| 17 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত কবিতা

অনুবাদ কবিতা: হরেন গগৈ’র অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

১৯৭০ সনে কবি হরেন গগৈর জন্ম হয়।‘জোনাকতে জোরণ’,‘বকুল তলর গান’,দুপর টেঙার পাতর দরে’,‘জার সন্ধ্যার জুই’বরষুণ খেদোঁ র’দেরে খেলোঁ’কবির অন্যতম কাব্য সঙ্কলন।‘জীবন আরু কিছু বিক্ষিপ্ত‘একমাত্র গদ্য সংকলন।


 

 

তাওয়াঙের বিকেল
 
একঝাঁক ঠান্ডা বাতাসে ডুবে যায়
গুম্ফার দেশ
 
শীর্ণ গাছের ডালে স্তূপে স্তূপে ঝুলে থাকা
বরফের টুকরোগুলি
 
আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে বেয়ে আসে
চাঁদের এতটুকু ঠান্ডা আলো
 
তোমাদের বিবর্ণ মুখ গুলিতে
দুঃখের কথাগুলি বরফ হয়ে জমা হয়
 
লাল কাঠকয়লা এবং বুখারীর উত্তাপ উজ্জ্বল করে রাখে ছোট ছোট ঘর গুলি
মায়ের বুকে জড়োসড়ো হয়ে ঢুকে পড়ে শিশু
অসুবিধা কত
নিভু নিভু বিজলি বাতির আলোতে গুম্ফায় বেজে ওঠে বৌদ্ধ ভিক্ষুর প্রার্থনা
সেই ঠান্ডা গোধূলীতে হুইস্কির নেশায়
কেন মাতাল হলাম না
তোমার লাল ঠোঁট দুটিতে কী শিহরণ
হিম ঠাণ্ডা শূন্যতায় খুঁজে বেড়াই
শবকাটা মানুষের মুখগুলির উজ্জলতা।
 
 
 
 
একই সুতোয় বাঁধা
 
মানুষগুলি দূরে দূরে থাকে
সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে কে জানে বিপদ একটা আসে
 
গ্রন্থাগারে ঢুকে থাকা একটি বইয়ের মতো
খোঁজ করলে অক্ষরগুলি বেরিয়ে আসে
 
সামনের কথাগুলি বুঝিয়ে বলতে হবে না
বুঝতে পারা একটি মন সকলেরই আছে
 
অনেক মানুষের কান্না শুনেছি
বেঁচে থাকার কথায় বেঁচে থাকতেও দেখেছি
 
তার কাছে আমার যা ছিল
দূরে থাকার জন্য আমি কিছুই দিতে পারলাম না
 
শৈশবের একটি শিসধ্বনিতে আমি দৌড়ে যাচ্ছিলাম
ঘরের বারান্দায় বসে সে কেবল চেয়েছিল
 
সামনের একটা কথা দূরে দূরে থাকে
একই সুতোয় বাঁধা কথাগুলি বলতে পারিনা
 
জানিনা বলে বলতেও
তার থেকে অনেক দূরে রয়েছি।

 

 

 


আরো পড়ুন: অনুবাদ কবিতা: কিশোর মনজিৎ বরা’র অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস


 

 

 
 
 
 
 
জেলে
 
 
 
একটা রাতও বিশ্রাম নেই
 
জাল পেতে মাছ ধরি
 
 
 
 
স্তিমিত সূর্য স্তিমিত চাঁদ
 
নৌকা গুলিতে  বুক ফেটে যাওয়া   শোক
 
 
 
 
একটা রাতও অবসর থাকে না জীবনের
 
জাল দিয়ে কাছে আনার কাতর  কণ্ঠস্বর 
 
 
 
 
নৌকায় লেগেছিল কেমন আলোড়ন
 
কেঁপে ওঠা হাত দুটি দিয়ে খামচে ধরেছিলাম
 
 
 
 
রঙ্গিন আকা্শটা মাটি ফাটা্র মতো ফেটেছিল
 
দুই পারের  কিছুই শুনতে পেলাম না
 
 
 
 
নৌকা চাপিয়ে আনো
 
বসুমতী মা পাতালে লুকাও 
 
 
 
 
জাল পেতে মাছ  ধরি রাতে 
 
উকি দিতে  থাকা অন্ধকারের দীর্ঘ পথে
 
 
 
 
সেদিন রাত্রে অবকাশ ছিল না
 
শূন্যতা এবংফোঁপানির মধ‍্যে ।
 
 
 
 
 
 
 
 
 
ম‍্যাজিক
 
 
 
 
ভরা বর্ষার  নদীটা  
 
পায়ে  হেঁটে  পার হয়ে যেতে পারি 
 
মঞ্চে খেলা দেখানোর সময়
 
হাজার দর্শকের মধ্যে
 
অদৃশ্য হয়ে যেতে পারি
 
লোহার শিকলে
 
একটা বাক্সের মধ্যে বেঁধে রাখলেও 
 
বাঁধন ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারি
 
 
 
 
প্রেমের একটি মায়াজাল থেকে
 
কোনোদিন বেরিয়ে আসতে পারি না
 
তোমার বুকের নিস্তব্ধতায়
 
থমকে যাওয়া
 
এক ম্যাজিক।
 
 
 
 
 
 
অনাবৃষ্টি
 
 
 
 
আকাশকে জিজ্ঞেস করে দেখলাম
 
কোথায় লুকিয়ে রেখেছ শীতল কাজল মেঘ
 
 
 
 
ঠাকুমার হাতের তালুতে ফুঁপিয়ে উঠছে
 
তৃষ্ণাতুর পৃথিবীর হাহাকার
 
আশ্চর্য চোখদুটি তৃষ্ণার্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে 
 
ফাটল ধরা মাটিতে
 
 
 
 
দহন করছে  তোমার বুকের কোমল কথা
 
দুপুর রাতে রক্ত ছড়িয়ে পড়া মুখ
 
 
 
 
শ্রাবণের পথে কী বিলাপের গীত শুনেছি
 
জল জল বলে চিৎকার করা একটা ফোঁপানি 
 
পথরোধ করে জিজ্ঞেস করছে
 
 
 
 
আশার  গানগুলি হারিয়ে যায়
 
রাতের অন্ধকারে
 
কেউ কারও মুখের দিকে তাকায় নি
 
পাচিতে নষ্ট হচ্ছে অঙ্কুরিত ধান
 
 
 
 
ঠাকুরমা দুই হাত তুলে আকাশকে কী কথা জিজ্ঞেস করছে
 
বিষন্ন পদূলিতে থেমে থেমে কাঁপছে
 
বর্ষার মাঠে জ্বলে উঠা
 
 
 
 
 
 
 
খরার গন্ধ।
 
———
 
টীকা-
 
পাচি-বাঁশ বেত দিয়ে তৈরি পাত্র বিশেষ।
 
পদূলি-বাড়ির সামনের ভাগ।
 
 
 
 
 
 
 
 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত