অনুবাদ কবিতা: কৌস্তভমণি শইকিয়া’র অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস
১৯৫৬ সনে কৌস্তভমণি শইকীয়া জন্মগ্রহণ করেন। শ্রী শইকীয়া একই সঙ্গে কবি,গল্পকার,ঔপন্যাসিক এবং শিশু সাহিত্যিক।কাব্য সঙ্কলন চারটি।আকাশ বাণী গুয়াহাটির অনুষ্ঠান কার্যবাহী।
প্রতিদিন পৃথিবীর
প্রতিদিন প্রতারিত পথিবীর মানুষ
প্রতিবাদ প্রতিজ্ঞায় মাটির প্রেমিক
কাউকে কেউ আটকাতে পারে না
হয়ে যায় সাহসের দুর্জয় সৈনিক
প্রতিদিন জন্ম-মৃত্যুর হিসেব সময়ের নোটখাতায়
তার মধ্যে নিপীড়ন আর ধর্ষণের বদনাম
আণবিক উদ্ভাবন আর ক্ষুদকণা
কার জন্য আজ কী প্রয়োজন
প্রতিদিন প্রতিহত হয় মানুষ মানুষের হাতে
মানুষ সূর্যস্পর্শী জনম অবধি
ভরন্ত ফুলের মতো আলোর প্রতি নতজানু
ভূমির ভার সয়ে পৃথিবী ও আজ অভিজ্ঞ
প্রতিদিন পালন করে জীবের সান্নিধ্য
নদী খসানো পারের মতো
মানুষের জীবন বিপদ সঙ্কুল প্রতিদিন
একটা জ্বালামুখীর মতো বিস্ফোরিত হয়
সমস্ত ক্ষোভ,ঘৃণা
প্রতিদিন সভ্যতা নির্ণয় করে সময়ের দিক
মানুষ আন্দোলিত হয় অমানুষের বিপক্ষে
প্রতিদিন পৃথিবী জুড়ে একই বিপ্লব।
আরো পড়ুন: নীলিমা ঠাকুরীয়া হকের অসমিয়া কবিতা
ছোট ছোট ঘরগুলিতে
ছোট ছোট ঘরগুলিতে
ছোট ছোট মানুষগুলি থাকে
ছোট ছোট স্বপ্ন
স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কায় মগ্ন
লুকোনো সময়
বিরল সুখের সমস্ত দরজা বন্ধ
ফাঁকিগুলি প্রবেশ করে জীবনের জানালা ভেদ করে
একটা যেন অবিশ্বাসের ভয়
সবাইকে অহোরাত্র ঘিরে থাকে
ছোটছোট ঘরগুলিতেও
আশা এবং বাসনার প্রদীপ জ্বলে প্রতিদিন
জন্মের আনন্দ এবং মৃত্যুর বিভীষিকা থাকে
সাধনার একটা অধ্যায় ছোট ছোট ঘরগুলিতে অব্যাহত
পৃথিবী বিলায় একই বাতাস
উনুনে জ্বলতে থাকে না নেভানো ক্ষুধার আগুন
ছোট ছোট ঘরগুলি থেকে
বেরিয়ে আসে প্রত্যয়ের ভবিষ্যৎ ইতিহাস
কবিতার একটা পঙক্তি গুণগুনিয়ে
রাজপথে পা রাখে
কৌস্তভ নামের কবি কপালে উদিত রবি
সহযাত্রীর সঙ্গে উদ্বেলিত উৎসাহ।
জন্মযন্ত্রণা
একটা কবিতা লিখে উঠেই
আমি কিছুক্ষণ কাঁদি
কাঁদাতেই আমার সুখ
আমার কী অসুখ আমি জানি
সবাইকে বোঝাতে চাওয়া
এক নিবিড় আকাঙ্খায়
দীর্ঘদিন ধরে আমি অধৈর্য
গর্ভবতী হয়ে ক্রমে ক্রমে
বেড়ে আসে সে সাদা কাগজের পৃষ্ঠায়
ছাপার মুখের দিকে পথ চেয়ে বহুদিন
কবিতাটা পড়ে থাকে সম্পাদকের টেবিলে
কখনও অপাঠ্য আবর্জনা বলে
ডাস্টবিনের কাগজের বাক্সে স্থান পায়
তথাপি জীবনের মায়াময়তায়
কবিতা আত্মার মতো অবিনশ্বর।
আরো পড়ুন: অসমিয়া অনুবাদ গল্প: মরুদ্যান । সৌরভ কুমার চলিহা
মন্দ প্রতিজ্ঞা
বহিরঙ্গঃ
আসুন, নোঙরা রাজনীতি করি
দেশ আর জাতিকে জাহান্নামে নিয়ে যাই
নগরে নগরে পাতি ষড়যন্ত্রের সভা
হঠকারী আদর্শে কাঁপিয়ে তুলি বাতাস
আসুন,শান্তির দূত বলে নিজেকে জাহির করি
কূটাঘাতমূলক কাজে অভ্যস্থ হই
প্রতিজ্ঞা করি স্বার্থে আঘাত লাগা
সমস্ত কাজের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করি
আসুন,সবাই অধঃপাতে যাই
অনীতি দেখেও চোখ বুজে থাকি
নিজের সঙ্গে গড়ে তুলি নির্লজ্জ মিত্রতা
সময়কে প্রবঞ্চনা করে বলে দিই ন্যায় কুশলতা
অন্তরঙ্গঃ
শুধরানোর মানসিকতা যে হারায়
ভুল করার অধিকারও তার নেই ।
অভ্যর্থনা
দরিদ্র কুটিরে তোমাকে আহ্বান জানাচ্ছি
যদিও বা আজকাল প্রায়ই আমি বাড়ি থাকি না
ফুলের কলিতে লুকিয়ে রাখা আছে ঘরের চাবি
নিশ্বাসে পরিচিত গন্ধ নিয়ে খোঁজ কর
দরজা খুললেই হোঁচট খাবে দেখ
কবিতার অসংলগ্ন টুকরোগুলি এখানে সেখানে পড়ে থাকে
এসব আর কিছু নয়
তোমার ভাবের সঙ্গে মিলে যাওয়া
আমার অনুভূতির এক একটি অংশ
তোমার আমার আশাগুলি-হতাশাগুলি
প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গুলি
শোকের সহনশীল শব্দ এবং শান্তির সন্ধিক্ষণ
সবাইকে কালের হাতে রেখে গেলাম কবিতায়
তোমার কুটিরে আমার ছায়া দেখে হোঁচট খেও না
আমি আজকাল সমস্ত বাসস্থান নিজের বলে ভুল করি
রুদ্ধ দুয়ার খোলার চাবি কাঠি কবিতা হতে পারে কি!
অনুবাদক