Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,assamese-poet

দুই অসমিয়া কবির পাঁচটি অনুবাদ কবিতা । বাসুদেব দাস

Reading Time: 4 minutes

এক সময় অসমের নাম ‘কামরূপ’ ছিল। আরও প্রচীনকালে কামরূপ ছিল ‘প্রাগজ্যোতিষ’ নামে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটি হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত। এর অভ্যন্তরে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ, বরাক উপত্যকা এবং উত্তর কাছাড় পর্বতমালা। উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয় রাজ্য দ্বারা অসম বেষ্টিত এবং অসম সহ প্রতিটি রাজ্যই উত্তরবঙ্গের একটি সংকীর্ণ অংশ দ্বারা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া অসমের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে ভুটান ও বাংলাদেশের সঙ্গে। চা, রেশম, পেট্রোলিয়াম এবং জীববৈচিত্রের জন্য অসম বিখ্যাত। অসমিয়াদের প্রধান উৎসব হলো বিহু। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অসমিয়ারা বিহু পালন করে। বিহু তিনটি- ব’হাগ (রঙালি) বিহু, মাঘ (ভোগালী) বিহু আর কাতি (কঙালি) বিহু। অসমীয়া সাহিত্য অন্য সমস্ত ভাষার মতো অসংখ্য উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ এবং অন্য অন্য বিষয়ক গ্রন্থে পূর্ণ। অসমীয়া সাহিত্য ভাষাটির বর্তমানের সাহিত্য সম্ভার ছাড়াও এর ক্রমবিবর্তনের সময়ে সৃষ্টি হওয়া পুরানো অসংখ্য সাহিত্যের সম্ভারে পরিপূর্ণ, যে ধারার আরম্ভ ৯ম-১০ম শতকের চর্যাপদ থেকে আরম্ভ হয়েছিল বলে ধরা হয়। অজিৎ বরুয়া, অনন্ত কন্দলী,অনিরুদ্ধ কায়স্থ, অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী, আনন্দরাম বরুয়া , ইমরান শাহ, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য্য, জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা, ভোলানাথ দাস, মফিজুদ্দিন আহমদ হাজারিকা, মহেন্দ্র বরা, মাধবদেব, রবীন্দ্র সরকার, রমাকান্ত চৌধুরী, বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা, স্নেহ দেবী, হরিবর বিপ্র, হীরেন ভট্টাচার্য সহ আরো অনেক অসমীয়া ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি আছেন। এই সময়ে অসমীয়াতে কি রকম কবিতা লেখা হচ্ছে কারা লিখছেন, এই সময়ের দুই কবি রাজীব বরার গুণ মরাণ-এর কবিতা নিয়ে আজকের আয়োজন। ইরাবতীর পাঠকদের জন্য মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ করেছেন অনুবাদক বাসুদেব দাস


১৯৭০ সনে কবি রাজীব বরার অসমের মাজুলীতে জন্ম হয়।নাজিরা কলেজের অসমিয়া বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘তটিনী তীরর খেলা’,‘ঢৌ’ এবং ‘পানীভাওনা’।শ্রী বরা অসমিয়া সাহিত্যেরএকজন প্রখ্যাত সমালোচক। দশটি সম্পাদিত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।তার মধ্যে ‘সন্ধিক্ষণের অসমীয়া কবিতা’ এবং ‘অসমীয়া কবিতা বিন্দুর পরা সিন্ধু লৈ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


 

ইরেজার

ভূচিত্রাবলীতে অদ্ভুত কাটাকাটি ।বাঁকা-সোজা রেখা এপাশ-ওপাশ

ভুল করি মানচিত্র ভূগোল-শরীর।এখানেই ছিল কি নিয়তি পাখি

গাছটা এঁকে উঠে দেখি,ডাল-পাতা আছে গোড়াটা নেই

মুছে রাখি সযতনে ভুল ইরেজারের আবিষ্কর্তাকে ধন্যবাদ দিয়ে

কীভাবে ভাগ করি পৃথিবী-ভূগোল কোথা দিয়ে আঁকি

শরীরটা এখানে,ধ্বনি সেখানে।জন্মেছি যেখানে,মরিনি সেখানে

তিনি যেখানে ছিলেন সেখানে নেই। যেখানে থাকার কথা ছিল

সেখানে জায়গা নেই। যে সভ্য ছিল সে বিস্মৃত। যে অসভ্য ছিল

সে সাধু। যে মরেছিল সে জীবিত। যাকে মেরেছিল সে অমর।

হকিং! হকিং! পৃথিবীটা কার?

আমরা কতদিনের জন্য ব্রহ্মাণ্ডের? ব্রহ্মাণ্ডটা কতদিনের জন্য আমাদের

কীভাবে শোধরাব লক্ষ-কোটি ভুল

অসমর্থ আঙ্গুলে ইরেজার

সভ্যতা এবং ইরেজারের সম্পর্কটা সেখানেই

ভুলগুলি মোছার জন্য শোধরানোর জন্য  অপূর্ণকে পূর্ণতা দানের জন্য

বর্তমানকে মাড়িয়ে ভবিষ্যতের জন্য একটা নির্ভুল আঁক

তথাপি সভ্যতা ভুলের ভাঁড়ার,অসমর্থ ইরেজার

শ্যামপুরী কাগজে শিশুর তেল-কালির দাগ

শক্তি পৌরুষ যোগ্যতার শতকোটি খেলার ক্ষতচিহ্ন নিয়ে

অদেখা বায়ু,দেখা তরঙ্গ,প্রাণের প্রাণে অসংখ্য কাঁকড়ার-বাচ্চা

জীবনটাও ভুলেরভাঁড়ার।ইরেজারে হয় না স্মৃতি নাশ

ছাইদানীতে মন-ভূগোলের বিবর্ণ পাতা।একটা দুটো…

 

 

 

হাওয়াই স্যাণ্ডেল

বর্ণনাধর্মিতা ভালো কবিতা নয় জেনেও আসুন

সেধরনের দুটি স্তবকে চোখ বুলোই। ভালোর খোঁজে বাজারে

মাছ বা সবজি কিনে একবারও আপনি ঠকেননি?

ঠগাও সহজে খেতে পারা প্রপঞ্চ। টোপ দেওয়া নীতিতে ঝুলে আছে

রাজনীতি।

শিকনি না থামা দিনে হুক ছেঁড়া হাফপেন্ট পাটের জরিতে বাঁধলাম।

ফিতা ছেঁড়া হাওয়াই জোড়াতালি দিয়ে কত পরলাম।দুপয়সা যাদের আছে

জরি বেঁধে স্যাণ্ডেল পরতে দেখলাম না।কবিতারও বিকল্প দেখলাম –পুরোনো হাওয়াই

কেটে চেয়ারের খুরায় খড়ম পরালাম।ঘিরে নিলাম,পরলাম,দেখলাম না,পরালাম

-শব্দ মিলের এই খাটনিতে আপনার শব্দ-উপেক্ষার দরজায় খটখট করলাম।

আমার কবিতা ঘাসের জেলুক-আপনি ছেড়ে দিলেও আমরা ছাড়ছি না।

হাওয়াই আপনার বাস্তব।বাস্তবের সাক্ষী হলেও পোশাকি-সভায় স্থান নেই।

জায়গা দিলে নিঃস্ব বলে লুকিয়ে ঘৃনা করে।চোখ পাকিয়ে বলে-ধন-ধান

ঢাকার জন্য হাওয়াই উত্তম উপায়।সত্যি কি? কবিরাও নাকি আজকাল

দ্রষ্টা নয়।আপেলটাকে সামনে রেখে নিউটনের আত্মাকে কামড়ে চিবোয়।

কাঁধে থলে আর হাওয়াই স্যাণ্ডেলের কবিকে ও ফোরজি গ্রাম থেকে তাড়িয়ে

শহরে ছেঁচড়ে নিয়ে যায়। কবিতাও বাইক স্টান্টের মতো।তার জন্য গ্রামে পথ-ঘাট নেই।

শিহরণ লাগে।কবিতায় ও শিহরণ। জীবনতো –জীবন যদিও বাইক নয়।

উৎকণ্ঠার অন্তে চোখের জল।ছেঁড়া স্যাণ্ডেল কে পরে? মানী না ধনী?

খড়ম আর স্যাণ্ডেল পরা চরিত্রগুলি ছিল জুতোর নিচের গল্পে।

জুতোগুলি আমাদের দিয়ে জুতোর মালিকেরা চলে যাবার পরে

জুতোর পথ আমরাই বাঁধিয়ে দিয়েছি।স্যাণ্ডেলের পথ আমরাই খুঁড়েছি

কে কোথায় হাঁটবে স্থির করেছি।জুতোর সভায় স্যাণ্ডেল নিয়ে আখড়া করেছি।


আরো পড়ুন: দুই অসমিয়া কবির চারটি অনুবাদ কবিতা

গুণ মরাণ অসমিয়া সহিত‍্যের একজন প্রতিষ্ঠিত তরুণ কবি।১৯৮৪ সনে শিবসাগরে জন্ম হয়।বিশ্বের প্রায় ত্রিশটি আন্তর্জাতিক ম‍্যাগাজিনে শ্রী মরাণের কবিতা অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে।প্রকাশিত কবিতা সংকলন তিনটি।’দী ক্রিয়েটর অফ জাস্টিস এওয়ার্ড ২০২০’ পুরস্কারে সম্মানিত। 


 

অসুখ

লিখে লিখে

রচয়িতা শেষে অসুস্থ

দেখা হলেই তাঁর

মৃত সাপের মতো নিষ্প্রাণ  হাতটা ছুঁয়ে আমার ও

হাতটা বরফ হয়ে পড়ে।

মরা মাছের মতো ঢলঢলে দুচোখে যেন

বালির নিচে প্রবাহিত অভিশপ্ত ফল্গু নদী

সূর্যের ও আছে অনেক দুঃখ

আলোগুলি নরকে গিয়ে পড়ে

যেভাবে কলমের খোঁচায় দুঃখী শুভ্র কাগজ

(কলমের কলঙ্ক কাগজে ধারণ করে)

অসুখীজনকে আমি সুখী করতে পারব না

দুঃখের কাছে হাত পেতে সুখকে বিলানোর সামর্থ্য আমার নেই

তথাপি সুযোগ বুঝে

অসুখীর জন্য একটা মঞ্চ তৈরি করি

আর তখনই আমি অপ্রিয় হয়ে পড়ি।

অসুখীর নাকি মঞ্চ নেই

 

 

 

 

 

রাবণ

একটা আত্মা

তিনবার জন্ম

তিনবারই ঈশ্বরদ্বেষী

তিনবারই তাঁর হাতে নিধন

কত যে কৃপাভাজন ছিল রাবণ

আস্তিকের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ঈশ্বরোপাসক

বৈরিতা ঈশ্বর প্রাপ্তির শ্রেষ্ঠ সিঁড়ি

মহাজ্ঞানী রাবণ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন

স্মরণেই উৎকৃষ্ট নৈবেদ্য

প্রতিক্ষণ স্মরণ বৈরিতার পক্ষেই সম্ভব

তাই রাবণ আস্তিক হল না।

 

 

 

 

কবিকে কখনও খারাপ পেয়ো না

প্রতিটি শব্দই একটা তীক্ষ্ণ শেল

সোজাসুজি বুকে এসে আঘাত করে

আমি যে কত শব্দ বুকে নিয়ে বেড়াই

কার জন্য?

তীক্ষ্ণ শব্দের ধাক্কায়

মাঝে মাঝে কবি অবশ হয়ে পড়ে

তখন তোমার সঙ্গে কথা না ও বলতে পারে

তাতে রুষ্ট হয়ে সেজন্য

কবিকে কখনও খারাপ পেয়ো না

প্রতিবিম্ব যদি কুৎসিত

দর্পণ দায়ী নয়

দর্পণ কাউকে তোষামদ করতে জানে না

কবি সমাজের দর্পণ

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>