Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,assamese-poetry-by-Jiban Narah

অনুবাদ কবিতা: জীবন নরহ’র অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস

Reading Time: 3 minutes

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,assamese-poetry-by-Jiban Narah১৯৭০ সনে কবি জীবন নরহ জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় আনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকন মহাবিদ্যালয়ের অসমিয়া ভাষার অধ্যাপক। কাব্যসঙ্কলন গুলি যথাক্রমে ‘অ মোর ধুনীয়া কপৌ ফুল’,’তুমি পকা ধানর দরে গোন্ধাইছা’,’টারি-রি’ইত্যাদি।বাংলা ভাষায় দুটি,মারাঠি ভাষায় একটি এবং ইংরেজিতে একটি জীবন নরহের কাব্যসঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছে। দুটি গদ্য সঙ্কলনও রয়েছে।


 

 

 

অতিথি

 

বিহুতে আসার জন্য আমি ঠিকানা দেব না

খোঁজ করে আসবে আলুপোড়া গ্রামে

 

তুমি কলসের ভার নেওয়া যে কোনো মানুষকে দেখলেই আমার ঠিকানা জিজ্ঞেস করতে পার

তুমি নদীর তীরে বালি ঘর তৈরি করা উলঙ্গ ছেলেদের আমার ঠিকানা জিজ্ঞেস করতে পার

 

যদি একজন যুবতি তোমাকে দেখে খিলখিল করে হেসে ফেলে

জানবে সেটিই আমার গ্রাম, আমার ঠিকানা

 

না হলে তুমি একটা কাজ করবে

গেলাবিল  পার হয়ে প্রথমেই যে বাড়িটা পাবে সেখানে আমার কথা জিজ্ঞেস কর

যদি ঘরের ভেতর থেকে কোনো মহিলা বেসুরো কন্ঠে কথা বলে

তুমি ফিরে এসো

কারণ সেটা চড়াইপুং অথবা লক্ষীপাথারও  হতে পারে 

যদি ঘরের ভেতর থেকে কোনো পুরুষ দরজা খুলে ডাকে

তুমি ফিরে আসবে না

পেয়েছি বলে জোরে চিৎকার করে উঠতে পার

 

তোমাকে প্রথমে এক বাটি আপং দেবে

কলাপাতায় পোড়া দুটো গরৈ  মাছ, এক টুকরো কাঠ আলু 

অল্প নুন আর দুটো কাঁচা লঙ্কা দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করবে

 

প্রথম বাটি শেষ হলে আরও একবাটি  দেবে

তারপরে আবার এক বাটি ….

তারপরে আবার একবাটি ….

তুমি খাব না বল না– খারাপ পাবে।

 

খেয়ে মাতাল হয়ো না – খারাপ পাবে।

একবার খারাপ পেলে তোমাকে কখনও ডাকবে না।

আমি ঠিকানা দেব না

এসো যদি উরুকার দিনেই এসো

যখন যুবক যুবতিরা তোমাকে ধরে নাচাতে পারে

তুমি নাচব না বল না– খারাপ পাবে।

জানিনা বলে বল না– খারাপ পাবে।

সেই কারপুংপুলি রাতে ফিরে আসব বলেও বল না– খারাপ পাবে।

মাতাল হয়ে কোনো যুবতির বুকের দিকে হাত বাড়িও না– খারাপ পাবে।

খারাপ পেলে গ্রাম প্রধানের হাতে তুলে দেবে।

 

আসার আগে কথাগুলি পুনরায় একবার ভেবে দেখবে 

আমি ঠিকানা দেবনা।

—————

টীকা-

আপং-চাল থেকে প্রস্তুত এক ধরনের মদ

উরুকা-মাঘ বিহুর আগের দিন

চরাইপুং /লক্ষীপাথার-আলফা আন্দোলন যখন তুঙ্গে সেই সময় এই দুটি অঞ্চলের মাটির নিচে পুঁতে রাখা অনেক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

কারপুংপুলি-জোনাকি রাত

 

 

 

অনেকদিন তোর হাত দুটি দেখিনি

(নীলমণি ফুকনকে উৎসর্গিত)

 

আমি কীভাবে আছি তোকে জানাব না

আমার ঘরের পাশে বাজে বাঁশি

‘ টারি-রি’ বিকেলের বাঁশি

স্পর্শ করে দেখতে চাই তার সুর

নীল বর্ণের কণ্ঠস্বর

 

অইচেং তোকে আমি বহুদিন দেখিনি

শৈশবেই একটা চুমু খাওয়া

মনে পড়ে কি তোর

আমার মনে পড়ে, আয়নায় যখন নিজের মুখ দেখি

আর বিকেলে যখন ‘টারি-রি’ বাঁশি বাজে

 

তুই বোধহয় আমাদের শিমুল গাছের বয়সের সমান হলি

সেভাবেই বুনছিস কি  আমার জন্য একটি ফুলাম গামোছা

তাঁত বোনার  সময় তোর আঙ্গুলগুলি দ্রুত ঘুরে বেড়াবে

হাতের তালুতে লাগবে লাল আর সাদা সুতোর রং

 

হাত দুটো খালি শুকিয়ে রাখবি

রঙটা মুছে দিবি না

অইচেং, আমি আসছি তোর হাতের তালু দেখার জন্য

অনেকদিন আমি তোর হাত দুটি দেখিনি।

 

 

 

 

 

মাঝরাতে চাঁদটা নেমে আসে

মাঝ রাতে চাঁদটা  নেমে এসে 

অপেক্ষা করে থাকে বাঁশের সাঁকোতে

 

আকাশের নীল রং গায়ে মেখে নিয়ে

সারারাত বৃষ্টি হয়

 

বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে

দীর্ঘ হয়ে যেতে থাকে

চৌরাশিয়ার বাঁশির সুরটির মতো 

চাঁদটার চুল

 

ঝরণাটা বয়ে নিয়ে যায় নদীর দিকে

চুলের গন্ধ

 

চুলের গন্ধ পেয়ে কচুরিপানায় ফুল ফুটে উঠে

গোপনে গোপনে

 

বৃষ্টির পড়ে রোদের গান গাওয়া পাখিটা

কৃষ্ণা নদীর নীল জল খায়

কচুরিপানার ফুল গুলির দিকে তাকিয়ে।

 

 

 

 

 

 

গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়

 

প্রস্তাবনা

 

গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষ্ণচূড়ার ফুল নীলাকাশ জ্বালিয়ে দিল

সেই আগুন  ছাত্রছাত্রীরা নেভাতে পারল না 

কারণ তাঁদের বুকে সাগর অথবা নদী ছিল না

এমনকি একাংশ অধ্যাপক অধ্যাপিকাই 

কৃষ্ণচূড়ার আগুন দেখে রঙ্গিণ চশমা লাগিয়ে নিয়েছিল।

 

ছাত্র-ছাত্রীদের আলোচনার একাংশঃ

 

সাহিত্য অধ্যয়ন করে থাকা ছাত্র-ছাত্রীরা বলেছিলঃ

চে গুয়েভারাই সেই কৃষ্ণচূড়ার বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিল

 

ইতিহাস অধ্যয়ন করে থাকা ছাত্র-ছাত্রীরা বলেছিলঃ

না, হো-চি-মিন সেই আগুন লাগিয়ে দিয়েছে

 

পুলিশ রিপোর্টঃ

সেদিন চে গুয়েভারা ছিল না সত্যি কিন্তু তাঁর অনুচরবর্গ সেই আগুন জ্বালিয়ে দিল

সেদিন হো-চি-মিন ছিল না সত্যি কিন্তু তাঁর গুণমুগ্ধরা  সেই কাজ করেছিল

 

বর্তমানে তাঁরা অজ্ঞাত যোদ্ধা।

আজকের তদন্তানুসারে রফিকুল, সমীর, বিপুল, লুৎফা, অজিতদের 

করায়ত্ত করার জন্য প্রথমে হুকুম দেওয়া হল।

 

একজন পথিকের মন্তব্যঃ

 

আমরা কৃষ্ণচূড়ার দিকে একবারও চোখ দিইনা

কারণ কৃষ্ণচূড়া ফুটলেই আজকাল তার নিচে চাতুর্যের খেলা খেলে

 

যে খেলা রবীন্দ্রনাথ খেলতেন না।

 

 

 

 

 

গুজব

 

আরও একটি দিন এভাবেই যাবে 

নদীতে নদীতে গড়িয়ে যাবে সমস্ত গুজব

 

আমি কথা দিই 

কথা রাখতে পারিনি 

একথা জেনেও ঘটনাগুলি  ঘটতে বাকি থাকে নি

 

আমি ঘটনাটা ছোট ভাইকে বলেছিলাম

ভাইটি বলল মাকে

মা বলল নদীকে

তারপরে ঢেউয়ে ঢেউয়ে

চারপাশে গুজব

 

আমি একদিন দুপুরবেলার সঙ্গে চলে গিয়েছিলাম

গোপন মৌন কক্ষে

সে ছিল একটা বেদনাদায়ক সুখ

আমাদের নিরুদ্দেশ যাত্রা

সন্ধ্যা জানতে পেরে রাতকে বলল

রাত রাস্তায় বেড়াতে আসা ছেলেদের

ছেলেরা মেয়েদের

তারপর চারপাশে গুজব

চারপাশে হই-চই

তারপরে দিন-রাত, সকাল-বিকেল

এই আসে এই যায়

 

আমি কিন্তু আমি হয়েই আছি

এই কথা গুজব জানেনা

কেবল নির্জনতা জানে

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>