Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Reader's ideology reading system and others

অনুবাদ কবিতা: হরেকৃষ্ণ ডেকা’র অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস

Reading Time: 2 minutes

অসমের তিনসুকিয়ায় ১৯৪৩ সনে কবি ,গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক হরেকৃ্ষ্ণ ডেকার জন্ম হয়।‘আন এজন’নামে কাব্যসঙ্কলনের জন্য ১৯৮৭ সনে সাহিত্য আকাদেমি এবং ‘বন্দিয়ার’নামে গল্প সঙ্কলনের জন্য ১৯৯৫ সনে কথা পুরস্কার লাভ করেন।আইপিএস সেবার সঙ্গে দী্র্ঘকাল জড়িত শ্রীডেকা অবসর গ্রহণের পরে ইংরেজি দৈনিক সেন্টিনেল পত্রিকা এবং মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘গরীয়সী’পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।কাব্যসঙ্কলন গুলি যথাক্রমে ‘স্বরবোর’,‘রাতির শোভাযাত্রা’,’ভালপোরাব বাবে এষার’, ‘কবিতা ১৯৬০-১৯৮০’ইত্যাদি।ছোট গল্প ছাড়াও বেশ কিছু সাহিত্য সমালোচনার গ্রন্থ রয়েছে।


 
কবিতার জন্য
স্থবির দেহ বেঁধে রাখে না তরতাজা মন।
কল্পনার পাখায় উড়ে যায় সে দিগন্ত থেকে দিগন্তে,
শ্যেনের চোখে খোঁজে না সে শিকার,
কেবল কবিতা।
তারও পাখা হয় ক্লান্ত, চায় বিশ্রাম।
তার জন্য তুমি লতানে গাছ হও,ছায়া হও,
হও আশ্রয়।
তার মধ্যেই তার কবিতা ।
 
অব্যক্ত
তুমি বললে,এত কম কথায় কী বললে
কিছুই বুঝতে পারলাম না।
বোঝা না বোঝার বিমুঢ়তায়
ভেতরে না বলা কথার চাপ
দেখা-না দেখা।
সেই তো কবিতা।
 
ঘরটি
তিনি দরজা বন্ধ করে রেখেছিলেন।জানালাও।
কারও কাছ থেকে বাধা না পেয়ে
তিনি লিখতে চেয়েছিলেন এবং
নির্জনতা চেয়েছিলেন।
তিনি খুলে দেন নি।
ডাকপিয়ন একটা চিঠি রেখে গিয়েছিল।
তিনি জানতে পারেন নি।
নিমন্ত্রণের দিন নিজের অজান্তেই
পার হয়ে গিয়েছিল।
নীরবতা তাকে ঘিরে ধরেছিল।
খাতাটা খোলা,
পাতাগুলি সাদা।
একটা আঁচড়ও পড়েনি তাতে।
তিনি সন্তর্পণে একটা জানালা খুলে দিলেন।
আশে পাশের গাছগুলিতে বাতাস অপেক্ষা করছিল।
খোলা জানালা দিয়ে কোলাহলগুলি নিয়ে
ভেতরে চলে এল |
আলোতে শব্দের ভিড় |
কলমটা অশান্ত হয়ে পড়ল।
সাদা কাগজে কালো কালি।
কোলাহল ।
ঘরের বেড়াগুলি খসে পড়ল ।
কোলাহল ।
তাকে ওপরে তুলে নিয়ে গেল।
 
সময়
আপনি বলেন,’সময় এক তীর।‘
এটা কী ধরনের উৎপ্রেক্ষা?
যদি একই সময়,
যে মুহূর্ত চলেছে তীরের মুখে
আর যে মুহূর্ত তীরের গোড়ায়
কেন একটি অন্যটির
সবসময় পিছে পড়ে থাকে ?
নয়তো কথাটা এরকম নাকি,
এই দুই মুহূর্ত
দুজনেরই আপেক্ষিক অবস্থানে
সবসময়ই স্থির হয়ে থাকে?
অথবা দুজনই বন্দি এরকম এক মিলনে,
যেখানে দুজনেই কখনও মিলতে পারে না।
হয়তো এই উৎপ্রেক্ষাই ভূল।
কেজানে সময়ের একমুখী গতি
অন্তহীনভাবে চলতে থাকা একটিই মুহূর্ত,
যার আছে আরম্ভ কিন্তু যা নিরবধি ।
অথবা এটা এরকম একটি নাটক
যার শেষ অঙ্ক অনিশ্চিত।
কিন্তু বিষয় কি নাটকের?
যদি প্রত্যেকেই নাটকের অভিনেতা,
কে এর নাট্যকার?
কার প্রসাদের জন্য ?
কোন মহাজাগতিক অনস্তিত্ব
এটা রচনা করেছে?
তিনি অর্থ জানেন কি
এই নাটকের?
 
২১ মার্চ,২০১৫
আজ নাকি পৃথিবীর কবিতার দিন।
যদি আজকের দিনে কেউ বলে,
পুড়িয়ে ফেল সমস্ত কবিতা
পোড়ানো যে বড় সহজ।
একটি বড় মাঠে নির্বিকারে
আয়োজন করতাম অগ্নিযজ্ঞের
যদি এরকম হত যে
কবিতা-যজ্ঞের অগ্নি
পুড়ে ছাই করে দিত
দ্বন্দ্ব কোলাহল
হিংসা-প্রতিহিংসা
শিশুহত্যা ,রক্তপান,
মানুষ-দৈত্যের কোলাহল,
ভ্রণ-হত্যার নির্বিকার অনুতাপহীনতা,
বলাৎকার,
তাহলে কবিতাও
শেষ ইচ্ছা স্মৃতিফলকে লিখে রেখে বলতে পারত
পৃথিবীর শান্তির জন্য
কবিতা হল দধীচি।
 
একটি সাক্ষাৎকার
আমি এসেছিলাম পুব দিক থেকে
কোনো কারণে আপনি নাম রেখেছিলেন পুর্বোত্তর।
আপনি এসেছিলেন কেন্দ্র থেকে
আমিই ভেবেছিলাম সে জায়গাটা উত্তর।
আমরা দেখা করতে চেয়েছিলাম চৌরাস্তায়
কিন্তু কেউ পথ অতিক্রম করতে পারলাম না।
আমি চিৎকার করে বলেছিলাম,’নমস্কার’।
পথের কোলাহল,ধাবমান যানের মধ্য দিয়ে
আপনি কী বলেছিলেন পরিষ্কার হল না।
আমরা দুপাশে দুজন অপেক্ষা করছিলাম
আর কেবল হাত নাড়ছিলাম।
আপনার ব্যস্ত কর্মসূচি এবং সময়ও থেমে থাকে না
আমরা তাই বাধ্য হয়েছিলাম ফিরে আসতে
নিজ নিজ পথে।
 
পরে কোনো এক জনহীন স্থানে
আপনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল।
আমাদের মধ্যে কোনো কথাবার্তা হল না।
আপনার কান কথা শুনতে শুনতে বধির হয়েছিল
আমার কথা আগেই খরচ হয়ে গেল,
এখন অপেক্ষা করে রইলাম কেবল ভেবে-চিন্তে ।
হয়তো আসলে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি
মনের মধ্যে মনই রচেছিল রটনা।
 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>