অসমিয়া অনুবাদ গল্প: বাবা একটা পুতুল কিনে দিবি । চন্দনা পাঠক

আজ ১৭ এপ্রিল অনুবাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক নন্দিতা ভট্টাচার্য’র শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
এক
বাবা, একটা পুতুল কিনে দিবি? রাঙ্গানদীর পারে হাট বসেছে ইটখোলার পাশে। সোনা-দানা চুড়ি বালা মনি-মুক্তো কিছুই চাইনা আমি আমাকে একটা পুতুল দে, তিন টাকাতেই পাবি।
— মামনি আমার! মৌজাদারের ঘরে গতর খেটে ত্রিশ টাকা পেলাম। ডালের দাম পঞ্চাশ টাকা কিলো। রেশনের চাল আনলাম। নুন খার দিয়ে ভাত খাব আজ। পুতুলের সাথে পরে খেলতে পারবি।
দুই
— বাবা, একটা পুতুল কিনে দিবি ? মৌজাদারের মেয়ের মতো নয় – মোটাসোটা ভালুকের ছানা। হরেক মাল থেকেই কিনে দিতে পারবি। দশ টাকাতেই পাবি।
— মামনি, মামনি! তোর মায়ের চাদর দেখ ফেসে গেছে। তোর জামাটিরও সেলাই খুলে গেছে। মৌজাদারের গোলামি করে টাকা কটা পেলে পুতুল নয়, জামার সঙ্গে চাদর কিনতে হবে।
তিন
— বাবা, পুতুল কিনে দিবি? বলেন কাই-র দোকানে পাবি—নীল চোখের সোনালী চুল।
— মা। মাগো! এখন তুই বড় হয়েছিস। পুতুলের বিয়ে কি করে দিবি? বাঁশের খুঁটির ভাড়ার ভেঙ্গে মেখলা-চাদর একজোড়া কিনে দেব। লাল রঙের পাথর বসানো আংটি ও মৌজাদারের মেয়ের মতো নখরঞ্জনী – এটা ওটা!
চার
— ও বাবা, একটি পুতুল কিনে দিবি? মৌজাদারের মেয়ের মতো নখরঞ্জনী দরকার নেই — বাইরের বেড়ায় যে মেহেন্দির ঝাড় আছে সেই মেহেন্দি পাতা বেটে হাতে লাগাব নাহয় আমি।
— মা, ও আইজনি! দৈর্ঘে – প্রস্থ্যে তো মায়ের সমান হয়েছিস। পুতুল নিয়ে কি করে খেলবি? দু’দিন দিন পর বিদায় করব। তারপর তো অন্য বাড়িতে গিয়ে তো হাড়ি কড়া ওথলাবি !
পাঁচ
— বাবা, ও বাবা! একটি পুতুল কিনে দিবিনা? আমার জন্যে নয় আমার মেয়ের জন্যে। বাচ্চাটা বড় জ্বালাতন করে। বাপকে বললেও ক্ষেপে ওঠে। হাল – লাঙ্গল চালিয়ে যা জোটে তাতে দু’ মুঠো ভাত ই মুখে তুলতে পারিনা …।
(চন্দনা পাঠক আসামের শূন্য দশকের বিখ্যাত লেখক )