অনুবাদ কবিতা: প্রেম গগৈ’র অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস
১৯৪৮ সনে অসমের শিব সাগরে কবি, শিশু সাহিত্যিক এবং ইতিহাসবিদ প্রেম গগৈ জন্মগ্রহণ করেন। কবিরকাব্য সংকলন গুলি যথাক্রমে ‘বুকুত এখন উত্তাল নদী‘,’শইচ নদী মানুহ‘,’ মোক অলপ উশাহ লব দিয়া‘,’গজঘন্টা‘,’ ‘ইমান নিজান এই প্রাচীন পৃথিবী‘ ইত্যাদি
শেফালি শেফালি গন্ধ
কালো মেঘগুলিপাহাড়ের ওপারে চলে গেল
আকাশের মোহনায় দেখতে পেলাম
আজন্মের পরিচিত রূপোলি মেঘ।
কুয়াশার একটি রেশমিপর্দা দিয়ে
ঢেকে রাখা অরণ্যটিতে জোনাকি পোকাগুলি
আকাশ থেকে খসে পড়া যেন হাজার হাজার ফুল।
এক বিকেলে
কাশফুলের হাতছানিতে
নদীর তীরে গেলাম
তখনই দেখলাম ধর্মীয় সভার উদ্দেশে
উড়ে যাওয়া এক ঝাঁক বক।
ওদের যাবার পথে সন্ধ্যাবেলায়
পদুলি মুখে
শেফালি শেফালি গন্ধ।
গৌতম বুদ্ধ খোঁজ করা সরষের মুঠো
না পার যদি কোনো কথা নেই
পার যদি না দিয়ে থেকো না
কেবল এক মুঠো সরষেদাও
আমার ভেতরে মরে যাওয়া মানুষটা
বাঁচিয়ে তুলতে চাই।
গভীর শঙ্কায় চোখ দুটি জলে উপচে পড়ছে
প্রত্যেকেই পথ হারিয়েছে
কীসের নেশায় মত্ত হয়ে
মানুষগুলি হাতে তুলে নিয়েছে কুরুক্ষেত্র সময়
বিষ গাছের বীজ।
শাপ শাপান্ত খেয়ে কতদিন
কতদিন বেঁচে থাকবে খাঁচায় বন্দি মানুষ
কতদিন সবুজ হয়ে থাকবে পৃথিবী
বইতে থাকবে নদী
উঁচু হয়ে থাকবে পর্বত।
কৃষ্ণপক্ষের মত কালো হয়ে আসছে আমাদের মানুষ
তোমাদের ও প্রয়োজন এক মুঠো সরষের
ঠিক গৌতম বুদ্ধ খোঁজ করা সরষের মুঠোর মতো।
কমল কুমার তাঁতী’র অসমিয়া কবিতা
কবিতা
সে এলে ভরে উঠবে নদী
কেঁপে উঠবে গেরুয়া মাটি
ক্ষুধা তৃষ্ণা
তন্ন তন্ন করে খুঁজবে অরণ্য।
মাঠের মাঝখান দিয়ে ভেসে আসবে
কার ওসুরেলা গীত
অস্পষ্ট আলো
ক্রমশ উজ্জ্বল হবে।
আজ রাতে বুড়ো অশ্বত্থের নিচে
ঢোল জেগে উঠবে
থেমে থেমে পেঁপা বাজবে
রাতটা নাচবে
বাতাসের নিচ দিয়ে
একটা সবুজ পথ দিয়ে
ডালে ডালে ফুল ফুটিয়ে
সে আসছে বিচিত্র সাজেসজ্জিত হয়ে
মন্দিরের সন্ধ্যারঘন্টা বাজছে।
টীকাঃ
পেঁপা– মুখে ফুঁদিয়ে বাজানো এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র।
ও আমার নিজের দেশ
কাকে জিজ্ঞেস করি
মেঘ ভেদ করে বৃষ্টি আসবে কি
নিভবেকি আগুন
কখন ভোরহবে রাত।
একটা আগ্নেয়গিরির উদগীরণ হয়েছে
উত্তপ্ত লাভা ঢেকে ফেলেছে
নগর গ্রাম ভূমি
নদীর ঠিকানা হারিয়েছে।
আমার হাঁচটিতে নেই আশার একটি তামোল
কাঁধে নেই ফুলতোলা গামছা
আমি ঘুমোতে ও পারছিনা।
জেগে থাকতেও পারছি না।
একটি গ্রাম হারিয়েছে
একটি পরিচিত মুখ হারিয়েছে
নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে রোদে পোড়া মাঠ
কী যে অপদেবতায় পাওয়া সময়
নষ্ট পৃথিবীতে মুণ্ডমালা পরে
ডাকিনী নাচছে
তুই কেমন আছিস
ও আমার নিজের দেশ।
টীকাঃ
হাঁচটি–পান সুপুরি বেঁধে নেওয়া গামছা।
একটি নদী চিৎকার করছে
একটি নদী কাতর চিৎকার করছে
আমাকে হত্যা কর না তোমাদের জন্য অনেক আশায়
বহন করে এনেছি জীবন অমৃত।
বর্ষা মাঠের বুক হয়ে
মেলে দেব আমার রুপালি আঁচল
কোমল মাটিতে লাঙ্গলের ফলায়
তোমরা স্বপ্ন রচনা করবে
রোঁয়ণীর আঙ্গুলের পরশে
সবুজ হবে বিশাল উপত্যকা।
আমার তীরে একদিন আরম্ভ হয়েছিল সভ্যতা
জ্ঞানবৃক্ষের আলোতে উজ্জল হয়েছিল পৃথিবী।
আমাকে হত্যা কর না
আমি না থাকলে সভ্যতা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে
নদীতে নৌকা বেয়েভবিষ্যতের গান গাওয়ার জন্য
কেউ থাকবে না
দুই তীরে থাকা গ্রাম গুলি
অরণ্যগুলি শুকিয়ে যাবে
সবাইকে ত্যাগ করতে হবে শেষ নিঃশ্বাস।
আমাকে হত্যা কর না
আমাকে হত্যা কর না
আমি তোমাদের বন্ধু
তোমাদের বিশ্বাস।
টীকাঃ
রোঁয়ণী–যে সমস্ত মহিলারা জমিতে ধান রোপণ করে।
অনুবাদক