| 20 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত কবিতা

অনুবাদ কবিতা: বর্ণালী ভরালী’র অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম কবি বর্ণালী ভরালীর জন্ম ১৯৭৩ সনে।অসমের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত খবরের কাগজেই নিয়মিত গল্প,কবিতা, উপন্যাস লিখে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছেন।’বেদনা কিনিবলৈ পেন্টালুনচত’কবির প্রথম কাব‍্যসংকলন।


শূন্য ঘন্টা
 
হঠাৎ ঘন্টাটা বেজে উঠল
পুরুষ-মহিলারা উপাসনার জন্য
হইচই শুরু করল
 
ঘণ্টাটা বাজতে থাকল
ওরা ফিরে এল
শিশুদের স্কুলের পোশাক পরাল
স্কুল বাস এল না
 
ঘণ্টাটা বাজতে থাকল
শ্রমিকরা কাজ শেষ করল
আর তক্ষুনি গেল ক্যান্টিনে
সকালে রাঁধুনীটার হাত ফুলে উঠেছে
 
ঘণ্টাটা বাজতে থাকল
কোথাও আগুন লাগেনি
কেউ অসুস্থ হয়নি
হয়নি চুরি-ডাকাতি মারপিট
 
ঘণ্টাটা বাজতেই থাকল
কোথাকার শূন্য ঘন্টা এটা
বাজতে থাকে বাজতে থাকে
অহরহ মাথার ওপরে!
 
শীত
 
রাতগুলি দীর্ঘ
এবং নিঃশ্বাসগুলি ছোট হয়ে এসেছে
চারপাশে উড়ছে যেন রুপোলি আবির
 
পাথরে বসে থাকা প্রেমিক-প্রেমিকার
ঠোঁটের বাষ্পে ঝাউবন গুলি কাঁপতে শুরু করেছে
 
ওরা দুজন সূর্যকে বুকের মধ্যে ডাকছে
 
বুঝেছি, আফ্রিকার গভীর অরণ্য থেকে
কুণ্ডলী পাকিয়ে আসছে শীত
 
শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি তুলে
হ্যাঁ, এটা তো শীতই হয়!
 
আয়নাই সত্য
 
বহুদিন পরে আজ জানালাটা খুলে
ধুলো এবং মাকড়সার জাল মুছেছি
জানালার কাছে একান্তমনে বসার
অবসর কার
তাদের জন্য যে কত ব্যস্ততা
খাওয়া-দাওয়া, পরা এমনকি ভাবনাগুলি নিয়েও
 
কোথায় গেল জলপাই রঙের গাছগুলি
যেগুলি এখন পাকা ঠেকেরার মতো উজ্জ্বল হলদে
বাতাসও দেখছি ধূসর ধূসর
যেখান থেকে সূর্য আমার দিকে তাকিয়ে হেসেছিল
সেখানেও এক ঝলক কমলা রঙের আলো
আর পাহাড়টা
যেন উলঙ্গ কুঁজো একজন বৃদ্ধের দাঁত ফোকলা হাসি
 
জ্যোৎস্না–?
রাতে আর জানালাটা খুলিনা
চাঁদ– চাঁদ হয়েই থাকুক
তারচেয়েআয়নাটাই দেখি
আজ সেও মুক্ত
সুন্দর!
 
টীকাঃ
ঠেকেরা– এক ধরনের টক ফল।
একলব্য
 
জন্ম থেকে পুষে রেখেছি তোকে
জানিনা তোর তূণে আছে কিনা তীর
কত প্রেম ভরলি তাতে!
 
তোর দুহাতের আকৃতিগুলি
যেদিন ফুঁপিয়ে উঠেছিল
কুকুরটা খুব ঘেউ ঘেউ করছিল
 
একজন মৃত থেকেও মৃত ছিল
দ্রোণের পাথর হৃদয়
বিদ্ধ হয়নি তোর ঐশ্বরিক চুম্বনে
সেদিন প্রেমএবং প্রার্থনাও মূক হয়ে ছিল
আর স্পর্শাতীতঅভিমানগুলি
ধুয়ে নেবার জন্য ছিল না এক টুকরো মেঘ।
 
মরীচিকাতাড়িয়েতাড়িয়ে
বালির মধ্যে হারিয়ে গেলি তুই
রক্ত দিয়ে কিনে নিলি
একটি ধূসর পৃষ্ঠা।
 
বঞ্চনার ইতিহাসেই তোকে বেঁচে থাকতে হবে
নিষাদের একটুকরো সোনা হয়ে
হে আমার বুকের ধনঞ্জয়…
তোর চোখের জলে ভিজে আছে মহাকাব্যের পাতা।
 
বেথেলহেমের পাপ
 
কাল রাতে যিশুকে স্বপ্ন দেখলাম
সরল স্বীকারোক্তি’ পাপের জন্যই জন্ম হয় না পাপের’
 
যিশুর গ্রাম ছেড়ে চলে গেলাম
অন্য একটি বেথেলহেমে
যেতে যেতে একটা আস্তাবল পেলাম
ঘোড়সওয়ারীরাঘিরেরেখেছিল যাকে
 
পথচারীদের চোখ সুরসুর করছিল
দুর্লভ জিনিস দেখার আশায় কাছে চলে এসেছিল
এক টুকড়ি খড়ের মধ্যে
শুয়েছিল একটি মৃত শিশু
অট্টহাস্য করে উঠল ঘোড়সওয়ারীরা
‘ এটাই পাপ, এটাই পাপ’
 
হঠাৎ যিশুর আবির্ভাব হল এবং তিনি বললেন,
‘ পাপের জন্যই জন্ম পাপের
বেচারা পাপ চুষতে না পারলে’
 
বাড়ি ফিরে এলাম
আমার পদক্ষেপের আগের পদক্ষেপ গুলি
যা ছিল সেই প্রাচ্য পন্ডিতের
নিশ্চিহ্ন করল বালির বাতাস
হারিয়ে গেল দিক নির্ণায়ক তারাটিও
 
কিহেদিকদর্শন করাবে আমাকে
কেউ কানে কানে বলল
‘ একটা পাপ’
 
বেথেলহেম ছেড়ে গেল।
 
 
 
 
 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত