অনুবাদ কবিতা: রাজীব বরদলৈ’র অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস
অসমের গোলাঘাট জেলার গনকপুখুরিতে ১৯৬৮ সনে কবি রাজীব বরদলৈর জন্ম হয়। বর্তমানে ভারতীয় জীবন বীমা বিভাগের কলকাতা শাখায় কর্মরত। প্রকাশিত কাব্য সংকলন গুলি যথাক্রমে ‘প্রেম হৃদয় পৃথিবী’(২০১২),‘র’দালির দেশ লৈ’, ‘নৈর বুকুয়েদি’(২০১৩),‘নিজানত নিরলে’(২০১৬),‘In depth of the River’(অনুবাদ) ।এ ছাড়া দুটি একাঙ্ক নাটক ‘স্বদেশ আরু স্বাধীনতা’(১৯৮৩) এবং ‘সংলাপ’। অসমের সাহিত্য-সংস্কৃতি মূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত।
যুদ্ধ… জীবনের অন্তহীন আখড়া
এই যে আমরা যুদ্ধের কথা বলি
জয়ের জন্য আত্মহারা হই
এবং
পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে আত্মঘাতী হই…
এই ধরনের যুদ্ধের সঙ্গেই আমাদের নিরন্তর সহবাস।
জন্ম মানেই একটি যুদ্ধের বিরামহীন আরম্ভ
মৃত্যু মানে উদাস পরিসমাপ্তি।
যুদ্ধই যদি না থাকত
মানবের এই ক্রমবিকাশ…
স্বপ্ন অথবা ইচ্ছার প্রতিফলন হয়তো ঘটত না
সেই যুদ্ধ সৃষ্টির অতুল্য প্রবাহ।
জীবন-যুদ্ধের নাই জয় কিম্বা পরাজয়
গতি আছে
যে গতি বেঁচে থাকার আভাস দেয়
পরিধিহীন হাসি-কান্নার সর্পিল উপস্থিতি।
জন্ম থেকে যে যুদ্ধের আখড়া করে আসছি
তা আমাকে সময়ের পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে
জীবন ভালোবাসি আর বার বার
আমি শাশ্বত প্রেমের স্বপ্ন দেখি।
যেহেতু পৃথিবীর মোহ আমাকে প্রতিদিন আকর্ষণ করে
তাই, যুদ্ধকে পুনঃ পুনঃ জড়িয়ে ধরি।
সন্ধিক্ষণ…
রাতগুলি যদি রাতের মতো হতো
আর দিনগুলি যদি দিনের মতো
তাহলে কোনো কথা ছিলনা…
কিন্তু,
এখন দিনগুলি রাত হয়ে পড়েছে
আর রাত গুলি মৃত্যুশয্যা…
বুকের মধ্যে একটা ব্যথা কূটকূট করে
শিউরে উঠে গায়ের লোম
সকাল হতে আর কত বাকি…
যাই বলে অনায়াসে চলে যাবার পরে
থামার অবকাশ নেই
পথঘাট পার হয়ে এসে দুই হাতের মুঠোতে
সঞ্চয় করে রাখাটুকু দিয়ে যাবার জন্য,
জিভের ডগায় আসা বলব বলব বলে ভাবা কথাগুলি
কাউকে বলে যাবার জন্য… বাকি থেকে যায়।
মুখের সামনে নেওয়া ক্ষুধার এক গরাশ ভাত
হাত এবং ঠোঁটে ঝুলে থাকে
প্রেয়সীর জন্য সযত্নে রাখা উদ্ভিদ যেন
সবুজ হাসি, সবুজ ভালোবাসা,
জীবন্ত সবুজ স্বপ্ন…
আমি তো চাইনি ‘এভাবে স্তব্ধ হয়ে থাকুক ‘।
সেই সন্ধিক্ষণে
তার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য সময় খুবই কম।
সময়… সেই শত্রু
আমাকে বিন্দুমাত্র স্থির থাকতে দেয় না হে।
সন্ধিক্ষণে তুমি…
অজস্র বন্ধুর সঙ্গ আমাকে সুখী করে রেখেছে…
কিন্তু, তোমার একান্ত সান্নিধ্য
আমাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা দিয়েছে…
এই জন্যই তুমি আমার আজন্ম প্রেমিকা।
নিজের অজান্তেই কখনও বা বেদনার ভার পাচি নিয়ে
ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে পড়ি
তোমার একটি অজানা চাহনিতে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাই
বুকে কত অলীক স্বপ্নের বাসনা…
সম্পূর্ণ নির্ভেজাল উৎকৃষ্ট শব্দের সংলাপে
নিজেকে বলি
অনুভবের সন্ধিক্ষণে দুচোখের মায়াজালে বন্দি
তুমি… একটি শিরোনামহীন কবিতা।
যার জন্য এই কবিতা
যার জন্য এই কবিতার জন্ম বলে ধারণা করা হয়েছিল…
তা ভুল বলে বিবেচিত হয়েছে…
কেননা তিনি একটি মাটির পুতুল অথবা পাথরের মূর্তি।
এই কবিতা লেখা হয়েছে তার জন্য
যে বুকে এক ঝাঁক বৃষ্টি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়
বৃষ্টির ফোঁটাগুলো খরার মাটিতে সিঞ্চন করে
পৃথিবীর বুক শস্য-শ্যামলা করে তুলে।
এই কবিতার শব্দ নদীকে কাছে ডেকে আনে
শস্য -মানুষের জীবন গাঁথা।
যুদ্ধের দিনে বিলিয়ে বেড়ায় বেঁচে থাকার অসম্ভব স্বপ্ন
আর
চকমকে বিদ্যুতের স্পর্শে সভ্যতার বিপ্লব সজীব হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুন: কুমুদ ঘোষের অসমিয়া কবিতা
পাথরের গল্প…
পাহাড়ের বুকে গোপনে জেগে ওঠা পাথরের মতো
মনের ভেতরেও পাথর হয়ে জন্মায়
অন্ধকার রাতের সীমাহীন কথা।
পাথরগুলি খুঁড়ে-খুঁড়ে
ভেঙ্গে ফেলতে চায়
বুকের ভেতরে মসৃণ একটি ঘর।
তবু বেদনা সয়ে সয়ে
বুকের ঘরটা আপন করে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়
আততায়ী পাথরগুলি।
নদীর বুকেও আছে এক একটি শিলাময় নদী
শিলাময়তাকে বুকের ভেতরে লুকিয়ে
নদী বয়ে যায়, অভ্যস্ত নদী।

অনুবাদক