Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

তাদের যুদ্ধটা চৈতন্যের যুদ্ধ, সভ্যতাকে পুনর্বার সংজ্ঞায়িত করার যুদ্ধ — অরুন্ধতী রায়

Reading Time: 6 minutes

আজ ২৪ নভেম্বর ঔপন্যাসিক এবং রাজনৈতিক সক্রিয়তাবাদী অরুন্ধতী রায়ের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


 

[নিউইয়র্কে ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলনের সময় অরুন্ধতী রায়ের এই সাক্ষাৎকারটি দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার জন্য নিয়েছিলেন অরুণ গুপ্ত। আর প্রকাশ হয়েছিলো ৩০ নভেম্বর ২০১১ তে। এখানে অরুন্ধতী রায় আন্দোলন সম্পর্কে তার ভাবনা ও আন্দোলন-এর জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ, যা আমেরিকার রাজনৈতিক প্রকরণকে পুনরায় তৈরী করেছে আর বিশ্ব মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে তা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি কথাবলির জন্য ভাষান্তর করেছেন নীলাঞ্জনা অদিতি।]

 

আপনি কেন  ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলন এ যেতে চেয়েছিলেন, এবং এই সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

কেন আমি সেখানে যেতে চাইব না? এটাই আমি এত বছর ভেবে এসেছি এটা আমার কাছে বুদ্ধিবৃত্তিক ও তাত্বিকবিচারে মনে হয়েছে যে এ আন্দোলনটা হতোই। তবু আমি এমন হওয়ায় আমার বিস্ময় আর আনন্দ লুকাতে পারলাম না। …কাজেই প্রথমবারের মতো আমি সেখানে গিয়েছিলাম কারণ সেই সকল শিবির ছিল উঁচু জায়গায়, এটা আমার কাছে প্রতিবাদের চেয়েও দখল করাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে এটা নিজেকে প্রকাশ করতে শুরু করেছিল। কিছু মানুষ মাটি আঁকড়ে বসেছিল এবং অন্য মানুষদের জন্য সংঘবদ্ধ হবার কেন্দ্রস্থল ছিল, ঘটনার মধ্য দিয়ে চিন্তা করা। আমি যেমন বলেছি, আমি যখন ‘পিপল ইউনিভার্সিট’তে আমার বক্তব্যে বলেছি এটা আমার কাছে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক ভাষার সঙ্গে পরিচয় হবার মতো মনে হচ্ছিল, একটা ভাষা যা কিছুক্ষণ আগেও ব্লাসফেমি হিশেবে বিবেচিত হচ্ছিল।

আপনার কি মনে হয়   ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ কে একটা নির্দিষ্ট জায়গা বা কয়েকটা জায়গা দখল হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়?

আমার মনে হয় না যে পুরো প্রতিবাদটা শুধু স্বশরীরে ক্ষমতাদখলের জন্য হয়েছে বরং নতুন রাজনৈতিক চিন্তাধারা তৈরীর জন্য হয়েছে। আমার মনে হয় না যে রাষ্ট্র জনগনকে কোনো নির্দিষ্ট জায়গা দখল করার অনুমতি দেবে, যদি না এই অনুমতি প্রদান আত্মতৃপ্তিতে গিয়ে শেষ হয় আর এর প্রভাব আর প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে যায়। আসল যে ব্যপার তা হলো নিউইয়র্ক আর অন্য জায়গায় যেখানে লোকজন প্রহৃত হয় ও উচ্ছেদিত হয় তা ক্ষমতার স্থায়িত্বকে পীড়িত ও দ্বন্দ্বে ফেলে দেয়। আমার মনে হয় এই আন্দোলন বহুরূপী আন্দোলন হবে অথবা অন্তত হওয়া উচিত যেখানে বিস্ময়ের উপাদান প্রতিবাদকারীর সঙ্গেই থাকবে। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান আর স্বশরীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা উচিত যাতে সরকার ও পুলিশ বিস্মিত হয়। এর জন্য  নিজেকে প্রতিনিয়ত চিন্তার মধ্যে রাখতে হবে কারণ ক্ষমতা ধরে রাখা হয়ত এমন কিছু না যা যুক্তরাষ্ট্রের মতো উগ্র ও শক্তিশালী কোনো রাজ্যের আন্দোলন মেনে নেবে।

একইভাবে জনগণের জায়গা দখল জনগণের চিন্তাধারাকে নিয়ন্ত্রিত করেছে। এটা কেন হয়েছে বলে মনে হয়?

আমার মনে হয় আপনার পুরো ব্যাপারটা সম্পর্কে অতৃপ্তি আছে যে আন্দোলনটা হঠাৎ টানতে শুরু করেছে এই আন্দোলন  সেখানে জায়গা পেয়েছে যেখানে জনগন যারা সেই রাগ কে অনুভব করতে পারে আর প্রকাশ করতে পারে— আর এটাই আমরা যেমন জানি সব রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।  এই জায়গাগুলি রাগ ও অতৃপ্তির মাত্রা নির্ধারনের রাস্তা হয়ে উঠেছে।

আপনি বলেছেন যে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। ডজনখানেকের জীবিকা বন্ধ করা হয়েছে, উচ্ছেদ করা হয়েছে অন্তত অস্থায়ীভাবে গত সপ্তাহে। আপনি আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায় হিশেবে কি দেখেন?

আমি জানি না আমি এর উত্তর দেয়ার যোগ্য কিনা, কারণ আমি তেমন কেউ না যে যুক্তরাষ্ট্রে অনেকটা সময় কাটিয়েছি কিন্তু আমি সন্দেহ করি যে এটা নানা উপায়ে বারবার মিলিত হবে আর নিপীড়ন থেকে সৃষ্টি হওয়া রাগ আসলে আন্দোলনকে দীর্ঘস্থায়ী করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলনের জন্য যা ভয়ানক বিপদ তা হল এটা আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রচারকার্যের ভেতরে খাঁজ কাটবে। আমি এমন টা এর আগে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের সময় দেখেছি আর এমনটা সব সময় ভারতে হতে দেখি। পরিণামে পুরো স্পৃহাটা “ভাল মানুষ” খোঁজার মধ্যেই চলে যায়, এক্ষেত্রে বারাক ওবামা মূলত পুরো বিশ্বে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণা যেনো রাজনৈতিক ক্ষোভ আর প্রজ্ঞাকে টেনে বিশাল কৌতুকে পরিণত করেছে যার ফলে আসলে আমরা একই জায়গায় থেকে যাই।  

আপনার প্রবন্ধগুলি যেমন The Greater Common Good” আর Walking with the Comrades কর্পোরেশনকেন্দ্রিক, সেনাবাহিনী আর রাষ্ট্র নির্বিচারে ভারতে অন্যদের ভূমি দখল করে নিচ্ছে কীভাবে এই দখলদারিত্ব ও বিরোধিতা  ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত?

আমি আশা করি যে ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলনকারীগণ রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট সচেতন এই ব্যাপারে যে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ বিচ্ছিরিভাবে জমানো থেকে তাদের বিছিন্ন করাটা ভারত আফ্রিকা আর মধ্যপ্রাচ্যর পৌরসভা কর্তৃক ছাঁটাই ও যুদ্ধাবস্থা তৈরীরই একই কৌশলের অংশ। ভয়াবহ হতাশা থেকেই আমরা জানি যে, অন্যতম মূলপন্থা যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পেয়েছে যেটা হয়েছে অস্ত্রের কাঁচামাল আর অন্য দেশে যুদ্ধ  ছড়ানোর মাধ্যমে। কাজেই এই আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নদের ন্যায়বিচারের আন্দোলন নাকি বৈশ্বিক অর্থনীতির আন্তর্জাতিক নিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন যা   ক্ষুধা ও দারিদ্রের পরাকাষ্ঠাকে অচিন্তনীয় মাপকাঠিতে নিয়ে আসছে ত্তা আপাত দৃষ্টিতে দৃশ্যমান।

আপনি পুঁজিবাদ থেকে বের হয়ে অন্য কিছু ভাবার কথা লিখেছেন। এ ব্যপারে কিছু বলতে পারবেন?

আমরা প্রায়ই ‘ক্রনি-ক্যাপিটলিজম’  ও ‘নিওলিবারেলিজম’- এই দুটার মধ্যে দ্বন্দ্বে পড়ে যাই বা অবজ্ঞাভরে ব্যবহার করি পুঁজিবাদ শব্দের ব্যবহার উপেক্ষা করতে কিন্তু একবার যদি ভালভাবে দেখেন, ধরা যাক, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে  কী হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই মডেল যা বাক্সবন্দী হয়ে আছে তা বলে যে গণতন্ত্রকে সারাবিশ্বে বিভিন্ন দেশে জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, দরকারমত সামরিক শাসন ও যা যুক্তরাষ্ট্রের নিজেরি আছে যার ফলে ৪০০ জন ধনী মানুষ এত ধনসম্পদের মালিক যা জনসংখ্যার অর্ধেকের সমতূল্য। হাজার হাজার মানুষ তাদের চাকরি আর ঘরবাড়ি হারাচ্ছে আর প্রতিষ্ঠানকে  কোটি কোটি টাকা সহ মুক্তি দেয়া হছে।

ভারতে ১০০ জন ধনী জিডিপির শতকরা ২৫ ভাগ সম্পদের মালিক। কোথাও না কোথাও ভয়ানক ভুল হচ্ছে। কোন ব্যক্তিবিশেষ  বা কোন প্রতিষ্ঠানকে  এই ধরনের সীমাহীন সম্পদ সঞ্চয় করার অনুমতি দেয়া উচিত না এমনকি আমার মতো লেখকদেরও  যাদের  বই বেস্টসেলিং হয়, যাদেরকে রয়ালিটি বর্ষন করা হয়। টাকাকেই আমাদের একমাত্র পুরস্কার ভাবার দরকার নেই। প্রতিষ্ঠানগুলি  যাদের এত বিশাল লাভ হচ্ছে তারা সব কিছু কিনতে পারে : গণমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয়, খনি, অস্ত্র কারখানা, বীমাকৃত হাসপাতাল, ওষুধ কোম্পানি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা উকিল, সাংবাদিক, নেতা, প্রকাশনা, টেলিভিশন স্টেশন, বই এর দোকান এমনকি সক্রিয় কর্মীদেরকেও কিনতে পারে এই ধরনের একচেটিয়া সুবিধা নেয়া,  ব্যবসায়  যৌথ মালিকানার চেষ্টা বন্ধ হতেই হবে।

স্বাস্থ এবং শিক্ষা, প্রাকৃতিক সম্পদ আর প্রয়োজনীয় কাঠামো এগুলিকে ব্যক্তি মালিকানার আওতায় নিয়ে আসা – এই পুরও ব্যপার টাই এমন ভাবে পাকানো আর বিপরীত যে, যা মানুষ বা পরিবেশের মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে আসত,  কিন্তু সরকারের ভাবার দরকার ছিল সেগুলি বন্ধ হওয়া উচিত। ব্যক্তিবিশেষ ও প্রতিষ্ঠানের এই অবাধ সম্পদ সঞ্চয় করা বন্ধ হওয়া উচিত। ধনী ব্যক্তিদের সন্তানদের উত্তরাধিকার হওয়া বন্ধ হওয়া উচিত। বেদখল করা সম্পত্তি তাদের ফিরিয়ে দেয়া উচিত ও পুনর্বন্টন করা উচিত।

অন্যরকম চিন্তাধারাটা কেমন হতে পারত ?

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, তিনি শহরে জনসংখ্যার ৭০% চান, যার অর্থ প্রায় ৫০০ মিলিয়ন লোককে নিজের মাটি থেকে সরিয়ে ফেলা। এটা ভারতে সামরিক শাসন না আসা অবধি সম্ভব না। কিন্তু মূল ভারতের বনে এবং আরো প্রান্তিক এলাকায় বিশাল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। কোটি কোটি মানুষকে খনিজ প্রতিষ্ঠান, বাঁধ, পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠান দ্বারা উচ্ছেদ করা হয়েছে যার কারণে এই বিশাল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তারা সেই মানুষ নন যারা ভোক্তার সংস্কৃতির অধীন, পশ্চিমা সভ্যতা ও উন্নতির ধারনার মধ্যে আছেন। তারা তাদের ভূমি ও জীবিকার জন্য লড়াই করছেন, লুণ্ঠিত হওয়া প্রত্যাখান করছেন যাতে যে কেউ যে কোন জায়গায় তাদের জীবনের মূল্যে উন্নতি করতে পারে।

ভারতের কোটি কোটি আভ্যন্তরীন ছিন্নমূল মানুষ আছেন। আর এখন তারা বিপদসীমার মধ্যে থেকে ফিরতি লড়াই লড়ছেন। হাজারে হাজারে নিহত ও বন্দী হচ্ছেন। তাদের যুদ্ধটা চৈতন্যের যুদ্ধ, সভ্যতাকে পুনর্বার সংজ্ঞায়িত করার যুদ্ধ, আনন্দের অর্থ খোঁজার যুদ্ধ, পূর্ণতার অর্থ খোঁজার যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধ বিশ্বকে দেখাতে চায় কোনো এক পর্যায়ে যেহেতু  পাহাড়ের খনিজ পদার্থ নিয়ে নেয়া হচ্ছে, আমরা একটা সংকটকালের মুখোমুখি হচ্ছি, যেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব না। যারা প্রথমেই এই সংকট তৈরী করেছিল তাদের মধ্যে কেউ সমাধান নিয়ে আসেনি।

এই কারণেই  যারা অন্যরকম চিন্তাধারা নিয়ে আসছে তাদের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে : চিন্তাধারা যা পুঁজিবাদের বাইরের এবং সাম্যবাদের ও বাইরের। আমাদেরকে দ্রুত স্বীকার করতেই হবে যে সেই মানুষগুলি কোটি কোটি আদিবাসীদের মতো তাদের ভূমি দখল ঠেকাতে ও তাদের পরিবেশের ধ্বংস ঠেকাতে যুদ্ধ করছে – যারা এখনো জানে সহনীয়ভাবে বাঁচার গোপনসূত্র স্মৃতিরোমন্থন নয়, ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক।

যুক্তরাষ্ট্রে, যেহেতু আমি নিশ্চিত আপনি জানেন রাজনৈতিক বক্তৃতা মধ্যবিত্তদের নিয়েই ব্যতিব্যস্ত, কিন্তু অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলন এক দশকে দরিদ্র ও গৃহহীন মানুষকে প্রথমবারের মতো  দৃশ্যমান করেছে জনতারভাষায়। এ ব্যপারে মন্তব্য করতে পারেন?

ভারতে যা দেখেন এখানে তার অনেক বিপরীত। ভারতে, দারিদ্রের ব্যাপ্তি অনেক যা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এটা মানুষকে আঘাত করতে পারে কিন্তু এটা রাস্তা, শহর, পার্ক, রেলওয়ে স্টেশন প্লাটফর্মে মানুষের বন্যা ঠেকাতে পারেনি। আর এখানে গরিব দেখাই যায় না, কারণ নিশ্চয়ই সাফল্যের এই রূপকল্প যা বিশ্বের সামনে এসেছে তাতে দারিদ্র দেখানো উচিত না, এটার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের অবস্থা দেখানো উচিত না।  কিন্তু আমার মনে হয় একটা সময় আসবে যখন এই আন্দোলন কোন ভাবে ক্রোধ এর থেকেও বেশি কিছু তৈরী করবে।

লেখক হিশেবে দখলকে আপনি কীভাবে বলবেন, যেটা এখন কোনোভাবে ইতিবাচক শর্ত হিশেবে সংশোধিত হয়েছে অথচ রাজনৈতিক ভাষায় সব সময় এটা অন্যতম জঘন্য শর্ত ?

লেখক হিশেবে আমি অনেকবার বলেছি অন্য অনেক কিছুর মাঝে যা আমাদের সংশোধন করতে হবে, বিলিওনারদের কুৎসিত সম্পদকে ছাড় দিয়ে, তা হলো ভাষা। তারা যখন গণতন্ত্র অথবা স্বাধীনতার কথা বলে  তখন তা বলতে  আসলে যা বোঝায় তার থেকে একদম উলটো বোঝানোর ক্ষেত্রে ভাষা বিস্তার লাভ করেচ্ছে। কাজেই আমার মনে হয় এর মাথায় দখল শব্দটা ঘুরিয়ে দেয়াই ভাল হবে, যদিও আমি বলব এটা করতে আরো কাজের দরকার আমাদের বলা উচিত ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ কিন্তু ইরাক না,’ ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ কিন্তু আফগানিস্তান না” ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ কিন্তু প্যালেস্টাইন না।’ এই দুইটাকে একসঙ্গে রাখতে হবে। তা না হলে মানুষ সংকেত পড়তে পারবে না।

ঔপন্যাসিক হিশেবে আপনি অনেক অনুপ্রেরনামূলক আর চরিত্র কীভাবে বাস্তবকে সংজ্ঞায়িত করে তা লিখেছেন। সারা দেশজুড়ে অনেক দখলদার যাদের সঙ্গে কথা বলেছি মনে হচ্ছিল তারা ওবামাকে নিয়ে তাদের ইচ্ছার মীমাংসা করতে ব্যর্থ সঙ্গে এটাও যে ওবামা কিসের প্রতিনিধিত্ব করে। আমি যখন তাদের সঙ্গে ওবামার রেকর্ড নিয়ে কথা বলেছি তারা বলে “ ওহ তার হাত বাঁধা, প্রজাতন্ত্রীরা দায়ী, এটা তার দোষ না”। আপনার কি মনে হয় তারা এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় কেন, এমনকি দখল করতে গিয়েও?

এমন কি ভারতেও, আমাদের একই সমস্যা। আমাদের রাজনৈতিক দলের বিভাগ আছে যা খুব জঘন্য আর খোলামেলাভাবে নীতিহীন, যা ভারতীয় জনতা পার্টি, তারপর আমাদের আছে কংগ্রেস পার্টি, যা খুব বাজে কাজগুলি করে, কিন্তু করে রাতের মধ্যে। আর মানুষ অনুভব করে তাদের কাছে একমাত্র বাছবার সুযোগ যা আছে তা হল এইটা নয়ত ওইটা। আর আমার পয়েন্ট হল তুমি যাদের জন্যই ভোট কর তার রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্য থেকে সব অক্সিজেন শুষে নিতেই হবে তা না। এটা শুধুই কৃত্রিম নাট্যমঞ্চ, যেটা একভাবে রাগের অন্তর্ভুক্ত হিশেবে সাজানো হয়েছে আর এটা বোঝানোর জন্য যে এগুলিই সেসব যা নিয়ে তোমার চিন্তা করা উচিত আর কথা বলা উচিত যখন আসলে তুমি দুই ধরনের ওয়াশিং পাওডারের মধ্যে আটকা পরেছ যাদের মালিক এক।

গণতন্ত্র বলতে এখন আর তা বোঝায় না যা বোঝানো হতো। এটাকে কর্মশালায় ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। এর প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্তঃসারশূন্য, আর এটা প্রতিষ্ঠানের মুক্তবাজারের চালক হিশেবে ফিরে এসেছে। প্রতিষ্ঠানের জন্য আর প্রতিষ্ঠান দ্বারা। এমনকি আমরা যদি ভোট দেইও আমাদের উচিত হবে আমাদের পছন্দের প্রতি কম সময় দেয়া ও বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্যম কম খরচ করা আর কি হয় তার দিকে দৃষ্টি দেয়া।

তো, এটা কি চিন্তার ব্যর্থতা?

এটা খুব প্রসারিত জালে হেটে যাওয়া। কিন্তু এটা সব জায়গায় হয় আর এটা হওয়া অব্যাহত থাকবে। এমনকি আমিও জানি, যে আমি যদি ভারতে ফিরে যাই আর যদি কাল বিজেপি ক্ষমতায় আসে ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেক অসুবিধায় পড়বো, যতটা কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকতে পড়ছি। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিকভাবে যা হচ্ছে তার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, কারণ তারা পুরোপুরি জোটবদ্ধ সব সময়। কাজেই আমি আমার তিনমিনিট ও নষ্ট করতে রাজী না, যদি আমাকে কথা বলতেই হয়, আর জানতে হয় জনগন একে ভোট দেবে না তাকে।

একটা প্রশ্ন, যা অনেকেই করে, আপনার পরের উপন্যাস কবে বের হচ্ছে?

আমার কাছে এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই… আমি সত্যি জানি না। সাহিত্য হলো খুব রহস্যময়, অবয়বহীন ও কোমল। আর এখানে আমাদের মাথায় শিরোস্ত্রাণ চারিদিকে যন্ত্রের তার।

তোঔপন্যাসিক হিশেবে এটাই আপনার অনুপ্রেরণা, এই আন্দোলন?

হ্যাঁ, এটা আমাকে সাচ্ছন্দের অনুভূতি দেয়, এভাবেই বলি।  আমি যা করেছি তার জন্য নানাভাবে প্রশংসিত হয়েছি বলে মনে করি, আরো শত লোকের মতো, এমনকি তখনো যখন এটা নিরর্থক।

 

 

 

কৃতজ্ঞতা: কথাবলি

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>