| 28 মার্চ 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত গল্প ধারাবাহিক

অসমিয়া উপন্যাস: গোঁসাই মা (পর্ব-১) । নিরুপমা বরগোহাঞি

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, Assamese novel Gosain maa Nirupama Borgohain1‘অভিযাত্রী’ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি বিজেতা নিরুপমা বরগোহাঞি ১৯৩২ সনে গুয়াহাটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন।১৯৫৪ সনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ এবং ১৯৬৫ সনে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসমিয়া সাহিত্যে এম এ পাশ করেন। লেখিকার প্রকাশিত বইগুলির মধ্যে ‘সেই নদী নিরবধি’, ‘এজন বুড়া মানুষ’, ‘এপারর ঘর সিপারর ঘর’ সহ মোট একুশটি উপন্যাস এবং ‘সতী’, ‘নিরুপমা বরগোহাঞির শ্রেষ্ঠ গল্প’ইত্যাদি দশটি গল্প সংকলন রয়েছে।


(প্রথম খণ্ড)

কিন্তু গত কিছুদিন থেকে পরিস্থিতি আলাদা রূপ নিয়েছে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বহন করে চলা সংসারের আগের গতানুগতিক হালকা বোঝাটা এখন শ্রীমতী গোস্বামীর কাছে দুর্বিষহ বোঝায় পরিণত হয়েছে, এখন যেন তিনি একা বহন করতে পারছেন না, কারণ এখন রাতের রান্না করার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপু এবং রুণীর তর্কযুদ্ধ তার মনে বহন করে আনা বিরাট এক মানসিক অশান্তির বোঝা। আজ কিছুদিন থেকে এই ভাইবোন দুটি বুনো মোষের মতো লড়াই করে চলেছে- অবশ্য হাতাহাতি বা চুলোচুলির পর্যায়ে যায়নি-যে হাতাহাতি চুলোচুলি লেগেছিল তিন বছর ব্যবধানের পরস্পরের প্রতি একান্ত  অনুরক্ত ভাই বোনের শৈশবে । সে যাই হোক না কেন, এখন অপু আর রুণীর মায়ের মুশকিল হল এই যে বাবা বাড়িতে থাকার সময় ওরা  যুদ্ধ শুরু করে না, করে বাবা বেরিয়ে যাওয়া এবং ওরা বাড়িতে প্রবেশ করার পরে । দুজনেই কলেজ থেকেই হোক বা অন্য জায়গায় ঘোরাঘুরির পরেই হোক বাড়িতে ঢোকার পরই শুরু হয়ে যায় সেই ঝগড়াঝাটি। শ্রীমতী গোস্বামী তাঁর শঙ্কা এবং দুশ্চিন্তার অংশীদার গোস্বামীকে কোনোমতেই করতে পারছেন না কারণ তার অংশীদার হতে গেলে সন্ধ্যাবেলা পুত্র-কন্যার পাহারাদার হওয়া মানেই নিজের সান্ধ্য বৈঠকের নেশা পরিত্যাগ করা। সেই জন্য গোস্বামী সমস্যাটা হালকা করে দিয়ে স্ত্রী কে কেবল এটাই বুঝিয়েছিল – তুমি মিছামিছি ভেবে মরছ লীলা, এখন আর তোমার আর আমার জমানা নেই যে ছেলেমেয়েরা কলেজে যাওয়ার পরেও মায়ের আঁচলের নিচে বা বাবার লাল চোখের অধীন করে রাখবে। ওরা এখন স্বাধীন, তাছাড়া আমাদের সময় থেকে এখনকার ছেলেমেয়েরা রাজনীতির ক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন, ওরা দেশের কথা নিয়ে মাথা ঘামাবেই, রাজনীতির মতামত বা মতভেদকে কেন্দ্র করে তর্ক করবেই। তুমি পুরোনো দিনের একজন মা ছাড়া আর কিছুই নও– তাই আদার বেপারি জাহাজের খবর রাখার বা তা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই, অপু রুণী তর্ক করে যদি তর্ক করতে দাও– সব সময় তো করে না, এখন দেশের যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছেকোনো ছেলে মেয়ে চুপচাপ থেকে পড়াশুনা করে যেতে পারে না। কিন্তু সব সময় এরকম অবস্থা থাকবে না, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে দেখবে তোমার ছেলে মেয়ে পুনরায় আগের মতো শান্তভাবে পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসবে।’


আরো পড়ুন: গোঁসাই মা (পর্ব-১)


এভাবেই অনেকক্ষণ বুঝিয়ে নিজের দায়িত্ব সম্পন্ন করে গোস্বামী স্ত্রীর দুশ্চিন্তাকে লঘু করার চেষ্টা করেছিল বা তার অংশীদার হতে পাকে প্রকারান্তরে অস্বীকার করেছিল। আর তখন অসহায় শ্রীমতী গোস্বামী ছেলে-মেয়ের পড়ার ঘরের সংলগ্ন রান্নাঘরে ভাত রেঁধে থাকা অবস্থায় শুনেছিল অপু রুণীর তীক্ষ্ণ কন্ঠের তর্কাতর্কি, এই তর্কের জোর এতই বেশি ছিল যে অর্থ গুলি সম্পূর্ণ হৃদয়াঙ্গম না হওয়া সত্ত্বেও সেই তর্কাতর্কির শব্দগুলি তার কানে ঠাস ঠাস করে আঘাত করছিল এবং অর্ধেক বোঝা অর্ধেক না বোঝা একটি সমস্যার দ্বিপাক্ষিক মতামতের মাঝখানে পড়ে বকবক করে তার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। শ্রীমতী গোস্বামী রুণী এবং অপুর যে সমস্ত উষ্মা ভরা কথোপকথন গত কয়েকদিন ধরে শুনে আসছেন তাকে  সাজিয়ে-গুছিয়ে একটি নাটকের সংলাপের মতো উপস্থাপন করলে নিম্নলিখিত রূপ পরিগ্রহ করবেঃ

অপু―ওইসর্বভারতীয়দলেরনেত্রীরুণী , সংসদীয় গণতন্ত্রে বিপ্লব আনতে চাওয়া তোরা সর্বহারা অর্থাৎ বিদেশি বহিরাগতের দরদী বিপ্লবীরা চালাকি করে কত বিদেশির নাম ভোটার লিস্টে ঢোকালি?

রুণী- তোরা যতগুলি দেশীয় লোকের নাম ভোটার লিস্ট থেকে কেটে দিলি তারচেয়ে কিছু কমই হবে নাকি?

অপু– খুব কায়দা করে কথা বলতে শিখেছিস তো। এভাবে কথার জালেই তোরা মানুষকে ভুলিয়ে নিজের দলীয় স্বার্থের জন্য অসমকে বিক্রি করতে চলেছিস , দেশদ্রোহীর দল কোথাকার। কিন্তু জেনে রাখবি হাজার বোকা হলেও সমস্ত মানুষকে সবসময় ঠকানো যায় না। সহজ-সরল অসমিয়ারা জেগে উঠেছে। আজ অসম এতদিনে কেন্দ্রীয় শোষণের বিরুদ্ধে সজাগ হয়ে উঠেছে। সব সময় স্বাধীন হয়ে থাকা অসম কে ইয়াণ্ডাবুর সন্ধির বলে জোর করে ভারতের সঙ্গে সামিল করার পর থেকেই শস্য-শ্যামলা অসমকে  উপনিবেশে পরিণত করে কেন্দ্র কেবল শোষণই  করে এসেছে । আমাদের আকাশ স্পর্শ করা গাছপালা মাটির অল্প উপরে বিস্তৃত হয়ে থাকা চা গাছের বাগিচা, মাটির নিচে থাকা তেল– এই সমস্ত কিছু সম্পদকে আমাদের থেকে শোষণ করে নিয়ে কেন্দ্র অসম জননীকে একেবারে নিঃস্ব করে তুলেছে। বিনিময়ে  ভিখারিকে অবহেলা করুণা করে এক মুঠো চাল দেওয়ার মতো একটা পুতুলের মতো শোধনাগার দিয়েছে — সেটাও আন্দোলন করে আদায় করতে হয়েছে। আজ পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইনটাই পেলাম না– টেলিভিশন, নানা ধরনের উদ্যোগ তো দূরের কথা। ১৯৭৩ সন থেকে১৯৭৮ সনের ভেতরে রেল কর্তৃপক্ষ সমগ্র ভারতে রেলপথের উন্নয়নের জন্য ২৪০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। সামান্য অংশ যদি অসমের জন্য খরচ করা হতো তাহলে আজ ব্রডগেজ রেলপথ গুয়াহাটি  কেন, ডিব্রুগড় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হত না কি?

কোন ছেলে মেয়ে কোন ছেলে মেয়ে কোন ছেলে মেয় কোন ছেলে মেয়ে কোন ছেলে মেয়ে

কোন ছেলে মেয়ে

তুমি মিছা মিছি ভেবে মকশো লীলা

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত