| 29 মার্চ 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত কবিতা

অনুবাদ কবিতা: নীলিমা ঠাকুরীয়া হকের অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,

১৯৬১ সনে অসমের গুয়াহাটি শহরে কবি নীলিমা ঠাকুরীয়া হকের জন্ম হয়। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আন্ধারতো পোহরতো’১৯৯১ সনে প্রকাশিত হয়।বাকি কাব্যগ্রন্থগুলি যথাক্রমে ‘হৃদয়র চিত্রপট’,’ভালপোয়া বিষাদ আরু ধূলির স্তবক’,’কিবা পাহরিলা নেকি’ এবং ‘ছার্জন আরু মেঘবোর’।এছাড়া ‘ডাক্তরর ডায়েরী’ নামে একটি গদ্য গ্রন্থ এবং ‘জলরেখা’নামে একটি উপন্যাসও রচনা করেন। পেশায় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃনীলিমা ঠাকুরীয়া হক গুয়াহাটি আর্ট গিল্ডের একজন সক্রিয় সদস্য এবং অসম লেখিকা সন্থার আজীবন সদস্য। ২০২০ সনে মফিজুদ্দিন আহমেদ হাজরিকা মেমোরিয়েল কাব্য পুরস্কারে সম্মানিত হন।এই সম্মানের তিনিই প্রথম প্রাপক।


 

 

নদীরও নরক থাকে

     

নদীরও নরক থাকে

কোমরের বিহুবতী ভাঁজ যখন আমন্ত্রণ করে মানুষকে

নারী হয়ে উঠে নদী

উন্মুক্ত দুইপারে জেগে উঠে জনপদ

আশ্চর্য বেগবতী গ্রামগুলি আর নগরগুলি

নগরগুলি এবং মানুষগুলি পাড়ি দেয় মহানগরের দিকে

হরিণার মতো থেমে যায় নদী

আবেগহীন স্রোতে জমা হয়

মর্মান্তিক ক্লেদের স্তর

এখান থেকেই আরম্ভ হয় নরক

 

আবর্জনা বয়ে বয়ে ক্লান্ত নদী

কামিহাড়ের সেতুতে পা ঝুলিয়ে বসেছে ঘুম

কী ধরনের ঘুম!বিকেলও চোখ বুজে নেয় এই জলে

নাকে রুমাল চেপে পার হয়ে যায় সন্ধ্যা

সজল চোখে সোনালি অতীতের ছায়া

সেই ছায়া কাঁপে কি জলে

মরা মাছগুলির শাপে জ্যোৎস্না  কাঁপে

আমার ইঙ্গিতময় আঙ্গুলগুলি

আত্মাহীন সুখে-ভোগে নগ্ন সাবলীল

কেমন ধড়ফড় টেনে আনার জন্য নদীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ঘর

ঠাঁই না পাওয়া প্রাণবায়ুতে নদীও ডুবে

মরা মাছগুলির শাপে জ্যোৎস্না কাঁপে

 

 এক খণ্ড  নরকে ভেসে থাকে নদীর ভেলা

ভেসে থাকে,পথ চেয়ে থাকে

পথ চেয়ে থাকে,ফুলে থাকে

বর্ষা এলে আঙ্গুলগুলির খোঁজে আসে

ফিরে পেতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ঘর

সেটা কি আক্রোশ নদীর

 

টীকাঃ

কামিহার-বুকের চ্যাপ্টা হাড়

 


আরো পড়ুন: অনুপমা বসুমতারী’র অসমিয়া কবিতা


 

গর্ভপাত

কথা না বলা বিছানা

না বলা কথার বিছানা

ধাতব শীতল শয্যায় জমাট বাঁধে যন্ত্রণা

সোপান যেখানে স্বপ্নের ভগ্ন মুখ

 

ধাপে ধাপে ভাঙ্গা কাচ মাড়িয়ে

উঠে এসেছে মেয়েটি

প্রেম থেকে অপ্রেমের পাটিতে

দস্তানা পরা হাতগুলির পাশে

 

সজল সকরুণ একটি ভ্রুণের চিৎকার

পিছলে পড়েছে। থেমে থেমে কাঁপছে

নাভির নিচ থেকে উঠে আসা অন্য একটি চিৎকার

কামড়ে ধরছে কলজেয়

 

কে জানে যে খসে পড়েছে আজ

আজীবন খসাবে তাকে।নির্জনে

নিরালায়

একটি ভ্রূণের চিৎকার

 

এখন তো কিছুই বলতে পারি না

দস্তানা পরা হাতগুলি ফিসফিস করছে

সবকিছু ঠিকঠাক আছে 

কথা না বলা বিছানায়

ঠিকই আছে

পরিচ্ছন্ন সমাধি প্রেমের

সমাজের সম্ভ্রান্ত চাহনি

 

গর্ভ চেঁছে আনা রক্তে

ডুবে আছে মেয়েটি

 

 

 

 

মুদ্রার অন্ধকার

 

একটা টাকা পথের ধূলি থেকে মুচকি হাসল

মুদ্রাটির একদিকে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ

বহু পুরোনো বটগাছ নিচের দিকে হেলে পড়েছে জ্যোৎস্নায়

অন্যদিকে কৃষ্ণপক্ষ

অরণ্যের মাঝে মধ্যে একটা নদী কিজানি

অস্পষ্ট ছায়ার মিছিল,আনন্দ কোলাহল…

মুদ্রাটা কুড়িয়ে নিয়েছিলাম খরচ করব বলে

আমিই খরচ হয়েছি।পকেটের আকাশ এখন

মুদ্রাটির দখলে

 

জ্যোৎস্না সূর্য হয়ে বসেছে

খেয়াল-খুশি মতো বদলাচ্ছে তিথি

বছরজুড়ে অন্ধকার,কদাচিৎ জ্যোৎস্না

দিন না দেখেই পথ হাঁটছি

 

টাকাটা ছুঁড়ে ফেলে দেব বলে ভাবি,পারি না

অভ্যাস হয়ে পড়েছে কাস্তের মতো অন্ধকার

দুঃখ-শোকগুলি নিয়ে অন্ধকারের অরণ্যের পথ

নদীর তীরের বাঁক

 

অবিস্মৃত স্মৃতি থেকে উঠে আসে সহজে

মুদ্রার অন্ধকারে পথ হাঁটছি

জ্যোৎস্নায় চোখ ধাঁধিয়ে যায়

 

 

 

 

 

 

 

দোলনা

 

শরাইঘাট সেতুর প্রবেশ পথে

রঙিণ জালের দোলনা বেচা মানুষটিকে

দেখেছ তুমি

ধুলোর দোলনাগুলিকে

পশ্চিমের দ্রুতগামী বাতাস দোলাতে থাকে

আর দুলতে থাকে সে

 

পথিক ক্ষণিকের জন্য নাইবা দাঁড়াল

দোলনা একটি নাইবা কিনল

পাশের মদারের গাছ

আড়চোখে তাকালেই হল

মদারের রক্তরাঙা আঙুলগুলি

তার বুকে

হাজারটা দোলনা বুনতে থাকে

 

 

 

 

 

সার্জন এবং মেঘগুলি

 

 

মেঘগুলি ধূসর এবং ভারী হয়ে নেমে আসছে

বেদনা শোষে শোষে খসে পড়ে নীলিমার বুকের

চাদর,আচম্বিতে

 

মেঘগুলি জমা হয় বিশাল ঘরটির চৌহদে

বন্ধ কাচের জানালায় মুখ ঘষে ,ভেন্টিলেটর দিয়ে

প্রবেশ করে,দরজাগুলিতে ঠোকরায়

 

কখনও কারও নিশ্বাসে প্রবেশ করে

ফুসফুসে ঘর বানায়,দুচোখে বর্ষার আকাশ

ফুলে ফেঁপে বর্ষিত হয়

তখনই দরকার হয় তার ,বড় দরকার

শুভ্র এপ্রনের ডানা ঝাপটে তাকে আসতে দেখলেই

সরে যায় দলবদ্ধ মেঘগুলি

তাঁর কাছে দিন-রাত সমান

তাঁর জন্য যখন-তথন প্রস্তুত বিশেষ মঞ্চ-

ইস,কী তন্ময় হয়ে নাচতে থাকে ছুরিটা

কাঁচিটাও যেন ব্যালেরিনা

অস্ত্রোপচার কক্ষের আকাশে

জীবন-সূর্য জ্বলে

অদ্ভুত ললিত এবং ধারাল নৃ্ত্য দেখার জন্য

ঘুরে ঘুরে নাচে ছুরিটা

ত্বক এবং চর্বির কোমল গালিচায়

গভীর অরণ্যের ভেতরে

দ্রুত তালের এক লহমায় পার হতে হবে

রক্তের ঝরনা,সিরা-ধমনীর বেগবান নদী

গোলাপী মখমল পর্দা মাংসপেশীর

সরিয়ে দিলেই উদ্ভাসিত

রহস্যময় শরীরের মঞ্চ

এই ধরনের ধ্রুপদী পরিবেশে তিনি মগ্ন না হয়ে পারেন না

মনে হয় ছুরিটাই নাচছে

আসলে নাচছে দর্জি পাখির

ঠোঁট পরা তাঁর আঙুলগুলি

দস্তানা পরা হাত দুটি যন্ত্রণার

ঠিকানা জানে

শরীরের গভীর অরণ্যে

ছুরি আর কাঁচিটি দিয়ে একটি নৃ্ত্যের

সংরচনা করে করে

খুঁজে বের করে যন্ত্রণার উৎস ,বিষের চারা

উৎখাত না করে ছাড়েন না তিনি

ঈগল চোখের মানুষটি নাকি একজন সার্জন

জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া মেঘগুলি দেখে-

রক্তের পুকুর থেকে তিনি তুলে আনেন যন্ত্রণা

ধাতব পাত্রটিতে রাখে

আর অচেতন থেকে চেতনায় ফিরে আসা ব্যক্তির

চোখে স্বপ্নের নেশা লেগে থাকে

‘সব ঠিকই আছে’,তিনি বলেন আর

ছুড়ে দেন এপ্র’নটা মেঘগুলির দিকে

মেঘেরা আশ্বস্ত হয়

একজন সার্জনের কথায় ভিজে মেঘগুলির

ডানা গজায় এবং উড়ে যায় উষ্ণতার উদ্দ্যেশে

 

নীলিমার চাদর হতে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত