অনুবাদ কবিতা: সমীর তাঁতীর অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস
১৯৫৫ সনে গোলাঘাট জেলার বিহরা চা বাগিচার মিকিরাচাঙে কবি সমীর তাঁতীর জন্ম হয়। অসম সরকারের পর্যটন বিভাগের অবসর প্রাপ্ত কর্মচারী। সমীর তাঁতী একইসঙ্গে কবি,অনুবাদক,গদ্য লেখক। যুদ্ধভূমির কবিতা,শোকাকুল উপত্যকা,সেউজীয়া উৎসব,এই আন্ধার এই পোহরর তন্ময়তা,কদম ফুলার রাতি,শুনিছানে সেই মাত ইত্যাদি তাঁর কাব্যগ্রন্থ ।
জাফনা
শ্রীযুক্তা নিরুপমা বরগোহাঞি সমীপেষু
বুদ্ধং শরণম গচ্ছামি
ধর্মং শরণম গচ্ছামি
সঙ্ঘং শরণম গচ্ছামি
আমি পুনরায় দেখতে চাই না বিশাল অন্ধকার
আমাকে ফিরিয়ে দাও আমার নক্ষব্রখচিত আকাশ
আমার উজ্জ্বল জ্যোৎস্না
দরজা খুলে আমাকে উন্মোচিত কর
আমি পুনরায় ফিরে যেতে চাই মেঘের সানিধ্যে
আমাকে ফিরিয়ে দাও আমার অপাপ জলবৃষ্টি
আমার গ্রামের সুরেলা গীত
পাথরের মাঝে জেগে উঠা
আমার শেওলার আদিম গন্ধ
আমি কখনও বলতে চাইনি ধ্বংসলীলার কথা
আমাকে ফিরিয়ে দাও আমার গভীর অরণ্যানি
আমার কচিপাতার কোমল কোমল রঙ
মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া পাখির অবুঝ কাকলি
আমার সাগর তীরে দেখে আসা মণি-মুক্তার ছবি
আমি পুনরায় দেখতে চাই না আমার আপনজনের রক্ত
আমাকে ফিরিয়ে দাও আমার মায়ের দুচোখের হাসি
আমার পুরোনো কালের সাঁকো
আমার জন্মভূমির সুদৃশ্য আঁচলে ফুটে থাকা
নানা বর্ণের ফুল
আমি পুনরায় দেখতে চাইনা বিশাল অন্ধকার…
জ্যোৎস্না রাতে তোমাকে হেঁটে যেতে দেখেছি
জ্যোৎস্না রাতে তোমাকে হেঁটে যেতে দেখেছি জলপাই বনের দিকে
আঃ আমার বুকটায় ব্যথা করে।
ঝরণার স্বচ্ছ জলধারায় সেদিনের মতো আজ আর মুখ দেখা যায় না
তোমার মুখের শোভা,তোমার পৃথিবীর মুখ
একি তোমার মুখে রক্ত।
আহা,ফেদেরিকো ফেদেরিকো ওরা তোমাকে হত্যা করল
আমি শুনেছিলাম কীভাবে শোকে ভেঙ্গে পড়েছিল আন্দালুসিয়ার নারী
সারারাত তারাগুলি তাকিয়েছিল তোমার মুখের দিকে
তুমি তো একবারও চোখ মেলে তাকালে না ঈশ্বর কীভাবে লজ্জায় ঢেকে ফেলেছিল মুখ
ফেদেরিকো, ফেদেরিকো পিয়ানোতে আজ আর কে বাজাবে সেই সুর
সূর্যও পড়েছিল তোমার কবিতা। কারখানার পাশ দিয়ে যাবার সময় ভোরবেলা বলল
শ্রমিকেরাও শুনল তোমার কথা
আমার শিল্পীবন্ধুরা নাকি তোমার ভাষায় একটি ছবি আঁকবে
তুমি যে বলেছিলে –জয় করতে হবে মরণের অনন্ত নীরবতাকে
আহা,ফেদেরিকো ফেদেরিকো ওরা তোমাকে হত্যা করল
সিভিল গার্ড সিভিল গার্ড
এখানেও আছে সেই হিমশীতল ভয়
জল,মাটি আর মানুষের কথা বললে কেটে ফেলা হয় জিহ্বা
আহা আমার নিসর্গ চিত্র,আমার ফলের বাগান,নারী এবং শিশুর সঙ্গে
আমার বনগীতের মায়া
ফেদেরিকো ফেদেরিকো ইস আমার বুকে ব্যথা করে।
টীকা –
বনগীত- মুক্ত প্রকৃতির বুকে বিচরণ করা যুবক-যুবতির গাওয়া যৌবনের গীত।
নেলী
আমি আজও স্বপ্মে দেখি তুমি যেন সারা রাত চিৎকার করে ডাকছ
নেলী নেলী
নেলী আমার মা,আমার মাতৃ-মমতা
আমার চোখেরজলে তুমি,তোমার মুখ আমার বুকে ফুটে উঠা একটি করুণ গোলাপ
আমি সারা রাত শুনি বনহরিণীর মতো তোমার গভীর আর্তনাদ
তুমি যেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বল
সমস্ত শিশুর খেলার ধুলি-বালি নেলী সমস্ত যুবতি নারীর সান্ধ্য-পদুলি
সমস্ত গোপ-বালকের সঙ্গে উঠে আসে নেলী,ভোরের বাতাস
নেলী বাঁশীর বিষণ্ন সুর ,সন্ধ্যা তোমার বুকে ডুবে যাওয়া একটি সূর্য
তুলসীলার একটি প্রদীপ
জ্যোৎস্না রাত
নেলীর কথা লিখতে লিখতে আমি তোমার কথাই ভাবি
ভাবতে ভাবতে আমি মিশে যাই তোমার মেরুদণ্ডের মধ্যদিয়ে
মাটির সঙ্গে, জলের সঙ্গে,
আকাশের সঙ্গে,বাতাসের সঙ্গে
মিশে যাই এক অনন্ত নীলিমার সঙ্গে
বল,এখন কোথায় আছে সেই মানুষ,সেই বিবেক
কুলু কুলু স্বরে বয়ে যাওয়া সেই হৃদয়ের ভাষা
কপিলী না কলঙপারে
না বরলুইতে
যেখানে হাজার বছর ঝরণা ফুলে উঠেছিল তোমার আমার জীবনের আশা
আমি আজও স্বপ্মে দেখি তুমি যেন সারা রাত চিৎকার করে ডাকছ
নেলী নেলী
নেলী আমার মা,আমার মাতৃ-মমতা
আমার চোখেরজলে তৃমি,তোমার মুখ আমার বুকে ফুটে উঠা একটি করুণ গোলাপ।
টীকা-
বরলুইত -ব্রহ্মপুত্রের আরেক নাম বরলুইত।
কোম্পানির প্রতি আর্জি
দয়াময় দয়ার সাগর
হুজুর -মা-বাপ
তাবিজ খুলে রাখলাম
কাপড় খুললাম
বাঁশিতে তুলব না
রাগ
দায় দোষ ধরবেন না
অন্ধকার গড়াল
অন্ধকারেই বিশ্রাম
মাদলে হাত রাখছি না
মাফ করবেন
হুকুম দিন হুজুর
কালা-পানি
ফাটক
যেখানে যা আছে
চলে যাব
মুক্তি পাব
কে বলে আরও চাই
যা পেলাম
সেটা কি ধেমালি
জানোয়ারকে
লাই দেবেন না হুজুর
গালিগালাজ করুন
পথের ধুলোকে
মা-বাপ
ছেলে মেয়েকে দেখবেন
অক্ষর জ্ঞান হতে দেবেন না
বাগানেই থাকবে
নরক দর্শন করবে
কিরা কাটছি হুজুর
কলজের আগুন রাখলাম
রোদে ধুয়ে নিলাম
দেব নাকি জলে ঝাপ
ঘুচুক মনস্তাপ
হুজুর চোখ মেলে একবার দেখবেন
গোলামকে বাঁচাবেন
অনুবাদক