অলীক
স্মৃতির চারাটি আসলে হারানো বকুল।
ক্ষত থেকে একটু পুরোনো রোদ
ও কুড়ানো অভ্যেস দিয়ে গড়ে তুলেছি।
নিভৃত আলপথে যে রাতটি ঘুমিয়ে থাকে;
যে রাতটি দরজায় মেঘের ছায়া ফেলে;
সে রাতে একটি অদৃশ্য স্বপ্নভূমি।
জলে পাঁজরের দাগে
গড়ে উঠেছে এই বালির স্তর।
পড়ন্ত বিকেলের সূর্যে, আকাশ থেকে হারিয়ে যায় দূরবীন।
আরও একটি রাত প্রসবের অপেক্ষায়।
আয়নার পেছন থেকে
একটু একটু করে ইতিহাস খুলে
আবিষ্কার করি অবিরাম যাত্রার পথ।
অলীক মানুষের পদচারণ
ও পুরোনো বারান্দার ছায়া।
পরিত্যক্ত বাসায় ইতিহাস লুকিয়ে
যে পাখিরা হারিয়ে গেছে;
ছবির মানুষেরা এখনও তাদের খুঁজে।
বিছিয়ে দিতে চায়
মাটির তাপমাত্রায় নিজের শরীর।
অনন্ত বাঁশির ভেতর খুজে অগনিত গুপ্ত সুর।
শিরোনামহীন
১.
আলোখান নিভে গেছে কাছে আসে ধর্ষিতা লণ্ঠন
ঘুঘুর প্রসূতি ঘরে পূর্ণিমা ডুবেছে অগনন
কে কারে চেনায় বলো পোচ মারে গলার শিরায়
বারবার মৃত্যু জেনে ডলফিন উঠেছে চরায়।
কি করে বাঁচাই বলো হাত জুড়ে অজস্র পাথর
সাগর ভাসিয়ে দিয়ে ডুবে যাবে সংক্ষিপ্ত সফর।
কঠিন আমাকে চেনা চোরাবালি আমার ভেতর
একবার যাকে মারি বেঁচে থাকে অনন্ত বছর।
২.
অক্ষরেখা পেরিয়ে ঘর খোঁজে পাখি
কৌণিক বৃত্তের গুহাঘর পিছে
কিনারায় ডুবে যায় জলেদের সিঁড়ি
অনেক অন্ধকার বাকলের নীচে।
জাহাজ সাম্পান ও আলোক বিন্দু
মাস্তুল ঝড় আর প্রাচীন নাবিক
কোনদিকে দিগন্ত ঈশানের কোণ
অদৃশ্যে ডুবে গেছে স্থির পাললিক।
অকুণ্ঠ পাখনায় সারসের ওম
কোথায় হদিশ নেই জ্বলে যায় দ্বীপ
পৃথিবীতে কাঁচঘেরা জলীয় শ্বাপদ
আজও বিশ্বাস করে মাছেদের ছিপ।
৩.
নেভানো গ্রহের মতো ছুঁয়ে আছি।
ছুঁয়ে আছি গভীর অলিন্দ।
কর্কট ঘুমিয়ে গেলে শেষ চাঁদ ডুবে গেছে কবে।
বিষুব রেখার পাশে দিঘল বাঁকের এক নদী
আমার দেনার ঘরে আজও ঘুরে নীল সরীসৃপ।
৪.
রোদ্দুরে অনেক কান্না।
আলোর স্থিমিত ডিঙি বর্ষা খুঁজে মরে।
মুখ গুঁজে টেনে আনে পাখির গর্ভের তাপ।
ছায়া ও কথক।
শুধু প্রতিচ্ছবি নয় দরোজায় পূর্ণিমার খেলা।
আমাকে দেখিয়ে দেয় প্রকাণ্ড বিদায়।
স্বর্গের পথের পাশে নিঃস্ব কুকুরের মৃতদেহ।
একাকী দাঁড়িয়ে থাকে হাটুভাঙা সেতু।
দাউদাউ নেশা তুলে চরায় ডুবেছে যে আগুন।
বালক ব্রহ্মাণ্ড খুলো
দেখো, কত রক্তারক্তি বিন্দুর ভেতর।
তোমাকে শিখিয়ে দেবো
কতটুকু ভোর লিখলে দেখা যাবে আদ্যপান্ত সূর্য।
৫.
ডুবিয়ে দিয়েছি আস্তো এক নদী।
পাখির ঠোঁটের পরিভাষা।
ঠিকানায় দোয়েলের নাম।
পলক ঘুমিয়ে গেলে, অসম্পূর্ণ ছবি থেকে
একটি দিগন্ত আকাশ হয়ে উড়ে গেছে।
কেনো যে জানি না
অন্ধকারের শরীরে লেখি সূর্যপ্রপাতের গান।
পাথরের পিচ্ছিল শরীর থেকে
নিজেকে উদ্ধার করি।
মগ্ন হয়ে লেখি
অসংখ্য ধ্রুবতারার যজুর্বেদ পাঠ।
গলিত লাভার পথ।
নেভানো মোমের আলো।
তারকাঁটার মাথায়
হাতুড়ির আঘাতে আঘাতে সূর্য তুলে ফেলি।
তবুও
রামদাসী মল্লারে জীবন গেয়ে নেমে আসে অতীতের রাত।
অনিদ্রা বাজিয়ে দেখি কতটুকু ভোর
কোনখানে অসম্পূর্ণ গান রেখে উঠে গেছে ভীমসেন।

অধ্যাপক,কবি ও কথাসাহিত্যিক