অনুবাদ কবিতা: অনুপমা বসুমতারী’র অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস
১৯৬০ সনে কবি অনুপমা বসুমতারীর জন্ম হয়।প্রথম কাব্যগ্ৰন্থ ‘রূপালী রাতির ঘাট’১৯৯৪ সনে প্রকাশিত হয়।বেশ কয়েকটি কাব্যগ্ৰন্থ এবং গদ্য লেখক অনুপমা ভারতীয় জীবন বীমা বিভাগের চাকরি থেকে অবসর গ্ৰহণ করেন। সার্ক সম্মেলন এবং সাহিত্য আকাদেমি আয়োজিত বিভিন্ন কাব্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
এইমাত্র পার হয়ে যাব
এইমাত্র পার হয়ে যাব
এই সুন্দর মুহূর্ত
দুঃখের গান গুলি এখন
মনে কর না
এসো কিছু সময়ের জন্য ডুবে যাই
আনন্দের এই উৎসবে
ফুটে উঠা গোলাপের
কোমল পাপড়ির দিকে তাকাও
মৃদু বাতাসের স্পর্শে
কেঁপে উঠছে ফুলটি
প্রেমিকের চুম্বন স্পর্শে
দুরু দুরু করে কেঁপে উঠা
লজ্জাবতী প্রেমিকা যেন
তোমার স্পর্শে এসো রাঙিয়ে তোল
দুহাত মেলে অপেক্ষা করে থাকা
সুন্দর মুহূর্তটাকে
ধীর একটি নদীর মতো
বিষণ্ণতা না থাকলে
কত নীরস হত এই জীবন
পাওয়া না পাওয়ার হিসাব নিকাশ
প্রবঞ্চনা প্রতারণার প্রতিযোগিতা
বৈষয়িক বৈভব হাসিল করার দাম্ভিকতা
একটা মলিন কাপড়
ধুয়ে পরিষ্কার করার মতোই
বিষণ্নতা ধুয়ে নেয়
হৃদয়ের দাম্ভিকতা
আর… দাম্ভিক হৃদয়গুলি হয়ে পড়ে
ধীর একটি নদীর মতো
শান্ত সমাহিত
বিষাদের গীতগুলি
ভুলতে চেয়েও ভুলতে পারিনা
বিষাদের গীতগুলি
তুমি ঠিকই বলেছিলে
বিষাদের সুর একটিই
আমরা কেবল গেয়ে থাকি
কন্ঠ বদলে বদলে
দুঃখের ঝর্ণা বইয়ে দিতে থাকি
নয়ন বদলে বদলে
যুগের পর যুগ গীতগুলি ধরে রাখি
জীবন বদলে বদলে
ঋতু পরিবর্তন হয়
যুগের পরিবর্তন হয়
চিন্তার পরিবর্তন হয়
পরিবর্তন হয়না বিষাদের গীতগুলি
আরো পড়ুন: সনন্ত তাঁতির অসমিয়া কবিতা
কবিতার যাত্রা
‘তুমি এবং আমি অন্য কেউ নেই
নীল নীল চোখজোড়া নিয়ে তাকিও না দ্বিতীয় বার’
ভাবলেও বুকটা ব্যাথা করে
কিছুই যেন আজ আর মনে নেই
রংরঙার পারেই জীবনের প্রথম কবিতা
রঙরঙার ধারে আবেগে প্রথম প্রকাশ
নদী বলতে আমাদের কী আর ছিল
ছোট্ট রঙরঙার আঁকাবাঁকা টুকু
মেঘে ঢাকা বর্ষার আকাশ
বৃষ্টিস্নাত পৃথিবী
শিলা বর্ষণে নীরব একটি দুপুর
খড়ের ঘরের চালে, ঘাসে ,পথে ঘাটে
স্তূপীকৃত হয়ে থাকা শিলগুলি শুভ্রতায় ঢেকে ফেলা
সেই অকল্পনীয় দৃশ্যে আত্মহারা হয়ে
গ্রামের সঙ্গীদের সঙ্গে দৌড়ে বেড়ানো
দীর্ঘ মুহূর্ত…
হঠাৎ পাখির ক্রন্দন, বাতাসের আছাড়
দলে দলে বকের পরাজিত সংগ্রাম
বাঁশ গাছের নিচে ডানা ঝাপটে পড়ে থাকা
নির্মল বকের অসহায় স্থিতি
এবং গ্রামের পথ ডুবিয়ে গড়িয়ে যাওয়া
বাধাহীন জলের ঢল
জলের ধারে সেতু একটা ভেঙ্গে যাবার মতোই
কেন এত নিষ্ঠুর ভাবে ভেঙ্গে যায়
মানসপটে ভেসে আসা সুন্দর ছবি গুলি?
কেবল কয়েকটি মুহূর্তের জন্য আমি
স্মৃতির একটি কালভার্টে বসতে চাই
যেখান থেকে বাতাসে কাঁপতে থাকা বিরিণা বন গুলি দেখা যায়
হেলে দুলে নাচতে থাকা কাশবন গুলি দেখা যায়
আর দেখা যায় বর্ষার সবুজ সমুদ্র
অগ্রহায়ণের সোনালি স্বপন
কোনো একটি কালভার্ট, কোনো একটি নদীর ঘাট
কোনো একটি পথের বাঁক ,কোনো সরোবরের নীরবতা
অথবা হৃদয়ের বিষন্নতা থেকেইতো আরম্ভ হয়
কবিতার যাত্রা!
জীবনকে আমি এভাবেই চাই
এই যে তোমার সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছি
গোধূলির পথে পথে
শীতের ফুরফুরে বাতাসে
আমাদের গুনগুন কথাগুলি উড়িয়ে দিয়ে
হারিয়েছি গোধূলির রাজপথে
যেন একটি স্বপ্নের
ফ্ল্যাশব্যাক দেখছি
আন্তরিক কথাবার্তায় বিলীন হয়ে
আমরা পদূলির ঘাসে বসেছি
বাগানের ফুলগুলি কেঁপে উঠছে মৃদু বাতাসে
যেভাবে কেঁপে উঠে আমাদের দুজনের বুক
চোখে স্বপ্নাবেশ বিরক্ত করছে
যেভাবে তোমার স্পর্শে প্রাণ পেয়ে উঠে
নিস্তব্ধ হয়ে থাকা আমার স্বপ্ন
জীবনকে আমি এভাবেই চাই
একটি ছবির মতো তীব্র রঙিন
সাগরের মতো বিশাল গভীর
আর কবিতার মতো সংবেদনশীল
হৃদয়ে হৃদয়কে বেঁধে রাখতে পারার মতো করে
বেদনা না থাকলে
বেদনা না থাকলে
জীবনের মাদকতাও নেই
চোখের জল না থাকলে
হাসির অর্থ নেই
বিচ্ছেদ না থাকলে
সাক্ষাতের আনন্দ নেই
বিচ্ছেদ যদি না থাকত
হয়তো থাকত না
তোমার প্রতি আমার
এই গভীর ভালোবাসা
আমি যে তোমাকে
ভালোবাসতে চাই
আজীবন
আর সেইজন্যই
হারিয়ে খুঁজি তোমাকে
বারবার

অনুবাদক