কখনও আদালতের সমন মোকাবিলা করতে হয় না। স্বাভাবিকভাবেই রায়ের কাছে জিজ্ঞাস্য ছিল, চারপাশের লোকজনের ভিড়ে নিজেকে তাঁর বিচ্ছিন্ন মনে হয় কি না। ‘হয়, আবার হয় না।’ এরপরের প্রশ্ন: ‘আপনি কি নিঃসঙ্গ?’ রায়ের চমৎকার আত্মবিশ্বাসী জবাব ছিল, ‘নিঃসঙ্গ হলে ভিন্ন কিছু করতাম, কিন্তু আমি তা নই; আমি জনতার হৃদয় থেকে আমার লেখা ছড়িয়ে দিই।’
গুয়ের্নিকা পত্রিকার ফেব্রুয়ারি ২০১১ সংখ্যার জন্য সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন অমিতাভ কুমার।

প্রশ্ন: প্রথম যখন শব্দের শক্তি সম্পর্কে সজাগ হয়ে উঠলেন, আপনার বয়স কত ছিল?

অরুন্ধতী রায়: মনে হয় বেশ বড়ই ছিলাম। হয়তো দুই বছর। আমার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া বাবার কাছে শুনেছিলাম। আমার বয়স যখন চব্বিশ কি পঁচিশ, তখন প্রথমবারের মতো তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়। দেখা গেল, তিনি দারুণ আকর্ষণীয় এক ব্যক্তি—একই সঙ্গে বেকার, দেউলিয়া ও মাতাল। (এতে প্রথম দিকে খানিকটা থতমত খেয়ে গেলেও পরে তিনি প্রবীণ আমলা বা গল্ফখেলুড়ে নির্বাহী না হওয়ায় বরং খুশিই হয়েছিলাম। আমি তাঁর বেশ ভক্ত হয়ে উঠি।) প্রথম আমাকে তিনি যে কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন, তা হলো, ‘এখনো মুখখিস্তি করো নাকি?’ উনি কী বলছেন বুঝে উঠতে পারিনি, আমাকে শেষবার যখন তিনি দেখেন, তখন আমার বয়স ছিল দুই বছরের মতো। তিনি বললেন, আসামের যে চা-বাগানে তিনি কাজ করতেন, সেখানে দুর্ঘটনাক্রমে সিগারেটের আগুনে আমাকে পুড়িয়ে দিলে আমি চোখ রাঙিয়ে বলেছিলাম, ‘চুতিয়া’—নির্ঘাৎ চা-শ্রমিকদের বসতিতে শিখেছিলাম এই ভাষা।…পাঁচ বছর বয়সে প্রথম লিখি আমি…এখনো সেই নোটবইগুলো আছে। এক ভয়ংকর অস্ট্রেলিয়ান মিশনারি মিস মিটেন ছিলেন আমার শিক্ষক। রোজই আমাকে বলতেন, আমার চোখে নাকি খোদ শয়তানকে দেখতে পান। আমার দুই ছত্রের রচনায় (পরে যেটাকে দ্য গড অব স্মল থিংস-এ রূপান্তরিত করা হয়েছে) আমি বলেছিলাম, ‘মিস মিটেনকে আমি ঘৃণা করি, তাঁকে দেখলেই আমার ছেঁড়া ন্যাকড়ার কথা মনে হয়। আমার মনে হয়, তাঁর অন্তর্বাসগুলো ছেঁড়া।’ এখন আর তিনি বেঁচে নেই। জানি না, আপনাকে যেসব গল্প বলছি, সেগুলো শব্দের শক্তি সম্পর্কে সজাগ হয়ে ওঠার সঙ্গে সম্পর্কিত কি না…।

প্রশ: লেখালেখিতে আপনার কোনো আদর্শ আছে, কাউকে বিশেষভাবে অনুকরণ করেন?

অরুন্ধতী রায়: আমার আদর্শ আছেন কি না? আমি হয়তো এই শব্দটি ব্যবহার করব না। কারণ, এতে মনে হতে পারে এমন ব্যক্তিরা আছেন, যাঁদের আমি এতটাই শ্রদ্ধা করি যে তাঁদের মতো হতে চাইব…আমার কাছে কাউকে তেমন মনে হয় না। তবে আমি শ্রদ্ধা করি, এমন লেখক কারা জানতে চাইলে বলব, হ্যাঁ, অনেকে। শেকসিপয়ার, জেমস জয়েস, নবোকভ, নেরুদা, এদুয়ার্দো গালিয়ানো, জন বার্গার বাদে ঠিক এই মুহূর্তে উর্দু কবিদের রচনায় আমি মুগ্ধ—বলতে লজ্জা লাগছে, তাঁদের সম্পর্কে, তেমন কিছুই জানি না…তবে শিখছি, আমি হাফিজ পড়ছি। দারুণ দারুণ সব লেখক আছেন, এই পথিবীতে জীবন যাপন করে যাওয়া আমার পূর্বসুরিদের মধ্যে। তবে লেখকেরাই যে শুধু আমাকে গল্প বলার বেলায় অনুপ্রাণিত করেন, তা নয়। কথাকলি নর্তকের দিকে তাকান, কী সহজে তিনি একটা গল্পের ভেতর গতি বদলান—কৌতুক থেকে এপিফ্যানি, বৈরী থেকে কোমলতায়, মহাকাব্য থেকে একান্তে—এই নৈপুণ্যকে আসলে শ্রদ্ধা করি আমি। আমার কাছে এই অনায়াস স্বচ্ছন্দ একধরনের অ্যাথলিটিজম, যেমন সুন্দর অনায়াস দৌড়বিদকে ক্ষিপ্র ছুটন্ত চিতার মতো প্রত্যক্ষ করা, এটাই গল্প কথকের ফিটনেসের প্রমাণ।

প্রশ্ন: আমেরিকান পাঠক গড অব দ্য স্মল থিংস বেরোনোর আগে নিউইয়র্ক-পত্রিকার ভারত সংখ্যায় প্রকাশিত চুম্বক অংশ থেকে আপনার লেখার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। রুশদি, অমিতাভ ঘোষ, বিক্রম শেঠ, বিক্রম চন্দ, অনিতা দেশাই, কিরণ দেশাই ও আরও কয়েকজন ভারতীয় লেখকদের সঙ্গে আপনার ছবি ছিল সেখানে। এরপর লেখক হিসেবে আপনার চলার পথ ওই গ্রুপের সবার সঙ্গে পার্থক্যটুকু বেশ চড়া দাগে শনাক্ত হয়েছে। আপনি কখনো ওই গ্রুপে থাকতে চেয়েছিলেন?

অরুন্ধতী রায়: সেদিনের কথা মনে হলে হাসি আমি। আমার ধারণা, সবাই খানিকটা অস্বস্তিতে ভুগেছে। চাপা সম্মতি ছিল, কিন্তু কেউ কেউ বিড়বিড় একা একা, ফিসফিস করে কথাবার্তাও হচ্ছিল কারও কারও মধ্যে। আচরণে কর্কশ সৌজন্য ছিল। অস্বস্তি নিয়ে সবাই ভাবছিল, আমাদের ভেতর ঠিক কোথায় মিল আছে, কোন জিনিসটা আমাদের—এই ছবিতে জড়ো করল। কিন্তু এটা ছিল নিউ ইয়ার্কারের জন্য, আর এমন কে আছে যে নিউ ইয়র্কারে পাতায় ছবি ছাপতে চাইবে না? সেটা ছিল ভারতের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং বিশেষ সংখ্যাটি ভারতীয় ইংরেজি লেখকদের রেনেসাঁ-বিষয়ক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে লাঞ্চে যাওয়ার সময়ে দেখা গেল, আমাদের জন্য বুক করা বাসটি একদম ফাঁকা—আমরা বেশি ছিলাম না আসলে। আমরা কারা? ভারতীয় লেখক? কিন্তু আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকই তো আমাদের সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। আমরা কী লিখছি, তা নিয়েও মাথা ঘামায় না। আমার মনে হয় না ওই ছবির কেউই নিজেকে ওই দলের লোক মনে করেছেন। লেখকরা কি তেমনই নন? দারুণ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী? অন্য লেখকদের সঙ্গে আমার ভিন্নতা বা মিল নিয়ে ভাবতে গিয়ে সময় নষ্ট করি না আমি। আমার কাছে, তারচেয়ে বেশি কৌতূহলের বিষয় হচ্ছে, ভাষা শাণিত করার ফাঁকে হাঁটার চেষ্টা করা, তাকে যথাসম্ভব আপন করে নেওয়া আর তারপর চারপাশে চোখ বুলিয়ে লাখ লাখ মানুষের জীবন দেখে সেই একান্ত ভাষাকে জনতার হূদয়ের ভাষায় পরিণত করা। এই দুটো পরস্পরবিরোধী বিষয়কে একটি মুগ্ধকর প্রয়াসে ধরে রাখা। আমি এখানে প্রবল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশীদার। গত ছয়টি মাস দেশময় ঘুরে বেড়িয়েছি, ছোট ছোট শহর রাচি, জলন্দার, ভুবনেশ্বর, জয়পুর, শ্রীনগরে। বিরাট সমাবেশে তিন-চার হাজার লোক—ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, রাজনৈতিককর্মীর সামনে বক্তব্য দিয়েছি। বেশির ভাগই হিন্দিতে কথা বলি, আমার ভাষা নয় এটি (এমনকি মিটিংটা কোথায় হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে সেটাও তরজমা করতে হয়)। ইংরেজিতে লিখলেও আমার লেখা সঙ্গে সঙ্গে হিন্দি, তেলেগু, কানাড়া, তামিল, বাংলা, মালয়ালাম, ওড়িয়া ভাষায় অনুবাদ হয়ে যায়। মনে হয় না এখন আর আমাকে ‘ইন্দো-অ্যাংলিয়ান’ লেখক মনে করা হয়। অািম যেন ইংরেজি ভাষীদের জগৎ থেকে দ্রুতই সরে যাচ্ছি; অন্তত ভাষা সম্পর্কে আমি যেভাবে ভাবি, সেটা তো অবশ্যই।

প্রশ্ন: ইদানীং আপনি কী পড়ছেন বা লিখছেন, যেমন গত বছর কী পড়ছিলেন আপনি?

অরুন্ধতী রায়: রাশিয়া, বিপ্লবোত্তর রাশিয়া সম্পর্কে পড়ার কারণ আছে আমার। বারলাম শালামভের কোলিমা টেলস নামে চমকপ্রদ একটা গল্পসংকলন, দ্য ট্রায়াল অব ট্রটস্কি ইন মেক্সিকো, এমা গোল্ডম্যানের আত্মজীবনী, লিভিং মাই লাইফ, ইউজিনা গিনজবার্গের জার্নি ইনটু দ্য ওয়ার্লউইন্ড…অস্বস্তি জাগানো জিনিস।

প্রশ্ন: এখন উপন্যাস লেখার ব্যাপারটা কেমন হবে আপনার কাছে?

অরুন্ধতী রায়: এর মানে হবে সময় বের করা, কিছুটা নিরিবিলি পরিবেশ বের করা, বাঘের পিঠ থেকে নামা। আশা করি, সেটা সম্ভব হবে। পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার মাত্র অল্প মাস আগে বেরিয়েছিল দ্য গড অব স্মল থিংস, নষ্ট জাতীয়তাবাদের এক নতুন, ভীতিকর ও চড়া ভাষার আবির্ভাব ঘটিয়েছিল তা। জবাবে আমি লিখেছিলাম, ‘দ্য এন্ড অব ইমাজিনেশন।’ আমাকে তা রাজনীতির পথে নামিয়েছিল, যার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিল না। এতগুলো বছর পরে বিশাল সব বাঁধ, প্রাইভেটাইজেশন, ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধ, পার্লামেন্টে আক্রমণ, কাশ্মীরে দখলদারি, মাওবাদী আর সবকিছুর করপোরেটাইজেশন নিয়ে লেখার পর—যেসব লেখা অসম্ভব বৈরী ও বিপজ্জনক। আমার ধারণা, আমরা বেশ কঠিন সময়ের দিকে এগিয়ে চলেছি। এই দেশটি আরও সহিংস অঞ্চলে পরিণত হতে চলেছে। কিন্তু ব্যাপারটা যখন আমাদের হাতে, একজন লেখক হিসেবে আমাকে বেঁচে থাকার একটা উপায় বের করতে হবে, কী ঘটছে সেটা দেখার, জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ভারতীয় অভিজাতগোষ্ঠী মহাশূন্যে গেছে। কিন্তু যাদের মর্ত্যে ফেলে যাওয়া হয়েছে, তাদের বোঝার ক্ষমতা যেন হারিয়ে ফেলেছে তারা।

প্রশ্ন: হ্যাঁ। কিন্তু নতুন একটি উপন্যাস লিখতে গেলে আপনাকে কী করতে হবে?

অরুন্ধতী রায়: জানি না, যে গল্পটি বলতে চাই, সেটি বলার জন্য একটা ভাষা খুুঁজে বের করতে হবে। ভাষা দিয়ে আমি ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, মালয়ালাম বোঝাচ্ছি না অবশ্যই। বলতে চাইছি অন্য কিছু। বিভিন্ন জগৎকে একসঙ্গে করার একটা উপায়, যারা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। দেখা যাক।

প্রশ্ন: আপনার উপন্যাস অবশ্যই দারুণ চলেছে। কিন্তু নন-ফিকশনগুলোরও ভালো কাটতি। নিউইয়র্কের মতো বিভিন্ন জায়গায় যখনই আপনি কথা বলেন, বিশাল ভক্তগোষ্ঠী হাজির হয়। এখানে আপনার বই ভালোই বিক্রি হয়, কিন্তু এত দিনে আমাকে যেটা বিস্মিত করেছে তা হলো সেপ্টেম্বর ১১-র হামলার পর পর প্রকাশিত লেখাটিসহ কোনো কোনো লেখা ইন্টারনেটে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে পারেন? আর এটা কি সত্যি যে নিউইয়র্ক টাইমস আপনার এই লেখাটি প্রকাশ করতে চায়নি?

অরুন্ধতী রায়: আমি যত দূর জানি, নিউইয়র্ক টাইমস-এর অন্য কোথাও প্রকাশিত লেখা না ছাপানোর নীতি রয়েছে। আর আমি খুব কমই ফরমায়েশি লেখা লিখি। তবে ৯/১১-র পরে লেখা দ্য অ্যালজেব্রা অব ইনফিনিট জাস্টিস কোনো মূলধারার মার্কিন প্রকাশনায় ছাপা হয়নি—সে সময় এটা ছিল অচিন্তনীয়। তবে তখন সারা দুনিয়ায় সেটি ছাপা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ছোটখাট রেডিও স্টেশনে সম্পূর্ণ পাঠ করা হয়েছে। নেটেও গেছে। ইন্টারনেট নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে…উইকিলিকস, তারপর আফগানিস্তানে ভারতীয় প্রপাগান্ডা ও কৌশলগত নীরবতাকে দমিয়ে দেওয়া ফেসবুক বিপ্লব। ইরানে টুইটারের উত্থান। আমি আশা করছি, বিভিন্ন সরকার আর বড় বড় ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ লাভ, দাম বাড়িয়ে একে গরিবের আওতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার ফলে অচিরেই ইন্টারনেট সংঘাতের সাইটে পরিণত হবে…অবশ্য এসব কায়দা সফল হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। ভারতের সবচেয়ে বড় ও নবীনতম বিনিয়োগ অপারেশন গ্রিন হান্ট উপজাতীয় লোকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে, যাদের অনেকেই কম্পিউটার তো দূরের কথা, বাস বা ট্রেনও চোখে দেখেনি, কিন্তু এমনকি সেখানেও মোবাইল ফোন আর ইউ-টিউব ভূমিকা রাখছে।

প্রশ্ন: আপনার সাধারণ একটা দিন সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেন? যেমন অন্যদের চেয়ে আপনার দিনগুলো কেমন ভিন্ন আর অনিয়মিত?

অরুন্ধতী রায়: আমার দিন-রাত? আসলে আমার নৈমিত্তিক কোনো দিন (বা রাত) নেই। অনেক বছর ধরেই এমন। এর সঙ্গে দেশদ্রোহিতার তামাশার কোনো সম্পর্ক নেই (হাসি)। এ নিয়ে আমার অনুভূতি সম্পর্কে আমি ঠিক নিশ্চিত নই। তবে ব্যাপারটা এমনই। অনেক ঘুরি আমি। একই জায়গায় সব সময় ঘুমাই না। আমার জীবনটা বড়ই অস্থির, তবে অশান্ত নয়। কিন্তু অনেক সময় মনে হয়, যেন আমার শরীরে বুঝি ত্বক নামের পদার্থটি নেই—বসবাসের পৃথিবী থেকে আমাকে যা আলাদা করে। ত্বকের এই অনুপস্থিতি ভয়ংকর। আপনার একান্ত জীবনে ঝামেলা বয়ে আনে; ব্যক্তিগতকে প্রকাশ্য আর প্রকাশ্যকে ব্যক্তিগত করে ফেলে। অনেক সময় যন্ত্রণাকর হয়ে উঠতে পারে। কেবল আমার নয়, বরং আমার কাছাকাছি যাঁরা আছেন, তাঁদের পক্ষেও।

প্রশ্ন: এমন কিছু কি অতীতে আপনি লিখেছেন, যার সঙ্গে এখন আর একমত নন, যেখানে আপনার ভুল হয়েছিল, বা হয়তো যার সম্পর্কে আপনি নাটকীয়ভাবে মত পাল্টেছেন?

অরুন্ধতী রায়: আপানি জানেন, আমার কথায় কোনো ভুল হলে তাতে দুঃখ পাব না। ভেবে দেখুন, হঠাৎ করে যদি বুঝতে পারি যে বড় বড় বাঁধগুলো চমৎকার, তখন হিমালয়ে নির্মিত শত শত বাঁধ নিয়ে ফুর্তিতে নেচে উঠতে পারব। ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তি উদ্যাপন করতে পারব। তবে কিছু ব্যাপার আছে, যার সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর কারণ সময়ের পরিবর্তন। বেশির ভাগই কৌশলগত প্রতিরোধ-সংক্রান্ত। ভারতীয় রাষ্ট্রটি কঠোর ও ক্ষমাহীন হয়ে উঠেছে। এককালে যে কাজটি তারা কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড আর মণিপুরে করেছে, সেটাই এখন করছে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে। তো মুক্তিসংগ্রাম থেকে পাওয়া কোনো কোনো কৌশল এখন অচল হয়ে গেছে বটে।

প্রশ্ন: এমন বিশেষ কোনো লেখা কি আছে, বিশেষ করে উপন্যাস, যেটা ৯/১১-র পরবর্তী আমাদের বসবাসের বিশ্বের অবস্থা ব্যাখ্যা করার কাছাকাছি?

অরুন্ধতী রায়: আসলে দুঃখের কথা উপন্যাসের জগতের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। এমনকি কে কোন বছরে বুকার পুরস্কার পেয়েছেন, তাও জানি না। তবে যখন নেরুদার স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানি পড়বেন, আপনাকে সত্যিই বিশ্বাস করতে হবে যে অবস্থার পরিবর্তন হলেও তা আগের মতোই রয়ে যায়।

ধন্যবাদ

.

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত