| 19 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত গল্প ধারাবাহিক

অসমিয়া উপন্যাস: গোঁসাই মা (পর্ব-৭) । নিরুপমা বরগোহাঞি

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, Assamese novel Gosain maa Nirupama Borgohain1‘অভিযাত্রী’ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি বিজেতা নিরুপমা বরগোহাঞি ১৯৩২ সনে গুয়াহাটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন।১৯৫৪ সনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ এবং ১৯৬৫ সনে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসমিয়া সাহিত্যে এম এ পাশ করেন। লেখিকার প্রকাশিত বইগুলির মধ্যে ‘সেই নদী নিরবধি’, ‘এজন বুড়া মানুষ’, ‘এপারর ঘর সিপারর ঘর’ সহ মোট একুশটি উপন্যাস এবং ‘সতী’, ‘নিরুপমা বরগোহাঞির শ্রেষ্ঠ গল্প’ইত্যাদি দশটি গল্প সংকলন রয়েছে।


চা খেয়ে উঠে রজব আলী কাপ- প্লেট ধোয়ার জন্য উঠতে যেতেই  শ্রীমতী গোস্বামী বাধা দিলেন, তখন রজব আলী  বলে উঠেছিল – আমরা মুসলমান। আমাদের ঝুটা কে  ধোবেগোঁসাই মা? উত্তরে তিনি যখন বলেছিলেন যে তাঁর সংসারে মানুষ-মানুষই, হিন্দু মুসলমান বলে তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই– তখন অভিভূত রজব আলী কিছু বলার আগেই হলধর বিজয় গর্বে তার দিকে একটা তির্যক দৃষ্টি হেনেছিল এবং রজবআলীকে এক আক্রমণ সূচক ভঙ্গিতে বলেছিল–’ শোন, তোকে আমি বলেছিলাম না আমাদের গোঁসাই মা সত্যিই দেবী গোঁসাই? দেবীর কাছে সমস্ত মানুষ সমান, সবাই নিজের সন্তানের মতো– কী হিন্দু ,কী মুসলমান, কী  ধনী, কী দরিদ্র–’

হলধরের এটা একটা অভ্যাস ছিল‌, সুবিধা পেলেই তাঁর প্রশংসা করে করেসপ্তম স্বর্গে উঠিয়ে দিতে চায়, আর মাঝেমধ্যেমহাবিরক্তিতে তিনি ভাবেন– এই মানুষটার নিরীহ বহিঃ আকৃতির অন্তরালে আসলে শিয়ালের একটা চতুর রূপ আছে নাকি, তাকে তোষামোদ করে করে একটা বড় দাও মারার অভিসন্ধি আছে নাকি? কিন্তু সেই জায়গায় থাকার শেষ দিন পর্যন্ত হলধর তাঁর কাছে কোনো কিছুই চায় নি।

সে যাই হোক না কেন, এরপর থেকে রজব আলীরও  তাদের বাড়িতে হলধরের মতোই যাওয়া-আসা শুরু হয়েছিল, বাড়িরই একজন হয়ে পড়েছিল এবং যে হলধর তাকে তাদের বাড়িতেএনেছিল সেই মাঝেমধ্যে তার প্রতি ঈর্ষায়  জ্বলে-পুড়ে মরত। কখনও এরকম হয়, হলধর এসে দেখে , সামনের বারান্দায় নদীর দিকে মুখ করে বসে শ্রীমতী গোস্বামী সেলাই করছেন এবং পাশেই মাটিতে শাকসবজির টুকড়িটা রেখে সামনে মোড়া  থাকা সত্ত্বেও পাকায়লেপ্টে বসে বারান্দার একটি খুঁটিতে হেলান দিয়েরজব আলী উদাস করুণ সুরে একটা ভাটিয়ালি গান গাইছে। সেই দৃশ্যের মধ্যে হঠাৎ গিয়ে উপস্থিত হলধর হঠাৎ চিৎকার করে উঠে  এবং তার সেই তীক্ষ্ণ চিৎকারে দুপুরের নদীর তীরের নির্জনতা এবং ভাটিয়ালি গানের করুণ সুরে যে এক কান্নার সুর চারপাশে ব্যাপ্ত করে দিয়ে বিষাদের অপরূপ মায়াময় জাল তৈরি করেছিল তা ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। হলধর চিৎকার করে উঠে – এই রজব আলী তুই যে এই ভর দুপুর বেলা এসে গোঁসাইমায়ের বিশ্রামের সময় অসুবিধার সৃষ্টি করছিস, তোর যে সেই  ভাঙ্গা ঢোলের মতোআওয়াজ ভেতরে শুয়ে থাকা ছোট গোঁসাইর ঘুম ভেঙ্গে যাবে, সে কথা একবার ভেবেছিস কি? রজব আলীকে এভাবে অভিযুক্ত করা মানুষটার একবারও মনে হল না যে সে-ও একইভাবে সেই ভর দুপুর বেলা তার গোঁসাইমার বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটাতে এসেছে।


আরো পড়ুন: অসমিয়া উপন্যাস: গোঁসাই মা (পর্ব-৬) । নিরুপমা বরগোহাঞি


অথচ এই মানুষটার সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী একটা মনোভাব প্রকাশে শ্রীমতী গোস্বামী মনে মনে মুখ টিপে হাসছিলেন। বিশেষ করে সেদিনের দুপুরবেলার মাত্র দুদিন পরে ঘটনাটা ঘটেছিল। সেদিন সকালে শ্রীমতী গোস্বামী বাদাম, কিসমিস, গরম মসলা ইত্যাদি দিয়েপায়েস তৈরি করেছিলেন এবং সকালের দিকেই এসে অপুকে কাঁধে তুলে নিয়েএকপাকঘুরিয়ে আনা হলধরকে সেই পায়েস খেতে দিতেই  সে কিছুটা মুখে দিয়ে বলে উঠেছিল – আঃ একবারে অমৃত! নিশ্চয়গোঁসাই মা নিজে বানিয়েছেন, হরিনাথের এই ধরনের জিনিস বানানোর সাধ্য নেই, হাতের গুণ বলেও একটা কথা আছে তো। আপনি যেখানে হাত দেবেন তাই অমৃত হয়ে উঠবে – হলধর তার চিরাচরিত তোষামোদটুকু করে কিছুক্ষণ একটু থমকে দাঁড়িয়েহঠাৎ জিজ্ঞেস করল, ‘গোঁসাইমা, আপনি এই অমৃত একটু বেশি করে বানিয়েছেন কি? উত্তরে যখন শ্রীমতী গোস্বামী ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ইতিবাচক শব্দ উচ্চারণ করে হলধরের জন্য আরও পায়েস  আনতে  যাচ্ছিল তখন তাকে নিরস্ত করে হলধর বলেছিল– আপনি যতটা পায়েস আমাকে খেতে দিয়েছেন আমার পেটটা ওভারফুল হয়ে যাবে গোঁসাই মা। আমি সেই রজব আলীর কথা ভাবছি। এই ধরনের অমৃত সে কোনোদিনমুখে দেবার সুযোগ পায়নি। থাকলে ওর জন্য একটু রেখে দেবেন, আমি বাজারের দিকে গিয়ে ওকে ডেকে নিয়ে আসব।’

একদিন গোস্বামী অফিস থেকে এসে দূর থেকেই দেখতে পেলেন যে তাদের সামনের বারান্দার পাকায় লেপ্টে বসে রজব আলী এবং হলধর উত্তেজিতভাবে কিছু একটা আলোচনা করছে; কাছে যেতেই তিনি দেখলেন যে হলধর তার টাকমাথা নেড়ে ডান হাতটা রজব আলীর মুখের  সামনে  নাচিয়ে উত্তেজিত ভাবে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছে এবং রজব আলীও তার দাড়ির সঘন আন্দোলনের দ্বারা বুঝতে পেরেছে  বলে বোঝানোর চেষ্টা করছে। গোস্বামী দুজনের দিকে তাকিয়েহেসেজিজ্ঞেস করল–’ দুজনের মধ্যে এত কী আলোচনা চলছে?’ উত্তরে হলধর তাড়াতাড়ি করে বলতে লাগল –’গোঁসাই স্যার এই রজবটাকোনোমতেইগোঁসাই মাকে গোঁসাই মা বলতে পারেনা কেবল গোঁহাই মা গোঁহাই মা বলে– আমার গোঁসাই মা যেন গোঁসাই বংশের নন কোনো আহোম বংশের গৃহস্বামীনী–’ 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত