| 9 নভেম্বর 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত কবিতা

অনুবাদ কবিতা: কুমুদ ঘোষের অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

গোলাঘাট জেলার বরজুহি চা বাগিচায় ১৯৭৪ সনের ২৯ ডিসেম্বর কুমুদ ঘোষের জন্ম হয়। ডিক্রগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাতত্ত্ব বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং অসম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ। বর্তমানে নকছারি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রেখা আরু রঙর বিপ্লবত পাবলো পিকাছো’ (অনুবাদ), ফ্রানজ কাফকার এমুঠি গল্প’ (অনুবাদ),হলৌ উঠিল হোলোং গছত(শিশু সাহিত্য)।


 

 

বাবা আমাকে আকাশ ছুঁতে বলেছিল

বাবা আমাকে আকাশ ছুঁতে বলেছিল

বংশের কেউ কখনও স্পর্শ না করা একটি আকাশ ।

 

আমার জন্মের সন তারিখ মায়ের মনে না থাকলেও

মনে আছে বার এবং মাস,

দুজন মহাপুরুষের তিথির মাস

কোনো এক অপরিচিত মঙ্গলবারের সন্ধ্যা

প্রথম পান করেছিলাম মায়ের স্তনের অমৃত।

 

বুকে অহঙ্কারের পাহাড় গড়ে বাবা মাকে বলেছিল-

শিয়ালের ঝাঁকের ঝাঁক সিংহের একটা,

মাকে আজও জিজ্ঞেস করার সাহস হল না

বাবা কেন সেদিন ওভাবে বলেছিলেন?

 

অন্য দশটি শিশুর মতো বাবা আমারও একটি নাম রাখলেন

বাবা কোন কাঁদা থেকে তুলে এনে

আমার নাম রাখলেন ‘কুমুদ’।

 

‘ক অক্ষর গোমাংস বাবা

আমাকে আকাশ ছুঁতে বলেছিলেন।

মাটির মানুষ ছিলেন বাবা,

কুঁচকানো ত্বক,কঙ্কালসার শরীরে জ্বলজ্বল করছিল যার

সহজ,সরল মানুষের চিন্ময় শক্তি।

 

একটা পৃথিবীর খোঁজে তন্নতন্ন করে খুঁজেছিলেন পৃথিবী,

বাবার জন্য ঠাকুরঘরে মা প্রার্থনা করছিল পৃথিবীর।

 

রবিবারের এক অশুভ সন্ধ্যেবেলা ,

মায়ের কপালের সূর্য মুছে দিয়ে,

বাবা,বাবার পথে চলে গেলেন অন্য এক পৃথিবীর খোঁজে।

আকাশ ছোঁয়ার জন্য আকাশ হলাম না,

আকাশ ছোঁয়ার জন্য পাখি হলাম না।

 

বাবা আমাকে আকাশ ছুঁতে বলেছিল

বংশের কেউ কখনও স্পর্শ না করা একটি আকাশ

বাবার গোলাপি স্বপ্ন বুকে জড়িয়ে

মা আজও আমাকে আকাশ ছোঁয়ার জন্য ইন্ধন জোগায়

বলতো আমার স্বর্গীয় পিতা,

ছায়া স্পর্শ করতে না পারা পৃথিবীতে

কতটা উঁচু হলে ছুঁতে পারি আকাশ ।

 

 

 

 

এপথে এসো না

 

এপথে এসোনা

কাঁটা আছে,

 

সেই পথে যেও না

পিছলে পড়বে।

 

কোন পথে যাব

ও আমার অশুভ সময় |

 

এখানে ফুল আছে গন্ধ নেই

ওখানে শিশু আছে কলরব নেই,

এখানে মাঠ আছে শস্য নেই

ওখানে গাছ আছে পাখি নেই।

 

কোথায় কী আছে

কোথায় কী নেই

সেসব কিছুরই হিসেব নেই।

 

দেশ আছে মাটি নেই

মানুষ আছে মমতা নেই।

 

সবকিছু থেকেও কিছুই নেই।

 

 

 

 

 

ধন্যবাদ মহাশয়,ধন্যবাদ

 

অন্ন,বন্ত্র,বাসস্থানহীন দিনগুলিতে

আপনি আমাদের নাম দিলেন গরিব

 

কী মনে হল আপনার

হঠাৎ সেদিন শব্দ বদলে

আপনি আমাদের দুঃখী বলে ডাকলেন

তারপরে দরিদ্র,তারপরে নিঃস্ব

 

শব্দের ভিড়ে শব্দ বদলানো আপনার সখ

 

মহাশয়,আপনি জানেন কি

নাম বদলালেও আমাদের ক্ষুধা একই থাকে

নাম বদলালেও আমাদের লজ্জা একই থাকে

নাম বদলালেও আমাদের জন্য শীত-গ্রীষ্ম একই নামে

 

শব্দ সাধনার জন্য আপনাকে

ধন্যবাদ জানানো উচিত। আমরা কিন্তু নিরুপায় মহাশয়।

এই মুহূর্তে আপনাকে ধন্যবাদ জানাবার কোনো প্রস্তাব আমাদের নেই

 

আমরা জানি,আপনি আপনার স্থিতি হারানোর ভয়ে কাতর,

আর আমরা প্রাপ্তির লক্ষ্যে সবল প্রতিনিয়ত

 

মহাশয়,ক্ষুধার তাড়নায় অন্ন কমে এলেও

আপনি যন্ত্রণাকে জীর্ণ বলে ভাববেন না

শীত-গ্রীষ্মে কাঁপতে থাকলেও

মুক্ত আকাশ কংক্রীটে ঢাকব বলে ভাববেন না

 

আর লজ্জার কথা একেবারে বলবেন না

 

আপনার কাপড় কমে আসতে দেখে

আমরা মুষ্টিবদ্ধ করেছি হাত

 

মহাশয় বিনীতভাবেই বলছি

শির নত করুন তো একবার

শির ন্ত করলে আমরা বলব

ধন্যবাদ মহাশয়,ধন্যবাদ।

 

 

 

 

কথা বলার কথা ছিল

 

তোমার সঙ্গে কথা বলার কথা ছিল

অনেক কথা।

তোমার বলার অনেক কথা পাথর হল,

আত্মপক্ষে বলার মতো আমার অনেক কথা নির্জনতায় হারিয়ে গেল।

 

কথা বলার কোনো পরিবেশ এখানে নেই।

এত কোলাহল । কেউ কারও কথা শুনে না।

কোলাহল গিলে ফেলছে শহরটার ডাল-পাতা।

 

নির্জনতার খোঁজে শহরটা তন্নতন্ন করে খুঁজেছি।

কোলাহল কেনা-বেচা করে শহরটা ক্রমশ বড় হয়েছে।

শোন না বলে চিৎকার ডাকতে শহরের দুজন

আমাদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে গেল।

দোকানটার সামনে দীর্ঘ সময় আলাপ করতে দেখে দোকানি

আমাদের শাসিয়ে গেল-‘দোকানে গ্রাহক আসার পথ বন্ধ করবেন না।’

 

কোলাহল কেনার জন্য মানুষেরা একদিন গ্রাম ছেড়ে

শহরে এসেছিল । এখন শহরে নির্জনতা ছাড়া

সমস্ত জিনিসই কিনতে পাওয়া যায়।

 

একজন বন্ধুর কাছে জানতে পারলাম

নতুন করে একটা নির্জনতার দোকান শহরে আরম্ত হয়েছে,

নাম তার গান্ধী পার্ক।

 

তোমার সঙ্গে কথা বলার কথা ছিল

অনেক কথা । চল ওখানে যাই।

 

নেই। এখানে নির্জনতার নামে কিছুই নেই।

মোবাইল ফোনের বিবিধ রিঙ টোন। দুই একজনের প্রাণখোলা হাসি।

চারপাশে শিকারি চোখ। কম ভলিউমে পুরোনো রোমান্টিক গান।

 

নেই। নির্জনতার নামে শহরটাতে কিছুই নেই

নির্জনতার খোঁজে নির্বাক গান্ধী পার্কের গান্ধী।

 

 

 

 

নেমে এলে ভূল ভাঙবে আপনার

 

আপনি উঁচু মহলে বাস করেন

সেখান থেকে সবকিছু ঠিক-ঠাক দেখায়,

নেমে আসুন,নেমে এলে ভুল ভাঙবে আপনার ।

 

জরা ব্যাধিতে ভুগছে প্রতিটি মানুষ

সমাজ-সংস্কৃতি পোলিও মুক্ত নয়।

অন্ন- বস্ত্র- বাসস্থানের হাজারো সমস্যা

শহরে মিছিল-মানুষের সারি।

কৃত্রিম হাসি,ভালো বলে বলার মিথ্যা প্রবণতা।

 

আপনি উঁচু মহলে বাস করেন

সেখান থেকে সবকিছুই কাছে,

আপনার হাতের নাগালের ঈশ্বর,আমাদের থেকে অনেক দূরে।

 

নেমে আসুন,নেমে এলে ভুল ভাঙবে আপনার ।

নেমে এলে ফিরে যেতে পারবেন না আপনি

নেমে এলে প্রদূষিত বাতাসে দীর্ঘ হবে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস,

ভিড়ে হারাবে আপনার দেহের সুগন্ধি

হাতের নাগালে থাকবে না ঈশ্বর

আপনাকে ভালো লাগবে না আপনার পুরোনো ভিটেতে।

 

অসহজ শব্দের অর্থ সহজ হবে

সহজ হয়ে পড়বে আপনার জটিল জীবন পথ ।

 

আপনি উঁচু মহলে বাস করেন

সেখান থেকে সবকিছু ঠিক-ঠাক দেখায়,

নেমে আসুন,নেমে এলে আপনার ভূল ভাঙবে।

 

        

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত