একগুচ্ছ কবিতা
আজ ১৪ আগষ্ট কবি অরুণাভ রাহারায়ের জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
অসমাপ্ত অন্দরমহল
শরতের ঝলমলে রোদে
অগ্রজ কবির ঈর্ষা, অভিশাপ গায়ে এসে লাগে!
ট্রেনের সামান্য গর্তে প্রাণ পড়ে থাকে।
এইমাত্র আমি তার জিভ ধরে টানি…
দেখি যে, আমার কথা বন্ধুরা শোনে।
বন্ধুরা ঢেউ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়…
পড়ন্ত জীবন থেকে আলো তুলে আনি।
কলম রেখেছি ধুয়ে বহুদিন আগে।
তোমার ইশারা পেলে যতসব ছাইভস্ম জাগে
এমন মধুর কোপ খেয়ে মনে হল
আমার পাপের ফল, সমূহ পেয়েছি।
আরও আরও আরও আরও কত কী-যে বাকি
অতএব, সতত-সতর্ক থাকি।
টাইম-স্পেসের জার্নাল
আর কী লিখি আর কী লিখি এই অবেলায়
আমায় আজও কোন পুরোনো যুদ্ধ টানে
যা হল তা হবার ছিল এই অছিলায়
ঝাপসা আলোয় ঋণ বেড়ে যায় অনির্বাণে
ঋণ বেড়ে যায় তুঙ্গে ছিল বৃহস্পতি
ওইভাবে কি বসার কথা মহারাজায়?
ওইভাবে কে সার্ভ করে দেয় খাবার-খানা!
আমারও তাই ভাল্লাগে তার বেড়ালপ্রীতি
একধাক্কায় ঢেউ দিয়ে যায় সব পরিচয়
ঝড়ের সময় যেমন কাঁপে বনস্পতি
মাত্রা গুণে গান থেকে যাই তানপুরাতে
রাত্রি বাড়ে… বাড়তে বাড়তে সূর্য ওঠে…
ফকিরনামা
দু’কদম কাব্য লিখি
কাফি আর বেহাগ শিখি
তোমাকে ছন্দে গাঁথি
বিকেলে জ্বালাও বাতি
তোমারই অল্প তাড়া
গায় গান লক্ষ্মীছাড়া
পড়েছি অলীক খাতে
মিশে যাই কল্পনাতে
চলো আজ রঙিন জামায়
লিখে দিই ফকিরনামা…
ঝুঁকি না মদ্যপানে
আমাকে অগ্নি টানে
তবু কোন মুদ্রাদোষে
ঢাকি মুখ শঙ্খ ঘোষে
হেঁটে যান লালন শাহী
আমারই বার্তাবাহী…
থেকো না পাশবালিশে
দেখা দাও নেলপালিশে
একাকী দাঁড়াও ছাদে
পড়ে যাই গভীর খাদে
চাঁদে হাত, আস্তে, ছোঁয়াও
অসুখের বার্তা ধোয়াও
ভয় পাই পদক্ষেপে
হেঁটে যাও বায়না মেপে
তবে আজ ফুচকা খাওয়াও
দু’হাতে ওড়না ওড়াও…
উঠে যাও মেট্রোরেলে
বাজো ঠিক কলিংবেলে!
এটুকুই লিখতে পারি
আমি খুব যুদ্ধে হারি
পড়ে যাই গভীর খাদে
তুলে দাও আবছা চাঁদে
যে-চাঁদে দিব্যি জ্বলো
সে-চাঁদে একলা চলো…
স্নিজা
তোমার হাঁচির মতো আমার কবিতা আসে কৃষ্ণনগরে।
দূরের জলঙ্গী দেখে এসে
তোমাকে ফুলের নামে ডাকি
মাথায় কবিতা এলে তোমাকে জাগাই
এসেছো নিয়ম ভেঙে, তুমিও তো জানি…
আমার লেখায় শুধু আলো দিয়ে গেছো
এতদিন পর আজ লুকিয়ে বুঝেছি
তুমি গান তুমি স্বর তুমি লেখা তুমি…
একটু গেলেই দূরে কেঁপে উঠবে ভূমি!
বরং শোনাও গান–
আকাশে বাড়িয়ে হাত তারাদের আঁকো
এটুকু বলেই দাও, শুনি
সেন্ট্রাল অ্যাভিন্যু থেকে কত দূরে জোড়াসাঁকো?
স্নিজা কাব্য
তোমাকে প্রথম দেখি অফিসে
শীতকাল জুড়ে খুব কফি খেয়ে
বিজয়কে ডেকেছিলে জোড়াল
নিচু মুখে আমি যাই বাইরে
রবি ঠাকুরের গান গাই রে
তোমার গলার স্বর ধারালো
তোমার মুখের দিকে তাকালে
নরম আলোর রেখা বাঁ গালে
চুলে কিছু এলোমেলো ঝোপঝাড়
ও মুখ দেখিনি আগে কখনও
শুনিনি অমন নাম কখনও
মনে রোদ পড়ে গেল তেড়ছা
তোমার পিসির গান শুনেছি
বাড়ি ফিরে কবিতায় লিখেছি
হঠাৎ তোমার দেখা! কান্ড!
মধু ঝরে পড়ে যায় কণ্ঠে
হেঁটে হেঁটে যাব নাকি ও ঠোঁটে?
জমে যায় কবিতার ভাণ্ড
অফিসে প্রচুর কথা বলি না
মেয়ে দেখলেই প্রেমে গলি না
তবুও পড়েছি প্রেমে কেন যে!
তুমি চলে গেলে তাই খুব চাপ
এই অফিসে খাচ্ছে না খাপ
সব কথা গেঁথে আছে মগজে
এই পথ উচুনিচু, গাড্ডা–
প্রতিমাসে কবিতার আড্ডা
তোমাকে যে ডেকে আনি সহজে!
তুমি এসে কি দারুণ গান গাও
বই-চারাগাছ উপহার পাও
রবি ঠাকুরের গানে ম-ম ঘর
চলো যাই তুলে দিই অটোতে
ফেসবুক খুলে দেখি ফটোতে
কানে শুধু ভেসেছে গলার স্বর
বাড়ি ফিরে পৌঁছনো সংবাদ
যেই দাও সামনেই দেখি খাদ
স্লিপ খেয়ে পড়ে যাই নিমেষে
পড়ে গেলে কী যে হয় জানো কি?
ঠাকুর বা ভগবান মানো কি?
চলো যাই দু’জনেই প্যারিসে!
২
আবার কবে যে দেখা– জানি না!
আজ থেকে ভগবান মানি না
একা একা চলে যাই মানালি
হঠাৎ মেসেজ আসে তোমারই
সব অন্ধের নাম হোমার-ই
খাতা খুলে লিখে চলি কবিতা
এই পাহাড়ের ঢালে জমে মেঘ
আপেলের দেশে দেশে কী আবেগ
এসে যায় নতুনই এপিসোড
সিমলা মানালি হয়ে খাজিয়ার
তোমাকে পথের ধারে খুঁজি আর
এসেছে কুয়াশা-ডলহৌসি
গোল্ডেন টেম্পেলে ঢুকেছি
ওড়না জড়ানো মুখ দেখেছি
এত দূরে তুমি এলে কীকরে?
৩
দেখা হবে হবে তবু হয় না
দেখা না দিলে যে লেখা হয় না
অতএব বলে দাও– কী করি?
এ কথা শুনে কি তুমি লেখা দাও?
হঠাৎ কি তাই তুমি দেখা দাও?
কোন অভ্যেসে আঁকড়ে ধরি?
তারপর চলে যাও দূরেতে
‘আমি শুধু বাঁশরিরো সুরেতে’
জেগে থাকি সারারাত ঘুম নেই।
