| 29 মার্চ 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত গল্প ধারাবাহিক

অসমিয়া উপন্যাস: গোঁসাই মা (পর্ব-৩) । নিরুপমা বরগোহাঞি

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, Assamese novel Gosain maa Nirupama Borgohain1‘অভিযাত্রী’ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি বিজেতা নিরুপমা বরগোহাঞি ১৯৩২ সনে গুয়াহাটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন।১৯৫৪ সনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ এবং ১৯৬৫ সনে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসমিয়া সাহিত্যে এম এ পাশ করেন। লেখিকার প্রকাশিত বইগুলির মধ্যে ‘সেই নদী নিরবধি’, ‘এজন বুড়া মানুষ’, ‘এপারর ঘর সিপারর ঘর’ সহ মোট একুশটি উপন্যাস এবং ‘সতী’, ‘নিরুপমা বরগোহাঞির শ্রেষ্ঠ গল্প’ইত্যাদি দশটি গল্প সংকলন রয়েছে।


প্রথম খণ্ড

(তিন)

রুণীঃ একেবারে সত্যি কথা। কিন্তু আমাদেরকে এই শোষণ কারা করছে। বাংলাদেশি এবং নেপালি  বহিরাগতরা? নাকি ভোট যুদ্ধে জেতার জন্য টাকার জন্য নির্ভর করে থাকা সরকারের আসল মালিক বিরাট পুঁজিপতি শ্ৰেণি– যে পুঁজিপতি অসমেও ভালো করে ঘাটি গেড়ে  দরিদ্র জনসাধারণকে মূল্যবৃদ্ধি ,ভেজাল মেশানো এবং নিচুমানের পণ‍্যের দ্বারা ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে, অসমের সম্পদ শুষে নিয়ে একেবারে দরিদ্র করে তুলেছে।

অপুঃ এভাবে কথা বলে তোরা আসল সমস্যা থেকে সরে যেতে চাস। নেপালিরা বন জঙ্গল কেটে নষ্ট করেছে, তার ফলে আমাদের মাটিতে  যে  অনুপ্রবেশ করেছে তা নয়, এভাবে জঙ্গল কেটে বন্যা বৃদ্ধি করেছে, ইকোলজির সমস্যার সৃষ্টি করেছে। আবার যে সমস্ত বাংলাদেশী পমুয়াকে আমরা ন-অসমিয়া বলে বুকে জড়িয়ে ধরলাম, ওরা জাতি ভাইকে লুকিয়ে এনে বিভিন্ন প্রান্তে আশ্রয় দিয়ে অনাবাদি মাটি পঙ্গপালের মত আক্রমণ করে আমাদের গ্রামের কোণে কোণে   থেকে বুকে কামড়াচ্ছে। এত কিছুর পরেও আমরা অসমিয়ারা  এই বহিরাগতদের আমাদের রাজ্য থেকে তাড়ানোর জন্য আন্দোলন করব না?

রুণীঃ বহিরাগতদের নিশ্চয় তাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু বলতো, বহিষ্কার করার পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবে রূপায়িত করবি? সত্যিই যদি তেরো লাখ বিদেশির নাম ভোটার লিস্টে ঢুকে  গিয়ে থাকে, তা কীভাবে কত ট্রিবিউনাল পেতে সনাক্তকরণ করবি আর বহিস্কার করবি।খুব  ক্ষিপ্র আর কার্যক্ষম ট্রিবিউনালগুলিও কি বছরে দশ হাজার  মানুষের চেয়ে বেশি বিদেশিকে আইন সঙ্গত ভাবে বহিষ্কার করতে পারবে? আবার, অত্যধিক তৎপরতা দেখাতে গেলেও কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটবেই উলুর সঙ্গে বগুড়ি  পোড়া যাবেই, বিদেশির সঙ্গে দেশিয় লোকদেরও সমস্যার সৃষ্টি হবে।

অপুঃ কিছু তথাকথিত দেশিয় লোকদের সমস্যা হবেই এবং এটাই আমরা চাই। কারণ তাহলে ওদের কৃতকর্মের কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত  হবে। অসমে আজ এত বছর ধরে বসবাস করে যে সমস্ত অনা- অসমিয়া অসমের ভাষা সংস্কৃতি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রেখে আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি ইতিহাস কিছুই জানে না বা জানতে চায় না, ওদের ছেড়ে আসা রাজ্যকেই মাতৃভূমি বলে ধরে নিয়ে তার প্রতি দৃঢ়  আনুগত্য নিয়ে থাকে, এই সমস্ত অসমিয়ার শত্রুদের শাস্তি পেতেই হবে।


আরো পড়ুন: অসমিয়া উপন্যাস: গোঁসাই মা (পর্ব-২) । নিরুপমা বরগোহাঞি


রুণীঃ সত্যি কথা দাদা। অসমের এই অধিবাসীদেরও জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালের পরিবারের মতোই বিনাদ্বিধায় অসমের ভাষা সংস্কৃতি গ্রহণ করতে হবে। সমস্ত দেশের সমস্ত প্রব্রজন কারীর থেকেই এই আনুগত্য আশা করা হয়। এই আনুগত্যহীনতাই উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে। কিন্তু তা বলে ধর ধর মার মার করলেও তো সমস্যার সমাধান হবে না । সহনশীলতার সঙ্গে কাজ না করলে হিতে বিপরীত হওয়ার ভয় থাকে। এই দেশিরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিদেশি বহিরাগতদের  সঙ্গে  হাত মিলিয়ে বহিষ্কারের  কাজে বাধা সৃষ্টি করার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যে তখন নানা ধরনের সন্ত্রাসবাদী, সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপের সূচনা হতে পারে।

অপুঃ বলছি তো, এই কথার চতুরালিতেই  তোরা প্রকৃত সমস্যাকে থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজের দলীয় স্বার্থের জন্য অসমকে বিদেশির হাতে তুলে দিতে চলেছিস। আজ অসমের জাতীয় স্বার্থ এতটাই বিপন্ন হয়ে পড়েছে, বিদেশি অসমকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে, অসমের অর্থনীতি, অসমের ভাষা সংস্কৃতি আজ বিদেশির এই অবাধ অনুপ্রবেশের স্রোতে ভেসে যেতে চলেছে – তারপরেও তোরা অন্ধ চেলার মতো বাঙালি সর্বভারতীয় দলটির লেজ ধরে রয়েছিস। দেশদ্রোহী কোথাকার। তোরাই আজকের যুগের নতুন বদন। আমরা অসমের জাগ্রত নতুন পুরুষের দল বহিরাগতের সঙ্গে তোদের ও উচ্ছেদ করে অসম থেকে বাইরে বের করে রেখে আসব।

রুণীঃ হাঃ হাঃ হাঃ ‘Patriotism is the last resort of the scoundrel’ ডক্টর জনসনই বোধহয় কথাটা বলেছিলেন। ঐ দেশ প্রেমিক, আমাকে একথা বিশ্বাস করানোর চেষ্টা কর যে তোরা অসমের ভাষা সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিস। তার জন্য কোনো কংক্রিট কাজ করেছিস। যে ভাষা শক্তিশালী হয়, যে ভাষার সাহিত্য ফলে-ফুলে শাখা-প্রশাখায় বিস্তার লাভ করে – কার সাধ্য আছে শত্রু গলা চেপে ধরে তার অকাল মৃত্যু সাধন করার। ইংরেজি ভাষাটা পৃথিবীর ছোট্ট একটি দ্বীপের অধিবাসী কয়েকজনের ভাষা ছিল না কি? তাহলে সেই ভাষা কীভাবে পৃথিবী জয় করতে পারল? তোরা ভাষা সংস্কৃতির নামে যারা কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করিস তাদের কতজন অসমিয়া বইপত্র বা ম্যাগাজিন কিনে থাকিস বা পড়িস তার একটা পরিসংখ্যা বের করে আমাকে দিস তো। ভাষা সংস্কৃতি প্রেম! কেবল মুখে ভালোবাসি ভালোবাসি বললে হয় না কাজেও তার পরিচয় দিতে হয়। আজকের এই দেশপ্রেমিকদের শতকরা একজন ও যদি অসমিয়া বইপত্র বা ম্যাগাজিন কিনে পড়ত, ছেলেমেয়েদের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার সময় ইংরেজি বইপত্রের সঙ্গে দুই একটি অসমিয়া বই পত্র পড়ানোর ব্যবস্থা করতো তাহলে আজ অসমিয়া ভাষা সাহিত্যের এই দুর্দশা হতো না। আরেকটি সমস্যা হল অসমের অর্থনৈতিক দুরবস্থা। এই অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য নিজের দেশ থেকে ক্ষুধার জ্বালায় বা অন্যান্য কারণে প্রব্রজন করা দুঃখী বহিরাগতরা যতটা দায়ী তার চেয়ে শতগুণে বেশি দায়ী ভারতীয়রাই, কিছু অনা- অসমিয়া ব্যবসায়ী শোষণকারীর দল, সে কথা তোরা চোখ থেকেও দেখতে চাস না।

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত