অস্তিত্ব

Reading Time: 2 minutes

কি অসভ্য মেয়ে রে বাবা! একটা হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি পরে নাচছে! যতই নিজের ঘর হোক। জানলাটা যে খোলা। পর্দাটা সরানো আছে নজরে পড়বে না? আজকাল এই এক উৎপাত জুটেছে সুবিমলের। এতদিন ওই ঘরের জানলাটা বন্ধই থাকত। বাড়িটায় কেউ থাকত না। এই কয়েকদিন হল নতুন লোক এসেছে। আর ওই ধিঙ্গি মেয়েটা ঠিক সুবিমলের ঘরের সামনেই থাকে। সুবিমল অফিস থেকে অবসর নিয়েছে বছর পাঁচেক। গত বছর হঠাৎ স্ট্রোক হয়ে প্যারালাইসিস। জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক এখন। শুয়েই দিন কাটে। নিজের শরীরটা নিজের ক্ষমতায় নাড়তে পারে না। তাই ওর সর্বক্ষণের সঙ্গী এই বিছানা আর ভরসা আয়া। এই জনলাটুকুই ওর জগৎ। শুয়ে শুয়ে আকাশের রঙ পরিবর্তন দেখে, দেখে প্রকৃতির ঋতু পরিবর্তনও। পাশের রাস্তা দিয়ে মানুষের টুকরো কথা, চলাচলের শব্দ কানে আসে। গাড়ির হর্ন আর চাকার ঘষটানির শব্দে খুঁজে নেয় জীবনের গতিময়তা। এই স্থবির জীবন মেনেই নিয়েছে সুবিমল। সুবিমল একজন পুরুষ মানুষ। অসুস্থ হোক বা বয়স হোক। মেয়েটার আক্কেলটাই বা কি! মনে হয় না একবারও? বাবা-মার শাসন নেই? অবশ্য দোষ দিয়ে লাভ নেই। এযুগে মা বাবার কথা কটা ছেলেমেয়ে শোনে? নিজের ঘরেও তো দেখেছেন। তা বলে এই বেলেল্লাপনা ! সুবিমলের জীবনের ছন্দটা কেমন কেটে গেছে। বারবার চোখ চলে যায় ওই মেয়েটার দিকে। চোখ না গিয়েও তো উপায় নেই একেবারে মুখোমুখি জানলা দুটো। ওর বেহায়াপনা দেখতে বাধ্য হয়। মোবাইল নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কী যে করে! অদ্ভুত অদ্ভুত ভঙ্গিমায় সেলফি তোলে। পোশাকের তো কোন ছিরি ছাঁদ নেই। পরা না পরা দুইই সমান।

মেয়েটা কি সুবিমলকে দেখতে পায় না? তা কি করে সম্ভব! সব সময় সুবিমল তো এখানেই শুয়ে থাকে। তাছাড়া আয়া মাঝে মাঝে বসাবার চেষ্টাও করে। শরীরটা অচল হলেও দৃষ্টি শক্তি ক্ষীণ হয়নি। আর মন তো এখনো তরতাজা। জানলা খুলে পর্দা সরিয়ে এরকম অঙ্গ ভঙ্গী করার মানে কি? ওই মেয়েটা কি ওকে জড় পদার্থ ভাবে? মনটা হু হু করে ওঠে। বাড়িতেও তো এককোনে পড়ে থাকে। ওকে জিজ্ঞেস না করেই সব সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। নিজের সংসারেও কোন ভূমিকা নেই। ভগবানকে ডাকতেও ইচ্ছা করে না এই জড়পিন্ড করে কেন যে তিনি বাঁচিয়ে রাখলেন? সারাদিন আয়ার ভরসায় ঘরের এই কোনে পড়ে থাকা। ওই মেয়েটা কি সুবিমলকে মৃত মানুষ মনে করে? ও যে বেঁচে আছে তা কি মানে না? সুবিমলের অনুভূতির কোন মূল্যই নেই ওর কাছে? তাই কি ওর সামনে লজ্জা ঘেন্নার কোন প্রয়োজন বোধ করে না ? চোখের কোনে জল ভরে আসে। জীবন্মৃত।

এক অসহায় বৃদ্ধ । হতাশা তাকে গ্রাস করে।

আজ মেয়েটা একটা ডেনিম ব্লু লো কাট জিন্স পরেছে। ফিরোজা কালারের স্কিন টাইট টপ। চুলে সোনালী স্ট্রাইপ। ঠোঁটে রানী কালারের লিপস্টিক। সামনের জানলায় উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে। হয়তো আজ বিশেষ কেউ আসবে। মাঝে মাঝেই সুবিমলের দিকে তাকাচ্ছে। আজ কেন এতবার তাকাচ্ছে? সুবিমল কি পাথরের মূর্তি? এমন সময় একটা অল্প বয়সী ছেলে এসে ঢুকল মেয়েটার ঘরে। ও ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল ছেলেটাকে। আজকাল এই এক ইংরেজী স্টাইল হয়েছে। হাগ , কিস। এইসব ঢং সহ্য হয় না। সুবিমল চোখ বন্ধ করল। অস্বস্তি হচ্ছে খুব। এ দৃশ্য কতদূর গড়াবে কে জানে। কিন্তু চোখ বন্ধ করে কতক্ষন থাকা যায়! সুবিমল খুলেই ফেলল চোখটা। মেয়েটা জানলার পর্দাটা টেনে দড়াম করে বন্ধ করে দিল জানলাটা। আয়া শেফালী কাছেই ছিল । শব্দে চমকে উঠল। – কি অসভ্য মেয়ে রে বাবা। মুখের ওপর এভাবে কেউ জানলা বন্ধ করে? ভদ্রতাটুকুও শেখেনি? সুবিমলের পক্ষাঘাতগ্রস্ত বেঁকে যাওয়া মুখে তখন ফুটে উঠেছে এক চিলতে হাসির রেখা।

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>