আসমা অধরার গুচ্ছকবিতা

Reading Time: 4 minutes

১৪ মে কবি, গদ্যকার আসমা অধরার জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় জন্মতিথির শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


 

ভ্রমণ

অসীম আহ্লাদে করতলে চেয়ে দেখি এক ছায়াছবি,
সে এক আগুনের নাম, বাকীটা পোড়ন।
নৈঃশব্দের মধ্যে ডুবে গেলে আঙুল বলে ওঠে
এই সব অরণ্য বা দিন রাত্রি কতটা নিয়ন্ত্রিত।

ভোর হয়ে আসলে, জারুলের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি
রাধাচূড়া গাছের নীচে মাটি নেই, কেবল হলুদ!
অন্য ভাষার গানের মতো বাতাস শিষ কাটছে বাতাস
এই ভরপুর গরমকালে কান্নারত লালাবাই যেন, মিহিসুর।

ক্ষয় হতে হতে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ, কে মনে রাখে
তারপর জোছনা এলেই হিংসুকের মতো চেয়ে থাকা
উত্তর নেই কোনো, কেবল মলিন হতে হতে একদিন
চাঁদের ঘ্রাণেই মনে পড়ে যাওয়া সমুদ্র কে বলি-

এই দু’কূল ছাপানো যে নদী তার নাম রাখি জীবন,
অশেষ কৃতজ্ঞতা; আনন্দ বা ভেজা চোখের অভূতপূর্ব ভ্রমণ! 

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

চাঁদ নিশ্চুপ

আমি তো বলতেই পারতাম, পৃথিবীতে কোনদিন
তার মুখের মতো চাঁদ ওঠেনি একবার! অমন চোখে
মহাসাগর। অমন জলপথে হাঁটতে পারিনি কখনো।

আমি তো বলতেই পারতাম, দারুচিনির মতো সুঘ্রাণ
যে কথা কয় মূর্চ্ছনায়। লবঙ্গের বনের ভেতর পথ আর পথ
পর্বত, টিলা। অমন গভীর চূড়ায় পৌঁছুতে পারিনি কখনো।

আমি তো বলতেই পারতাম, কত নোঙ্গর ভীড় করে থাকে
আঙ্গুলে কী সিম্ফোনি! চওড়া কপাল জুড়ে হীরার কুঁচো ঘাম
যেন সহস্র নক্ষত্র। অমন জোছনা রাতে ঘুমোইনি কখনো।

আমিতো বলতেই পারতাম, এসব ভেবে ভেবেই চুপ করে থাকা
হাতের কাছে কাঁচি জমা রেখে সারাবাড়ীতে খোঁজ খোঁজ অনুযোগ! চুমুর মতো তুমুল জড়াজড়ি
করে থাকা কথারা বেঁচে যায়।

আমিতো বলতেই পারতাম; সে মানুষের মতো শুভ্র কাশফুল
একটিও দেখিনি সারাজীবন…

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

খুলি ফুল, ভুলের অবয়ব

কোল ও কপোলে যে জলছাপ, তাকে লুকিয়ে রাখে মুঠোকরে রাখা করতল। তারপর মনটাকে ছেলেবেলার কাগুজে নৌকোর মতন করে বানিয়ে দেই ফিঙের লেজ, এইসমস্ত তীব্র দুপুরের সোনারঙ অথচ আলোর মরিচীকা থেকে কেড়ে নিই সমস্ত ভুল। চেপে রাখা এ্যাশ কালারের শুন্যতা গুলোকে ছড়িয়ে দিতেই আদিগন্ত জুড়ে নীল হয়ে ওঠা আকাশ উঁকি দেয় বুকের ঘুলুঘুলিপথে।

জন্ম ও জন্মাতরের সখা হে!
জানো কি কেয়া পাতার নৌকোতে
ভাসিয়ে দেয়া মৃত নক্ষত্রের রঙ কেমন হয়?

ওই যে সরু গলিপথ ঠেলেঠুলে যে সন্ধ্যেটা এগিয়ে আসছে, তার ভাঁজগুলো জানে- দ্রাঘিমায় জোনাকিদের ওড়াউড়ি বন্ধ হয়ে গেলেই কোকিলেরা মরে যায়, জ্যোতিষ্কপুঞ্জ মুখ ঢেকে ফেলে কালো মসলিনে আর ক্ষয়িষ্ণু ক্ষতস্থানে ফুটতে থাকে ক্ষরণের পঙ্কজ। দিকচক্রবাল, হেসে ওঠো; হেসে ওঠো!

নিয়তির রাশিফল জুড়ে নিঃসঙ্গতাপ্রিয় ক্যান্সার হেসে ওঠে, এই সমস্ত তীব্র রোদ ও দুপুরবেলা জানে, লেবুফুলের সুঘ্রাণ জুড়ে হালকা বেগুনী রঙ কি প্রচণ্ড টানে অস্তিত্ব। তবুও ভায়োলেট মানেই দাগ ও দহন; তখন লজ্জাবনত হয়ে ব্রীড়াবতী ফোটনেরা মুখ লুকোয় কৃষ্ণচূড়োর লালে।

এসো নিক্কণ
এসো মেঘদূত
এসো স্নানধ্বনি
এসো ঘন হয়ে মোহন জল মূদ্রা…

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

প্রস্থানের সমূহ কারণ

খন্ড ও পরিপূর্ণ রোষবহ্নির সমূহ স্তবক

মন খারাপ আর অসহ্য দিনরাত

সহোদরের মতো হাত ধরে হাঁটে,
আধিক্লিষ্ট হয়ে পড়া চিত্তক্ষোভ নিয়ে বিনিদ্র
ঝুকে থাকি লওহে মাহফুজ বরাবর।

মধুমক্ষিকার শতচোখ নিয়ে ফেটে পড়ে আযাযিল; বারবার আটকে যাই ‘প’ বর্গের মাঝামাঝি এসে।

বিধাতা কি জানেন না কোন খবর রাখেন,
এই যে হ্যাংওভার জুড়ে থাকে,
জুড়ে রাখে,
জীবন থেকে মৃত্যু অব্ধি। তবু-
নিজস্ব মন, জল ও নাদ সমস্ত
হলুদ ও কালো মার্জারে লিপিবদ্ধ করে
রেখে দিই নিজেরই ভেতর সযত্নে;
সন্তাপ এবং দম্ভদুয়ারের আগল চেপে।
মার্জিত পথ ধরে ধীরে ধীরে চলে যায়…
আমার জোছনা ও পংক্তি সদৃশ শিল্পিত আগুন বিন্যাস।

ও মিনার,
ডাকো আযানের মতো সুললিত
ডাকো গোল ঠোটে মীনের মতো
ডাকো,
আয়
আয়।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

নৈর্ব্যক্তিক লাটিম

যা কিছু আলো ভেবে ভেবে আপ্লুত হয়েছিল স্বর তা বিচ্ছুরিত রশ্মি 

নয়,পিদিম না বা কোন নক্ষত্রও ছিল না। তাই, চাঁদ উঠলেই বলাযাবে 

পথজুড়ে ইত্যকার ধুলোর রঙ কি ছিলো। 

অথচ যে ধুলোগুলো রোজ চৌকাঠ ডিঙিয়ে পায়ের সাথে ঘরে আসে, 

তাদের গায়ে মিহি অথচ মিথ্যে ছাই রঙ। বিবর্ণ কলেবরের আগে সে 

পরিচিত হয়েছিল রুপোলীর সঙ্গে। সে জোছনা রাত… 

কেবল যামিনীই জানে বুঝি গোপন জটিল যতন, কিন্নরে বাজে 

রোদনের মতো কেটে কেটে যাওয়া সুর। তখনই বুঝি রক্তিম হয় 

আঁখি, রক্তাভ পোখরাজ পাখা মেলে উড়ে যায় মৌনবিতান। সেখানে 

লিখা ছিল যত চিৎকার, মৌন গজল, সানাইয়ের সুর; মোৎজার্ট, 

বিথোফেন সিম্ফোনি ও অন্ধ গায়কের গেয়ে ওঠা আধখানা গান। 

অথচ আলো অরুণাভ হলে কারো অন্ধকার হৃদয় ঘিরে ধরা 

জলপাথরে চকমকি ঘষে দেবার কেউ নেই বলে মৃত্যুমোহ ঘিরে ধরে। 

স্বপ্নে প্রকট হয় এক কফিন। সেই মেহগনি কফিন আপাদমস্তক 

উচ্চতা মেপে যাবার সময় বলে যায়, এসো এখানে, এখানেই

সুররিয়ালিজম। 

তখন থেকেই, রূহমহলের অভ্যন্তরে এক প্রোজ্জ্বল গোলক পুরে নিয়ে 

ছুটে যাচ্ছি জ্যোতির্ময় সমুদ্রের দিকে। 

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>