| 14 ডিসেম্বর 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত কবিতা

অনুবাদ কবিতা: মৃদুল হালৈ’র অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com১৯৮৮ সনে নলবারীর পাগলাদিয়ার পারে কবি মৃদুল হালৈর জন্ম হয়। অসমিয়া সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মৃদুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অকলে আছোঁ কুশলে আছোঁ’ কাব্যগ্রন্থ।এই কাব্যগ্রন্থটি ২০১৫ সনে সাহিত্য আকাদেমি যুব পুরস্কার লাভ করে।সম্পাদিত গ্রন্থ ‘নীলমণি ফুকনর কবিতার নেপথ্য’।


 

অন্তরতম

 

সমস্ত মানুষ অপ্রেমে বেঁচে থাকে

এবং প্রেমের জন্য তিলতিল করে মরে

 

সবাই অগণিত শত্রুর

আঘাতের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেচে থাকে

আর একান্তই আপনজনের আঘাতে

ঢলে পড়ে

 

একথা বোঝার পরে

আপনার নিজের ওপর মোহ জন্মায় কি

ক্ষমা করে দেন নাকি সেইসব শত্রুকে

যে তীক্ষ্ণ বলে ভাবা আঘাতে আপনাকে

বারবার বিদ্ধ করতে চায় এবং

প্রতিরোধের অমোঘ আকাঙ্খায়

আপনি হয়ে উঠেন দৃঢ়

দুরন্ত এবং সচেতন

 

আপনি কার মতো বেঁচে থাকতে চান

আবেগের অনিয়ন্ত্রিত ঢেউয়ে ভেসে ভেসে

আপনি কী পেতে চান

 

এত অস্থিরতা কেন নিয়ে বেড়ান

আপনার পদক্ষেপে

 

বাতাসে এত কোমলতার খোঁজে

আপনি কেন বারবার ভুল করেন

 

হে কবি

জানি আপনি নিজেকে করুণা করেন

মানুষ আপনাকে না বুঝলে

 

সময় আপনাকে চিনতে পারল না

না আপনি সময়কে ভূল করলেন

আপনি ভালোবাসলেন ছলনাময় শব্দগুলোকে

যে বলল –চাঁদটা কেবল চাঁদ নয়

সূর্য কেবল সূর্য নয়

 

দিন এবং রাতের এই পরিক্রমা

পৃথিবীর সহজ আবর্তন শুধু নয়

 

আপনি ভেবে নিলেন জানালা মানে কেবল

বাতাসের আসা-যাওয়া নয়

একটা ফুলে এসে বসা প্রজাপতিটার নেই

কেবল মধু-তৃষ্ণা

 

আপনি বুঝেছেন কি

যদি না বোঝেন –জীবনে কীসের এত

দৌড়াদৌড়ি সময়ের টানাটানি

আপনি বুঝেছেন কি

যদি না বোঝেন –সফলতা মানে

পেছন ফিরে তাকাতে না পারা

এক মুহূর্তও অপেক্ষা করতে না পারা

বলতে না পারা এই সুগন্ধটুকু

ছুঁয়ে দেখি বলে

 

অপ্রিয় বলে ভাবা প্রত্যেকের সঙ্গেই

আপনি প্রতিদিন ঘোরাফেরা করেন

এবং প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা করে

সমস্ত মানুষের মতোই স্বপ্ন বলে

কেবল দূরে তাকিয়ে থাকেন

এবং বাস্তবকে মৃতের মতো

পিঠে নিয়ে ঘুরে বেড়ান

 

এইসব জানার পরে

আপনার নিজের ওপর ঘৃণা জন্মায় কি

 

হে কবি

আপনি কার জন্য বেঁচে থাকতে চান

দিন এবং রাতের এই পরিক্রমা

আপনার ভেতরেই নিরন্তরচলছে।

 

 

 

 

 

শিশুরা ভালো থাকুক

 

শিশুরা ভালো থাকুক

চিরকাল বয়ে থাকুক

উচ্ছল প্রাণ-প্রপাতে

 

পোষা পাখিজোড়া ভালো থাকুক

চিরকাল থাকুক

উৎসব উল্লাসের কলতান

 

ভালো থাকুক তোমাদের

মা বোন ভাই

প্রত্যকের চোখে ঝরণা নামুক

বিমূর্ত স্বপ্নস্রোত

ভালো থাকুক নারীর

চোখের কাজল এবং ঠোঁটের

লাল রঙ

 

ধানের মাঠে গাওয়া তোমাদের গান

আর লাফিয়ে চলা বাছুরটার

ঘন্টার ধ্বনিগুলি ভালো থাকুক

 

তোমরা আমাদের প্রাণ পুকুরের তীর্থজল

 

তোমরা ভালো থেকো

 

ধুলির মাঝখান থেকে

হাতের ইশারায় ডাক এক ঝাক বৃষ্টিকে

ধোঁয়ার মাঝখান থেকে বাতাসকে

আগুনের কাছ থেকে জ্যোৎস্নাকে

 

তপ্ত পাথর একটার ওপর থেকে

একটা গানকে

 

নদীগুলি এখনও শুকোয়নি

নারীর চোখের অশ্রুকণা

শিশুদের অঞ্জলির ফুল

স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়নি

তোমাদের কলজের রক্ত

কালো হয় নি

 

আকাশে নিভে যায়নি

অনন্ত তারার প্রদীপগুলি

 

তোমরা ভালো থেকো

শিশুদের ভালো রেখ

আমাদের হাড়ের উপর গজা

আগাছা পরিষ্কার করে

হারিয়ে যাওয়া পথ একটিতে

দাঁড়ালেই দেখতে পাবে

 

গুলির চেয়েও দ্রুত

পাখিদের উড়ে যাওয়া ।

 

 


আরো পড়ুন: অনুবাদ কবিতা: জ‍্যোতিনীলিমা গগৈ’র অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস


 

 

 

পাঠশালা

(প্রাণ আমি কোথায় ধুলাম

প্রাণ আমায় কোথায় ধোয়াল

কোথায় বা পেলাম প্রাণ)

        ১

শিমুল কাঠে বৈঠা তৈরি করে দাও

পদ্মপাতায় নৌকা

তেল ঘষে ঘষে

চুল আঁচড়ে দাও

শ্লেট পেন্সিল নিয়ে

ঘুরে আবার

পাঠশালায় যাই

      ২

টেবিলে বেড়ে রাখা ভাত তুই খাস কি

দল বেঁধে উড়ে যাওয়া

সাদা মেঘের ঝাক

তুই দেখিস কি

মাঠের পাকা ধান

মুনিয়া পাখি খায়

তুই তাড়াস কি

 

মাছ পর্যস্ত গেলিনা তুই

কেন মন খারাপ কুমার

বলব কি

লাফিয়ে লাফিয়ে সঙ্গীরা

পাঠশালায় যায় –তুই যাবি কি

বলছি থেকে যা থেকে যা

আমাকেও সঙ্গে নিয়ে যা

       ৩

আমাদের পাঠশালা সুন্দর

আয় সমবয়সীদের ধরে আনি

পাখির চোখের সূর্য

 

সূর্য?

স্যারের চোখে লাল হয়ে জ্বলা

সেটা কি সূর্য

 

তাকানো যায় না । তাকানো যায় না

ও মা! কী যে গর্জন

 

এদিকে চোখের ইশারা করে

হাত নেড়ে

জানালাটা ডাকে

 

আকাশ চষে

চষে নতুন বাসায় পাখির শাবক

 

জানালাটাই আমাদের পালিয়ে নিয়ে যায়

নাগিয়ে যে পারিনা।

      ৪

নল মরল

কতবার আবার অঙ্কুরিত হল

দূরের সাগরও পার হয়ে গেল

কোনো পাহাড়ের জল

 

আর আমার প্রাণের পাঠশালা

তোর দেওয়া সূর্য চোখে নিয়ে

আমি এখনও তোকেই দেখি

ফিরে ফিরে

 

এই সময়ের কোনো জানালা নেই

পালিয়ে গিয়েও তোর কাছে পৌছাতে পারিনা।

 

 

 

 

 

মরণগীতি

 

অকস্মাৎ সব কিছু শান্ত

সবকিছু শীতল হয়ে পড়েছে

 

রোদের দহন নেই

ঢেউয়ের আস্ফালন নেই

নেই আকাশের গর্জন।

 

সমাহিত এক ঝর্ণার মতো

সময় বয়ে চলেছে

 

আমার চোখের মণির ভেতরে

সমগ্র জগৎস্থির

তরঙ্গহীন হয়ে শুয়েছে

 

কী যেন এক শোক আমাকে আঘাত করছে

নির্জনতার প্রবল স্রোত আমার

মন খুঁড়ছে

 

উদিত পথের এক আলিতে

আমার ছায়া পড়ে রয়েছে

 

আমার কাছে আমি ফিরে যেতে চাইছি

 

আমার নিজ পথের আড়াল ভাঙতে চাইছি

আমার একা ঘরের জানালা দিয়ে

অপলক নয়নে

 

দুরের এক টুকরো সবুজে

বৃষ্টির অস্থির অবরোহণ আমি দেখতে চাইছি

 

অথচ কী নিদারুণভাবে

দরজা বন্ধ রেখে

আমার ভেতরে আমি ছিপ নিয়ে

ঝুলে রয়েছি

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত